ঢাকা ০৪:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা মুছে ফেলা যাবে না: মেনন

  • আপডেট সময় : ০২:১৬:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুন ২০২১
  • ১১৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উৎসবে স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্রমধারা ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বদানের বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপিত হলেও ওই লড়াইয়ে বামপন্থীদের ভূমিকার কথা কেবল অনুল্লেখিতই নয়, অস্বীকৃতও বটে বলে মনে করেন বাম নেতা রাশেদ খান মেনন।
গতকাল বুধবার ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির ৫০ বছর এবং উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির পুনরুত্থান’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন এসব কথা বলেন। ১৯৭১-এর ২ জুন ভারতের কলকাতায় এদেশের বামপন্থীদের সমন্বয়ে মওলানা ভাসানীকে প্রধান করে গঠিত ‘জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি’র ৫০ বছর উপলক্ষে ওই ওয়েবিনারের আয়োজক ছিল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। মেনন আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ’৭১-এর ২ জুন ছিল একটি অনবদ্য দিন। এদিন এদেশের বামপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধকালে বাম মহলে যে বিভ্রান্তি ছিল তা কাটিয়ে জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি গঠন করেছিলেন। তিনি বলেন, এই কমিটি একদিকে যেমন প্রবাসী সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন করেছিল, তেমনি ভারতের মাটিতে ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শত বাধা পেরিয়ে ১৪ টি স্থানে নিজস্ব লড়াই পরিচালনা এবং মুক্তাঞ্চল গঠন করেছিল।
মেনন বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয়তাবাদী ক্রমধারা উল্লেখ করা হলেও মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস এবং তার প্রাক-পর্বে বামপন্থীদের বলিষ্ঠ এবং অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকাকে কেবল অনুল্লেখ করাই হচ্ছে না, অস্বীকারও করা হচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস কথা বলবে। মুক্তিযুদ্ধে এবং তার প্রাক-পর্বে বামপন্থীদের ভূমিকাকে যতই অস্বীকার করা হোক, এক সময় দেশবাসী তা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। এটা অমোঘ সত্য।’
মেনন আরও বলেন, ‘বর্তমানে দেশকে যে ধারায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গঠিত বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখতে এবং জনগণের মালিকানার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের সংবিধান রক্ষার সংগ্রামে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ সভাপতির বক্তব্যে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধে মওলানা ভাসানীর অবদান ছিল অনন্য। তিনি মাও সেতুংকে চিঠিতে বলেছিলেন, ‘চীনের অস্ত্র দিয়ে যদি বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করা হয়, তাহলে সেই দেশকে কী করে সমাজতান্ত্রিক বলা যায়?’’।
ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)’র পলিটব্যুরোর সদস্য মহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক বিপদ সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি। সাম্রাজ্যবাদ দেশে দেশে আধিপত্য বিস্তার ও লুণ্ঠন ও নিজেদের ফায়দা লুটতে ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।’ সিপিআই (এম) কেন্দ্রীয় সদস্য গৌতম দাস বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করছে নয়া উদারবাদ ও ভোগবাদী দর্শন। নতুন প্রজন্মকে এর খপ্পর থেকে বের করে আনতে হবে। তা না হলে সাম্প্রদায়িক বিপদ রুখা যাবে না।’ পলিটব্যুরোর সদস্য আলী আহমদ এনামূল হক ইমরানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য শামসুল হুদা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা মুছে ফেলা যাবে না: মেনন

আপডেট সময় : ০২:১৬:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুন ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উৎসবে স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্রমধারা ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বদানের বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপিত হলেও ওই লড়াইয়ে বামপন্থীদের ভূমিকার কথা কেবল অনুল্লেখিতই নয়, অস্বীকৃতও বটে বলে মনে করেন বাম নেতা রাশেদ খান মেনন।
গতকাল বুধবার ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির ৫০ বছর এবং উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির পুনরুত্থান’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন এসব কথা বলেন। ১৯৭১-এর ২ জুন ভারতের কলকাতায় এদেশের বামপন্থীদের সমন্বয়ে মওলানা ভাসানীকে প্রধান করে গঠিত ‘জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি’র ৫০ বছর উপলক্ষে ওই ওয়েবিনারের আয়োজক ছিল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। মেনন আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ’৭১-এর ২ জুন ছিল একটি অনবদ্য দিন। এদিন এদেশের বামপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধকালে বাম মহলে যে বিভ্রান্তি ছিল তা কাটিয়ে জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি গঠন করেছিলেন। তিনি বলেন, এই কমিটি একদিকে যেমন প্রবাসী সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন করেছিল, তেমনি ভারতের মাটিতে ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শত বাধা পেরিয়ে ১৪ টি স্থানে নিজস্ব লড়াই পরিচালনা এবং মুক্তাঞ্চল গঠন করেছিল।
মেনন বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয়তাবাদী ক্রমধারা উল্লেখ করা হলেও মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস এবং তার প্রাক-পর্বে বামপন্থীদের বলিষ্ঠ এবং অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকাকে কেবল অনুল্লেখ করাই হচ্ছে না, অস্বীকারও করা হচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস কথা বলবে। মুক্তিযুদ্ধে এবং তার প্রাক-পর্বে বামপন্থীদের ভূমিকাকে যতই অস্বীকার করা হোক, এক সময় দেশবাসী তা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। এটা অমোঘ সত্য।’
মেনন আরও বলেন, ‘বর্তমানে দেশকে যে ধারায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গঠিত বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখতে এবং জনগণের মালিকানার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের সংবিধান রক্ষার সংগ্রামে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ সভাপতির বক্তব্যে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধে মওলানা ভাসানীর অবদান ছিল অনন্য। তিনি মাও সেতুংকে চিঠিতে বলেছিলেন, ‘চীনের অস্ত্র দিয়ে যদি বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করা হয়, তাহলে সেই দেশকে কী করে সমাজতান্ত্রিক বলা যায়?’’।
ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)’র পলিটব্যুরোর সদস্য মহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক বিপদ সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি। সাম্রাজ্যবাদ দেশে দেশে আধিপত্য বিস্তার ও লুণ্ঠন ও নিজেদের ফায়দা লুটতে ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।’ সিপিআই (এম) কেন্দ্রীয় সদস্য গৌতম দাস বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করছে নয়া উদারবাদ ও ভোগবাদী দর্শন। নতুন প্রজন্মকে এর খপ্পর থেকে বের করে আনতে হবে। তা না হলে সাম্প্রদায়িক বিপদ রুখা যাবে না।’ পলিটব্যুরোর সদস্য আলী আহমদ এনামূল হক ইমরানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য শামসুল হুদা।