নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের (মিটফোর্ড হাসপাতাল) সামনে নৃশংসভাবে খুন হওয়া ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ (৩৯) হত্যাকাণ্ডে আরো দুই এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর ফলে মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামির সংখ্যা দাঁড়াল সাত জনে।
শনিবার (১২ জুলাই) সকাল থেকে রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এজাহারনামীয় দুই আসামি রাজীব ব্যাপারী ও সজীব ব্যাপারীকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। গত ৯ জুলাই সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে প্রকাশ্য রাস্তায় একদল দুর্বৃত্ত ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে প্রথমে কুপিয়ে, এরপর পাথর ছুড়ে ও লাথি মেরে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের সময় সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, হত্যাকারীরা মৃতদেহের ওপর লাফাচ্ছে এবং তার শরীরে একাধিকবার পাথর নিক্ষেপ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। সমালোচনার ঝড় নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ঘটনার পরপরই কোতোয়ালি থানা পুলিশ ও ডিএমপির লালবাগ বিভাগ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১১ জুলাই রাজধানী থেকে এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তলও উদ্ধার করা হয়। এছাড়া, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) অভিযান চালিয়ে আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনির (২৫) নামে আরো দুই আসামিকে গ্রেফতার করে। ১২ জুলাই রাতে কোতোয়ালি থানা পুলিশ মামলার আরেক আসামি মো. টিটন গাজীকে (৩২) গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানায়, ভাঙারির ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সোহাগের সঙ্গে একই এলাকার কিছু লোকের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা তদন্ত সংস্থার। ডিসি মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সাত জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবার বিরুদ্ধেই সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আরো কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। খুব শিগগিরই এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।’
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন চেয়ে রিট: রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ (৩৯) নামের ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে আঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে।
রোববার (১৩ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন। রিটে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক কমিশন গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামীকাল সোমবার (১৪ জুলাই) এ রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।
এদিকে সোহাগ হত্যা মামলায় শনিবার (১২ জুলাই) টিটন গাজী নামে এক আসামির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ গিয়াসের আদালত। এ ছাড়া, এ ঘটনায় পুলিশের করা অস্ত্র মামলায় তারেক রহমান রবিন নামে এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে ১০ জুলাই এ হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনের পাঁচদিন ও অস্ত্র মামলায় রবিনের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। জানা যায়, গত ৯ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অস্ত্র আইনে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।