ঢাকা ০২:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া এবং পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি একসঙ্গে কাজ করলে ফল পজিটিভ হয়

  • আপডেট সময় : ১০:১৬:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জুন ২০২২
  • ১৩২ বার পড়া হয়েছে

তারানা হালিম : [তারানা হালিম। সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। গত ২৮ মে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ফিরেছেন। বাংলাদেশ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং ভারতের এস জয়শঙ্কর ছাড়াও দুই দেশের একাধিক নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিক এবং সরকারি কর্মকর্তা ওই সম্মেলনে যোগ দেন। আইন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ হয়েও নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তিনি তুলে ধরেছেন সংবাদসংস্থা ঢাকা টাইমসে]
আসামে নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ সম্মেলন থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। সেখানে উভয় দেশের মন্ত্রীরাও ছিলেন। আমরা আমাদের সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরেছি। আমাদের তরুণদের অনেকেই এখন নানাভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে নানারকম নেতিবাচক কর্মকা-ে যুক্ত হয়ে পড়ছে। আমাদের দুই দেশেরই কুটির শিল্পগুলো কিভাবে বিকাশ ঘটতে পারে? যদি রিভার ট্যুরিজমটা ইন্ট্রোডিউস করা যায় তাহলে তরুণদের ক্রিয়েটিভিটি যেটা সেটা বের হয়ে আসবে। কালচারাল অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে ইনভলভ থাকলে তাদের এই বিপথে যাওয়ার সুযোগটা কমে যাবে।
কাজেই রিভার ট্যুরিজমটা খুবই ইমপরটেন্ট, এটাই বলেছি। আমাদের ৫৪টা অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার কথা বলেছি। বলেছি যে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আমাদের দেশে অনেকের ভুল ধারণা আছে, এটা নিয়ে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করিনি। কারণ তারা ভারতের রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় জটিলতা বোঝে না। সহজ সরল মানুষ সহজ-সরলভাবে বোঝে। দুই দেশেরই প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক ছিলেন চুক্তির ব্যাপারে। কিন্তু ভারতে যেহেতু ফেডারেল সরকার এবং তারা কখনো রাজ্য সরকারকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারে না, যদি রাজ্য আপত্তি দেয়। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টা সত্ত্বেও হয়নি এবং এটা না হওয়া অবশ্যই আমাদের জন্য কিছুটা অস্বস্তির কারণ।
আমাদের যেহেতু নি¤œ অঞ্চলে বসবাস সেহেতু আমাদের বন্যা এবং নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণও হয় এটি। তাই আমরা আশা করি, এটা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক হোক বা ত্রিপাক্ষিক, যেভাবেই হোক আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের আশা করি। আমরা রিভার ক্রুজের ওপর জোর দিয়েছি। এটি হলে আমাদের রূপগঞ্জের দিকে যখন যাবে তখন পাটশিল্পের বিভিন্ন স্টপেজে থামলে দেখা যাবে, সেখানে প্রদর্শনী হতে পারে। এতে করে আমাদের হারিয়ে যাওয়া শেকড়ের সন্ধান করা যাবে।
কমবেশি সব দেশই এখন শিকড়ের সন্ধানে বের হচ্ছে। সাউথ আফ্রিকা অরিজিন খুঁজে বের করছে। আর আমরা আমাদের দেশের অরিজিন পাট শিল্প, তাঁত শিল্প, মৃৎশিল্প— এসব নিয়ে বিভিন্ন প্রদর্শনী করতে পারি। আমাদের নদীর তীরে আমাদেরটা, ভারতের নদীর তীরে তাদেরটা। আমি সেখানে বলেছি, আমরা তাদের দেশের মাজার শরীফে গেলাম আর তারা আমাদের আদি ঢাকেশ্বরী মন্দির আছে, সেখানে যেতে পারেন। এতে করে একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও গড়ে উঠবে দুই দেশের মধ্যে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে একটা সৌন্দর্য আছে সেটাও কিন্তু মানুষ উপলব্ধি করতে পারবে।
