নিজস্ব প্রতিবেদক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত পাল্টা শুল্কের হার কমানো নিয়ে দর কষাকষি চলমান। তবে এ বিষয়ে ‘সবকিছু জানেন না’ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান না বলে জানান তিনি। বুধবার (১৬ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানের মাসব্যাপী ফটোগ্রাফি ও গ্রাফিতি প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন তিনি।
মার্কিন শুল্কারোপ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ প্রসঙ্গে আসলে আমি কিছু বলতে চাই না। বলতে চাই না এ কারণে যে, নেগোসিয়েশন এখনো চলমান। নেগোসিয়েশন চলমান অবস্থায় এ নিয়ে কমেন্ট করেৃআমি যেহেতু সরকারের মানুষ সরকারের পক্ষ থেকে আমি কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাই না।
এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, টেকনিক্যালি বলতে পারি-নন ডিসক্লোজার চুক্তি হতেই পারে। এ তথ্যটা আমরা গোপন রাখবো। এক্ষেত্রে কী হবে না হবে, এটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানে। আমি এ সম্পর্কে কোনো কমেন্ট করতে চাই না। যেহেতু নেগোসিয়েশন চলছে, দেখি ফলাফল কী দাঁড়ায়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এ শুল্কহার কমাতে দেশটির সঙ্গে নেগোসিয়েশন চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
পুশইন ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারত থেকে পুশইন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে এ সংখ্যা দুই হাজারে দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তবে ভারতীয় কাউকে পুশইন করা হলে তাদের অবশ্যই ফেরত পাঠানো হবে।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে না। কারণ, ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এ বিষযে অসন্তোশ প্রকাশ করেছেন যে, ‘বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে ভারত থেকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’ এটা নিয়ে আমাদের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। অবশ্যই ভারতীয় যারা আছেন, তারা ভারতে ফেরত যাবেন। এতে কোনও সন্দেহ নেই।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের যে অ্যারেঞ্জমেন্ট আছে পুশইন তার পরিপন্থি। আমরা একাধিকবার, সম্প্রতি আবারও তাদেরকে মনে করিয়ে দিয়েছি- তোমাদের সঙ্গে আমাদের একটি মেকানজিম আছে। আমরা দেখবো এবং আমাদের লোক হলে অবশ্যই আমরা ফেরত নেবো।’ তিনি জানান, এই অ্যারেঞ্জমেন্টের আওতায় কিছু লোককে আমরা ফেরত নিয়েছি। গত কিছু দিনের মধ্যে। আমরা জোর দিচ্ছি, এটি যেন তারা বজায় রাখে।
সীমান্তে হত্যাকাণ্ড: সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকার মোটেও নমনীয় নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, কেউ একজন আইন ভঙ্গ করছে বলে তাদের গুলি করে মেরে ফেলার অধিকার কোনও সীমান্তবাহিনীর নেই। এটি বেআইনি এবং আমরা তাদের বিচারও দাবি করেছি। যারা একাজটি করেছে, তাদের যেন ভারতীয় আইনে বিচার করা হয়।’ তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এটি আমাদের অবস্থান। আমরা নিয়মিত প্রতিবাদ বহাল রেখেছি।’
মালয়েশিয়ায় আরও বাংলাদেশি আটকের ইঙ্গিত: গত মাসে মালয়েশিয়ায় ৩৬ জন বাংলাদেশি আটক করেছিল সে দেশের পুলিশ। ভবিষ্যতে আরও বাংলাদেশি আটকের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমি জানিয়েছি, বিষয়টিকে আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। সন্ত্রাস বিষয়টি আমাদের সরকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। আমরা পরিপূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তারা খালাস না পেলে ওই দেশের আইনে দুই থেকে সাত বছরের জেল হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপরেও আরও দুইজনকে আটক করা হয়েছে এবং একই ধরনের অভিযোগে আরও কিছু গ্রেফতার হবে, সেটির ইঙ্গিত আমাদের দেওয়া হয়েছে। কারণ তারা সারাদেশেই দেখছে যে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত আছে কি না।’
এখন পর্যন্ত যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি স্পষ্ট যে আটক সবার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। পাঁচজনকে তারা পেয়েছে বলে মনে করে এবং বিচারব্যবস্থার অধীনে নিয়ে এসেছে। কয়েকজনকে তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে মেয়াদের বেশি সময় থাকার জন্য।’
বাকিদের তারা তদন্ত করছে এবং শোনা যাচ্ছে তাদের কয়েকজনকে পাঠিয়ে দেবে। আমি বলেছি, যখন পাঠিয়ে দেবেন তখন অবশ্যই আমাদের জানাবেন। এর কিছু নিয়মও আছে। এর ফলে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি এবং তদন্ত করতে পারি। একজন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে আমাদের একটি ছোট প্রতিনিধি দল সেখানে গেছেন। তিনি মালয়েশিয়ার পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে তিনি জানান।
ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার বৃদ্ধি: বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার অনেক বেড়ে গেছে এবং এর কারণ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে সরকার। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি কথা স্বীকার করতে আমার দ্বিধা নেই যে এজন্য অনেকাংশে আমরা দায়ী। আমাদের যেসব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়, সেগুলোর অনেকগুলো নির্ভরযোগ্য না। যে কারণে একজন জেনুইন মানুষও যখন কাগজপত্র জমা দেয়, তখন তারা প্রথমে ধরে নেয় যে এটি জাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ বিষয়ে তেমন কোনও অগ্রগতি আমরা করতে পারিনি।’
আমি মনে করি, যাদের জাল কাগজপত্রের কারণে ভিসা প্রত্যাখ্যান হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। কারণ এটি একটি অপরাধ। এ বিষয়ে আমরা তেমন একটিভ না। আমি মনে করি, আমরা যদি আসলে দেখাতাম যে জাল কাগজপত্র জমা দিলে তাদেরকে আমরা শাস্তির আওতায় আনছি, তবে এই জিনিসটা আরও ভালো হতো বলে তিনি জানান।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