ঢাকা ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫

মানুষের জীবন রক্ষাকারী গাছ রোপণের প্রকৃত সময় বর্ষাকাল

  • আপডেট সময় : ০৭:৩১:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

মানুষের জীবন রক্ষাকারী গাছ রোপণের প্রকৃত সময় বর্ষাকাল

পরিবেশ ও জীবজগতের পরম বন্ধু বৃক্ষ। বৃক্ষ ফল-ফসল দেয়; ফুল দেয়; ছায়া দেয় ও কাঠ দেয়। আরো অনেক উপকার সাধন করে। যেমন- মাটিকে উর্বর করে তোলে বৃক্ষ। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান অক্সিজেন আসে এই বৃক্ষ থেকে। যেখানে বৃক্ষ বেশি থাকে, সেখানে বৃষ্টিপাতও বেশি হয়। বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে মাটির ক্ষয়রোধ, খরায় ছায়া, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি হ্রাসে বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৃক্ষ ছাড়া প্রাণীকুলের জন্য পৃথিবীতে বসবাস করা প্রায় অসম্ভব। মোট কথা, মানুষের জীবন ধারণের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে এই বৃক্ষ। তাই বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। আর বৃক্ষ রোপণের জন্য উপযুক্ত সময় হলো বর্ষাকাল। এ বিষয় নিয়েই এবারে কৃষি ও কৃষক পাতার প্রধান ফিচার

একটি দেশের মোট বনভূমি থাকা প্রয়োজন ২৫ শতাংশ। আমাদের বাংলাদেশে মোট বনভূমি আছে ১৩ শতাংশ। চাহিদার তুলনায় তা অতি নগণ্য। ফলে দেখা যায়, দেশে অনাবৃষ্টি কিংবা তীব্র গরম, একই সঙ্গে তীব্র শীত পরিলক্ষিত হয়। এ পরিস্থিতি থেকে দেশমাতৃকাকে রক্ষায় বৃক্ষ রোপণ করা অত্যন্ত জরুরি। এখন চলছে বর্ষাকাল। এ সময়টায় করতে হয় বৃক্ষ রোপণ।

পরিবেশ সুরক্ষায় বৃক্ষরোপণ: পরিবেশ সুরক্ষায় বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত জরুরি। বৃক্ষের অপ্রতুলতা ও অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ করার ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা হচ্ছে। সেইসাথে পরিবেশ অসহনীয় হওয়ার পাশাপাশি বাতাসে শুষ্কতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ সমস্ত জটিল সমস্যা সমাধানে বৃক্ষ কার্যকর। গাছপালা কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রাণীর জীবন ধারণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অক্সিজেন সরবরাহ করে। গাছের ছায়ায় পাখপাখালি খুঁজে নেয় আপন ঠিকান; যা জীবজগত সুরক্ষা ও পরিবেশ সুরক্ষায় টনিক হিসেবে কাজ করে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা: সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে আমরা নজর দিলে দেখতে পাই, দেশে অনাবৃষ্টি, শীতের সময় অনেক জায়গায় অতিরিক্ত শীত ও শৈত্যপ্রবাহ এবং প্রায় সারাবছর অসহনীয় গরম। প্রকৃতির কঠোরতায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল আজ মরুকরণের মুখোমুখি। দেশে বৃষ্টি নাই তবে নিয়মিত বন্যা হয়। নিম্নচাপের ফলস্বরূপ ঘূর্ণিঝড় তো আছেই। প্রকৃতির এত সব নিষ্ঠুর আচরণ দৃঢ়ভাবে সামাল দিতে প্রয়োজন গাছ। গাছ যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম; ঠিক তেমনই প্রতিরোধে কার্যকর। সেইসাথে ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, খরা প্রতিরোধে ও পরিবেশ সুশীতল রাখতে বৃক্ষরোপণ জরুরি।

মাটি ও পানি সুরক্ষা: গাছ মাটির বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়রোধ করে। সেইসাথে বৃষ্টি বর্ষণের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করে। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গাছ জরুরি। শুধু মাটি কিংবা পানি নয় বরং সমগ্র জীবজগতের সুরক্ষার জন্য গাছ অত্যাবশ্যক।

