ঢাকা ০২:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

মালামাল টেনে কোভিডকালে ‘লাভ’ করেছে বিমান, বললেন পরিচালক

  • আপডেট সময় : ০১:২৭:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২২
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : কোভিড মহামারীকালে দেশে বিদেশে বিধিনিষেধের কবলে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলেও মালামাল পরিবহন করে মুনাফা করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বলে জানিয়েছেন এক পরিচালক। মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় গত বছর অগাস্ট-সেপ্টেম্বর এবং পরের কয়েক মাসে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের কেবিনকে কার্গো হিসেবে ব্যবহার করে কয়েকশ কোটি টাকা আয় করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ এয়ারলাইন্স বলে জানান বিমানের পরিচালক (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) এয়ার কমোডর মাহবুব জাহান খান। এ সময়কালে বিশ্বের বড় বড় এয়ারলাইন্স যখন বিশাল ক্ষতির মুখে পড়ে তখন বাংলাদেশের পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সটি লাভ করেছে বলে দাবি তার। সোমবার রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমান বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয় বলাকা ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি। এসময় সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ্ মোস্তফা কামালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিমান বাংলাদেশের প্যাসেঞ্জার সার্ভিস সলিউশন ও অনলাইন টিকেটিং পুনরায় চালু উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কোভিডকালে যাত্রীবাহী বিমানের মালামাল বহনের ফলে লাভ-ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী পরিচালকদের উত্তর দিতে বলেন।
এসময় পরিচালক মাহবুব হাসান বলেন, বিমানের বহরে ২০১১ সালে যুক্ত ৭৭৭-৩০০ এয়ারক্রাফটগুলো কার্গো পরিবহন করেছে। অর্থাৎ কেবিনের সিটে কার্গো নিয়েছে। “যখন কোভিডের সময় সমস্ত বিমান বসে গেল তখন আমরা দেখলাম বিমান বসিয়ে রাখলে প্রচুর খরচ হবে। মাসে রক্ষণাবেক্ষণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা, বছরে ৫০০ কোটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটা গাইডলাইন বানালাম। “সিভিল এভিয়েশনের অনুমতি নিয়ে কেবিনে কার্গো বহন করা হয়। আমরা সেপ্টেম্বর মাসে ৭০ কোটি, তার আগের মাসে ৪১ কোটি, এভাবে কয়েকশ কোটি টাকা আয় করেছি। বিমানের টিকে থাকা বলতে পারেন।“ তিনি বলেন, কোভিডে বিশ্বের যেখানে বড় বড় এয়ারলাইন্সগুলো ৪৫ হাজার কোটি টাকা, ৫০ হাজার কোটি টাকা লস দিয়েছে বিমান সেই কোভিড সময়ে লাভ করেছে। “এটার জন্য সবার পরিশ্রম ছিল, বিমানের সব শ্রেণির কর্মচারীদের একটা বিরাট ত্যাগ ছিল।ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের একটা গাইডলাইন ছিল।“ তবে যাত্রীবাহী বিমানে মালামাল পরিবহন করতে গিয়ে উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিমানের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট) এয়ার কমডোর মৃধা মো. একরামুজ্জামান বলেন, “কার্গো পরিবহনের সময় আমরা যথেষ্ট সতর্ক ছিলাম। খুব যতেœর সঙ্গে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। তবে একেবারে যে কোনো ক্ষতি হয়নি, তা নয়। তবে হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়নি। এই রক্ষণাবেক্ষণে এক কোটি টাকাও খরচ হয়নি।“
