প্রত্যাশা ডেস্ক: ভারতে ওয়াকফ আইন সংশোধনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব যে নিন্দা জানিয়েছেন, তার সমালোচনা করেছে ভারত।
এনডিটিভি লিখেছে, ঢাকার মন্তব্যকে ‘অযাচিত’ ও ‘লোক দেখানো নৈতিকতা’ বর্ণনা করে দিল্লি তার পূর্বের প্রতিবেশীকে পরামর্শ দিয়েছে- যাতে তারা নিজেদের দেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দিকে মনোযোগ দেয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে বাংলাদেশকে জড়ানোর যে কোনো প্রচেষ্টাকে আমরা জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা মুসলমানদের ওপর হামলা এবং তাদের জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির তীব্র নিন্দা জানাই। সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।’
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘ওই মন্তব্য ভারতের উদ্বেগের সঙ্গে তুলনা টানার একপ্রকার অসৎ ও প্রচ্ছন্ন চেষ্টা, যেখানে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নিপীড়নের ঘটনায় অপরাধীরা এখনও অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
পাশাপাশি বাংলাদেশের ‘সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায়’ নজর দিতে বলেছে দিল্লি।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত মাসে দেশটির পার্লামেন্টে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ‘২ হাজার ৪০০টি নৃশংসতার’ ঘটনা ঘটেছে। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত এই সংখ্যা ‘৭২’।
এনডিটিভি লিখেছে, ভারতের এই প্রতিক্রিয়া এমন একদিনে এসেছে, যখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সহিংসতার কবলে পড়া মুর্শিদাবাদে সফরের ঘোষণা দিয়েছেন এবং ‘যেকোনো মূল্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার’ ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় পরিস্থিতি ‘ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে’ দাবি করে রাজ্যপালকে তার সফর স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের প্রতিবেদনের বরাতে এনডিটিভি লিখেছে, মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের থানা এলাকায় ৪ এপ্রিল শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল; কিন্তু ৮ এপ্রিল উমরপুরে পাঁচ হাজার জনতা মহাসড়ক অবরোধ করলে তা সহিংস হয়ে ওঠে। পুলিশের ওপর ইট, লোহার রড, ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি গাড়িকেও নিশানা করা হয়।
১১ এপ্রিল সুতি ও সমশেরগঞ্জে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যার মধ্যে সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করা হয়। পুলিশের ভাষ্য, কর্মকর্তা ও সাধারণ নাগরিক- উভয়কেই রক্ষা করতেই সুতির সাজুর মোরে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ।
বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ১১ ও ১২ এপ্রিল ওই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, হামলা ও ভাঙচুর মিলিয়ে যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জুড়ে এখনও পর্যন্ত ২৭৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে বক্তব্য: ২০২০ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। এর অধীনে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহণ করতে পারতো। গত সপ্তাহে বাংলাদেশকে দেওয়া সেই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত।
ভারত এই পদক্ষেপ কেন নিলো, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ভারতের বন্দরগুলোতে যানজট তৈরি হচ্ছে। পণ্য পরিবহণ করতে বহু সময় লেগে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ওই জট কাটাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও নেপাল-ভুটানে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। অর্থাৎ ওই দুই দেশে ভারতের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য করতে পারবে বাংলাদেশ।
রণধীর আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকেও জানিয়েছেন ভারত চায় বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্ক। আমরা গণতান্ত্রিক সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা বাংলাদেশ গঠনের পাশে আছি।
এদিকে ওপি জিন্দল বিশ্ববিদ্য়ালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত জানিয়েছেন, ভারতের এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। দুই দেশের মধ্যে যে টানাপড়েন চলছে, তার জেরেই ভারত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মতে, বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থ রক্ষার আরো একটি নজির। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিষয়ে কোনো আপস করেন না। এই পদক্ষেপ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত করবে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে