ঢাকা ০২:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

মার্কিন হুমকি-ধামকিতে আলোচনায় বসবে না ইরান

  • আপডেট সময় : ০৬:৫২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

তেহরানে এক বৈঠকে কথা বলছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ছবি রয়টার্সের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, তার দেশকে হুমকি-ধামকি দিয়ে জোর করে আলোচনায় বসানো যাবে না।

পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে তেহরানের শীর্ষ নেতৃত্বকে চিঠি পাঠানো হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ কথা জানানোর একদিন পর শনিবার খামেনির এ প্রতিক্রিয়া এলো।

শুক্রবার (৭ মার্চ) প্রচারিত ফক্স বিজনেস অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরানের পরমাণু অস্ত্রধর হওয়া ঠেকাতে দুটি পথ আছে। একটি হচ্ছে সামরিক পথ, অন্যটি তাদের সঙ্গে চুক্তি করা।

এর প্রতিক্রিয়ায় খামেনি বলেছেন, ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘তাদের চাহিদা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া’। ইরানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

আলোচনায় বসতে কিছু গুণ্ডা সরকারের চাপপ্রয়োগ সঙ্কটের সমাধান করবে না। তাদের জন্য আলোচনার মানে হচ্ছে নিত্যনতুন দাবি তোলার পথ, এটা কেবল ইরানের পারমাণবিক ইস্যুই নয়। ইরান নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে না, ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে বলেছেন খামেনি।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার এ মন্তব্যের জবাবে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজেস তার কর্তা ট্রাম্পের কথা প্রায় হুবহু পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, ইরানের হাতে দুটি পথ খোলা, হয় আলোচনায় বসা, নয়তো সামরিক পদক্ষেপের মুখোমুখি হওয়া।

আমরা আশা করবো ইরানের শাসকরা ত্রাস বেছে না নিয়ে তাদের জনগণ ও দেশের সর্বোত্তম স্বার্থকে বেছে নেবে, বিবৃতিতে বলেছেন হিউজেস।

তেহরানের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ দেখালেও ইরানতে বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ও এর তেল রপ্তানি শূন্যে নামিয়ে আনতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদের মতোই ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ও চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মেয়াদেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান পারমাণবিক চুক্তি নামে খ্যাত জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) থেকে বের করে আনেন। ওই চুক্তিতে নিষেধাজ্ঞায় ছাড় দেওয়ার বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর নানান বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।

ট্রাম্প ২০১৮ সালে চুক্তিটি থেকে বেরিয়ে এসে তেহরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন; পরে ইরানও চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়াতে থাকে।

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ-র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে বিধিনিষেধ দিতে কূটনীতির সময় ফুরিয়ে আসছে, তারা যুদ্ধাস্ত্র বানাতে সক্ষম এমন মাত্রার কাছাকাছি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ জোরের সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছে।

অন্যদিকে ইরান বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ।

ইরানের গুরুত্বপূর্ণ নীতির ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া খামেনি বলেছেন, জবরদস্তি ও গুণ্ডামির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।

তারা আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ও আন্তর্জাতিক প্রভাবের মতো বিষয়ে নতুন নতুন দাবি নিয়ে হাজির হবে, যেগুলো ইরানের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হবে না, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে তাদের গণমাধ্যম।

তেহরান বলছে, তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মূলত আত্মরক্ষার জন্য। যদিও পশ্চিমা দেশগুলো এই অস্ত্রকে সহিংসতা ও সংঘাতপ্রবণ মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার অন্যতম উপাদান মনে করছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ইরান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাদের অস্ত্রভাণ্ডারে ড্রোন ক্যারিয়ারের মতো নতুন অনেক কিছু সংযোজনের কথা জানিয়েছে। ভূগর্ভস্ত একটি নৌঘাঁটিও দেখিয়েছে তারা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ধর্ষণের বিরুদ্ধে ফুঁসছে দেশ

মার্কিন হুমকি-ধামকিতে আলোচনায় বসবে না ইরান

আপডেট সময় : ০৬:৫২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, তার দেশকে হুমকি-ধামকি দিয়ে জোর করে আলোচনায় বসানো যাবে না।

পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে তেহরানের শীর্ষ নেতৃত্বকে চিঠি পাঠানো হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এ কথা জানানোর একদিন পর শনিবার খামেনির এ প্রতিক্রিয়া এলো।

শুক্রবার (৭ মার্চ) প্রচারিত ফক্স বিজনেস অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরানের পরমাণু অস্ত্রধর হওয়া ঠেকাতে দুটি পথ আছে। একটি হচ্ছে সামরিক পথ, অন্যটি তাদের সঙ্গে চুক্তি করা।

এর প্রতিক্রিয়ায় খামেনি বলেছেন, ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘তাদের চাহিদা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া’। ইরানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

আলোচনায় বসতে কিছু গুণ্ডা সরকারের চাপপ্রয়োগ সঙ্কটের সমাধান করবে না। তাদের জন্য আলোচনার মানে হচ্ছে নিত্যনতুন দাবি তোলার পথ, এটা কেবল ইরানের পারমাণবিক ইস্যুই নয়। ইরান নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে না, ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে বলেছেন খামেনি।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার এ মন্তব্যের জবাবে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজেস তার কর্তা ট্রাম্পের কথা প্রায় হুবহু পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, ইরানের হাতে দুটি পথ খোলা, হয় আলোচনায় বসা, নয়তো সামরিক পদক্ষেপের মুখোমুখি হওয়া।

আমরা আশা করবো ইরানের শাসকরা ত্রাস বেছে না নিয়ে তাদের জনগণ ও দেশের সর্বোত্তম স্বার্থকে বেছে নেবে, বিবৃতিতে বলেছেন হিউজেস।

তেহরানের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ দেখালেও ইরানতে বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ও এর তেল রপ্তানি শূন্যে নামিয়ে আনতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদের মতোই ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ও চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মেয়াদেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান পারমাণবিক চুক্তি নামে খ্যাত জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) থেকে বের করে আনেন। ওই চুক্তিতে নিষেধাজ্ঞায় ছাড় দেওয়ার বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর নানান বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।

ট্রাম্প ২০১৮ সালে চুক্তিটি থেকে বেরিয়ে এসে তেহরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন; পরে ইরানও চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়াতে থাকে।

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ-র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে বিধিনিষেধ দিতে কূটনীতির সময় ফুরিয়ে আসছে, তারা যুদ্ধাস্ত্র বানাতে সক্ষম এমন মাত্রার কাছাকাছি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ জোরের সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছে।

অন্যদিকে ইরান বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ।

ইরানের গুরুত্বপূর্ণ নীতির ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া খামেনি বলেছেন, জবরদস্তি ও গুণ্ডামির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।

তারা আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ও আন্তর্জাতিক প্রভাবের মতো বিষয়ে নতুন নতুন দাবি নিয়ে হাজির হবে, যেগুলো ইরানের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হবে না, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে তাদের গণমাধ্যম।

তেহরান বলছে, তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মূলত আত্মরক্ষার জন্য। যদিও পশ্চিমা দেশগুলো এই অস্ত্রকে সহিংসতা ও সংঘাতপ্রবণ মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার অন্যতম উপাদান মনে করছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ইরান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাদের অস্ত্রভাণ্ডারে ড্রোন ক্যারিয়ারের মতো নতুন অনেক কিছু সংযোজনের কথা জানিয়েছে। ভূগর্ভস্ত একটি নৌঘাঁটিও দেখিয়েছে তারা।