সাড়ে ৫ মাস পর ই-টিকেটিং : এদিকে গ্রাহক ভোগান্তি শেষে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস ধরে বন্ধ থাকার পর গত রোববার থেকে চালু হয়েছে বিমানের অনলাইন টিকেটিং সেবা। বলাকা ভবনে বিমানের টিকেট বিক্রয় কেন্দ্রে পাওয়া যায়নি মধ্যপ্রাচ্য রুটে হ্রাসকৃত মূল্যের টিকেট।একইসঙ্গে অনলাইন চেকিং, বুকিং, ওয়েব সার্ভিসের মতো সেবাও চালুর কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্সটি। সংবাদ সম্মেলনে দীর্ঘ সময় ই টিকেটিং বন্ধের বিষয়ে তদন্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ট্রাভেলশপ বিমানকে ই-কমার্স ও লজিস্টিক সেবা দিত। গত বছরের ১০ অগাস্ট এ সেবা বন্ধ করতে আমরা বাধ্য হয়েছি। “ট্যাভেলশপের সঙ্গে বিমানের চুক্তি ছিল। তারা চুক্তিবহির্ভূতভাবে সেবাগুলো বন্ধ করেছে। এ কারণে অনলাইনে টিকিট কেনা বন্ধ ছিল। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।“ ছয় মাস ধরে বিমানের টিকেটের সংকট চলছে, দাম বেড়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে টিকিটের দাম এক লাখ টাকার ওপরে ছাড়িয়েছে। ভুয়া বুকিংয়ের ফলে এমন সংকট তৈরি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের গন্তব্যগুলোর ভাড়া কমাতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমরা মধ্যপ্রাচ্যে সর্বোচ্চ ৬৪ হাজার টাকায় টিকিট দিয়েছি। অথচ একই তারিখের টিকিট এমিরেটস বিক্রি করেছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায়। এখনও চেষ্টা অব্যাহত আছে দাম আরও কমানোর।“
ঢাকা-টরেন্টো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ : সংবাদ সম্মেলনে বিমানের এমডি বলেন, আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে ঢাকা-টরেন্টো ফ্লাইট চালুর বিষয়ে এগোচ্চে বিমান। এই রুটে ফ্লাইট চালাতে ১৭টি শর্ত ছিল। এর মধ্যে ১৫টি পূরণ করা হয়েছে। বাকি দুটি শর্তপূরণের কার্যক্রম চলমান আছে। “এরপর টরেন্টোতে পরীক্ষামূলক ফ্লাইট যাবে। এগুলো করতে পারলেই এই রুটে ফ্লাইট চলবে।” তিনি জানান, ঢাকা-নিউইয়র্কের ফ্লাইট চালুর বিষয়ে নিরাপত্তা দল যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে। তারা বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন দেবেন। এরপর একটি অডিট টিম আসবে। তারপর বিমানের পক্ষ থেকে ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হবে। আর জাপানে করোনা পরিস্থিতিতে যাত্রী পরিবহনে রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা আছে। সেটি উঠে গেলেই ঢাকা-নারিতো ফ্লাইট পরিচালনা যে কোনো সময় শুরু করা যাবে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন বলেন, “আমরা নতুন নতুন রুটে যাচ্ছি। আশা করছি অচিরেই ঢাকা-টরোন্টো, নিউইয়র্ক, মালেতে বিমান ফ্লাইট চালানো শুরু করবে।“
ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজ কেনা : আয়ারল্যান্ড থেকে ২০০৯ সালে লিজে আনা দুটি পুরোনো বোয়িং উড়োজাহাজ কিনছে বিমান। এ বিষয়ে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এ বিমান দুটি ফেরত দিতে গেলে সমপরিমাণ টাকাই খরচ হবে। এর চেয়ে কিনলে আরও সাশ্রয়ী হবে। বিমানের কোনো ক্ষতি হয়, এমন কোনো কিছু আমাদের উপস্থিতিতে হবে না।” একই বিষয়ে বিমানের পরিচালক (সেলস ও মার্কেটিং) মাহবুব জাহান খান বলেন, ওই দুটি উড়োজাহাজ ৭৩৭-৮০০ মডেলের। এগুলোর বয়স ২০ বছরের কাছাকাছি। উড়োজাহাজ দুটি বিমান ব্যবহার করেছে ১২ বছর ধরে। দুটি উড়োজাহাজের চারটি ইঞ্জিন প্রায় সম্পূর্ণ মেরামত করা হয়েছে। “এ দুটিকে ফেরত দিতে গেলে প্রায় ৫২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা (৬.০৮ মিলিয়ন ডলার) খরচ হবে। আর কিনতে কিনতে প্রায় ১৬৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার (১৯ মিলিয়ন ডলার) মতো লাগছে। ফলে অতিরিক্ত সাড়ে ১৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করে বিমান দুটি কিনে ফেলা হয়।“ এ বিষয়ে বিমানের এমডি বলেন, “বিমান দুটি ফেরত দিতে হলে তিন মাস আগে গ্রাউন্ডেড করতে হত। ফলে একদিকে তিন মাসের জন্য দুটি গন্তব্যে ফ্লাইট বন্ধ করতে হত। আবার এগুলোর ইজারার টাকাও পরিশোধ করতে হত। “পরিচালনা পর্ষদ অবুঝ নয়। পর্ষদ সব বুঝে সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের পরেই এটা কেনা নিয়েছে।” পর্ষদ বারবার বসে উেেড়াজাহাজ দুটো কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান বলেন, “আমরা মনে করেছি, এই দুইটি উড়োজাহাজ রেখে দিলে আমাদের বেশি উপকার হবে। এ জন্য আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মালামাল টেনে কোভিডকালে ‘লাভ’ করেছে বিমান, বললেন পরিচালক

