ঢাকা ০৭:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মানুষের চেয়ে প্রখর স্মৃতিশক্তি কাটলফিশের

  • আপডেট সময় : ১০:৪৮:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ অগাস্ট ২০২১
  • ৫৮ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : কাটলফিশ এক ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী। তবে বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে অন্য সামুদ্রিক প্রাণীর চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম। সুদর্শন কাটলফিশের কিছু বৈশিষ্ট্যের তুলনা করা হয় মানবদেহের সঙ্গেও। সম্প্রতি প্রাণীটির স্মৃতিশক্তি নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে প্রসিডিংস অব দ্য রয়াল সোসাইটি বি সাময়িকীতে। এতে দেখা যায়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চেয়ে কাটলফিশের স্মৃতিশক্তি বেশি অটুট থাকে। গবেষণায় অংশ নেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, উডস হলের মেরিন বাইলোজিক্যাল ল্যাব, ম্যাসাচুসেটস ও কেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। গবেষণায় বলা হয়েছে, বয়স বাড়লেও কাটলফিশের স্মৃতিশক্তি অটুট আর তীক্ষ্ণ থাকে যা মানুষের বেলায় ব্যতিক্রম। জীবনের শেষ কয়েকদিন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে রাখতে পারে এই বৈচিত্র্যময় প্রাণীটি। ধারণা করা হচ্ছে, এটি হয়তো প্রথমবারের মতো গবেষণায় ধরা পড়লো যে, এই প্রাণীটির বয়স বাড়লেও নির্দিষ্ট ঘটনার স্মৃতি ক্ষয় হয় না। গবেষণায় কাটলফিশের ২৪টি নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করেন গবেষকরা। কাটলফিশগুলোর একটি গ্রুপের বয়স ছিল ১০ থেকে ১২ মাস এবং আরেকটির ২২ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে। যাদের সঙ্গে ৯০ বছর বয়সী মানুষের স্মৃতিশক্তি পরীক্ষার তুলনা করা হয়। পরীক্ষণের জন্য কাটলফিশগুলোকে ট্যাংকের একটি স্থানে একটি কালো ও সাদা পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের শেখানো হয়েছিল যে তাদের দুটি নিয়মিত খাবার নির্দিষ্ট পতাকাচিহ্নিত স্থানে রাখা আছে। এক পাশে একটি রাজ চিংড়ির কয়েক পিস খাবার রাখা হয়েছিল যেটিতে তারা অভ্যস্ত নয়। আরেকটিতে তাদের জন্য ঘাষের এক ধরনের চিংড়ি রাখা হয় যেটি তাদের বেশি পছন্দ। প্রতি তিন ঘণ্টা পর পর চার সপ্তাহ পরীক্ষা করা হয় এটি। নিয়মিত খাবারের স্থান পরিবর্তনও করা হতো। গবেষণায় দেখা যায়, ভালো খাবারের জন্য কাটলফিশ ধৈর্য ধরতে সক্ষম। সামুদ্রিক এই প্রাণী ভালো খাবারের জন্য দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে। তারা বুঝতে পারে যে নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করলে তারা পছন্দের খাবার খেতে পারবে। তাছাড়া তারা আঁচ করতে পারে খাবার পছন্দ হচ্ছে কি না। পরবর্তীসময়ে তারা একই খাবারের সন্ধান করে। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, সময় ও স্থান পরিবর্তন হলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাটলেফিশের স্মৃতি লোপ পায় না, যেটা মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে। গবেষকরা বলছেন, কাটলফিশের মতিষ্কের ভার্টিক্যাল অংশে এমন লার্নিং সিস্টেম থাকে যা তাদের স্মৃতিশক্তিকে মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও স্মরণ করিয়ে দেয়। ক্যমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. আলেক্সন্দ্রা স্নেল প্রথম কোনো লেখক যিনি বলেন, কাটলফিশ স্মরণ করতে পারে তারা কী খেয়েছে, কোথায় কখন খেয়েছে এবং ভবিষ্যতে তাদের খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে এই স্মৃতি কাজে লাগে। বিস্ময়কর বিষয় হলো, বয়স হওয়া সত্ত্বেও এমনকী, পেশিশক্তি কমলেও তারা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই সক্ষমতা হারায় না। তিনি আরও বলেন, বয়স্ক কাটলফিশ, কম বয়সীদের মতোই পরীক্ষায় একই ফল দেখিয়েছে। এই গবেষণার ফলাফল থেকে আরও জানা যায়, তাদের জৈবিক অন্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও দারুণ কাজে লাগে এই স্মৃতিশক্তি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মানুষের চেয়ে প্রখর স্মৃতিশক্তি কাটলফিশের

