ঢাকা ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫

মাহে রমজান আত্মা পরিশুদ্ধ করার মাস

  • আপডেট সময় : ০৯:৫৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩
  • ১১১ বার পড়া হয়েছে

মাহমুদ আহমদ : আল্লাহপাকের অপার কৃপায় পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের দশকের ৬ষ্ঠ দিন আমরা অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ভালোবাসা লাভ করার সর্বোত্তম মাধ্যম হলো রোজা। কেননা রোজা কেবলমাত্র আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই রাখা হয় আর এর পুরস্কারও স্বয়ং তিনিই দিয়ে থাকেন।
রমজানের ফরজ রোজা বা অন্যান্য দিনের নফল রোজা, যে রোজাই হোক না কেন তা আমাদের আত্মার সংশোধনের কারণ হয়ে থাকে। আর বিশেষ করে পবিত্র মাহে রমজানের রোজা আমাদের পুরো বছরের দোষত্রুটি ক্ষমার কারণ হয়। কেননা, মানুষ যখন আল্লাহতায়ালার জন্য জাগতিক আরাম আয়েশ, চাওয়া পাওয়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকে তখন সে তার নফসকে পুণ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে অধিক শক্তি পায়।
কিন্তু এবিষয়টি স্মরণ রাখা উচিত, রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস থাকাই নয়। যদি উপবাস থাকার ফলে আল্লাহপাকের জান্নাত পাওয়া যেত তাহলে প্রতিটি ব্যক্তি এ জান্নাত পাওয়ারই চেষ্টা করতেন। কেননা উপবাস থেকে মৃত্যুবরণ করে নেয়াটা তেমন কোনো কঠিন বিষয় নয় বরং কঠিন বিষয় হলো আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক পরিবর্তন সাধন করা।
আমরা প্রায় দেখি, মানুষ তার অধিকার আদায়ের জন্য আমরণ অনশন করে থাকে, দিনের পর দিন না খেয়ে থাকে। অতএব অনাহারে থাকা কোনো কঠিন বিষয় নয়। মানুষ ইচ্ছে করলে সারাদিন না খেয়ে কাটাতে পারে। কিন্তু এভাবে না খেয়ে থাকায় আল্লাহর কাছে তার কোনো গুরুত্ব নেই আর এমনটি করাও পবিত্র রমজানের উদ্দেশ্য নয়। রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো, মানুষের নাফস অর্থাৎ আত্মা যেন পবিত্র হয়। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পরম পবিত্র আর তিনি পবিত্র আত্মার অধিকারীদেরকেই ভালোবাসেন। তিনি চান মানুষ যেন রোজার মাধ্যমে সকল প্রকার পাপ কাজ পরিহার করে হৃদয়কে পাক পবিত্র এবং পরিষ্কার করে ধৌত করেন। এমন হৃদয় যে হৃদয়ে খোদার জ্যোতির বিকাশ ঘটবে। এছাড়া এই রোজার মাধ্যমে মানুষের শারীরিক, চারিত্রিক, আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক সকল প্রকার কল্যাণও লাভ হয়। যেভাবে বাহ্যিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমরা শারীরিকভাবে শক্তি লাভ করি ঠিক তেমনি রোজার ফলে আমাদের রুহ বা আত্মায় শক্তি লাভ করে আর এই শক্তির বলে একজন মুমিন তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে।
