ঢাকা ০৯:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

মৃত প্রেমিকের সব ঋণ শোধ করলেন চীনা প্রেমিকা

  • আপডেট সময় : ০৬:২৭:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক: গাড়ি দুর্ঘটনায় ৯ বছর আগে মারা গেছেন প্রেমিক। প্রেমিকের প্রায় ছয় লাখ ইউয়ান ঋণ শোধ করেছেন এক চীনা নারী। দেখভাল করছেন প্রয়াত প্রেমিকের অসহায় মা-বাবাকে। ভালোবাসার এই অনন্য নজির স্থাপন করে অনলাইনে প্রশংসায় ভাসছেন ৩৪ বছরের ওয়াং তিং। তিনি চীনের মধ্যাঞ্চলের হুনান প্রদেশের বাসিন্দা। তার প্রয়াত প্রেমিকের নাম জাং জি।
২০১৬ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান জাং। তার আগে কয়েক বছর একসঙ্গে ছিলেন ওয়াং ও জাং।
জাং একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর ওয়াং জানতে পারেন- জাংয়ের কর্মচারীদের বেতন পাওনা আছে, তিনি যেসব পণ্য কিনেছেন; সেগুলোর দামও পরিশোধ করা বাকি এবং জাং তার বন্ধুদের কাছ থেকেও ঋণ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে জাংয়ের ঋণের পরিমাণ ছয় লাখ ইউয়ান (৮২ হাজার মার্কিন ডলার)।

ওয়াং বলেন, চীনা বিশ্বাস অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার সব ঋণ বাতিল হয়ে যায়; এমনকি তিনি যখন তার প্রয়াত প্রেমিকের রেখে যাওয়া ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ নেন, তখন তার চারপাশের অনেকে তাকে এটা না করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওয়াং তার মৃত প্রেমিকের ঋণ পরিশোধ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। কারণ জাংয়ের মা-বাবার পক্ষে ছেলের ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না। বয়স্ক এই দম্পতির বার্ষিক আয় মাত্র ৫০ হাজার ইউয়ান।

ওয়াং বলেন- ‘যদি আমি ঋণ পরিশোধ না করি, তাহলে ওইসব মানুষ কীভাবে তাদের সন্তান ও বয়স্কদের দেখভাল করবে! আমাকে জাংয়ের জীবনের গল্প সুন্দরভাবে শেষ করতেই হতো।’ কারণ ওয়াং চাননি তার মৃত প্রেমিককে মানুষ একজন অসৎ মানুষ হিসেবে মনে রাখুক। এ জন্য ওয়াং প্রথমেই তার জমানো দুই লাখ ইউয়ান ব্যয় করেন। ঋণ পরিশোধ করতে ওয়াং তার বন্ধুদের থেকে আরও ৬০ হাজার ইউয়ান ধার করেন। এমনকি নিজের আয় বৃদ্ধি করতে তিনি অন্যান্য প্রদেশেও কাজ করা শুরু করেন।
শুধু ঋণ পরিশোধই নয়; বরং ওয়াং তার প্রয়াত প্রেমিকের মা-বাবা ও একজন চাচার দেখভালও করতে থাকেন।
জাংয়ের মৃত্যুর পর তার মা সন্তানের শোকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে সুস্থ করতে ওয়াং প্রতিবছর বয়স্ক ওই নারীকে বেড়াতে নিয়ে যান। জাংয়ের বাবার হৃদ্রোগের চিকিৎসার খরচও বহন করেন ওয়াং। জাংয়ের এক চাচারও খোঁজ রাখেন ওয়াং। বছরে কয়েকবার তার বাড়িতে যান। জাংয়ের এই চাচার একমাত্র ছেলে মানসিক রোগে ভুগছেন।

২০২০ সালে ওয়াং বিয়ে করেছেন। বিয়েতে সাবেক প্রেমিকের মা-বাবাকে দাওয়াত করেছিলেন। তাদের বলেছিলেন, ‘আপনারা সব সময় আমার মা-বাবা হয়ে থাকবেন। আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়ে থাকবেন। আমার ছয়জন মা-বাবা হবে।’
ওয়াংয়ের উদারতা ও দায়িত্ববোধের এই গল্প অনলাইনে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। একজন লিখেছেন, ‘তিনি একজন বিশ্বস্ত ও নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। নিশ্চয়ই তার সাবেক প্রেমিকের মা-বাবা ছেলের মৃত্যুর আগে ওয়াংয়ের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেছেন।’ আরেকজন লিখেছেন- ‘তার স্বামীর সৌভাগ্য যে, এমন একজনকে বিয়ে করতে পেরেছেন।’
কেউ কেউ ওয়াংকে ‘প্রেমকাতর’ বলে কটাক্ষও করেছেন। তবে ওয়াংয়ের উদারতা এতে খাটো হয়ে যায় না।
ওয়াং গত মাসেই এক শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার ইউয়ান দান করেছেন।
ওয়াং এখন দুটি কোম্পানির মালিক। একটি খাবার উৎপাদন করে এবং অন্যটি পর্যটন ব্যবসা। কেউ কেউ বলেছেন, অন্যের প্রতি দয়ালু হওয়ার পুরস্কার হিসেবে ওয়াং তার ব্যবসায় সাফল্য পাচ্ছেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মৃত প্রেমিকের সব ঋণ শোধ করলেন চীনা প্রেমিকা