অর্থনৈতিক দিক: জীবের জীবন ধারণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি গাছ। কিন্তু আর্থিকভাবেও মূল্যবান। মানুষের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সৌখিন পণ্য তৈরিতে কাঠ প্রয়োজন। একই সঙ্গে গাছ ভালো মুনাফা প্রদান করে। ফলে অনেকেই বাণিজ্যিক ভাবে বৃক্ষরোপণ করছেন। এর পাশাপাশি অনেক গাছ ওষুধি গুণসম্পন্ন। গাছ থেকে জীবন রক্ষাকারী অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি করা হয়। এছাড়া ফলদ গাছ বিভিন্ন রং ও স্বাদের ফল প্রদান করে; যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। আগে থেকেই বাণিজ্যিক ভাবে ও বসত বাড়ির আঙিনায় ফলের গাছ রোপণ করা হয়। অন্যদিকে খোলা জায়গায়, রাস্তার পাশে এবং নদী তীরে অন্যান্য গাছের পাশাপাশি ফলের গাছ রোপণ করা হয়।

বাড়ির আঙিনায় গাছ: বাড়ির আঙিনায় গাছ রোপণ জরুরি একটি বিষয়। তপ্ত গরমে গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নেওয়া যায় এবং বসত বাড়ির আঙিনায় গাছ লাগানোর ফলে সর্বক্ষণ ছায়া প্রদান করে। একই সঙ্গে ফলদ গাছগুলো ফল প্রদান করে এবং নিজের প্রয়োজনে গাছগুলো পরে ব্যবহার করা যায়। গ্রামীণ জনপদে গাছের পাতা ও ভাঙা ডালপালা জ্বালানি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি অনেক গাছের পাতা গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

পরিবেশ বিপর্যয় প্রতিরোধ: অপরিকল্পিত ভাবে গাছ কাটার ফলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বিভিন্ন সমস্যা প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবেশের উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়া ও বিশ্বের সার্বিক তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কিছু অঞ্চলে ফসলের ফলনে প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া যাবতীয় পরিবেশ বিপর্যয় প্রতিরোধে বৃক্ষরোপণের জুড়ি নেই।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মানুষের জীবন রক্ষাকারী গাছ রোপণের প্রকৃত সময় বর্ষাকাল

আপডেট সময় : ০৭:৩১:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

পরিবেশ ও জীবজগতের পরম বন্ধু বৃক্ষ। বৃক্ষ ফল-ফসল দেয়; ফুল দেয়; ছায়া দেয় ও কাঠ দেয়। আরো অনেক উপকার সাধন করে। যেমন- মাটিকে উর্বর করে তোলে বৃক্ষ। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান অক্সিজেন আসে এই বৃক্ষ থেকে। যেখানে বৃক্ষ বেশি থাকে, সেখানে বৃষ্টিপাতও বেশি হয়। বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে মাটির ক্ষয়রোধ, খরায় ছায়া, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি হ্রাসে বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৃক্ষ ছাড়া প্রাণীকুলের জন্য পৃথিবীতে বসবাস করা প্রায় অসম্ভব। মোট কথা, মানুষের জীবন ধারণের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে এই বৃক্ষ। তাই বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। আর বৃক্ষ রোপণের জন্য উপযুক্ত সময় হলো বর্ষাকাল। এ বিষয় নিয়েই এবারে কৃষি ও কৃষক পাতার প্রধান ফিচার

একটি দেশের মোট বনভূমি থাকা প্রয়োজন ২৫ শতাংশ। আমাদের বাংলাদেশে মোট বনভূমি আছে ১৩ শতাংশ। চাহিদার তুলনায় তা অতি নগণ্য। ফলে দেখা যায়, দেশে অনাবৃষ্টি কিংবা তীব্র গরম, একই সঙ্গে তীব্র শীত পরিলক্ষিত হয়। এ পরিস্থিতি থেকে দেশমাতৃকাকে রক্ষায় বৃক্ষ রোপণ করা অত্যন্ত জরুরি। এখন চলছে বর্ষাকাল। এ সময়টায় করতে হয় বৃক্ষ রোপণ।

