ঢাকা ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তার মুখে রোহিঙ্গা গণহত্যার সত্যতা

  • আপডেট সময় : ০১:৫৮:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২
  • ১০৩ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন মিয়ানমারের এক সেনা কর্মকর্তা, যিনি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ওই প্রদেশে ছয় বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করেছেন।
মিয়ো থেট নামে ওই সেরা কর্মকর্তা গত বছরের ডিসেম্বরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী থেকে বের হয়ে যান। বর্তমানে জান্তা-সরকারের বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে একটি অঞ্চলে থাকা মিয়ো রেডিও ফ্রি এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা গণহত্যা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। রাখাইনে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘সেখানে (রাখাইন) রোহিঙ্গাদের ওপর যা হয়েছে তা ছিল অগ্রহণযোগ্য। আমার সহকর্মীদের সবাই বিশ্বাস করতো- রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিলেই রাখাইনে শান্তি আসবে।’
২০১৭ সালে রাখাইনে তল্লাশি চৌকিতে কথিত হামলার ধুয়ো তুলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা-ধর্ষণসহ বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঢল নামে ভূমিহারা রোহিঙ্গাদের। একে একে কক্সবাজারে ঠাঁই নেয় আট লাখের বেশি শরণার্থী। আগে থেকে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে শরণার্থীদের সংখ্যা এগারো লাখের বেশি বলে ধারনা করা হয়। ওই সময় রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর তোলা এই অভিযোগ অস্বীকার করে দেয় সু চি সরকার। এ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) করা আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার মামলাও মোকাবেলা করতে হচ্ছে মিয়ানমারকে।
এদিকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বছরের পর বছর ধরে চলা সহিংসতাকে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনে আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকৃতি দেন। শত শত বছর ধরে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম আর বৌদ্ধ ধর্মবালম্বীরা সম্প্রীতির সঙ্গে সহাবস্থান করে এলেও সেনাবাহিনীই পরিকল্পিতভাবে এই দুই জনগৌষ্ঠীর মধ্যে বিভক্তি তৈরি করেছে বলে দাবি করেছেন মিয়ো থেট।
রেডিও ফ্রি এশিয়াকে মিয়ানমারের এই সেরা কর্মকর্তা বলেন, ‘সেনা সদস্যরা রাখাইন থেকে পুরো রোহিঙ্গাদের সমূলে বিতাড়িত করার ইচ্ছা পোষণ করত। এর জন্য যা দরকার তারা তা করতে পিছপা হতো না।’ রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ডাকলে তিনি সাক্ষ্য দেবেন জানিয়ে মিয়ো থেট বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা আর বৌদ্ধ ধর্মাবলাম্বীদের মধ্যে বিদ্বেষের বীজ বপন করেছে সেনাবহিনী। আমাকে যদি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ডাকা হয় আমি সেখানে গিয়ে যা যা জানি সব প্রকাশ্যে বলে আসবো।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তার মুখে রোহিঙ্গা গণহত্যার সত্যতা

আপডেট সময় : ০১:৫৮:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন মিয়ানমারের এক সেনা কর্মকর্তা, যিনি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ওই প্রদেশে ছয় বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করেছেন।
মিয়ো থেট নামে ওই সেরা কর্মকর্তা গত বছরের ডিসেম্বরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী থেকে বের হয়ে যান। বর্তমানে জান্তা-সরকারের বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে একটি অঞ্চলে থাকা মিয়ো রেডিও ফ্রি এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা গণহত্যা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। রাখাইনে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘সেখানে (রাখাইন) রোহিঙ্গাদের ওপর যা হয়েছে তা ছিল অগ্রহণযোগ্য। আমার সহকর্মীদের সবাই বিশ্বাস করতো- রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিলেই রাখাইনে শান্তি আসবে।’
২০১৭ সালে রাখাইনে তল্লাশি চৌকিতে কথিত হামলার ধুয়ো তুলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা-ধর্ষণসহ বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঢল নামে ভূমিহারা রোহিঙ্গাদের। একে একে কক্সবাজারে ঠাঁই নেয় আট লাখের বেশি শরণার্থী। আগে থেকে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে শরণার্থীদের সংখ্যা এগারো লাখের বেশি বলে ধারনা করা হয়। ওই সময় রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর তোলা এই অভিযোগ অস্বীকার করে দেয় সু চি সরকার। এ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) করা আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার মামলাও মোকাবেলা করতে হচ্ছে মিয়ানমারকে।
এদিকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বছরের পর বছর ধরে চলা সহিংসতাকে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনে আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকৃতি দেন। শত শত বছর ধরে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম আর বৌদ্ধ ধর্মবালম্বীরা সম্প্রীতির সঙ্গে সহাবস্থান করে এলেও সেনাবাহিনীই পরিকল্পিতভাবে এই দুই জনগৌষ্ঠীর মধ্যে বিভক্তি তৈরি করেছে বলে দাবি করেছেন মিয়ো থেট।
রেডিও ফ্রি এশিয়াকে মিয়ানমারের এই সেরা কর্মকর্তা বলেন, ‘সেনা সদস্যরা রাখাইন থেকে পুরো রোহিঙ্গাদের সমূলে বিতাড়িত করার ইচ্ছা পোষণ করত। এর জন্য যা দরকার তারা তা করতে পিছপা হতো না।’ রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ডাকলে তিনি সাক্ষ্য দেবেন জানিয়ে মিয়ো থেট বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা আর বৌদ্ধ ধর্মাবলাম্বীদের মধ্যে বিদ্বেষের বীজ বপন করেছে সেনাবহিনী। আমাকে যদি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ডাকা হয় আমি সেখানে গিয়ে যা যা জানি সব প্রকাশ্যে বলে আসবো।’