নিজস্ব প্রতিবেদক: অভিনেত্রী ও মিস আর্থ বাংলাদেশ-২০২০ বিজয়ী মেঘনা আলমকে গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে স্মারকলিপি দিয়েছেন আইনজীবী, অধিকারকর্মী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার ২৭ জন বিশিষ্ট নারী। গত রোববার (২০ এপ্রিল) স্মারকলিপিটি ই-মেইলে পাঠানো হয়।
স্মারকলিপিতে মেঘনাকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে তার মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন উল্লেখ করে তার মুক্তি দাবি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘মেঘনা আলমকে গত ৯ এপ্রিল পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ও ভাটারা থানার কর্মকর্তারা তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন ও আদালতের নির্দেশ অবমাননা করে আটক করেন।’
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, ৯ এপ্রিল মেঘনা আলমকে তার বাসা থেকে কোনো পরোয়ানা ছাড়াই আটক করা হয়। সে সময় মেঘনা আলমের ফেসবুক লাইভ থেকে বিষয়টি জেনে কয়েকজন নারী অধিকারকর্মী ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা মেঘনা আলমকে আটকের জন্য এসেছেন। আটকের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর তাকে আদালতে তোলা হয়। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয় তাকে।
এ ঘটনায় সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন এই নারীরা। স্মারকলিপিতে তারা বলেন, এই ঘটনায় গুরুতর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। তারা মেঘনা আলমের মুক্তি এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন।
স্মারকলিপিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন আইনজীবী ও অধিকারকর্মী ইশরাত জাহান, তাবাসসুম মেহেনাজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীর্জা তাসলিমা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, নৃবিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসরিন সিরাজ, সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, আলোকচিত্রী পদ্মিনী চাকমা, লেখক ও গবেষক পারসা সানজানা প্রমুখ।
মেঘনার ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব: আলোচিত মডেল মেঘনা আলমের সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সোমবার (২১ এপ্রিল) দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য চাওয়া হয়।
বিএফআইইউ-এর পাঠানো চিঠিতে মেঘনা আলমের ব্যাংক হিসাব খোলার আবেদনপত্র, কেওয়াইসি (নো ইয়োর কাস্টমার) এবং লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। মডেল মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ সামনে আসার কারণে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন, ১০ এপ্রিল রাতে তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের জন্য আটক রাখার নির্দেশ দেন আদালত।
পরবর্তী সময়ে ১৭ এপ্রিল ঢাকার একটি আদালত বিদেশি এক কূটনীতিককে ‘হানি ট্র্যাপ’-এর প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন। মামলাটি দায়ের করা হয় ধানমন্ডি থানায়। ওই মামলার বাদী ধানমন্ডি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল আলীম।
মার্চ ধানমন্ডির একটি রেস্তোরাঁয় মেঘনা আলম, তার সহযোগী সমিরসহ আরো কয়েকজনের উপস্থিতিতে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিদেশি কূটনীতিকের কাছ থেকে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ আদায় করা।