নারী ও শিশু ডেস্ক: ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরের দিকে মানুষ উঠতে থাকে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা ততই কমতে থাকে; যা মানুষের পক্ষে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াকে কঠিন করে তোলে। তাহলে যারা উঁচু ভূমিতে বসবাস করেন, তারা সেখানে টিকে আছেন কীভাবে?
১০ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে তিব্বত মালভূমিতে বসবাসকারী নারীরা এমন পরিবেশে কেবল যে বেঁচে আছেন তাই নয়; ওই পরিবেশ তাদের আরও ভালোভাবে বেঁচে থাকতে প্রস্তুত করেছে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত এ অঞ্চলটি তিব্বতীয় জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। তিব্বতীয় মালভূমির গড় উচ্চতা ১৬ হাজার ফুট। এ কারণে ওই অঞ্চলকে বলা হয় পৃথিবীর ছাদ। এ অঞ্চলের পরিবেশ নারীদের জীবন কীভাবে প্রভাবিত করে চলেছেÑ এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলেছে ‘কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক’ সিনথিয়া বিয়াল-এর নেতৃত্বে করা এক গবেষণায়।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা’ জার্নালে। সেখানে উঠে এসেছে, তিব্বতি নারীদের কিছু শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য কীভাবে এ ধরনের পরিবেশে অর্থাৎ কম অক্সিজেন মাত্রায় তাদের টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি বাড়িয়েছে তাদের প্রজনন সক্ষমতাও।
বিয়াল বলেন, এ গবেষণার ফলাফল কেবল তিব্বতী নারীদের অসাধারণ প্রাণশক্তিই তুলে ধরেনি, বরং চরম পরিবেশে মানুষ যেভাবে মানিয়ে নিতে পারে সে সম্পর্কেও দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এ ধরনের গবেষণা মানব বিকাশ ও আমরা কীভাবে ভবিষ্যতে পরিবেশগত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের প্রতি সাড়া দেই সে সম্পর্কেও ধারণা দেবে। এই ধরনের জনগোষ্ঠী কীভাবে অভিযোজিত হয় বা প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয় তা বোঝার ফলে আমাদের পক্ষে মানব বিবর্তনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি।
৪৬ থেকে ৮৬ বছর বয়সি ৪১৭ তিব্বতি নারীকে নিয়ে গবেষণা করেছেন বিয়াল ও তার গবেষণা দলটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২-১৪ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত তিব্বত মালভূমির দক্ষিণ প্রান্তে নেপালের ‘আপার মাস্টাং’-এ বসবাস করেন তারা।
গবেষণার জন্য নারীদের প্রজনন ইতিহাস, শারীরিক আকার-আকৃতি, ডিএনএ নমুনা ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকরা। তারা বুঝতে চেয়েছেন, অতি-উচ্চতার হাইপোক্সিয়া অর্থাৎ বাতাস ও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম হলে অক্সিজেন সরবরাহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য কীভাবে সন্তান জন্ম দেওয়ার সংখ্যাকে প্রভাবিত করে। এই হাইপোক্সিয়া মূলত বিবর্তনীয় সুস্থতার একটি মূল চাবিকাঠি।
গবেষকরা বলছেন, যে নারীরা সবচেয়ে বেশি সন্তান জন্ম দিয়েছেন তাদের রক্ত ও হার্টের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার ফলে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকলেও নারীদের ফুসফুস অক্সিজেনের সরবরাহ পেয়েছে।
সবচেয়ে বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া নারীদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ছিল গড় নমুনার কাছাকাছি। তবে তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিল বেশি। অক্সিজেন স্যাচুরেশন মূলত রক্তের সান্দ্রতা না বাড়িয়ে বিভিন্ন কোষে আরও দক্ষ উপায়ে অক্সিজেন সরবরাহের অনুমতি দেয় অর্থাৎ রক্ত যত ঘন হয়, হৃৎপিণ্ডের উপর তত বেশি চাপ পড়ে।
‘কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি’র নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সারাহ ইডেল পাইল বলেন. এটি চলমান প্রাকৃতিক নির্বাচনের একটি ঘটনা। তিব্বতি নারীরা এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছেন, যা হৃৎপিণ্ডকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ না করিয়ে শরীরের অক্সিজেনের চাহিদার ভারসাম্য বজায় রেখেছে।
এই জিনগত বৈশিষ্ট্য এসেছে ৫০ হাজার বছর আগে সাইবেরিয়ায় বসবাসকারী ডেনিসোভান মানবের একটি বিলুপ্ত প্রজাতির কাছ থেকে। তাদের বংশধররা পরে তিব্বত মালভূমিতে চলে আসেন।
এ বৈশিষ্ট্যটি ‘ইপিএএস১’ জিনের একটি রূপ, যা তিব্বত মালভূমির আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য এই অনন্য ও হিমোগ্লোবিনের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের বড় ভেন্ট্রিকলগুলোতে রক্ত প্রবাহ বাড়ানো, যা দেহের অক্সিজেন সরবরাহকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এসব বৈশিষ্ট্য তিব্বতীয় নারীদের প্রজনন সক্ষমতায় অবদান রেখেছে, যা কীভাবে মানুষ বাতাসে ও দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকলেও জীবনভর মানিয়ে নিতে পারে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট ফিজিক্স ডটঅর্গ।
মালভূমিতে ভালোভাবে বেঁচে আছেন তিব্বতি নারীরা
নারী ও শিশু ডেস্ক: ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরের দিকে মানুষ উঠতে থাকে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা ততই কমতে থাকে; যা মানুষের পক্ষে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াকে কঠিন করে তোলে। তাহলে যারা উঁচু ভূমিতে বসবাস করেন, তারা সেখানে টিকে আছেন কীভাবে?
