ঢাকা ০২:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মিয়ানমারে জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি

  • আপডেট সময় : ১২:২৪:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুন ২০২১
  • ৯৩ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কয়েকটি অঞ্চলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তার লড়াই চলছে। স্থানীয়রাও গড়ে তুলেছেন আত্মরক্ষা বাহিনী। জঙ্গলের আড়ালে তৈরি হচ্ছে অস্ত্র। মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটির বিদ্রোহীরা। সেখানে জঙ্গলের আড়ালে অস্থায়ী কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে নানা অস্ত্র। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে স্থানীয় লোকজন আত্মরক্ষামূলক দল গঠন করে স্থানীয়ভাবে রাইফেলসহ নানা যুদ্ধাস্ত্র তৈরি শুরু করেছেন। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি এসব অস্ত্র সব সময় মানসম্মত অস্ত্রের কাজ করে না।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে রক্তপাতহীন সেনা অভ্যুত্থান হয়। গত বছরের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) অভাবনীয় বিজয় প্রত্যাখ্যান করে জান্তারা ক্ষমতা দখল করে নেয়। আটক করা হয় সু চিসহ এনএলডির কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে। এরপর থেকে জান্তাবিরোধী তুমুল বিক্ষোভে দেশটিতে ৮৪০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন। মিয়ানমারজুড়ে বেশ কিছু এলাকায় বিশেষ করে মফস্বল এলাকাগুলোতে পুলিশের নির্যাতনে নিহতের ঘটনা বাড়তে থাকায় স্থানীয় প্রতিরক্ষামূলক দল গঠিত হয়েছে।
থাইল্যান্ডের সীমান্তের কাছে কায়াহ রাজ্যে একটি অস্থায়ী অস্ত্র কারখানা গড়ে তুলেছে বিদ্রোহীরা। সেখানে অপেশাদার অস্ত্র প্রস্তুতকারীরা অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। যদিও স্থানীয় কারখানায় তৈরি এসব অস্ত্র যুদ্ধের জন্য মানসম্মত নয়।
কোহ জন নামের আত্মরক্ষা বাহিনীর এক সদস্য বলেন, ‘এক রাতে সেনাবাহিনী আমাদের ওপর ভারী গোলাবর্ষণ করছিল। তারা আমাদের ২০০ থেকে ৩০০ ফুটের কাছাকাছি চলে আসে। তাদের ওপর গুলি চালানো শুরু করলেও বন্দুক থেকে ঠিকমতো গুলি বের হয়নি। কারণ, এগুলো ছিল স্থানীয়ভাবে তৈরি। আমরা দুজন স্নাইপারের সাহায্য নিয়েছিলাম। আট রাউন্ড গুলি ছোড়া হলেও কেবল ছয় রাউন্ড গুলি ফুটেছিল।’
স্থানীয়ভাবে প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠিত হলেও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শত শত অভ্যুত্থানবিরোধী বিদ্রোহী দেশটির বিভিন্ন শহর ও মফস্বলে ছড়িয়ে পড়েছেন। সেনা প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য তারা বিদ্রোহী-অধীনে থাকা অঞ্চলে প্রবেশ করেছেন।
তবে খ-কালীন যোদ্ধারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যেকোনো সংঘাতে তাদের প্রতিকূলতা বিষয়ে জানেন। কোহ জন তাদের সাম্প্রতিক লড়াইয়ে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনাসদস্য ও ভারী অস্ত্রে হকচকিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন সেনাক্যাম্প দখল করার চেষ্টা করছিলাম, তখন তাদের হেলিকপ্টার চলে আসে এবং সেখান থেকে গুলি চালানো হয়।’
সম্প্রতি মিয়ানমারের কায়াহ রাজ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় লোকজন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আর্টিলারে শেল ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন।
যুদ্ধ থেকে বাঁচতে অনেকেই পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। মার কো (৩৬) জঙ্গলে অস্থায়ী আশ্রয়ে রয়েছেন দুই সপ্তাহ ধরে। তিনি বলেন, ‘ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেনারা হামলা চালিয়েছে। আমরা পালিয়ে এসে এখানে লুকিয়ে রয়েছি। আমাদের এখন খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।’
স্থানীয় গণমাধ্যমের সূত্রে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শনিবার আইয়ারওয়াদি নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্রের সন্ধানে গেলে গ্রামবাসী প্রাচীন অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন। দুই মাসের মধ্যে এটাই এক দিনে সর্বোচ্চ বেসামরিক লোকের নিহত হওয়ার ঘটনা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন আপদ ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ

