নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুরের শাহ আলম আর রিনা বেগম দম্পতির দুই ছেলেমেয়ে। সায়মা ও সাব্বির- রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ত।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিপ্রবর্তা গ্রামের বাসা থেকে একসঙ্গেই দুই ভাইবোন বের হত। সাব্বির এ বছর এসএসসি পাস করেছে। আর নয় বছরের ছোট বোন সায়মা পড়ত তৃতীয় শ্রেণিতে। সাব্বির স্কুল থেকে বের হয়ে যাওয়ায় সায়মাকে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যেতেন তার মা রিনা বেগম। সোমবার রিনা বেগম বাসায় কাজ থাকায় মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেতে পারেননি। সায়মাকে স্কুলে নিয়ে যায় এক মামা। বাসা থেকে স্কুলব্যাগ পিঠে করে বের হওয়ার মেয়েকে দরজায় দাঁড়িয়ে বিদায় দিয়েছিলে মা রিনা বেগম। যেতে যেতে মায়ের দিকে হাত নেড়ে নেড়ে চুলের বেণী দুলিয়ে সায়মা বলেছিল, “মা, টা টা, স্কুলে যাই।”
সেটাই রিনা বেগমের সঙ্গে মেয়ে সায়মার শেষ কথা। মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই সেই একটা কথাই এখনও রিনা বেগমের কানে অনবরত বেজে চলেছে, “মা, টা টা, স্কুলে যাই।”
সায়মাকে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বাড়ির উঠানেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। বাড়িভর্তি স্বজনদের মধ্যে বিলাপ করে রিনা বেগম বার বার শুধু এই একটা কথাই বলছিলেন। বার বার তিনি মূর্ছা যাচ্ছিলেন। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী যারা এই পরিবারটিকে সান্ত¡না দিতে এসেছিলেন, তারা কাঁদছিলেন অঝোরে। রিনা বেগম বলছিলেন, প্রতিদিন আমি মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেতাম। সোমবার আমার এক ভাই তাকে স্কুলে নিয়ে যায়। পরে ফেসবুকে জানতে পারি স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে। আমার মা স্কুলে যাওয়ার আগে বলে গেলো, মা, স্কুলে গেলাম, টা টা। এরপর আর আমার মার সঙ্গে কথা হয়নি। মা আর কখনও বলবে না, মা স্কুলে যাই, টা টা।
বোনের কবরের পাশে বড় ভাই সাব্বির কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিল, বোন তুমি আমাকে রেখে চলে গেলে। আমরা দু’জন একসঙ্গে স্কুলে যেতাম। কত কথা বলতাম, আজ তুমি চুপ কেনো বোন!
মেয়ের শোকে পাগলপ্রায় বাবা শাহ আলম ডুকরে কেঁদে যাচ্ছিলেন। বলছিলেন, আমার এক বন্ধু ফোন করে জানায়, সায়মার স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এরপর আমরা খোঁজাখুঁজি শুরু করি। কোথাও সায়মাকে পাইনি। রাত ৮টার পর জানতে পারি সিএমএইচে মরদেহ রয়েছে। পরে রাত দেড়টার দিকে আমরা তার মরদেহ বাড়ি নিয়ে আসি। গত রাতেও (রোববার) মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিল। কতবার চুমো দিয়েছে রাতে তার হিসাব নেই। এরপর আর মায়ের সঙ্গে কথা হয়নি। আমার মা আর আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে না। এই কষ্ট কীভাবে সইব?
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে উত্তরার দিয়াবাড়ির এই স্কুলের ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই বিমান আছড়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, স্কুলে মাঠে বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিমানটি ছেঁচড়ে গিয়ে ধাক্কা খায় দোতলা হায়দার আলী ভবনে। অগ্নিগোলকে পরিণত হওয়া সেই বিমানের শিখা স্কুল ভবনটিকেও গ্রাস করে নেয়। তখন স্কুল ছুটির সময়, অনেক অভিভাবকও ভিড় করেছিলেন ভবনটির কাছে। দুর্ঘটনার পর ভবনের প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বের হতে পারছিলেন না কেউ।