পরিবেশ সুরক্ষায় বৃক্ষরোপণ: পরিবেশ সুরক্ষায় বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত জরুরি। বৃক্ষের অপ্রতুলতা ও অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ করার ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা হচ্ছে। সেইসাথে পরিবেশ অসহনীয় হওয়ার পাশাপাশি বাতাসে শুষ্কতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ সমস্ত জটিল সমস্যা সমাধানে বৃক্ষ কার্যকর। গাছপালা কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রাণীর জীবন ধারণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অক্সিজেন সরবরাহ করে। গাছের ছায়ায় পাখপাখালি খুঁজে নেয় আপন ঠিকান; যা জীবজগত সুরক্ষা ও পরিবেশ সুরক্ষায় টনিক হিসেবে কাজ করে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা: সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে আমরা নজর দিলে দেখতে পাই, দেশে অনাবৃষ্টি, শীতের সময় অনেক জায়গায় অতিরিক্ত শীত ও শৈত্যপ্রবাহ এবং প্রায় সারাবছর অসহনীয় গরম। প্রকৃতির কঠোরতায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল আজ মরুকরণের মুখোমুখি। দেশে বৃষ্টি নাই তবে নিয়মিত বন্যা হয়। নিম্নচাপের ফলস্বরূপ ঘূর্ণিঝড় তো আছেই। প্রকৃতির এত সব নিষ্ঠুর আচরণ দৃঢ়ভাবে সামাল দিতে প্রয়োজন গাছ। গাছ যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম; ঠিক তেমনই প্রতিরোধে কার্যকর। সেইসাথে ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, খরা প্রতিরোধে ও পরিবেশ সুশীতল রাখতে বৃক্ষরোপণ জরুরি।

মাটি ও পানি সুরক্ষা: গাছ মাটির বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়রোধ করে। সেইসাথে বৃষ্টি বর্ষণের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করে। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গাছ জরুরি। শুধু মাটি কিংবা পানি নয় বরং সমগ্র জীবজগতের সুরক্ষার জন্য গাছ অত্যাবশ্যক।

অর্থনৈতিক দিক: জীবের জীবন ধারণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি গাছ। কিন্তু আর্থিকভাবেও মূল্যবান। মানুষের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সৌখিন পণ্য তৈরিতে কাঠ প্রয়োজন। একই সঙ্গে গাছ ভালো মুনাফা প্রদান করে। ফলে অনেকেই বাণিজ্যিক ভাবে বৃক্ষরোপণ করছেন। এর পাশাপাশি অনেক গাছ ওষুধি গুণসম্পন্ন। গাছ থেকে জীবন রক্ষাকারী অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি করা হয়। এছাড়া ফলদ গাছ বিভিন্ন রং ও স্বাদের ফল প্রদান করে; যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। আগে থেকেই বাণিজ্যিক ভাবে ও বসত বাড়ির আঙিনায় ফলের গাছ রোপণ করা হয়। অন্যদিকে খোলা জায়গায়, রাস্তার পাশে এবং নদী তীরে অন্যান্য গাছের পাশাপাশি ফলের গাছ রোপণ করা হয়।

বাড়ির আঙিনায় গাছ: বাড়ির আঙিনায় গাছ রোপণ জরুরি একটি বিষয়। তপ্ত গরমে গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নেওয়া যায় এবং বসত বাড়ির আঙিনায় গাছ লাগানোর ফলে সর্বক্ষণ ছায়া প্রদান করে। একই সঙ্গে ফলদ গাছগুলো ফল প্রদান করে এবং নিজের প্রয়োজনে গাছগুলো পরে ব্যবহার করা যায়। গ্রামীণ জনপদে গাছের পাতা ও ভাঙা ডালপালা জ্বালানি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি অনেক গাছের পাতা গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

পরিবেশ বিপর্যয় প্রতিরোধ: অপরিকল্পিত ভাবে গাছ কাটার ফলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বিভিন্ন সমস্যা প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবেশের উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়া ও বিশ্বের সার্বিক তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কিছু অঞ্চলে ফসলের ফলনে প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া যাবতীয় পরিবেশ বিপর্যয় প্রতিরোধে বৃক্ষরোপণের জুড়ি নেই।

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