নারী ও শিশু ডেস্ক: সারা বিশ্বে মুসলিম নারীদের বৈশিষ্ট্যমূলক একটি পোশাক হলো হিজাব বা হেড কভার। হিজাব বলতে মূলত মাথা ঢাকার একখণ্ড কাপড় বোঝায়। মাথা ঢাকা একটি ইসলাম ধর্মীয় বিধান হলেও বিশেষ করে পশ্চিমে এটি এখন মুসলিম নারীদের আত্মপরিচয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।
বিশ্বজুড়ে মুসলিম নারীরা বিভিন্ন ধরনের হিজাব পরেন। ইসলামের পর্দার বিধান অনুযায়ী হিজাব শালীনতা বজায় রাখতে এবং বখাটেদের হয়রানি থেকে বাঁচতে সহায়তা করে। তবে এটি পরা সব মুসলিম দেশে বাধ্যতামূলক নয়। ইরান ও ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে মুসলিম নারীদের হিজাব পরিধান আইন করে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব হিজাব দিবস পালিত হয়। বিশ্বব্যাপী মুসলিম নারীদের মধ্যে যারা হিজাব পরেন তাদের প্রতি সম্মান জানাতে এটি পালন করা হয়। এটি বিভিন্ন পটভূমি ও ধর্মের নারীদের হিজাব পরে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য উৎসাহিত করারও একটি দিন।
হিজাব কী: হিজাব এক ধরনের মাথার স্কার্ফ, এই স্কার্ফ মাথার পাশাপাশি গলাও ঢেকে রাখে। ‘হিজাব’ শব্দটির অর্থ মূলত ‘পর্দা’ বা ‘বিভাজন’। হিজাব বিভিন্ন স্টাইল এবং রঙের হয়। এখন নারীরা অনেক ফ্যাশনেবল হিজাব করেন।
ইসলামের বিধান অনুযায়ী, রক্তের সম্পর্কীয় আত্মীয় নন (গায়রে মাহরুম) শুধু এমন ব্যক্তিদের সামনেই হিজাব পরতে হয়। কিছু মুসলিম নারী অবশ্য সাংস্কৃতিক সংহতি প্রচারের অংশ হিসেবে হিজাব পরেন। বেশির ভাগই পরেন ধর্মীয় বিশ্বাস ও বাধ্যবাধকতা থেকে।
২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব হিজাব দিবসে নিউইয়র্কে বর্ণবাদ ও ইসলামভীতির বিরুদ্ধে সংহতি সমাবেশ করেন মুসলিম নারীরা। ছবি: আনাদলু এজেন্সির সৌজন্যে
কীভাবে এলো হিজাব দিবস: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের বাসিন্দা নাজমা খান ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রথম বিশ্ব হিজাব দিবস শুরু করেন। তিনি সব ধর্মের নারীদের একদিনের জন্য হিজাবের অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে ধর্মীয় সহনশীলতা এবং বোঝাপড়া বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এটি শুরু করেছিলেন। নিউইয়র্ক শহরে বেড়ে ওঠার সময়, স্কুলে হিজাব পরার কারণে অনেক বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছিলেন নাজমা। বিশেষ করে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বা নাইন-ইলেভেনের পর এই ধরনের বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। এই ধরনের বৈষম্য নির্মূল করার লক্ষ্যেই হিজাব দিবস পালন শুরু করেন নাজমা। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১৯০টি দেশে বিশ্ব হিজাব দিবস পালিত হয়।
যেভাবে পালিত হয়: এই দিনে অংশগ্রহণের সেরা উপায় হলো হিজাব পরা। আপনার নারী বন্ধু এবং আত্মীয়দেরও একই কাজ করতে উৎসাহিত করতে পারেন। আপনি অন্যান্য ধরনের হিজাব সম্পর্কেও জানতে পারেন, যেমন—নিকাব, বোরকা, শায়লা, খিমার এবং চাদর। ইসলামে পর্দার বিধান সম্পর্কে জানারও একটি দিন এটি।
এ বছরের হিজাব দিবসের থিম হলো ‘#ঐরলধনরংটহংরষবহপবফ’। হিজাব পরিধানকারী নারীদের কণ্ঠস্বরকে জোরালোভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানাতেই এই প্রতিপাদ্য। এই প্রতিপাদ্য হিজাবকে ক্ষমতায়ন, পরিচয় এবং সংহতির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে।
নিউইয়র্কের সিনেট বিশ্ব হিজাব দিবসকে সম্প্রতি স্বীকৃতি দিয়েছে। সিনেটর রক্সান পারসউদ সিনেটে এটির প্রস্তাব করেন। ধর্মীয় সহনশীলতা, সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া এবং আন্তর্জাতিক সংহতিকে উৎসাহিত করতে এই প্রস্তাব আনেন তিনি।
বিশ্ব হিজাব দিবসের প্রতিষ্ঠাতা নাজমা খান বলেন, ‘হিজাবি নারীদের অধিকার বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমানভাবে নজরদারির মধ্যে রয়েছে, এই থিমটি তাদের কণ্ঠস্বরকে শোনা এবং সম্মান জানানোর প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
দিবসটি উদ্যাপনের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়। যেমন-ভার্চুয়াল ও সরাসরি আলোচনা, অনলাইন প্রচারাভিযান, কর্মশালা এবং ওয়েবিনার। এ ছাড়া, ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য একটি বৈশ্বিক অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করার আহ্বান জানানো হয়।
বিশ্ব হিজাব দিবসের অংশ হিসেবে এবার ‘ঐরলধনরং টহংরষবহপবফ’ শীর্ষক একটি গ্লোবাল ভার্চুয়াল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে হিজাবি নারীদের অভিজ্ঞতা, সাফল্য এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বিশ্ব হিজাব দিবসের লক্ষ্য হলো—হিজাব সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করা এবং মুসলিম নারীদের প্রতি সম্মান ও সমর্থন প্রদর্শন করা। এই দিবসটি বিশ্বব্যাপী ১৫০ টিরও বেশি দেশে পালিত হয় এবং এটি ধর্মীয় স্বাধীনতা, নারীর অধিকার এবং সাংস্কৃতিক বোঝাপড়ার প্রচার করে।