প্রযুক্তি ডেস্ক: ‘টর্ক ক্লাস্টারিং’ নামে নতুন এক এআই অ্যালগরিদম তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, মানুষের সাহায্য ছাড়াই ডেটার বিভিন্ন ধরন খুঁজে বের করতে অর্থাৎ মানুষ ও প্রাণীর মতো শিখতে পারে নতুন এই এআই টুল।
এ অটোনমাস শেখার পদ্ধতিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
জীববিজ্ঞান, ওষধ, অর্থ, মনোবিজ্ঞান, রসায়ন ও জ্যোতির্বিজ্ঞান’সহ নানা ক্ষেত্র জুড়ে অনেক পরিমাণে ডেটা বিশ্লেষণ করতে পারে নতুন এ টর্ক ক্লাস্টারিং এআই। সব ধরনের প্রাক-লেবেলওয়ালা ডেটার প্রয়োজন ছাড়াই রোগের ধরন শনাক্ত, জালিয়াতি উন্মোচন বা মানুষের আচরণ গবেষণায় ব্যবহার করা যেতে পারে এআইটিকে।
প্রচলিতগত এআই থেকে এটি কীভাবে আলাদা? বর্তমানে বেশিরভাগ এআই সিস্টেম ‘সুপারভাইজড লার্নিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করে শেখে। ফলে প্যাটার্ন চিনতে বা অনুমান করার আগে ম্যানুয়ালি ডেটা লেবেলিংয়ের জন্য এদের মানুষের প্রয়োজন। আর এ প্রক্রিয়াটি জটিল বা বড় কোনো কাজের জন্য সময় সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও অবাস্তব।
অন্যদিকে, ‘আনসুপারভাইজড লার্নিং’-এর ওপর নির্ভর করে তৈরি হয়েছে ‘টর্ক ক্লাস্টারিং’ এআই, যার লেবেলওয়ালা ডেটার প্রয়োজন হয় না। এর বদলে এরা নিজেরাই বিভিন্ন লুকানো কাঠামো ও প্যাটার্ন শনাক্ত করে, যা নতুন এআইটিকে আরও সহজ ও পরিমাপযোগ্য করে তুলেছে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনি’ বা ইউটিএস-এর অধ্যাপক সিটি লিন বলেছেন, কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা ছাড়াই পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান ও পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শেখে প্রাণীরা। এআইয়ের এ আনসুপারভাইজড লার্নিং পদ্ধতির-এর লক্ষ্য হচ্ছে এ পদ্ধতিরই অনুকরণ করা।
টর্ক ক্লাস্টারিং এআই কীভাবে কাজ করে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, দ্রুত, নির্ভুল ও সক্ষমতার দিক থেকে প্রচলিত বিভিন্ন এআই সিস্টেমের শেখার পদ্ধতিকে ছাড়িয়ে গেছে টর্ক ক্লাস্টারিংয়ের অ্যালগরিদম। অন্যান্য অনেক এআই মডেলের বিপরীতে এটি পুরোপুরি অটোনমাস অর্থাৎ এর কোনও ম্যানুয়াল বা আগে থেকে নির্ধারিত সেটিংসের প্রয়োজন হয় না।
এক হাজারটি ডেটাসেটের পরীক্ষায় ৯৭.৭ শতাংশ নির্ভুলতা স্কোর পেয়েছে টর্ক ক্লাস্টারিং এআই, যেখানে এর তুলনায় অন্যান্য এআই সিস্টেম নির্ভুল উত্তর দিয়েছে ৮০ শতাংশ। টর্ক ক্লাস্টারিংয়ের অ্যালগরিদমের এমন উন্নতি ভবিষ্যতে এআই কীভাবে ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করে তাতে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে বলে দাবি করেছেন এর নির্মাতা।
টর্ক ক্লাস্টারিংয়ে যে বিষয়টি অন্যদের থেকে আলাদা তা হচ্ছে, এর ভৌত ধারণার ভিত্তি, যা নির্ভুলতার সঙ্গে ডেটার বিভিন্ন প্যাটার্ন ও গুচ্ছ শনাক্ত করতে সহায়তা করে, বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ড. জি ইয়াং।
মহাবিশ্বের থেকে অনুপ্রাণিত: মহাকর্ষীয় শক্তির কারণে বিভিন্ন ছায়াপথ যেভাবে একসঙ্গে হয় তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই পদ্ধতি তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেখানে ভর ও দূরত্বের মতো পদার্থবিজ্ঞানের দুটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে তৈরি এটি।
এসব নীতি প্রয়োগ করে টর্ক ক্লাস্টারিং প্রচলিত বিভিন্ন এআই মডেলের চেয়ে আরও কার্যকরভাবে ডেটার বিভিন্ন ধরন বা গুচ্ছ শনাক্ত করতে পারে।
কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে মেশিন লার্নিং করতে পারে এমন আবিষ্কার গত বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতেছিল- বলেছেন ড. ইয়াং।
আনসুপারভাইজড লার্নিং পদ্ধতি টর্ক নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, যার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মতো একইরকমসম্ভাবনা রয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে ‘আইই ট্রানজেকশনস অন প্যাটার্ন অ্যানালাইসিস অ্যান্ড মেশিন ইন্টেলিজেন্স’-এ।