ঢাকা ০৭:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

মার্কিন ডলারের দাম বাড়ছেই

  • আপডেট সময় : ০২:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : এক মাসের ব্যবধানে আবার বেড়েছে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম। মাঝে এক মাস ৫দিন স্থিতিশীল থাকলেও বুধবার (২৭ এপ্রিল) তা আবার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্বাভাবিক আমদানি ব্যয় বাড়ায় ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা খরচ করতে হয়েছিল; সেখানে বুধবার লেগেছে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। আর ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করেছে এর চেয়েও পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দরে। ফলে খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯১-৯৩ টাকায়। করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থির ছিল ডলারের দর। ৫ আগস্ট থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। বাড়তে বাড়তে ৮৬ টাকায় উঠার পর ১০ জানুয়ারি থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত ওই দামে স্থিতিশীল ছিল। এর প্রায় আড়াই মাস পর ২২ মার্চ ডলারের দাম বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। এর প্রায় এক মাস পর আবার বেড়েছে ডলারের দাম। এই হিসাবে গত সাত মাসে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা ১ টাকা ৬৫ পয়সা দর হারিয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মানের অবমূল্যায়নে কিছুটা স্বস্তিতে থাকেন দেশের রফতানিকারকরা। তাদের মতে, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার মান কমিয়েছে। করোনা মহামারির সময়ে তারা মুদ্রার মান অবমূল্যায়ন করেই চলছে, কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশ এখনও সেভাবে অবমূল্যায়ন করেনি। রফতানিকে উৎসাহিত করতে টাকার মান আরও অবমূল্যায়ন করা উচিত বলে তারা মন্তব্য করেন তারা। তবে, ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন আমদানিকারকরা। একদিকে করোনায় সামুদ্রিক জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি এবং কন্টোইনার সংকটে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। কাঁচামাল ও উৎপাদনে মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে বর্ধিত দামে। এর সঙ্গে ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি যোগ হচ্ছে পণ্যের উৎপাদন খরচে। ফলে ভোক্তাসাধারণকে আগের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। আর সেই মূল্যস্ফীতির চাপে নাকাল হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে চাল, ডাল, ভোজ্য ও জ্বালানি তেল, শিশুখাদ্য, মসলা, গম, বিমানের টিকিট ও বিদেশে চিকিৎসা খরচ। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে পাঁচ শতাংশের ঘরে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও ফেব্রুয়ারি শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ১৭ শতাংশ। এদিকে, ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সবমিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বুধবার পর্যন্ত প্রায় দশ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত) ৪৬০ কোটি (৪.৬০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের বাজার পুরো অস্থির হয়ে পড়েছে। সরবরাহ নেই, চাহিদা তুঙ্গে। এটা সহসাই কমার কোন লক্ষণও নেই। এর প্রভাব পড়বে রিজার্ভে ও দেশের অর্থনীতিতে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদে টাকার সমস্যায় পড়বে। তবে এখনো পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে টাকার চেয়ে ডলারের সংকট বেশি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে ডলারের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় অস্বাভাবিক দাম বাড়ার শঙ্কা নেই। রিজার্ভে পর্যাপ্ত ডলার জমা আছে। প্রয়োজনমতো সেখান থেকে ডলার বাজারে ছাড়া হবে। এর আগে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজার থেকে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়। এরপর থেকেই ডলারের চাহিদা বাড়তে থাকে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রয়োজনীয় ডলার বাজারে সরবরাহ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ডলারের মূল্য ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা হলেও ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ৯২ টাকায় ডলার কেনাবেচা করছে। সেই দামে আমদানি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন (৪ হাজার কোটি) ডলারে নেমে এসেছে। রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মার্কিন ডলারের দাম বাড়ছেই

আপডেট সময় : ০২:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : এক মাসের ব্যবধানে আবার বেড়েছে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম। মাঝে এক মাস ৫দিন স্থিতিশীল থাকলেও বুধবার (২৭ এপ্রিল) তা আবার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্বাভাবিক আমদানি ব্যয় বাড়ায় ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা খরচ করতে হয়েছিল; সেখানে বুধবার লেগেছে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। আর ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করেছে এর চেয়েও পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দরে। ফলে খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯১-৯৩ টাকায়। করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থির ছিল ডলারের দর। ৫ আগস্ট থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। বাড়তে বাড়তে ৮৬ টাকায় উঠার পর ১০ জানুয়ারি থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত ওই দামে স্থিতিশীল ছিল। এর প্রায় আড়াই মাস পর ২২ মার্চ ডলারের দাম বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা হয়েছে। এর প্রায় এক মাস পর আবার বেড়েছে ডলারের দাম। এই হিসাবে গত সাত মাসে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা ১ টাকা ৬৫ পয়সা দর হারিয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মানের অবমূল্যায়নে কিছুটা স্বস্তিতে থাকেন দেশের রফতানিকারকরা। তাদের মতে, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার মান কমিয়েছে। করোনা মহামারির সময়ে তারা মুদ্রার মান অবমূল্যায়ন করেই চলছে, কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশ এখনও সেভাবে অবমূল্যায়ন করেনি। রফতানিকে উৎসাহিত করতে টাকার মান আরও অবমূল্যায়ন করা উচিত বলে তারা মন্তব্য করেন তারা। তবে, ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন আমদানিকারকরা। একদিকে করোনায় সামুদ্রিক জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি এবং কন্টোইনার সংকটে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। কাঁচামাল ও উৎপাদনে মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে বর্ধিত দামে। এর সঙ্গে ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি যোগ হচ্ছে পণ্যের উৎপাদন খরচে। ফলে ভোক্তাসাধারণকে আগের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। আর সেই মূল্যস্ফীতির চাপে নাকাল হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে চাল, ডাল, ভোজ্য ও জ্বালানি তেল, শিশুখাদ্য, মসলা, গম, বিমানের টিকিট ও বিদেশে চিকিৎসা খরচ। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে পাঁচ শতাংশের ঘরে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও ফেব্রুয়ারি শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ১৭ শতাংশ। এদিকে, ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সবমিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বুধবার পর্যন্ত প্রায় দশ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত) ৪৬০ কোটি (৪.৬০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের বাজার পুরো অস্থির হয়ে পড়েছে। সরবরাহ নেই, চাহিদা তুঙ্গে। এটা সহসাই কমার কোন লক্ষণও নেই। এর প্রভাব পড়বে রিজার্ভে ও দেশের অর্থনীতিতে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদে টাকার সমস্যায় পড়বে। তবে এখনো পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে টাকার চেয়ে ডলারের সংকট বেশি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে ডলারের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় অস্বাভাবিক দাম বাড়ার শঙ্কা নেই। রিজার্ভে পর্যাপ্ত ডলার জমা আছে। প্রয়োজনমতো সেখান থেকে ডলার বাজারে ছাড়া হবে। এর আগে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজার থেকে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়। এরপর থেকেই ডলারের চাহিদা বাড়তে থাকে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রয়োজনীয় ডলার বাজারে সরবরাহ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ডলারের মূল্য ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা হলেও ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ৯২ টাকায় ডলার কেনাবেচা করছে। সেই দামে আমদানি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন (৪ হাজার কোটি) ডলারে নেমে এসেছে। রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।