নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্র গতকাল রোববার পৃথিবীর ১৯০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বাংলাদেশকে নিয়ে ৭৪ পৃষ্ঠার লেখা রয়েছে, যার একটি নথি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, সেই ৭৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের প্রতিটি জায়গায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই। সেখানে খুব পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জোর করে নির্বাচন করা হয়। আগের রাতেও নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন। ‘৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র-গণ–অভ্যুত্থানের বীর শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের ৩২তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘ঐতিহাসিক জেহাদ দিবস ২০২২’ শিরোনামে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এর আয়োজন করে শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদ।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সেই প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে, তা জানিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সেই ৭৪ পৃষ্ঠার প্রতিটি জায়গায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই। বাংলাদেশ পুরোপুরি একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। খুব পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জোর করে নির্বাচন করা হয়। আগের রাতেও নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে সাজা দেওয়া হয়েছে। মানুষকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই। বিচারের আগেই মানুষকে মেরে ফেলা হয়। ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। আওয়ামী লীগের মানুষ ছাড়া আর কেউ অর্থনীতিতে লাভবান হতে পারছে না। যাঁরা ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম প্রচার করেন, তাঁদেরও এখানে রেহাই দেওয়া হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট কোন মানবাধিকার প্রতিবেদনে এসব কথা উঠে এসেছে, মির্জা ফখরুল আজকের সভায় তা উল্লেখ করেননি। পরে প্রতিবেদনটি সম্পর্কে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যে মানবাধিকারসংক্রান্ত প্রতিবেদন বের করে প্রতিবছর, ‘হিউম্যান রাইটস রিপোর্ট’ বলা হয় তাকে, ওইটা। ওটা হচ্ছে সেটা। আপনি যদি ওটাকে সার্চ করে বের করতে চান, লিখে দেবেন যে ইউএন (জাতিসংঘ) হিউম্যান রাইটস রিপোর্ট ২০২১–২২। দুই দিন আগে এটি প্রকাশিত হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন) এটি প্রকাশ করেছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ নামের ৭৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
মির্জা ফখরুল আজ বলেন, এই সরকার জাতির এত বড় ক্ষতি করল, যা অতীতে আর কখনো হয়নি। এমনকি এরশাদ সরকারের আমলেও এত ক্ষতি হয়নি। হাসিনা সরকার মৌলিক কাঠামোগত সমস্যা তৈরি করেছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কয়েক দিন আগে রাজবাড়ীর এক নারী, তিনি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন। তাঁর দুটি সন্তান আছে। রাত দুটোর সময় পুলিশ গিয়ে তাঁর বাসা রেইড করে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ওই নারী বারবার বলেছেন, “দিনে নেন, সকালে নেন, রাতে কেন নিচ্ছেন।” তাঁর অপরাধ, প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে তিনি ফেসবুকে সামান্য একটা লেখা লিখেছেন। ওনারা কি ঈশ্বর হয়ে গেছেন, ওনারা কি বিধাতা যে তাদের বিরুদ্ধে কিচ্ছু বলা যাবে না?’
বিএনপি মানুষের মধ্যে যাওয়া শুরু করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছুদিন আগেও আমাদের নিন্দুকেরা বলেছেন, বিএনপির কোনো চিহ্ন নেই। আমাদের হাঁটু ভাঙা। এখন তারা বলছেন, “বাবা, তোমরা ধমক দিয়ো না।” আমাদের আমানউল্লাহ আমান ধমক দিয়েছে, ওঁদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আরে, ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমরা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। এখনো সময় আছে সেফ এক্সিট করেন, চলে যান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদের সভাপতি আমানউল্লাহ আমান। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সব ধরনের প্রশাসনে বিএনপির কিছু মনিটরিং সেল কাজ করছে। আওয়ামী লীগের কার কথায় কোর্ট চলে, কার কথায় পুলিশ চলে, কার কথায় হত্যাকা- চলে—সবকিছুর প্রমাণ আছে।
