ঢাকা ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

মামলাজট থেকে মুক্তিতে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজের

  • আপডেট সময় : ০২:৩৮:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জানুয়ারী ২০২২
  • ৮৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দায়িত্ব নিয়েই বিচার বিভাগকে মামলাজট থেকে মুক্ত করতে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। একইসঙ্গে বিচার বিভাগ নিয়ে আইনের কাঠামোর মধ্যে যে কোনো ‘গঠনমূলক’ আলোচনা ও সমালোচনাকে স্বাগত জানান তিনি।
বাংলাদেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেওয়া হাসান ফয়েজ রোববার তার প্রথম কর্মদিবসে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কথা বলেন। তাকে এই সংবর্ধনা দেয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে বিচারপতি হাসান ফয়েজ বলেন, “প্রায় ১৮ কোটি মানুষের এই দেশে মাত্র ১ হাজার ৯০০ জন বিচারকের কাঁধে যে বিপুল পরিমাণ মামলা অনিষ্পন্ন অবস্হায় রয়েছে, তা বিচার বিভাগের জন্য কোনোভাবেই সুখকর নয়।”
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তিন দিন আগেই এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, দেশের আদালতে বর্তমানে ৩৯ লাখ মামলা ঝুলে রয়েছে।
সেই মামলা জট নিরসনের উপর জোর দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমার দায়িত্বভার গ্রহণের সূচনালগ্নে সকল স্তরের বিজ্ঞ বিচারকদের আহ্বান জানাব, আসুন কঠোর পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে বিচার প্রার্থীর প্রতি সমবেদনা ও ভালোবাসা দিয়ে অধিক পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হই।”
“এটি হবে বিচার বিভাগের জন্য মামলার জট থেকে মুক্তির যুদ্ধ,” ঘোষণা দিয়ে মামলা জট নিরসনে নিজের কর্মপরিকল্পনাও তুলে ধরেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ। তিনি বলেন, অধস্তন আদালতে মামলা জট নিরসনে আটটি বিভাগের জন্য হাই কোর্ট বিচাগের একজন করে বিচারপতিকে প্রধান করে আটটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। তিনি প্রতি মাসে প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিবেদন নেবেন। পুরনো মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিষ্পত্তির বিষয়ে তদারক করবেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, “যে জাতি তার ৩০ লক্ষ সন্তানের রক্তের বিনিময়ে এবং কোটি কোটি মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে এবং অসীম সাহসিকতার সাথে জীবনকে বাজি রেখে পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করতে পারে, সে জাতি বিচার বিভাগের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না, এটা আমার কখনই বিশ্বাস হয় না। আমি বরাবর আশাবাদী একজন মানুষ।”
বিচার বিভাগের ‘গঠনমূলক’ সমালোচনাকে গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিচারপতি হাসান ফয়েজ বলেন, “সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার কোনো অশুভ ব্যক্তি বা গোষ্ঠির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তা কখনই মেনে নেওয়া হবে না।
“আমি উদার চিত্তে বিচার বিভাগকে নিয়ে আইনের কাঠামোর মধ্যে যে কোনো গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। কবিগুরুর ভাষায় বলতে চাই, ‘নিন্দা করতে গেলে বাইরে থেকে করা যায়, কিন্তু বিচার করতে গেলে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়’। আপনারা যারা বিচার বিভাগের আলোচক ও সমালোচক বন্ধু রয়েছেন, তারা বিচার বিভাগের সমস্যা উপলব্ধি করবেন, নিঃসংকোচে আলোচনা বা সমালোচনা করবেন রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর কল্যাণকামিতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে।”
রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ আইন সভা, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সমন্বিত কাজের উপরও জোর দেন প্রধান বিচারপতি। “রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটি অঙ্গ যদি দুর্বল বা সমস্যাগ্রস্ত হয়, তাহলে রাষ্ট্রটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হতে পারে না। সে কারণে আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের অপর দুটি বিভাগ তাদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রের সকল বিভাগ ও ব্যক্তিকে অবশ্যই বারবার স্মরণ করতে হবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক সভ্যতা পরাজিত হবে।” আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচার কক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়। রীতি অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মামলাজট থেকে মুক্তিতে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজের

