ঢাকা ০৯:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মাস্টার্স পাস করে চিকিৎসক পরিচয়ে রোগী দেখেন স্বপ্না

  • আপডেট সময় : ০৪:৩০:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

ফরিদপুর সংবাদদাতা: ডিগ্রি ও মাস্টার্স পাস করে রোগী দেখে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়ন স্বাস্থ ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের পরিদর্শিকা স্বপ্না মজুমদার (৪৬)। চিকিৎসাবিদ্যায় কোনো ডিগ্রি বা সরকারি নিবন্ধন ছাড়াই তিনি নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। এতে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে ওই হাসপাতালে ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে কর্মরত রয়েছেন স্বপ্না মজুমদার। তিনি ব্যবসায় শিক্ষায় ডিগ্রি ও মাস্টার্স করেছেন। নিজের নামের পাশে চিকিৎসা শিক্ষার ডিগ্রি হিসেবে সেটিই ব্যবহার করছেন। তবে তার দাবি, তিনি দুই বছর মেয়াদি মিডওয়াইফারী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া তার লেখা একটি ব্যবস্থাপত্রে দেখা যায়, স্বপ্না মজুমদার নিজের নামের পাশে ব্যাচেলর অব বিজনেস স্টাডিজ (বিবিএস), মাস্টার্স অফ বিজনেস স্টাডিজ (এমবিএস) ট্রেনিং অব মিডওয়াইফারি লিখেছেন। তিনি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়াশোনা করে গর্ভবতী নারীদের জন্য বিভিন্ন ওষুধ লিখে দিয়েছেন। এতে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবস্থাপত্রের নিচে বিবিএস ও এমবিএস লেখা দেখে কেউ কেউ চিকিৎসা শিক্ষায় বড় ডিগ্রিও ভেবে থাকেন। তিনি প্রতি রোগীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা নেন।

তার দাবি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্স (বিবিএস) ও দুই বছর মেয়াদি মাস্টার্স কোর্স (এমবিএস) বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।

এ যোগ্যতা দিয়ে স্বপ্না মজুমদার রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন না। এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা মাতৃ ও শিশু কল্যাণ পরিবার পরিকল্পনা (এমসিএইচএফপি) কেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসা কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিবিএস এবং এমবিএস বলে কোনো ডিগ্রি আমার জানামতে নেই। এই যোগ্যতা দিয়ে কেউ চিকিৎসা দিতে পারেন না। এটি আইন বিরুদ্ধ কাজ। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব এবং প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসান বলেন, চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন আবশ্যক। এর বাইরে কেউ চিকিৎসা দিলে তা প্রতারণা ও গুরুতর অপরাধ।

তিনি বলেন, ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর (এফডব্লিউভি) হলেন মূলত মিডওয়াইফারি, পরিবার পরিকল্পনা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুর টিকা, পরিবার পরিকল্পনা, প্রসূতি সেবা, প্রাথমিক চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং দেওয়ার জন্য।

তিনি আরো বলেন, এফডব্লিউভি ডাক্তার নন, তাই তিনি প্রেসক্রিপশন লিখে ওষুধ দিতে পারেন না। গুরুতর অসুস্থতা বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার প্রয়োজন হলে ডাক্তারের কাছে রেফার্ড করা তাদের দায়িত্ব।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে স্বপ্না মজুমদার বলেন, বিবিএস ও এমবিএস আমার লেখাপড়ার ডিগ্রি। আমি ব্যবস্থাপত্র না লিখলে চিকিৎসা দেবো কীভাবে। তাই রোগীদের চিকিৎসাপত্র লিখে দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, গ্রামে অসুস্থ মানুষদের কষ্ট দেখে আমি কিছুটা সহযোগিতা করি। অনেকেই আমাকে ডাক্তার ভেবে আসেন, সেটা তো আমার ভুল নয়। আমি শুধু তাদের সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করি।

নিজের নামের নিচে বিবিএস ও এমবিএস ডিগ্রি কেন লিখেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা চিকিৎসার ডিগ্রি না, তবে আমার পড়াশোনার ডিগ্রি। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে প্রতারণা করি না, মানুষকে সাহায্য করতেই পাশে থাকি।

