নিজস্ব প্রতিবেদক : বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতীকী শান্তি শোভাযাত্রা ও সম্প্রতি উৎসব-২০২১ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘মানুষের মাঝে সাম্য, সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা সব ধর্মের মর্মবাণী।’
গতকাল বুধবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতীকী শান্তি শোভাযাত্রা ও সম্প্রতি অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, আমার এই দেশ রচিত হয়েছে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবার মিলিত রক্ত স্রোতের বিনিময়ে। বাংলাদেশ রচনার পেছনে যে মূল কারণগুলো ছিলো। তার মধ্যে অন্যতম হলো সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র রচনা। সেই কারণে সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে এই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রচিত হয়েছে। আমাদের সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা আছে। ধর্ম নিরপেক্ষতার অনেক অপব্যখ্যা দেওয়া হয়। ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে হলো প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। ফিলিস্তিন ইরাক রাষ্ট্রের সংবিধানেও ধর্ম নিরপেক্ষতা আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায়, সমস্ত ধর্মের মানুষের মাঝে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় এবং সকল ধর্ম ও মতের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মাঝেমধ্যে যে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, এই অপশক্তি যে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প চালায়, সেটি সবসময় আমাদের সরকার কঠোর হস্তে দমন করেছে। ভবিষ্যতে কেউ যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালায় তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
‘আমি মনে করি, আমাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে আমি বাঙালি। এরপর আমাদের পরিচয় হচ্ছে কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে বৌদ্ধ, কে খৃষ্টান। কিন্তু বাংলাদেশে একটি পক্ষ আছে। যারা মনে করে তাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে ধর্মীয় পরিচয়। আর দ্বিতীয় পরিচয় তিনি বাঙালি না বাংলাদেশি এ নিয়ে সার্বক্ষণিক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। ওখানেই হচ্ছে তাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য। মানুষের মাঝে সাম্য, সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা সব ধর্মের মর্মবাণী। বৌদ্ধ ধর্ম আরও একধাপ এগিয়ে সমস্ত জীবের কল্যাণের কথা বলেছেন। আমরা যদি সবাই ধর্মের মর্মবাণী বুকে ধারণ করে সেটি অনুশীলন করি; তাহলে পৃথিবীতে হানাহানি কখনও থাকতো না। তাই আমি সবাইকে অনুরোধ জানাবো, আমরা যেন নিজ নিজ ধর্মের মর্মবাণীকে বুকে ধারণ করে সেটি অনুসরণ করি এবং সবার মাঝে সম্প্রীতি সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো সকল ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করে। এটিই হচ্ছে আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। সুতরাং এই কৃষ্টি সংস্কৃতিকে ধারণ করে যে চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ রচিত হয়েছে সেই চেতনার গায়ে কেউ যেন কালিমা লেপন করতে না পারে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি৷ যে চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের পূর্বসূরি মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন করে। সে চেতনার গায়ে কেউ যেন কালিমা লেপন করতে না পারে, সেই চেতনাকে যেন নস্যাৎ করতে না পারে। সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সবাই প্রার্থনা করবো ঘূর্ণিঝড় যেন আমাদের আঘাত না হানে। করোনা মহামারির থেকে সবাই যেন মুক্তি পায় সেই প্রার্থনা করবো। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি ও সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া এবং সঞ্চালনা করেন বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের মহাসচিব শ্রী নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পালি ও বুদ্ধিজ স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর বিমান চন্দ্র বড়ুয়া, বিহার নির্মাণ কমিটির সভাপতি নেত্র সেন বড়ুয়াসহ আরও অনেকে। প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ডক্টর হাসান মাহমুদ। এরপর ২শ’ পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তার উদ্বোধন করেন তিনি। সবশেষ একটি প্রতীকী শান্তি শোভাযাত্রা করা হয় এবং তাতে তিনি অংশ নেন।
মানুষের মাঝে সাম্য, সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা সব ধর্মের মর্মবাণী
জনপ্রিয় সংবাদ