সেখানে আমার পাবলিক ডিপ্লোমেসি নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। আমি বলেছি, পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি হলো—সবসময় আমি যা করছি তা পাবলিককে সঠিকভাবে অবহিত করব। পাবলিক যেন সঠিক তথ্যটা পায়। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ এত নেতিবাচক সংবাদে বিশ্বাস করছে যে ইতিবাচক সংবাদের ভূমিকাটা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমি একটা উদাহরণ দিয়েছি। যখন আমাদের ছিটমহল বদল হলো তখন কিন্তু নেতিবাচক একটা প্রোপাগান্ডা চলছিল। কিন্তু যেই মুহূর্তে দেখানো হলো, বিভিন্ন কৌশলে মিডিয়াতে নিউজ বের হলো পত্রপত্রিকায় খবর বের হলো—তারা বলছে যে আমাদের একটা পরিচয় হলো, আমরা আত্মপরিচয় ফিরে পেয়েছি, একটা জাতীয়তা ফিরে পেয়েছি। তখন কিন্তু এই বিতর্ক একটি ইতিবাচক দিকে মোড় নিল। এই যে এতগুলো কাজ খুবই সফলতার সঙ্গে আমাদের সরকার সমাধান করেছে, এটা পাবলিক ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড কূটনৈতিক ফলাফল। মিডিয়া এবং পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি একসঙ্গে কাজ করলে সব সময় এর রেজাল্টটা পজিটিভ হয়। আমরা কিভাবে দ্বিপক্ষীয়ভাবে এটাকে আরও উন্নত করতে পারি সে বিষয়ে আমার মনে হয়েছে, আমাদের পাবলিক ডিপ্লোমেসিকে ভূমিকায় আনতে পারি। এই যে ভারতে রাজ্য আর কেন্দ্রের সমস্যা, যেটা আমাদের সাধারণ জনগণ জানে না—এটা জানানোও কিন্তু পাবলিক ডিপ্লোমেসির অংশ।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দগ্ধ ফায়ারকর্মীদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মিডিয়া এবং পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি একসঙ্গে কাজ করলে ফল পজিটিভ হয়

আপডেট সময় : ১০:১৬:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জুন ২০২২

তারানা হালিম : [তারানা হালিম। সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। গত ২৮ মে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ফিরেছেন। বাংলাদেশ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং ভারতের এস জয়শঙ্কর ছাড়াও দুই দেশের একাধিক নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিক এবং সরকারি কর্মকর্তা ওই সম্মেলনে যোগ দেন। আইন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ হয়েও নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তিনি তুলে ধরেছেন সংবাদসংস্থা ঢাকা টাইমসে]
আসামে নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ সম্মেলন থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। সেখানে উভয় দেশের মন্ত্রীরাও ছিলেন। আমরা আমাদের সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরেছি। আমাদের তরুণদের অনেকেই এখন নানাভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে নানারকম নেতিবাচক কর্মকা-ে যুক্ত হয়ে পড়ছে। আমাদের দুই দেশেরই কুটির শিল্পগুলো কিভাবে বিকাশ ঘটতে পারে? যদি রিভার ট্যুরিজমটা ইন্ট্রোডিউস করা যায় তাহলে তরুণদের ক্রিয়েটিভিটি যেটা সেটা বের হয়ে আসবে। কালচারাল অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে ইনভলভ থাকলে তাদের এই বিপথে যাওয়ার সুযোগটা কমে যাবে।