মোটকথা, রোজা শারীরিক সুস্থতারও কারন আর আধ্যাত্মিক দিক থেকেও এর অনেক কল্যাণ রয়েছে। রোজার মাধ্যমে আমরা অনেক ধরনের মন্দ থেকে বাঁচতে পারি এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারীও হতে পারি। কানজুল উম্মালের এক হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে জেনে বুঝে পাপ করে বা কোনো মুমিনকে নিয়ে কুৎসা রটনা করে, কোনো নেশাদ্রব্য ব্যবহার করে তাহলে আল্লাহতায়ালা তার সমস্ত আমলকে নষ্ট করে দিবেন। সুতরাং তোমরা পবিত্র রমজান মাসে খোদা ভীতি অবলম্বন কর। কেননা এটি আল্লাহতায়ালার পবিত্র মাস’ (কানজুল উম্মাল)। তাই আমাদের উচিত হবে, রমজানের এ দিনগুলোতে কোনো ধরনের পাপ কাজ যেন না করি। এছাড়া শুধু রমজানে কেন বছরের প্রতিটি দিনই যেন রমজানের ন্যায় অতিবাহিত করি।
রমজান থেকে আমরা এ অঙ্গীকার করতে পারি, আমরা কারো অধিকার হরণ করবো না, কারো সাথে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হবো না, ব্যবসায় কাউকে ঠকাবো না, অধিক মূল্য রাখবো না। আমি যেখানে বা যে স্থানেই কাজই করি না কেন সততা ও নিষ্ঠার সাথে করবো এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ না দেখে সবার জন্য মঙ্গল কামনা করবো। আমার প্রতিবেশী সে যে ধর্ম বা ফেরকার অনুসারীই হোক না কেন তার সাথে আমার সম্পর্ক থাকবে উত্তম। একজন প্রকৃত মুসলমান প্রতিবেশীর কাছে এটা কখনও আশা করা যায় না যে তার দ্বারা তার প্রতিবেশী কোনো ধরনের কষ্টের সম্মুখীন হবে। প্রতিবেশীর ধর্মীয় পরিচয় যাই হোক না কেন, ইসলাম ধর্মে মুসলমানদের তাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে যথাসাধ্য বিনয় আচরণ প্রদর্শন করতে এবং তাদের অসুবিধা হতে পারে এমন কোনো কাজ সৃষ্টি না করার কথা বলা হয়েছে। মুসলমানদের প্রতিবেশীর দৈনন্দিন সব প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষাই ইসলাম দিয়েছে। মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, সে ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট ভরে খায় আর পাশেই তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে (আদাবুল মুফরাদ)। আবু শুরাইহ থেকে আরেকটি হাদিসে প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে- রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, সে ইমানদার নয়। আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, সে ইমানদার নয়।
আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, সে ইমানদার নয়।’ তখন হজরত মুহাম্মদকে (সা.) প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর হাবিব, কে সে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদবোধ করে না, সে ব্যক্তি ইমানদার নয় (বুখারি)। আমরা যদি পবিত্র রমজানে আমাদের প্রতিবেশীর অধিকার আদায়সহ অন্যান্য নেক আমলের অঙ্গীকার করি তাহলে আমাদের রোজা প্রকৃতই আল্লাহর জন্য হবে আর এ রোজা আমাদের আত্মার সংশোধনেরও কারণ হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে পবিত্র এ রমজানের দিনগুলো সঠিকভাবে ইবাদত বন্দেগিতে রত থেকে এবং নিজ আত্মার সংশোধন করে নেয়ার সৌভাগ্য দান করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মাহে রমজান আত্মা পরিশুদ্ধ করার মাস