এসি/আপ্র/২৩/০৯/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মাস্টার্স পাস করে চিকিৎসক পরিচয়ে রোগী দেখেন স্বপ্না

আপডেট সময় : ০৪:৩০:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফরিদপুর সংবাদদাতা: ডিগ্রি ও মাস্টার্স পাস করে রোগী দেখে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়ন স্বাস্থ ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের পরিদর্শিকা স্বপ্না মজুমদার (৪৬)। চিকিৎসাবিদ্যায় কোনো ডিগ্রি বা সরকারি নিবন্ধন ছাড়াই তিনি নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। এতে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে ওই হাসপাতালে ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে কর্মরত রয়েছেন স্বপ্না মজুমদার। তিনি ব্যবসায় শিক্ষায় ডিগ্রি ও মাস্টার্স করেছেন। নিজের নামের পাশে চিকিৎসা শিক্ষার ডিগ্রি হিসেবে সেটিই ব্যবহার করছেন। তবে তার দাবি, তিনি দুই বছর মেয়াদি মিডওয়াইফারী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া তার লেখা একটি ব্যবস্থাপত্রে দেখা যায়, স্বপ্না মজুমদার নিজের নামের পাশে ব্যাচেলর অব বিজনেস স্টাডিজ (বিবিএস), মাস্টার্স অফ বিজনেস স্টাডিজ (এমবিএস) ট্রেনিং অব মিডওয়াইফারি লিখেছেন। তিনি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়াশোনা করে গর্ভবতী নারীদের জন্য বিভিন্ন ওষুধ লিখে দিয়েছেন। এতে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবস্থাপত্রের নিচে বিবিএস ও এমবিএস লেখা দেখে কেউ কেউ চিকিৎসা শিক্ষায় বড় ডিগ্রিও ভেবে থাকেন। তিনি প্রতি রোগীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা নেন।

তার দাবি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি পাস কোর্স (বিবিএস) ও দুই বছর মেয়াদি মাস্টার্স কোর্স (এমবিএস) বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।

এ যোগ্যতা দিয়ে স্বপ্না মজুমদার রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন না। এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা মাতৃ ও শিশু কল্যাণ পরিবার পরিকল্পনা (এমসিএইচএফপি) কেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসা কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিবিএস এবং এমবিএস বলে কোনো ডিগ্রি আমার জানামতে নেই। এই যোগ্যতা দিয়ে কেউ চিকিৎসা দিতে পারেন না। এটি আইন বিরুদ্ধ কাজ। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব এবং প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসান বলেন, চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন আবশ্যক। এর বাইরে কেউ চিকিৎসা দিলে তা প্রতারণা ও গুরুতর অপরাধ।

তিনি বলেন, ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর (এফডব্লিউভি) হলেন মূলত মিডওয়াইফারি, পরিবার পরিকল্পনা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুর টিকা, পরিবার পরিকল্পনা, প্রসূতি সেবা, প্রাথমিক চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং দেওয়ার জন্য।

তিনি আরো বলেন, এফডব্লিউভি ডাক্তার নন, তাই তিনি প্রেসক্রিপশন লিখে ওষুধ দিতে পারেন না। গুরুতর অসুস্থতা বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার প্রয়োজন হলে ডাক্তারের কাছে রেফার্ড করা তাদের দায়িত্ব।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে স্বপ্না মজুমদার বলেন, বিবিএস ও এমবিএস আমার লেখাপড়ার ডিগ্রি। আমি ব্যবস্থাপত্র না লিখলে চিকিৎসা দেবো কীভাবে। তাই রোগীদের চিকিৎসাপত্র লিখে দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, গ্রামে অসুস্থ মানুষদের কষ্ট দেখে আমি কিছুটা সহযোগিতা করি। অনেকেই আমাকে ডাক্তার ভেবে আসেন, সেটা তো আমার ভুল নয়। আমি শুধু তাদের সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করি।

নিজের নামের নিচে বিবিএস ও এমবিএস ডিগ্রি কেন লিখেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা চিকিৎসার ডিগ্রি না, তবে আমার পড়াশোনার ডিগ্রি। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে প্রতারণা করি না, মানুষকে সাহায্য করতেই পাশে থাকি।

এসি/আপ্র/২৩/০৯/২০২৫