আপডেট সময় : ০৬:২৭:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক: গাড়ি দুর্ঘটনায় ৯ বছর আগে মারা গেছেন প্রেমিক। প্রেমিকের প্রায় ছয় লাখ ইউয়ান ঋণ শোধ করেছেন এক চীনা নারী। দেখভাল করছেন প্রয়াত প্রেমিকের অসহায় মা-বাবাকে। ভালোবাসার এই অনন্য নজির স্থাপন করে অনলাইনে প্রশংসায় ভাসছেন ৩৪ বছরের ওয়াং তিং। তিনি চীনের মধ্যাঞ্চলের হুনান প্রদেশের বাসিন্দা। তার প্রয়াত প্রেমিকের নাম জাং জি।
২০১৬ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান জাং। তার আগে কয়েক বছর একসঙ্গে ছিলেন ওয়াং ও জাং।
জাং একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর ওয়াং জানতে পারেন- জাংয়ের কর্মচারীদের বেতন পাওনা আছে, তিনি যেসব পণ্য কিনেছেন; সেগুলোর দামও পরিশোধ করা বাকি এবং জাং তার বন্ধুদের কাছ থেকেও ঋণ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে জাংয়ের ঋণের পরিমাণ ছয় লাখ ইউয়ান (৮২ হাজার মার্কিন ডলার)।

ওয়াং বলেন, চীনা বিশ্বাস অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার সব ঋণ বাতিল হয়ে যায়; এমনকি তিনি যখন তার প্রয়াত প্রেমিকের রেখে যাওয়া ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ নেন, তখন তার চারপাশের অনেকে তাকে এটা না করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওয়াং তার মৃত প্রেমিকের ঋণ পরিশোধ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। কারণ জাংয়ের মা-বাবার পক্ষে ছেলের ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না। বয়স্ক এই দম্পতির বার্ষিক আয় মাত্র ৫০ হাজার ইউয়ান।

ওয়াং বলেন- ‘যদি আমি ঋণ পরিশোধ না করি, তাহলে ওইসব মানুষ কীভাবে তাদের সন্তান ও বয়স্কদের দেখভাল করবে! আমাকে জাংয়ের জীবনের গল্প সুন্দরভাবে শেষ করতেই হতো।’ কারণ ওয়াং চাননি তার মৃত প্রেমিককে মানুষ একজন অসৎ মানুষ হিসেবে মনে রাখুক। এ জন্য ওয়াং প্রথমেই তার জমানো দুই লাখ ইউয়ান ব্যয় করেন। ঋণ পরিশোধ করতে ওয়াং তার বন্ধুদের থেকে আরও ৬০ হাজার ইউয়ান ধার করেন। এমনকি নিজের আয় বৃদ্ধি করতে তিনি অন্যান্য প্রদেশেও কাজ করা শুরু করেন।
শুধু ঋণ পরিশোধই নয়; বরং ওয়াং তার প্রয়াত প্রেমিকের মা-বাবা ও একজন চাচার দেখভালও করতে থাকেন।
জাংয়ের মৃত্যুর পর তার মা সন্তানের শোকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে সুস্থ করতে ওয়াং প্রতিবছর বয়স্ক ওই নারীকে বেড়াতে নিয়ে যান। জাংয়ের বাবার হৃদ্রোগের চিকিৎসার খরচও বহন করেন ওয়াং। জাংয়ের এক চাচারও খোঁজ রাখেন ওয়াং। বছরে কয়েকবার তার বাড়িতে যান। জাংয়ের এই চাচার একমাত্র ছেলে মানসিক রোগে ভুগছেন।

২০২০ সালে ওয়াং বিয়ে করেছেন। বিয়েতে সাবেক প্রেমিকের মা-বাবাকে দাওয়াত করেছিলেন। তাদের বলেছিলেন, ‘আপনারা সব সময় আমার মা-বাবা হয়ে থাকবেন। আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়ে থাকবেন। আমার ছয়জন মা-বাবা হবে।’
ওয়াংয়ের উদারতা ও দায়িত্ববোধের এই গল্প অনলাইনে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। একজন লিখেছেন, ‘তিনি একজন বিশ্বস্ত ও নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। নিশ্চয়ই তার সাবেক প্রেমিকের মা-বাবা ছেলের মৃত্যুর আগে ওয়াংয়ের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেছেন।’ আরেকজন লিখেছেন- ‘তার স্বামীর সৌভাগ্য যে, এমন একজনকে বিয়ে করতে পেরেছেন।’
কেউ কেউ ওয়াংকে ‘প্রেমকাতর’ বলে কটাক্ষও করেছেন। তবে ওয়াংয়ের উদারতা এতে খাটো হয়ে যায় না।
ওয়াং গত মাসেই এক শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার ইউয়ান দান করেছেন।
ওয়াং এখন দুটি কোম্পানির মালিক। একটি খাবার উৎপাদন করে এবং অন্যটি পর্যটন ব্যবসা। কেউ কেউ বলেছেন, অন্যের প্রতি দয়ালু হওয়ার পুরস্কার হিসেবে ওয়াং তার ব্যবসায় সাফল্য পাচ্ছেন।