বিদেশের খবর ডেস্ক : শুক্রবার মিয়ানরমারের সাগাইং অঞ্চলের তাবায়িন টাউনশিপের লেট ইয়েট কোনে গ্রামে সামরিক সরকারের বিমান হামলায় ১১ শিশু নিহত হয়েছে। হত্যাকা-ের প্রমাণ মুছে ফেলার জন্য বেশিরভাগ মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে ইয়ে-উ নামক স্থানে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দেয় জান্তা সৈন্যরা। স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে তথ্যটি জানিয়েছে ব্যাংককভিত্তিক মিয়ানমারের পত্রিকা ইরাবতী।
ইরাবতীর খবরে বলা হয়, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় লেট ইয়েট কোনে গ্রামের একটি সন্ন্যাসীর স্কুলে দুটি এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার হামলা চালায়। ঘটনাস্থলে সাত শিশু নিহত হয়। এছাড়াও তিন শিক্ষক এবং ১৪ ছাত্রসহ মোট ১৭ জন আহত হয়। পরবর্তিতে স্থল সেনারা গ্রামে অভিযান চালালে আরও দুই শিশু মারা যায়।
প্রাথমিক বিমান হামলায় নিহত সাত শিশুর মৃতদেহ এবং আহতদের রাতেই ইয়ে-ইউ-এর একটি ঐতিহ্যবাহী মেডিসিন হাসপাতালে নিয়ে যায় শাসক বাহিনী। পরের দিন ইয়ে-ইউ কবরস্থানে তাদের মৃতদেহ দাহ করা হয়। বিকেল ৪টার দিকে কবরস্থানে আরও দুটি লাশ দাহ করা হয়।
বিমান হামলার পর স্কুলটি পরিদর্শন করে আসা এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ‘গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া কিছু শিশুর শরীরের নিচের অংশ বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। একটি খ-িত শিশুকে মুড়িয়ে বাঁশের ঝুড়িতে রাখা হয়েছিল। ঝুড়িটি মিয়ানমারের সামরিক সৈন্যরা ব্যাকপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করেছিল। স্কুলের ভিতরে রক্তের বন্যার মতো অবস্থা ছিল। পাখায়, দেয়ালে এবং ছাদে, সমস্ত জায়গায় মাংসের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।’
লেট ইয়েট কোনের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘দুই সন্তানের বাবা-মা তাদের সন্তানদের সন্ধান করতে এসেছিলেন, কিন্তু তারা সন্তানদের পোশাক ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পায়নি। জান্তা সৈন্যরা শরীরের এক টুকরা অংশও রেখে যায়নি, তাই বাবা-মা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করতে পারেনি।’
ইয়ে-ইউ টাউনশিপ পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) জানায়, শনিবার সকাল ৬টার দিকে ইয়ে-ইউ কবরস্থানে চারটি ছেলে ও দুই মেয়ের মৃতদেহ, বিভিন্ন দেহের এক বস্তা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসহ দাহ করা হয় এবং আরও দুই ছেলেকে বিকেল ৪টায় দাহ করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় জান্তা সৈন্যরা গ্রামের এক বাসিন্দাকে তিনজন আহত শিক্ষক এবং আহত ১৪ শিশুর পাশাপাশি মৃত শিশুদের দেহ ইয়ে-ইউতে নিয়ে যেতে বাধ্য করে।
ইয়ে-ইউ-এর আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘শাসক বাহিনী ইয়ে-ইউতে ফিরে এসেছিল, মৃত এবং আহত শিশুদের উভয়কেই তারা জোর করে একটি গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছিল। ড্রাইভার ভেবেছিল লাশগুলো হয়তো সৈন্যদের। কিন্তু তিনি বস্তা খুলে শিশুদের দেখতে পেয়ে হতবাক হয়ে যান।’
আহত ব্যক্তিদের ইয়ে-ইউ-এর ঐতিহ্যবাহী মেডিসিন হাসপাতালে রাখা হয়েছে। সেখানে জান্তা সেনারা তাদের ঘাঁটি তৈরি করেছে। এর মধ্যে কিছু শিশু গুরুতর আহত হয়েছিল এবং তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়েছিল।
কোন ব্যাটালিয়নগুলি এই হত্যাকা-ের জন্য দায়ী তা স্পষ্ট নয়, তবে স্থানীয় প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলির ধারণা তারা ইয়াঙ্গুন কমান্ডের অধীনে ইয়াঙ্গুনের হামাউবি ভিত্তিক লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৭০১ এবং সাগাইং ভিত্তিক ডিভিশন ৩৩ এর অন্তর্গত। ছোট শিশু ছাড়াও, ১৩ এবং ১৬ বছর বয়সী দুই কিশোরসহ আরও সাত গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়েছিল। অন্য পাঁচজন নির্যাতিতদের মধ্যে এক মহিলাও আছে। তাদের বয়স ছিল ২২,৩১, ৩৪, ৩৭ এবং ৪৯ বছর। বাসিন্দাদের মতে, প্রতিরোধ বাহিনী গ্রামের মঠে অবস্থান করেছিল বলে অভিযোগ করে জান্তা সেনারা বিমান হামলা চালায়। জান্তার মায়াওয়াদি টিভি শনিবার এক নিউজকাস্টে বলেছে, ‘কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ) এবং পিডিএফগুলি লেট ইয়েট কোনের মাধ্যমে অস্ত্র পরিবহনের পরিকল্পনা করছে, এমন এক টিপ অফের প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী চেক করেছে এবং গ্রামের মঠটি ছিল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি সমর্থক ও পিডিএফ সদস্যদের গোপন আস্তানা। তারা স্থানীয় এবং ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে।
জান্তা আরও বলেছে, ‘কেআইএ এবং পিডিএফ গুলি বিনিময়ে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করায় বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা করা হয়েছিল। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, এটি জান্তা সেনাদের একতরফা হামলা।
বৃহস্পতি ও শনিবার শিশুহত্যার অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার জান্তা আর্টিলারি স্ট্রাইকে শান-কায়াহ সীমান্তে মোয়েবেতের একটি মঠে আশ্রয় নেওয়া ৭ এবং ১২ বছর বয়সী দুই বাস্তুচ্যুত বোন নিহত হয়েছে।
শনিবার সাগাইং অঞ্চলের কান্তবালু টাউনশিপে জান্তা সৈন্যদের গুলিতে ৫ বছরের এক বালক নিহত হয়।
মিয়ানমারে বিমান হামলায় ১১ শিশু নিহত, পোড়ানো হলো লাশ
ট্যাগস :
মিয়ানমারে বিমান হামলায় ১১ শিশু নিহত
জনপ্রিয় সংবাদ