আপডেট সময় : ০৯:৫৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

মাহমুদ আহমদ : আল্লাহপাকের অপার কৃপায় পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের দশকের ৬ষ্ঠ দিন আমরা অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ভালোবাসা লাভ করার সর্বোত্তম মাধ্যম হলো রোজা। কেননা রোজা কেবলমাত্র আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই রাখা হয় আর এর পুরস্কারও স্বয়ং তিনিই দিয়ে থাকেন।
রমজানের ফরজ রোজা বা অন্যান্য দিনের নফল রোজা, যে রোজাই হোক না কেন তা আমাদের আত্মার সংশোধনের কারণ হয়ে থাকে। আর বিশেষ করে পবিত্র মাহে রমজানের রোজা আমাদের পুরো বছরের দোষত্রুটি ক্ষমার কারণ হয়। কেননা, মানুষ যখন আল্লাহতায়ালার জন্য জাগতিক আরাম আয়েশ, চাওয়া পাওয়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকে তখন সে তার নফসকে পুণ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে অধিক শক্তি পায়।
কিন্তু এবিষয়টি স্মরণ রাখা উচিত, রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস থাকাই নয়। যদি উপবাস থাকার ফলে আল্লাহপাকের জান্নাত পাওয়া যেত তাহলে প্রতিটি ব্যক্তি এ জান্নাত পাওয়ারই চেষ্টা করতেন। কেননা উপবাস থেকে মৃত্যুবরণ করে নেয়াটা তেমন কোনো কঠিন বিষয় নয় বরং কঠিন বিষয় হলো আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক পরিবর্তন সাধন করা।
আমরা প্রায় দেখি, মানুষ তার অধিকার আদায়ের জন্য আমরণ অনশন করে থাকে, দিনের পর দিন না খেয়ে থাকে। অতএব অনাহারে থাকা কোনো কঠিন বিষয় নয়। মানুষ ইচ্ছে করলে সারাদিন না খেয়ে কাটাতে পারে। কিন্তু এভাবে না খেয়ে থাকায় আল্লাহর কাছে তার কোনো গুরুত্ব নেই আর এমনটি করাও পবিত্র রমজানের উদ্দেশ্য নয়। রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো, মানুষের নাফস অর্থাৎ আত্মা যেন পবিত্র হয়। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পরম পবিত্র আর তিনি পবিত্র আত্মার অধিকারীদেরকেই ভালোবাসেন। তিনি চান মানুষ যেন রোজার মাধ্যমে সকল প্রকার পাপ কাজ পরিহার করে হৃদয়কে পাক পবিত্র এবং পরিষ্কার করে ধৌত করেন। এমন হৃদয় যে হৃদয়ে খোদার জ্যোতির বিকাশ ঘটবে। এছাড়া এই রোজার মাধ্যমে মানুষের শারীরিক, চারিত্রিক, আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক সকল প্রকার কল্যাণও লাভ হয়। যেভাবে বাহ্যিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমরা শারীরিকভাবে শক্তি লাভ করি ঠিক তেমনি রোজার ফলে আমাদের রুহ বা আত্মায় শক্তি লাভ করে আর এই শক্তির বলে একজন মুমিন তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে।
মোটকথা, রোজা শারীরিক সুস্থতারও কারন আর আধ্যাত্মিক দিক থেকেও এর অনেক কল্যাণ রয়েছে। রোজার মাধ্যমে আমরা অনেক ধরনের মন্দ থেকে বাঁচতে পারি এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারীও হতে পারি। কানজুল উম্মালের এক হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে জেনে বুঝে পাপ করে বা কোনো মুমিনকে নিয়ে কুৎসা রটনা করে, কোনো নেশাদ্রব্য ব্যবহার করে তাহলে আল্লাহতায়ালা তার সমস্ত আমলকে নষ্ট করে দিবেন। সুতরাং তোমরা পবিত্র রমজান মাসে খোদা ভীতি অবলম্বন কর। কেননা এটি আল্লাহতায়ালার পবিত্র মাস’ (কানজুল উম্মাল)। তাই আমাদের উচিত হবে, রমজানের এ দিনগুলোতে কোনো ধরনের পাপ কাজ যেন না করি। এছাড়া শুধু রমজানে কেন বছরের প্রতিটি দিনই যেন রমজানের ন্যায় অতিবাহিত করি।
রমজান থেকে আমরা এ অঙ্গীকার করতে পারি, আমরা কারো অধিকার হরণ করবো না, কারো সাথে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হবো না, ব্যবসায় কাউকে ঠকাবো না, অধিক মূল্য রাখবো না। আমি যেখানে বা যে স্থানেই কাজই করি না কেন সততা ও নিষ্ঠার সাথে করবো এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ না দেখে সবার জন্য মঙ্গল কামনা করবো। আমার প্রতিবেশী সে যে ধর্ম বা ফেরকার অনুসারীই হোক না কেন তার সাথে আমার সম্পর্ক থাকবে উত্তম। একজন প্রকৃত মুসলমান প্রতিবেশীর কাছে এটা কখনও আশা করা যায় না যে তার দ্বারা তার প্রতিবেশী কোনো ধরনের কষ্টের সম্মুখীন হবে। প্রতিবেশীর ধর্মীয় পরিচয় যাই হোক না কেন, ইসলাম ধর্মে মুসলমানদের তাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে যথাসাধ্য বিনয় আচরণ প্রদর্শন করতে এবং তাদের অসুবিধা হতে পারে এমন কোনো কাজ সৃষ্টি না করার কথা বলা হয়েছে। মুসলমানদের প্রতিবেশীর দৈনন্দিন সব প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষাই ইসলাম দিয়েছে। মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, সে ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট ভরে খায় আর পাশেই তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে (আদাবুল মুফরাদ)। আবু শুরাইহ থেকে আরেকটি হাদিসে প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে- রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, সে ইমানদার নয়। আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, সে ইমানদার নয়।
আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, সে ইমানদার নয়।’ তখন হজরত মুহাম্মদকে (সা.) প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর হাবিব, কে সে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদবোধ করে না, সে ব্যক্তি ইমানদার নয় (বুখারি)। আমরা যদি পবিত্র রমজানে আমাদের প্রতিবেশীর অধিকার আদায়সহ অন্যান্য নেক আমলের অঙ্গীকার করি তাহলে আমাদের রোজা প্রকৃতই আল্লাহর জন্য হবে আর এ রোজা আমাদের আত্মার সংশোধনেরও কারণ হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে পবিত্র এ রমজানের দিনগুলো সঠিকভাবে ইবাদত বন্দেগিতে রত থেকে এবং নিজ আত্মার সংশোধন করে নেয়ার সৌভাগ্য দান করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।