ঢাকা ০২:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানুষ কবিতা ও ভন্ডদের মুখোশ উন্মোচন

  • আপডেট সময় : ১০:৫০:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২১
  • ৬৯ বার পড়া হয়েছে

বারী সুমন : “গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।”

নজরুলের একটি মানবতাবাদী কবিতা – মানুষ। আজকের এই সময়ে, যখন ধার্মিকেরা অধার্মিক আর রক্ষকেরা ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ, তখন কবিতাটির পংক্তিগুলো আরো বেশি সত্যি হয়ে উঠেছে। মানুষ কবিতাটি নজরুল রচনা করেছিলেন তাঁর সাহিত্যজীবনের সবচেয়ে প্রতিবাদী পর্যায়ে, আর কবিতাটির পংক্তিগুলোতে তাই আমরা তাঁর অন্যায়ের বিরুদ্ধে চিরসোচ্চার ও আর মানবতাবাদের উপর অটল বিশ্বাসী রূপটিকে দেখতে পাই। সমাজের উচ্চবিত্ত আর ধর্মের বস্ত্রধারি শেঠরা নজরুলের কলমের কাছে কখনোই ছাড় পায়নি – মানুষ তারই একটি অগ্নিতুল্য নিদর্শন, আর তারই সাথে নজরুলের বিশ্বাসের প্রতিধ্বনি – যে “মানুষের চেয়ে ৃ নহে কিছু মহীয়ান”।
মানুষ কবিতায় পরিলক্ষিত হয় পূজারী পূজার আয়োজন করে বসেছে আর এমন সময় ভুখারী এসে দরজায় কড়া নাড়লো। পূজারী ভেবেছিলো হয়তো ঈশ্বর তার এতোদিনের সাধনা পূরণ করেছেন, তাই হয়তো কোন বর দিয়ে পাঠিয়েছেন। দরজা খোলে যখন জীর্ণ শীর্ণ ভুখারীকে দেখতে পেলো তখন রাগে দুঃখে ক্ষোভে ভুখারীকে তাড়িয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো পূজারী। অথচ মানুষ যখন কোন উপায় খুঁজে পায়না তখন আশ্রয় গ্রহণ করার জন্য এই প্রার্থনালয়ে আসেন আর সেখানে কিনা পূজারী তার নিজের ইচ্ছেমতো প্রার্থনালয় পরিচালনা করেন। সেজন্যই নজরুল বলেছেন- ‘ঐ মন্দির পুজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয় !’
নজরুল হিন্দু মুসলিম দু ধর্মেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন মানুষ কবিতার মূলমন্ত্র। মসজিদে শিরনি দেওয়া হয়েছিলো লোকজন খাওয়ার পরও অনেক শিরণী রয়ে গেছে। মোল্লা সাহেব খুব খুশি সেগুলি বাড়ি নিয়ে যাবেন। এমন সময় মুসাফির বেশে ভুখারি এসে কিছু খাবার চেয়েছিলো মোল্লা সাহেবের কাছে। মোল্লা সাহেব রাগে তেড়ে আসলেন। হাঁক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন নামাজ পড়িস? নামাজ না পড়লে খাবার পাবিনা। যা সোজা গো-ভাগাড়ে গিয়ে মর। সজোরে দরজায় তালা লাগিয়ে দিলো মোল্লা সাহেব ভুখারী মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে চলে আর বলে প্রভু আশি বছর হয়ে গেলো কোনদিন আমি নামাজ পড়িনি, কিন্তু একবারের জন্যও তুমি আমার খাবার বন্ধ করোনি। তাইতো মানুষ কবিতা কবি দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন-

“আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তেমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু !
তব মজসিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী !”

খোদার ঘর সব সময় খোলা থাকবে। যে কেউ সেখানে যেতে পারবে, কিন্তু ঘটছে তার উল্টো। যারা এমন আচরণ করে নজরুল তাদের স্বার্থপর এবং ভন্ড বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন-

“খোদার ঘরে কে কপাট লাগায় কে দেয় সেখানে তালা ?
সব দ্বার এর খোলা র’বে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা !
হায় রে ভজনালয়
তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়” !

