অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড এবং ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বিপরীতে কিছুদিন আগে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখানো ‘জেড’ গ্রুপ বা পচা কোম্পানির শেয়ার দাম কমতে দেখা যাচ্ছে। মিউচুয়াল ফান্ড ও ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মূল্যসূচক ও লেনদেনে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) অধিকাংশ মিউচুয়াল ফান্ড ও ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে।
এতে বাজারটিতে দাম বাড়ার তালিকা যেমন বড় হয়েছে, তেমনই বেড়েছে মূল্যসূচক ও লেনদেন। তবে জেড গ্রুপের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। তবে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি থাকে ‘এন’ গ্রুপে। তালিকাভুক্তির পর একটি আর্থিক বছর পার হলে কোম্পানিগুলো ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘জেড’ গ্রুপে বিভক্ত হয়।
এর মধ্যে ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানির স্থান হয় ‘এ’ গ্রুপে। ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানি থাকে ‘বি’ গ্রুপে। আর লভ্যাংশ না দিতে পারা কোম্পানির স্থান হয় ‘জেড’ গ্রুপে। জেড গ্রুপের কোম্পানিকে শেয়ারবাজারের পচা কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রোববার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ‘এ’ গ্রুপের ২১৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৮টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৫৩টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ‘বি’ গ্রুপের ৪৪টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়েছে। আর কমেছে ২৭টি এবং ৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৩টির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে একটির দাম কমেছে এবং তিনটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। জেড গ্রুপের ১০০টি কোম্পানির মধ্যে ৩৫টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৪৪টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বর্তমানে শেয়ারবাজারে ‘এন’ গ্রুপে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। বেশিরভাগ মিউচুয়াল ফান্ড ও ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ায় দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলিয়ে ২১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৪টির। এছাড়া ৫৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৮৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৬৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২৩ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৬ টাকার। ১৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফু-ওয়াং ফুড। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মালেক স্পিনিং, রবি, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, শাইনপুকুর সিরামিক, বিডি থাই অ্যালুমেনিয়াম, মিডল্যান্ড ব্যাংক এবং সিটি ব্যাংক। অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৮টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।