১০ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে তিব্বত মালভূমিতে বসবাসকারী নারীরা এমন পরিবেশে কেবল যে বেঁচে আছেন তাই নয়; ওই পরিবেশ তাদের আরও ভালোভাবে বেঁচে থাকতে প্রস্তুত করেছে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত এ অঞ্চলটি তিব্বতীয় জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। তিব্বতীয় মালভূমির গড় উচ্চতা ১৬ হাজার ফুট। এ কারণে ওই অঞ্চলকে বলা হয় পৃথিবীর ছাদ। এ অঞ্চলের পরিবেশ নারীদের জীবন কীভাবে প্রভাবিত করে চলেছেÑ এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলেছে ‘কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক’ সিনথিয়া বিয়াল-এর নেতৃত্বে করা এক গবেষণায়।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা’ জার্নালে। সেখানে উঠে এসেছে, তিব্বতি নারীদের কিছু শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য কীভাবে এ ধরনের পরিবেশে অর্থাৎ কম অক্সিজেন মাত্রায় তাদের টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি বাড়িয়েছে তাদের প্রজনন সক্ষমতাও।
বিয়াল বলেন, এ গবেষণার ফলাফল কেবল তিব্বতী নারীদের অসাধারণ প্রাণশক্তিই তুলে ধরেনি, বরং চরম পরিবেশে মানুষ যেভাবে মানিয়ে নিতে পারে সে সম্পর্কেও দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এ ধরনের গবেষণা মানব বিকাশ ও আমরা কীভাবে ভবিষ্যতে পরিবেশগত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের প্রতি সাড়া দেই সে সম্পর্কেও ধারণা দেবে। এই ধরনের জনগোষ্ঠী কীভাবে অভিযোজিত হয় বা প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয় তা বোঝার ফলে আমাদের পক্ষে মানব বিবর্তনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি।
৪৬ থেকে ৮৬ বছর বয়সি ৪১৭ তিব্বতি নারীকে নিয়ে গবেষণা করেছেন বিয়াল ও তার গবেষণা দলটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২-১৪ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত তিব্বত মালভূমির দক্ষিণ প্রান্তে নেপালের ‘আপার মাস্টাং’-এ বসবাস করেন তারা।
গবেষণার জন্য নারীদের প্রজনন ইতিহাস, শারীরিক আকার-আকৃতি, ডিএনএ নমুনা ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকরা। তারা বুঝতে চেয়েছেন, অতি-উচ্চতার হাইপোক্সিয়া অর্থাৎ বাতাস ও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম হলে অক্সিজেন সরবরাহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য কীভাবে সন্তান জন্ম দেওয়ার সংখ্যাকে প্রভাবিত করে। এই হাইপোক্সিয়া মূলত বিবর্তনীয় সুস্থতার একটি মূল চাবিকাঠি।
গবেষকরা বলছেন, যে নারীরা সবচেয়ে বেশি সন্তান জন্ম দিয়েছেন তাদের রক্ত ও হার্টের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার ফলে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকলেও নারীদের ফুসফুস অক্সিজেনের সরবরাহ পেয়েছে।
সবচেয়ে বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া নারীদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ছিল গড় নমুনার কাছাকাছি। তবে তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিল বেশি। অক্সিজেন স্যাচুরেশন মূলত রক্তের সান্দ্রতা না বাড়িয়ে বিভিন্ন কোষে আরও দক্ষ উপায়ে অক্সিজেন সরবরাহের অনুমতি দেয় অর্থাৎ রক্ত যত ঘন হয়, হৃৎপিণ্ডের উপর তত বেশি চাপ পড়ে।
‘কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি’র নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সারাহ ইডেল পাইল বলেন. এটি চলমান প্রাকৃতিক নির্বাচনের একটি ঘটনা। তিব্বতি নারীরা এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছেন, যা হৃৎপিণ্ডকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ না করিয়ে শরীরের অক্সিজেনের চাহিদার ভারসাম্য বজায় রেখেছে।
এই জিনগত বৈশিষ্ট্য এসেছে ৫০ হাজার বছর আগে সাইবেরিয়ায় বসবাসকারী ডেনিসোভান মানবের একটি বিলুপ্ত প্রজাতির কাছ থেকে। তাদের বংশধররা পরে তিব্বত মালভূমিতে চলে আসেন।
এ বৈশিষ্ট্যটি ‘ইপিএএস১’ জিনের একটি রূপ, যা তিব্বত মালভূমির আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য এই অনন্য ও হিমোগ্লোবিনের ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের বড় ভেন্ট্রিকলগুলোতে রক্ত প্রবাহ বাড়ানো, যা দেহের অক্সিজেন সরবরাহকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এসব বৈশিষ্ট্য তিব্বতীয় নারীদের প্রজনন সক্ষমতায় অবদান রেখেছে, যা কীভাবে মানুষ বাতাসে ও দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকলেও জীবনভর মানিয়ে নিতে পারে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট ফিজিক্স ডটঅর্গ।