আপডেট সময় : ০২:৩৮:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জানুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : দায়িত্ব নিয়েই বিচার বিভাগকে মামলাজট থেকে মুক্ত করতে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। একইসঙ্গে বিচার বিভাগ নিয়ে আইনের কাঠামোর মধ্যে যে কোনো ‘গঠনমূলক’ আলোচনা ও সমালোচনাকে স্বাগত জানান তিনি।
বাংলাদেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেওয়া হাসান ফয়েজ রোববার তার প্রথম কর্মদিবসে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কথা বলেন। তাকে এই সংবর্ধনা দেয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে বিচারপতি হাসান ফয়েজ বলেন, “প্রায় ১৮ কোটি মানুষের এই দেশে মাত্র ১ হাজার ৯০০ জন বিচারকের কাঁধে যে বিপুল পরিমাণ মামলা অনিষ্পন্ন অবস্হায় রয়েছে, তা বিচার বিভাগের জন্য কোনোভাবেই সুখকর নয়।”
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তিন দিন আগেই এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, দেশের আদালতে বর্তমানে ৩৯ লাখ মামলা ঝুলে রয়েছে।
সেই মামলা জট নিরসনের উপর জোর দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমার দায়িত্বভার গ্রহণের সূচনালগ্নে সকল স্তরের বিজ্ঞ বিচারকদের আহ্বান জানাব, আসুন কঠোর পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে বিচার প্রার্থীর প্রতি সমবেদনা ও ভালোবাসা দিয়ে অধিক পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হই।”
“এটি হবে বিচার বিভাগের জন্য মামলার জট থেকে মুক্তির যুদ্ধ,” ঘোষণা দিয়ে মামলা জট নিরসনে নিজের কর্মপরিকল্পনাও তুলে ধরেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ। তিনি বলেন, অধস্তন আদালতে মামলা জট নিরসনে আটটি বিভাগের জন্য হাই কোর্ট বিচাগের একজন করে বিচারপতিকে প্রধান করে আটটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। তিনি প্রতি মাসে প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিবেদন নেবেন। পুরনো মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিষ্পত্তির বিষয়ে তদারক করবেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, “যে জাতি তার ৩০ লক্ষ সন্তানের রক্তের বিনিময়ে এবং কোটি কোটি মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে এবং অসীম সাহসিকতার সাথে জীবনকে বাজি রেখে পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করতে পারে, সে জাতি বিচার বিভাগের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না, এটা আমার কখনই বিশ্বাস হয় না। আমি বরাবর আশাবাদী একজন মানুষ।”
বিচার বিভাগের ‘গঠনমূলক’ সমালোচনাকে গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিচারপতি হাসান ফয়েজ বলেন, “সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার কোনো অশুভ ব্যক্তি বা গোষ্ঠির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তা কখনই মেনে নেওয়া হবে না।
“আমি উদার চিত্তে বিচার বিভাগকে নিয়ে আইনের কাঠামোর মধ্যে যে কোনো গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। কবিগুরুর ভাষায় বলতে চাই, ‘নিন্দা করতে গেলে বাইরে থেকে করা যায়, কিন্তু বিচার করতে গেলে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়’। আপনারা যারা বিচার বিভাগের আলোচক ও সমালোচক বন্ধু রয়েছেন, তারা বিচার বিভাগের সমস্যা উপলব্ধি করবেন, নিঃসংকোচে আলোচনা বা সমালোচনা করবেন রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর কল্যাণকামিতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে।”
রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ আইন সভা, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সমন্বিত কাজের উপরও জোর দেন প্রধান বিচারপতি। “রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটি অঙ্গ যদি দুর্বল বা সমস্যাগ্রস্ত হয়, তাহলে রাষ্ট্রটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হতে পারে না। সে কারণে আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের অপর দুটি বিভাগ তাদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রের সকল বিভাগ ও ব্যক্তিকে অবশ্যই বারবার স্মরণ করতে হবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক সভ্যতা পরাজিত হবে।” আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচার কক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়। রীতি অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।