প্রত্যাশা ডেস্ক: মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবারের ভূমিকম্পের প্রভাবে প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের সাগাইং শহরের উত্তর-পশ্চিমে ভূগর্ভস্থ অগভীরে ৭.৭ মাত্রার এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। কয়েক মিনিট পর একই এলাকায় ৬.৪ মাত্রার আফটারশক অনুভূত হয়।
ব্যাংককে ভবন ধসে নিহত ৩: থাইল্যান্ডের ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন ৩০ তলা ভবন সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। উপপ্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচাইয়াচাই জানান, এতে অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে কয়েক ডজন শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ৮১ জন আটকা রয়েছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সরকারি অফিসের জন্য নির্মিত বিশাল এই ভবনটি মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ব্যাং সু জেলার ডেপুটি পুলিশ প্রধান ওরাপাত সুকথাই বলেন, আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাহায্যের জন্য মানুষের আর্তনাদ শুনতে পেয়েছি। শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ: মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোর একটি হাসপাতালে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্ডালয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ি ও মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মান্ডালয় জেনারেল হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, এত বেশি সংখ্যক আহত আসছেন যে নার্সদের কটন সোয়াব ফুরিয়ে গেছে। দাঁড়ানোর জায়গাও নেই।
৪৫ বছর বয়সী ক্যি শুইন নামের এক নারী বলেন, তার ৩ বছর বয়সী মেয়ে ভূমিকম্পে মারা গেছে। তিনি বলেন, আমি নিচে নামতে দৌড় দেই, কিন্তু সময়মতো পৌঁছাতে পারিনি। সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাচ্ছি না।
সরকারি ভবন ধস, বিমানবন্দর অচল: ইয়াঙ্গুন টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেপিদো বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার ধসে পড়েছে। বিমানবন্দরটি বন্ধ রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভবনও ধসে পড়েছে বলে জানা গেছে।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বিরল এক পদক্ষেপ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা চেয়েছে। দেশটির ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ভিয়েতনামেও আতঙ্ক: থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ব্যাংককে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। ব্যাংকক স্টক এক্সচেঞ্জ বিকালের ট্রেডিং বন্ধ রেখেছে। ভিয়েতনামের হ্যানয় ও হো চি মিন সিটিতে মানুষ উঁচু ভবন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন।
চীন-মালয়েশিয়াতেও কম্পন: চীনের রুইলি শহরে জরুরি কর্মীরা ধ্বংসস্তূপ সরানোর চেষ্টা করছেন। মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে কর্মরতরা ভবনের দোলা অনুভব করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারের দ্রুত নগরায়ণ ও দুর্বল অবকাঠামো ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। ২০১৬ সালে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তিনজন নিহত হয়েছিলেন।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স, ব্লুমবার্গ।
ব্যাংককে ধসে পড়া ভবনে ৮১ নির্মাণ শ্রমিক নিখোঁজ: থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ায় ৮১ জন নির্মাণ শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। থাইল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী এই সংখ্যা জানিয়েছেন। এর আগে দেশটির জাতীয় জরুরি চিকিৎসা ইনস্টিটিউট (এনআইইএম) নিখোঁজ শ্রমিকের সংখ্যা ৭০ বলে জানিয়েছিল। শুরুতে সংস্থাটি ৪৩ জন নিখোঁজের খবর দিয়েছিল।
এনআইএমের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, ভবনটি ধসে পড়ার সময় সাইটে প্রায় ৩২০ শ্রমিক কাজ করছিলেন। তাদের মধ্যে ২০ জন লিফ্ট শ্যাফটে আটকা পড়েছেন।
ধসে পড়া ভবনটিতে কতজন নিহত হয়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। উদ্ধারকারীরা জীবিতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় ঘটনাস্থলেই একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুরে মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর প্রভাবে ব্যাংককের চাতুচাক এলাকার ৩০ তলা এই ভবনটি ধসে পড়ে। ভূমিকম্পের পর থেকেই ব্যাংকক ও আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়েতংটান সিনাওয়াত্রা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং উদ্ধার তৎপরতা ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকক কর্তৃপক্ষ শহরটিকে দুর্যোগ এলাকা ঘোষণা করেছে।
গত কয়েক ঘণ্টায় উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে কয়েকজনকে জীবিত অবস্থায় বের করে আনতে সক্ষম হয়েছেন। তবে ভবনটির অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দমকল কর্মকর্তারা।
থাইল্যান্ডের জরুরি চিকিৎসা সেবা বিভাগের প্রধান ড. আতচারা নিথিবুননাওয়াত বলেন, আমরা এখনও আশাবাদী যে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরো জীবিত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দল, চিকিৎসক ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন। নিখোঁজ শ্রমিকদের আত্মীয়স্বজনরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়েছেন এবং তাদের প্রিয়জনের খোঁজে ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছেন।
গত কয়েক বছরে ব্যাংককে নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ার এটিই সবচেয়ে বড় ঘটনা। ২০১৬ সালে শহরটির একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ে ১২ জন নিহত হয়েছিলেন।
ধসে পড়ল ঔপনিবেশিক আমলের সেতু: মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ইরাবতী নদীর ওপর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত আভা সেতু ধসে পড়েছে। শুক্রবার দেশটিতে পরপর দুবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এ ঘটনায় দেশটির বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে থাইল্যান্ডেও।
৯১ বছর বয়সী আভা সেতু পুরোনো সাগাইং সেতু নামেও পরিচিত। এটি মিয়ানমারের মান্দালয় ও সাগাইং অঞ্চলে ইরাবতী নদীর ওপর বিস্তৃত। আজ স্থানীয় সময় বিকেলে ভূমিকম্পে সেতুটি ভেঙে পড়ে।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সাগাইং শহরের কাছে। রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৭ তীব্রতার এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের মান্দালয়, নেপিডো এবং অন্যান্য এলাকার বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়ে।