আপডেট সময় : ১০:৪৮:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ অগাস্ট ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : কাটলফিশ এক ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী। তবে বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে অন্য সামুদ্রিক প্রাণীর চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম। সুদর্শন কাটলফিশের কিছু বৈশিষ্ট্যের তুলনা করা হয় মানবদেহের সঙ্গেও। সম্প্রতি প্রাণীটির স্মৃতিশক্তি নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে প্রসিডিংস অব দ্য রয়াল সোসাইটি বি সাময়িকীতে। এতে দেখা যায়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চেয়ে কাটলফিশের স্মৃতিশক্তি বেশি অটুট থাকে। গবেষণায় অংশ নেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, উডস হলের মেরিন বাইলোজিক্যাল ল্যাব, ম্যাসাচুসেটস ও কেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। গবেষণায় বলা হয়েছে, বয়স বাড়লেও কাটলফিশের স্মৃতিশক্তি অটুট আর তীক্ষ্ণ থাকে যা মানুষের বেলায় ব্যতিক্রম। জীবনের শেষ কয়েকদিন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে রাখতে পারে এই বৈচিত্র্যময় প্রাণীটি। ধারণা করা হচ্ছে, এটি হয়তো প্রথমবারের মতো গবেষণায় ধরা পড়লো যে, এই প্রাণীটির বয়স বাড়লেও নির্দিষ্ট ঘটনার স্মৃতি ক্ষয় হয় না। গবেষণায় কাটলফিশের ২৪টি নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করেন গবেষকরা। কাটলফিশগুলোর একটি গ্রুপের বয়স ছিল ১০ থেকে ১২ মাস এবং আরেকটির ২২ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে। যাদের সঙ্গে ৯০ বছর বয়সী মানুষের স্মৃতিশক্তি পরীক্ষার তুলনা করা হয়। পরীক্ষণের জন্য কাটলফিশগুলোকে ট্যাংকের একটি স্থানে একটি কালো ও সাদা পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের শেখানো হয়েছিল যে তাদের দুটি নিয়মিত খাবার নির্দিষ্ট পতাকাচিহ্নিত স্থানে রাখা আছে। এক পাশে একটি রাজ চিংড়ির কয়েক পিস খাবার রাখা হয়েছিল যেটিতে তারা অভ্যস্ত নয়। আরেকটিতে তাদের জন্য ঘাষের এক ধরনের চিংড়ি রাখা হয় যেটি তাদের বেশি পছন্দ। প্রতি তিন ঘণ্টা পর পর চার সপ্তাহ পরীক্ষা করা হয় এটি। নিয়মিত খাবারের স্থান পরিবর্তনও করা হতো। গবেষণায় দেখা যায়, ভালো খাবারের জন্য কাটলফিশ ধৈর্য ধরতে সক্ষম। সামুদ্রিক এই প্রাণী ভালো খাবারের জন্য দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে। তারা বুঝতে পারে যে নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করলে তারা পছন্দের খাবার খেতে পারবে। তাছাড়া তারা আঁচ করতে পারে খাবার পছন্দ হচ্ছে কি না। পরবর্তীসময়ে তারা একই খাবারের সন্ধান করে। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, সময় ও স্থান পরিবর্তন হলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাটলেফিশের স্মৃতি লোপ পায় না, যেটা মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে। গবেষকরা বলছেন, কাটলফিশের মতিষ্কের ভার্টিক্যাল অংশে এমন লার্নিং সিস্টেম থাকে যা তাদের স্মৃতিশক্তিকে মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও স্মরণ করিয়ে দেয়। ক্যমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. আলেক্সন্দ্রা স্নেল প্রথম কোনো লেখক যিনি বলেন, কাটলফিশ স্মরণ করতে পারে তারা কী খেয়েছে, কোথায় কখন খেয়েছে এবং ভবিষ্যতে তাদের খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে এই স্মৃতি কাজে লাগে। বিস্ময়কর বিষয় হলো, বয়স হওয়া সত্ত্বেও এমনকী, পেশিশক্তি কমলেও তারা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই সক্ষমতা হারায় না। তিনি আরও বলেন, বয়স্ক কাটলফিশ, কম বয়সীদের মতোই পরীক্ষায় একই ফল দেখিয়েছে। এই গবেষণার ফলাফল থেকে আরও জানা যায়, তাদের জৈবিক অন্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও দারুণ কাজে লাগে এই স্মৃতিশক্তি।