আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের ইয়াংগনে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে অন্তত তিন জন নিহত ও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি এড়াতে তারা ওই ভবন থেকে লাফ দিয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশটিতে তীব্র রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অভ্যুত্থানের পর প্রায় প্রতিদিনই এ দেশটি সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ দেখেছে; কোথাও কোথাও সেনাবাহিনীর সঙ্গে তড়িঘড়ি করে গঠন করা স্থানীয় অনেক মিলিশিয়া বাহিনীর লড়াইও হয়েছে।
গত মঙ্গলবার নিরাপত্তা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ার ঘটনাটি ইয়াংগনের বোতাতং জেলায় ঘটেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাও। তাদের প্রতিবেদনে দেওয়া একটি ছবিতে একটি গলির রাস্তায় তিন ব্যক্তিকে স্থির পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আহত অন্য দুইজনকে একটি অ্যাম্বুলেন্স সরিয়ে নিয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত রেডিও ফ্রি এশিয়া (আরএফএ) তাদের ফেইসবুক পেইজে দেওয়া এক পোস্টে ঘটনায় সম্পৃক্ত চার পুরুষ ও এক নারীর সবাই শেষ পর্যন্ত মারা গেছেন বলে জানিয়েছে।
তাদের মধ্যে নিহত এক তরুণের বাবা আরএফএ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তার ২৭ বছরের ছেলেকে নিরাপত্তা বাহিনী ফেব্রুয়ারিতে একবার গ্রেপ্তার করেছিল, পরে তিনি ছেলেকে ছাড়িয়ে আনেন।
তিনি আরও জানান, অভ্যুত্থানের আগে তার ছেলের রাজনীতিতে কোনো আগ্রহই ছিল না। কিন্তু সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকে সে জান্তাবিরোধী প্রতিবাদে নামে। “তার পেছনে কোনো বড় সংগঠন ছিল না,” বলে ছেলেকে নিয়ে গর্বিত বলেও জানিয়েছেন তিনি। ২৯ বছর বয়সী যে তরুণী নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার স্বামী সোয়ে মিয়াত রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি এখনও তার স্ত্রীর মৃতদেহ পাননি।
গত মঙ্গলবার ইয়াংগনের বোতাতংয়ে সত্যিই কী ঘটেছে, তা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। এ প্রসঙ্গে মন্তব্যের জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। অভ্যুত্থানের পর মৃত্যু ও সহিংসতার খবরে অভ্যস্ত দেশটির অনেক নাগরিকও মঙ্গলবারের এ ঘটনায় স্তম্ভিত হয়েছেন।
ঘটনাটি নিয়ে অনেক মিমও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে; এর একটিতে পাঁচটি ছায়ামূর্তিকে একটি ভবন থেকে উজ্জ্বল হলুদ সূর্যমুখীর ক্ষেতে লাফিয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের পর এ পর্যন্ত মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ৯৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দেশটির সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর ওপর নজর রাখা থাইল্যান্ডভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্টদের দল অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজানার্স (এএপিপি) জানিয়েছে।
এএপিপির দেওয়া এই সংখ্যা সঠিক নয় বলে দাবি করে আসছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। নিহতের সংখ্যা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে, তাছাড়া সহিংসতায় অনেক সৈন্যও নিহত হয়েছে, বলছে তারা।
মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর তাড়ায় ভবন থেকে লাফিয়ে নিহত ৩
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