আপডেট সময় : ০১:২৭:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২২

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : কোভিড মহামারীকালে দেশে বিদেশে বিধিনিষেধের কবলে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলেও মালামাল পরিবহন করে মুনাফা করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বলে জানিয়েছেন এক পরিচালক। মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় গত বছর অগাস্ট-সেপ্টেম্বর এবং পরের কয়েক মাসে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের কেবিনকে কার্গো হিসেবে ব্যবহার করে কয়েকশ কোটি টাকা আয় করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ এয়ারলাইন্স বলে জানান বিমানের পরিচালক (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) এয়ার কমোডর মাহবুব জাহান খান। এ সময়কালে বিশ্বের বড় বড় এয়ারলাইন্স যখন বিশাল ক্ষতির মুখে পড়ে তখন বাংলাদেশের পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সটি লাভ করেছে বলে দাবি তার। সোমবার রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমান বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয় বলাকা ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি। এসময় সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ্ মোস্তফা কামালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিমান বাংলাদেশের প্যাসেঞ্জার সার্ভিস সলিউশন ও অনলাইন টিকেটিং পুনরায় চালু উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কোভিডকালে যাত্রীবাহী বিমানের মালামাল বহনের ফলে লাভ-ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী পরিচালকদের উত্তর দিতে বলেন।
এসময় পরিচালক মাহবুব হাসান বলেন, বিমানের বহরে ২০১১ সালে যুক্ত ৭৭৭-৩০০ এয়ারক্রাফটগুলো কার্গো পরিবহন করেছে। অর্থাৎ কেবিনের সিটে কার্গো নিয়েছে। “যখন কোভিডের সময় সমস্ত বিমান বসে গেল তখন আমরা দেখলাম বিমান বসিয়ে রাখলে প্রচুর খরচ হবে। মাসে রক্ষণাবেক্ষণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা, বছরে ৫০০ কোটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটা গাইডলাইন বানালাম। “সিভিল এভিয়েশনের অনুমতি নিয়ে কেবিনে কার্গো বহন করা হয়। আমরা সেপ্টেম্বর মাসে ৭০ কোটি, তার আগের মাসে ৪১ কোটি, এভাবে কয়েকশ কোটি টাকা আয় করেছি। বিমানের টিকে থাকা বলতে পারেন।“ তিনি বলেন, কোভিডে বিশ্বের যেখানে বড় বড় এয়ারলাইন্সগুলো ৪৫ হাজার কোটি টাকা, ৫০ হাজার কোটি টাকা লস দিয়েছে বিমান সেই কোভিড সময়ে লাভ করেছে। “এটার জন্য সবার পরিশ্রম ছিল, বিমানের সব শ্রেণির কর্মচারীদের একটা বিরাট ত্যাগ ছিল।ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের একটা গাইডলাইন ছিল।“ তবে যাত্রীবাহী বিমানে মালামাল পরিবহন করতে গিয়ে উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিমানের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট) এয়ার কমডোর মৃধা মো. একরামুজ্জামান বলেন, “কার্গো পরিবহনের সময় আমরা যথেষ্ট সতর্ক ছিলাম। খুব যতেœর সঙ্গে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। তবে একেবারে যে কোনো ক্ষতি হয়নি, তা নয়। তবে হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়নি। এই রক্ষণাবেক্ষণে এক কোটি টাকাও খরচ হয়নি।“
