নিজস্ব প্রতিবেদক : মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দেওয়া ঘর কারা হাতুড়ি শাবল দিয়ে ভেঙে মিডিয়ায় প্রচার করেছে, সেই তালিকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “সব থেকে দুর্ভাগ্য হল, আমি যখন সিদ্ধান্ত নিলাম, প্রত্যেকটা মানুষকে আমরা ঘর করে দেব, আমাদের দেশের কিছু মানুষ এত জঘন্য চরিত্রের, আমি কয়েকটা জায়গায় হঠাৎ দেখলাম যে কি ঘর ভেঙে পড়ছে, কোন জায়গায় ভাঙা ছবি- ইত্যাদি দেখার পরে পুরো সার্ভে করালাম কোথায় কী হচ্ছে।
“সেখানে আমরা প্রায় দেড় লাখের মতো ঘর তৈরি করে দিয়েছি। ৩০০টা ঘর বিভিন্ন এলাকায় কিছু মানুষ নিজে থেকে যেয়ে হাতুড়ি, শাবল দিয়ে সেগুলো ভেঙে ভেঙে তারপর মিডিয়ায় সেগুলোর ছবি তুলে দিচ্ছে। এখন তাদের নাম ধাম এগুলো একদম এনকোয়ারি করে সব বের করা হয়ে গেছে।”
সেই পুরো প্রতিবেদন এখন হাতে আছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “যারা, একটা গরিবের জন্য ঘর করে দিচ্ছি, তারা এইভাবে যে ভাঙতে পারে, সেই ছবিগুলো দেখলেৃ ।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করে তাদের জমিসহ ঘর উপহার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু বর্ষার শুরুতে কয়েকটি স্থানে ভূমি ধসে ঘর ভেঙে পড়ায় এবং কয়েকটি ঘরে ফাটল দেখা দেওয়ায় নির্মাণের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতিরও কিছু অভিযোগ আসে।
অভিযোগ তদন্ত করে সে সময় পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়। অনিয়ম যাচাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঁচটি দলকে বাড়িগুলোর নির্মাণশৈলী ও গুণগতমান, অনুমোদিত ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়েছে কিনা, তা যাচাই করে ছবিসহ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে তারা জেলায় জেলায় গিয়ে প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।
সম্প্রতি খবর আসে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামে ওবাইদুল বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি তার বরাদ্দ পাওয়া ঘর ‘পছন্দ না হওয়ায়’ ভেঙে ফেলেছেন । আর্থিক ভাবে সচ্ছল ওবাইদুল কীভাবে ওই ঘর পেলেন, তা নিয়েও তখন এলাকাবাসীর মধ্যে প্রশ্ন আসে।
ঘর ভেঙে পড়ার পেছনের কারণ মিডিয়া অনুসন্ধান করেনি অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সব থেকে অবাক লাগে, মিডিয়ায় যারা এগুলো ধারণ করে, আবার প্রচার করে, তারা কিন্তু এটা কীভাবে হল- সেটা কিন্তু না..।
“কয়েকটা জায়গায় গেছে, যেমন এক জায়গায় ৬০০ ঘর, সেখানে হয়ত ৩/৪টা ঘর ওই যে প্রবল বৃষ্টি হল, যখন ওই জন্য মাটি ধসে কয়েকটা ঘর নষ্ট হয়েছে। আর মাত্র নয়টা জায়গায় আমরা পেয়েছিলাম যেখানে কিছুটা দুর্নীতির একটা অভিযোগ পাওয়া গেছে, মাত্র নয়টা জায়গায় তাও।”
আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই ‘আন্তরিকতার সঙ্গে’ কাজ করেছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা মনে করেছে এটা… আমাদের যাদের অফিসারদের উপর দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছিলাম, আমাদের ইউএনও এবং ডিসিসহ সমস্ত সরকারি কর্মচারীরা ছিল, তারা করেছে।
“অনেকে নিজেরা এগিয়ে এসেছে এই ঘরগুলো করায় সহযোগিতা করার জন্য। এমনকি যারা ইট তৈরি করে, তারাও এগিয়ে এসেছে, অল্প পয়সায় তারা (ইট) দিয়ে দিয়েছে। এভাবে সবাইৃ সবার সহযোগিতা, এই আন্তরিকতাটাই বেশি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “কিন্তু এর মধ্যে দুষ্টু বুদ্ধির কিছুৃ এটাই হচ্ছে সবচেয়ে কষ্টকর। যে যখন এটা গরিবের ঘর, সেখানে হাত দেয় কীভাবে?” আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় নেতা-কর্মীদের আরও সর্তক থাকার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যাই হোক, আমরা সেগুলো মোকাবেলা করেছি। তবে আমাদের নেতা-কর্মীদের এ ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকা দরকার।”