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মানুষ কবিতা ও ভন্ডদের মুখোশ উন্মোচন

আপডেট সময় : ১০:৫০:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২১

বারী সুমন : “গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।”

নজরুলের একটি মানবতাবাদী কবিতা – মানুষ। আজকের এই সময়ে, যখন ধার্মিকেরা অধার্মিক আর রক্ষকেরা ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ, তখন কবিতাটির পংক্তিগুলো আরো বেশি সত্যি হয়ে উঠেছে। মানুষ কবিতাটি নজরুল রচনা করেছিলেন তাঁর সাহিত্যজীবনের সবচেয়ে প্রতিবাদী পর্যায়ে, আর কবিতাটির পংক্তিগুলোতে তাই আমরা তাঁর অন্যায়ের বিরুদ্ধে চিরসোচ্চার ও আর মানবতাবাদের উপর অটল বিশ্বাসী রূপটিকে দেখতে পাই। সমাজের উচ্চবিত্ত আর ধর্মের বস্ত্রধারি শেঠরা নজরুলের কলমের কাছে কখনোই ছাড় পায়নি – মানুষ তারই একটি অগ্নিতুল্য নিদর্শন, আর তারই সাথে নজরুলের বিশ্বাসের প্রতিধ্বনি – যে “মানুষের চেয়ে ৃ নহে কিছু মহীয়ান”।
মানুষ কবিতায় পরিলক্ষিত হয় পূজারী পূজার আয়োজন করে বসেছে আর এমন সময় ভুখারী এসে দরজায় কড়া নাড়লো। পূজারী ভেবেছিলো হয়তো ঈশ্বর তার এতোদিনের সাধনা পূরণ করেছেন, তাই হয়তো কোন বর দিয়ে পাঠিয়েছেন। দরজা খোলে যখন জীর্ণ শীর্ণ ভুখারীকে দেখতে পেলো তখন রাগে দুঃখে ক্ষোভে ভুখারীকে তাড়িয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো পূজারী। অথচ মানুষ যখন কোন উপায় খুঁজে পায়না তখন আশ্রয় গ্রহণ করার জন্য এই প্রার্থনালয়ে আসেন আর সেখানে কিনা পূজারী তার নিজের ইচ্ছেমতো প্রার্থনালয় পরিচালনা করেন। সেজন্যই নজরুল বলেছেন- ‘ঐ মন্দির পুজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয় !’
নজরুল হিন্দু মুসলিম দু ধর্মেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন মানুষ কবিতার মূলমন্ত্র। মসজিদে শিরনি দেওয়া হয়েছিলো লোকজন খাওয়ার পরও অনেক শিরণী রয়ে গেছে। মোল্লা সাহেব খুব খুশি সেগুলি বাড়ি নিয়ে যাবেন। এমন সময় মুসাফির বেশে ভুখারি এসে কিছু খাবার চেয়েছিলো মোল্লা সাহেবের কাছে। মোল্লা সাহেব রাগে তেড়ে আসলেন। হাঁক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন নামাজ পড়িস? নামাজ না পড়লে খাবার পাবিনা। যা সোজা গো-ভাগাড়ে গিয়ে মর। সজোরে দরজায় তালা লাগিয়ে দিলো মোল্লা সাহেব ভুখারী মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে চলে আর বলে প্রভু আশি বছর হয়ে গেলো কোনদিন আমি নামাজ পড়িনি, কিন্তু একবারের জন্যও তুমি আমার খাবার বন্ধ করোনি। তাইতো মানুষ কবিতা কবি দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন-

“আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তেমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু !
তব মজসিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী !”

খোদার ঘর সব সময় খোলা থাকবে। যে কেউ সেখানে যেতে পারবে, কিন্তু ঘটছে তার উল্টো। যারা এমন আচরণ করে নজরুল তাদের স্বার্থপর এবং ভন্ড বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন-

“খোদার ঘরে কে কপাট লাগায় কে দেয় সেখানে তালা ?
সব দ্বার এর খোলা র’বে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা !
হায় রে ভজনালয়
তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়” !