সাড়ে ৫ মাস পর ই-টিকেটিং : এদিকে গ্রাহক ভোগান্তি শেষে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস ধরে বন্ধ থাকার পর গত রোববার থেকে চালু হয়েছে বিমানের অনলাইন টিকেটিং সেবা। বলাকা ভবনে বিমানের টিকেট বিক্রয় কেন্দ্রে পাওয়া যায়নি মধ্যপ্রাচ্য রুটে হ্রাসকৃত মূল্যের টিকেট।একইসঙ্গে অনলাইন চেকিং, বুকিং, ওয়েব সার্ভিসের মতো সেবাও চালুর কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্সটি। সংবাদ সম্মেলনে দীর্ঘ সময় ই টিকেটিং বন্ধের বিষয়ে তদন্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ট্রাভেলশপ বিমানকে ই-কমার্স ও লজিস্টিক সেবা দিত। গত বছরের ১০ অগাস্ট এ সেবা বন্ধ করতে আমরা বাধ্য হয়েছি। “ট্যাভেলশপের সঙ্গে বিমানের চুক্তি ছিল। তারা চুক্তিবহির্ভূতভাবে সেবাগুলো বন্ধ করেছে। এ কারণে অনলাইনে টিকিট কেনা বন্ধ ছিল। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।“ ছয় মাস ধরে বিমানের টিকেটের সংকট চলছে, দাম বেড়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে টিকিটের দাম এক লাখ টাকার ওপরে ছাড়িয়েছে। ভুয়া বুকিংয়ের ফলে এমন সংকট তৈরি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের গন্তব্যগুলোর ভাড়া কমাতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমরা মধ্যপ্রাচ্যে সর্বোচ্চ ৬৪ হাজার টাকায় টিকিট দিয়েছি। অথচ একই তারিখের টিকিট এমিরেটস বিক্রি করেছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায়। এখনও চেষ্টা অব্যাহত আছে দাম আরও কমানোর।“
ঢাকা-টরেন্টো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ : সংবাদ সম্মেলনে বিমানের এমডি বলেন, আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে ঢাকা-টরেন্টো ফ্লাইট চালুর বিষয়ে এগোচ্চে বিমান। এই রুটে ফ্লাইট চালাতে ১৭টি শর্ত ছিল। এর মধ্যে ১৫টি পূরণ করা হয়েছে। বাকি দুটি শর্তপূরণের কার্যক্রম চলমান আছে। “এরপর টরেন্টোতে পরীক্ষামূলক ফ্লাইট যাবে। এগুলো করতে পারলেই এই রুটে ফ্লাইট চলবে।” তিনি জানান, ঢাকা-নিউইয়র্কের ফ্লাইট চালুর বিষয়ে নিরাপত্তা দল যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে। তারা বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন দেবেন। এরপর একটি অডিট টিম আসবে। তারপর বিমানের পক্ষ থেকে ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হবে। আর জাপানে করোনা পরিস্থিতিতে যাত্রী পরিবহনে রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা আছে। সেটি উঠে গেলেই ঢাকা-নারিতো ফ্লাইট পরিচালনা যে কোনো সময় শুরু করা যাবে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন বলেন, “আমরা নতুন নতুন রুটে যাচ্ছি। আশা করছি অচিরেই ঢাকা-টরোন্টো, নিউইয়র্ক, মালেতে বিমান ফ্লাইট চালানো শুরু করবে।“
ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজ কেনা : আয়ারল্যান্ড থেকে ২০০৯ সালে লিজে আনা দুটি পুরোনো বোয়িং উড়োজাহাজ কিনছে বিমান। এ বিষয়ে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এ বিমান দুটি ফেরত দিতে গেলে সমপরিমাণ টাকাই খরচ হবে। এর চেয়ে কিনলে আরও সাশ্রয়ী হবে। বিমানের কোনো ক্ষতি হয়, এমন কোনো কিছু আমাদের উপস্থিতিতে হবে না।” একই বিষয়ে বিমানের পরিচালক (সেলস ও মার্কেটিং) মাহবুব জাহান খান বলেন, ওই দুটি উড়োজাহাজ ৭৩৭-৮০০ মডেলের। এগুলোর বয়স ২০ বছরের কাছাকাছি। উড়োজাহাজ দুটি বিমান ব্যবহার করেছে ১২ বছর ধরে। দুটি উড়োজাহাজের চারটি ইঞ্জিন প্রায় সম্পূর্ণ মেরামত করা হয়েছে। “এ দুটিকে ফেরত দিতে গেলে প্রায় ৫২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা (৬.০৮ মিলিয়ন ডলার) খরচ হবে। আর কিনতে কিনতে প্রায় ১৬৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার (১৯ মিলিয়ন ডলার) মতো লাগছে। ফলে অতিরিক্ত সাড়ে ১৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করে বিমান দুটি কিনে ফেলা হয়।“ এ বিষয়ে বিমানের এমডি বলেন, “বিমান দুটি ফেরত দিতে হলে তিন মাস আগে গ্রাউন্ডেড করতে হত। ফলে একদিকে তিন মাসের জন্য দুটি গন্তব্যে ফ্লাইট বন্ধ করতে হত। আবার এগুলোর ইজারার টাকাও পরিশোধ করতে হত। “পরিচালনা পর্ষদ অবুঝ নয়। পর্ষদ সব বুঝে সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের পরেই এটা কেনা নিয়েছে।” পর্ষদ বারবার বসে উেেড়াজাহাজ দুটো কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান বলেন, “আমরা মনে করেছি, এই দুইটি উড়োজাহাজ রেখে দিলে আমাদের বেশি উপকার হবে। এ জন্য আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”