মহামারীতে আওয়ামী লীগের মতো কেউ পাশে দাঁড়ায়নি: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষমতাসীন দল ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মতে আর কোনো রাজনৈতিক দলকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, “এবারে করোনাভাইরাসের সময়ে আমাদের দলের লোকেরা এবং আমাদের সকল সহযোগী সংগঠন যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা কিন্তু আর কোনো রাজনৈতিক দলকে এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখিনি। “মূলত কেউ দাঁড়ায়ই নাই। তাদের কোনো আগ্রহই ছিল না। হ্যাঁ, ওই প্রতিদিন টেলিভিশনে বিবৃতি দেওয়া, বক্তব্য দেওয়া আর প্রতিটি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে একটু সমালোচনা করা ছাড়াৃ বিরোধী দলগুলোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের ওই একটাই কাজ ছিল, আওয়ামী লীগের দোষারোপ করা। এটা ছাড়া আর বোধ হয় আর কোনো কাজ মানুষের জন্য তারা করে নাই।”
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সহযোগী সংগঠনগুলো এবং সরকারের সবগুলো প্রতিষ্ঠান ‘খুব ভালো কাজ করেছে’ বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “তবে কখনো একটা সরকারের পক্ষে এককভাবে এই ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব না। আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে একটাই কারণে, যে আমাদের একটা শক্তিশালী সংগঠন তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত আছে। “আর এটা আছে বলেই কিন্তু আমরা এটা করতে সক্ষম হয়েছি। যেটা আমার বিশ্বাস। জানি এই কথা হয়ত অন্য কেউ লিখবেও না, বলবেও না, কিন্তু আমি যেটা বলব সেটা হল বাস্তবতা, যে এককভাবে কখনো শুধুমাত্র সরকারি লোক দিয়ে সব কিছু সম্ভব হয় না।”
প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারী, পুলিশ বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, আনসার বাহিনী এবং বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে বলে তাদের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই এদেশের উন্নতি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই এই করোনা মোকাবেলা সম্ভব হয়েছে আর আওয়ামী লীগ আছে বলেই কিন্তু মানুষ অন্তত সেবাটা পাচ্ছে।”
সমালোচকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অতীতে আমাদের দেশের কী অবস্থা ছিল? ১৯৭৫ এর পর থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত কী অবস্থাটা ছিল সেটা যেন তারা একটু উপলব্ধি করে। “তবে কিছু ভাড়াটে লোক তো আছেই সারাক্ষণ মাইক লাগিয়ে একটা বলতেই থাকবে। তো সেটা যে যা বলে বলুক, আমাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাস আছে, আমরা সেই বিশ্বাস নিয়েই চলি।” সভার শুরুতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আমাদের কার্যনির্বাহী সংসদের মিটিং সাধারণত চার মাস পরপরই করতাম বা দুই মাস পরপরই করতাম। ওই দুই মাস থেকে তিন মাসের মধ্যে সব সময় বসতাম, এটা নিয়মিত করতে পারতাম। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের কারণে আমরা সময়মতো সভাটা করতে পারিনি। এবং এটা করা বোধহয় সমীচীনও হত না।” এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এবং টিকাদানের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমাদের নির্বাচনও সামনে, আর সংগঠনটাকেও আমাদের করতে হবে।”