কাজেই রিভার ট্যুরিজমটা খুবই ইমপরটেন্ট, এটাই বলেছি। আমাদের ৫৪টা অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার কথা বলেছি। বলেছি যে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আমাদের দেশে অনেকের ভুল ধারণা আছে, এটা নিয়ে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করিনি। কারণ তারা ভারতের রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় জটিলতা বোঝে না। সহজ সরল মানুষ সহজ-সরলভাবে বোঝে। দুই দেশেরই প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক ছিলেন চুক্তির ব্যাপারে। কিন্তু ভারতে যেহেতু ফেডারেল সরকার এবং তারা কখনো রাজ্য সরকারকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারে না, যদি রাজ্য আপত্তি দেয়। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টা সত্ত্বেও হয়নি এবং এটা না হওয়া অবশ্যই আমাদের জন্য কিছুটা অস্বস্তির কারণ।
আমাদের যেহেতু নি¤œ অঞ্চলে বসবাস সেহেতু আমাদের বন্যা এবং নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণও হয় এটি। তাই আমরা আশা করি, এটা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক হোক বা ত্রিপাক্ষিক, যেভাবেই হোক আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের আশা করি। আমরা রিভার ক্রুজের ওপর জোর দিয়েছি। এটি হলে আমাদের রূপগঞ্জের দিকে যখন যাবে তখন পাটশিল্পের বিভিন্ন স্টপেজে থামলে দেখা যাবে, সেখানে প্রদর্শনী হতে পারে। এতে করে আমাদের হারিয়ে যাওয়া শেকড়ের সন্ধান করা যাবে।
কমবেশি সব দেশই এখন শিকড়ের সন্ধানে বের হচ্ছে। সাউথ আফ্রিকা অরিজিন খুঁজে বের করছে। আর আমরা আমাদের দেশের অরিজিন পাট শিল্প, তাঁত শিল্প, মৃৎশিল্প— এসব নিয়ে বিভিন্ন প্রদর্শনী করতে পারি। আমাদের নদীর তীরে আমাদেরটা, ভারতের নদীর তীরে তাদেরটা। আমি সেখানে বলেছি, আমরা তাদের দেশের মাজার শরীফে গেলাম আর তারা আমাদের আদি ঢাকেশ্বরী মন্দির আছে, সেখানে যেতে পারেন। এতে করে একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও গড়ে উঠবে দুই দেশের মধ্যে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে একটা সৌন্দর্য আছে সেটাও কিন্তু মানুষ উপলব্ধি করতে পারবে।
সেখানে আমার পাবলিক ডিপ্লোমেসি নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। আমি বলেছি, পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি হলো—সবসময় আমি যা করছি তা পাবলিককে সঠিকভাবে অবহিত করব। পাবলিক যেন সঠিক তথ্যটা পায়। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ এত নেতিবাচক সংবাদে বিশ্বাস করছে যে ইতিবাচক সংবাদের ভূমিকাটা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমি একটা উদাহরণ দিয়েছি। যখন আমাদের ছিটমহল বদল হলো তখন কিন্তু নেতিবাচক একটা প্রোপাগান্ডা চলছিল। কিন্তু যেই মুহূর্তে দেখানো হলো, বিভিন্ন কৌশলে মিডিয়াতে নিউজ বের হলো পত্রপত্রিকায় খবর বের হলো—তারা বলছে যে আমাদের একটা পরিচয় হলো, আমরা আত্মপরিচয় ফিরে পেয়েছি, একটা জাতীয়তা ফিরে পেয়েছি। তখন কিন্তু এই বিতর্ক একটি ইতিবাচক দিকে মোড় নিল। এই যে এতগুলো কাজ খুবই সফলতার সঙ্গে আমাদের সরকার সমাধান করেছে, এটা পাবলিক ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড কূটনৈতিক ফলাফল। মিডিয়া এবং পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি একসঙ্গে কাজ করলে সব সময় এর রেজাল্টটা পজিটিভ হয়। আমরা কিভাবে দ্বিপক্ষীয়ভাবে এটাকে আরও উন্নত করতে পারি সে বিষয়ে আমার মনে হয়েছে, আমাদের পাবলিক ডিপ্লোমেসিকে ভূমিকায় আনতে পারি। এই যে ভারতে রাজ্য আর কেন্দ্রের সমস্যা, যেটা আমাদের সাধারণ জনগণ জানে না—এটা জানানোও কিন্তু পাবলিক ডিপ্লোমেসির অংশ।