মিয়ানমারে জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি

আপডেট সময় : ১২:২৪:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুন ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কয়েকটি অঞ্চলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তার লড়াই চলছে। স্থানীয়রাও গড়ে তুলেছেন আত্মরক্ষা বাহিনী। জঙ্গলের আড়ালে তৈরি হচ্ছে অস্ত্র। মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটির বিদ্রোহীরা। সেখানে জঙ্গলের আড়ালে অস্থায়ী কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে নানা অস্ত্র। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে স্থানীয় লোকজন আত্মরক্ষামূলক দল গঠন করে স্থানীয়ভাবে রাইফেলসহ নানা যুদ্ধাস্ত্র তৈরি শুরু করেছেন। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি এসব অস্ত্র সব সময় মানসম্মত অস্ত্রের কাজ করে না।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে রক্তপাতহীন সেনা অভ্যুত্থান হয়। গত বছরের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) অভাবনীয় বিজয় প্রত্যাখ্যান করে জান্তারা ক্ষমতা দখল করে নেয়। আটক করা হয় সু চিসহ এনএলডির কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে। এরপর থেকে জান্তাবিরোধী তুমুল বিক্ষোভে দেশটিতে ৮৪০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন। মিয়ানমারজুড়ে বেশ কিছু এলাকায় বিশেষ করে মফস্বল এলাকাগুলোতে পুলিশের নির্যাতনে নিহতের ঘটনা বাড়তে থাকায় স্থানীয় প্রতিরক্ষামূলক দল গঠিত হয়েছে।
থাইল্যান্ডের সীমান্তের কাছে কায়াহ রাজ্যে একটি অস্থায়ী অস্ত্র কারখানা গড়ে তুলেছে বিদ্রোহীরা। সেখানে অপেশাদার অস্ত্র প্রস্তুতকারীরা অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। যদিও স্থানীয় কারখানায় তৈরি এসব অস্ত্র যুদ্ধের জন্য মানসম্মত নয়।
কোহ জন নামের আত্মরক্ষা বাহিনীর এক সদস্য বলেন, ‘এক রাতে সেনাবাহিনী আমাদের ওপর ভারী গোলাবর্ষণ করছিল। তারা আমাদের ২০০ থেকে ৩০০ ফুটের কাছাকাছি চলে আসে। তাদের ওপর গুলি চালানো শুরু করলেও বন্দুক থেকে ঠিকমতো গুলি বের হয়নি। কারণ, এগুলো ছিল স্থানীয়ভাবে তৈরি। আমরা দুজন স্নাইপারের সাহায্য নিয়েছিলাম। আট রাউন্ড গুলি ছোড়া হলেও কেবল ছয় রাউন্ড গুলি ফুটেছিল।’
স্থানীয়ভাবে প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠিত হলেও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শত শত অভ্যুত্থানবিরোধী বিদ্রোহী দেশটির বিভিন্ন শহর ও মফস্বলে ছড়িয়ে পড়েছেন। সেনা প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য তারা বিদ্রোহী-অধীনে থাকা অঞ্চলে প্রবেশ করেছেন।
তবে খ-কালীন যোদ্ধারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যেকোনো সংঘাতে তাদের প্রতিকূলতা বিষয়ে জানেন। কোহ জন তাদের সাম্প্রতিক লড়াইয়ে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনাসদস্য ও ভারী অস্ত্রে হকচকিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন সেনাক্যাম্প দখল করার চেষ্টা করছিলাম, তখন তাদের হেলিকপ্টার চলে আসে এবং সেখান থেকে গুলি চালানো হয়।’
সম্প্রতি মিয়ানমারের কায়াহ রাজ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় লোকজন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আর্টিলারে শেল ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন।
যুদ্ধ থেকে বাঁচতে অনেকেই পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। মার কো (৩৬) জঙ্গলে অস্থায়ী আশ্রয়ে রয়েছেন দুই সপ্তাহ ধরে। তিনি বলেন, ‘ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেনারা হামলা চালিয়েছে। আমরা পালিয়ে এসে এখানে লুকিয়ে রয়েছি। আমাদের এখন খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।’
স্থানীয় গণমাধ্যমের সূত্রে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শনিবার আইয়ারওয়াদি নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্রের সন্ধানে গেলে গ্রামবাসী প্রাচীন অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন। দুই মাসের মধ্যে এটাই এক দিনে সর্বোচ্চ বেসামরিক লোকের নিহত হওয়ার ঘটনা।