ঢাকা ০২:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

মানুষের ‘কৃত্রিম ভ্রূণে’ রক্তকণিকা তৈরির দাবি গবেষকদের

  • আপডেট সময় : ০৭:৪৭:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রযুক্তি ডেস্ক: পরীক্ষাগারে ভ্রূণসদৃশ বা মানুষের ভ্রূণের প্রাথমিক অবস্থার মতো গঠন তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা নিজেরাই মানব রক্তকণিকা তৈরি করেছে বলে দাবি তাদের। এ আবিষ্কারের ফলে ভবিষ্যতে রক্ত তৈরি, অঙ্গ প্রতিস্থাপন বা কোষ পুনর্গঠনের মতো চিকিৎসায় নতুন পথ খুলে যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ান।

গবেষকরা বলছেন, পরীক্ষাগারে রক্তের স্টেম সেল বা মূল কোষ তৈরির সক্ষমতার ফলে ভবিষ্যতে এমন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতে পারে যাদের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন দরকার এবং এমনটি করা যাবে তাদের নিজস্ব কোষ ব্যবহার করেই। এ অগ্রগতির ফলে বিজ্ঞান এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে ডিম্বাণু বা শুক্রাণু ছাড়াই স্টেম সেল থেকে ভ্রূণসদৃশ মডেল তৈরি করা সম্ভব। মানুষের ভ্রূণ কীভাবে গঠিত হয় ও বিকাশের একেবারে প্রাথমিক বিভিন্ন ধাপ বোঝার নতুন সুযোগ তৈরি করেছে এ গবেষণা।

‘ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ গার্ডন ইনস্টিটিউট’-এর গবেষক ও এ গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক ড. জিতেশ ন্যুপানে বলেছেন, পাত্রে রক্তের মতো লাল রং দেখার বিষয়টি ছিল দারুণ এক রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। এমনকি খালি চোখেই তা দেখা যাচ্ছিল। হার্ট ও রক্তের বিকাশের একেবারে প্রাথমিক বিভিন্ন ধাপ বোঝার জন্য এ মডেল ব্যবস্থাটি তৈরি করছেন ড. ন্যুপানে ও তার সহকর্মীরা।

ন্যুপানে বলেছেন, এই গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, মানুষের ভ্রূণ বিকাশের সময় রক্তকণিকা কীভাবে স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয়। ফলে ওষুধ পরীক্ষা, প্রাথমিক রক্ত ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিকাশ বোঝা এবং লিউকেমিয়ার মতো রক্তজনিত রোগের মডেল তৈরি– এসব ক্ষেত্রেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন অগ্রগতি সম্ভব হতে পারে।

ভ্রূণসদৃশ গঠন তৈরি করতে যে মানব স্টেম সেল ব্যবহার হয়েছে তা শরীরের যে কোনো কোষ থেকেই তৈরি করা যায়। যার মানে হচ্ছে, এ পদ্ধতিতে ভবিষ্যতে এমন রক্ত তৈরি করা সম্ভব হতে পারে, যা রোগী নিজের শরীরের সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই। ফলে তা প্রতিস্থাপনের সময় জটিলতা বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া কমে যাবে।

পরীক্ষাগারে মানুষের রক্তের স্টেম সেল তৈরির অন্যান্য পদ্ধতি থাকলেও সেগুলোতে সাধারণত বিভিন্ন অতিরিক্ত প্রোটিনের মিশ্রণ ব্যবহৃত হয়। তবে নতুন এ পদ্ধতিতে তার প্রয়োজন পড়েনি।

নতুন গবেষণায় মানব শরীরে যেমন স্বাভাবিকভাবে কোষ তৈরি হয় ঠিক সেই প্রক্রিয়াটিকেই অনুকরণ করেছেন গবেষকরা। এতে তৈরি বিভিন্ন গঠন নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের কোষ তৈরি করেছে।

‘গার্ডন ইনস্টিটিউট’-এর অধ্যাপক ও এ গবেষণাপত্রটির সিনিয়র গবেষক অধ্যাপক আজিম সুরানি বলেছেন, এ গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও পরীক্ষাগারে মানব রক্তকণিকা তৈরির সক্ষমতা ভবিষ্যতে রোগীর নিজস্ব কোষ ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামত ও পুনর্গঠন করা সম্ভব হবে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় মানুষের স্টেম সেল ব্যবহার করে এমন কিছু কোষ ও গঠন তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেগুলো সাধারণত গর্ভধারণের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে দেখা যায়। তবে এ মডেলটিতে প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল ও ডিমের থলি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় টিস্যু ছিল না এবং এটি শিশুর মস্তিষ্ক গঠনের টিস্যুও তৈরি করেনি। ফলে এ কৃত্রিম ভ্রূণটির থেকে পূর্ণাঙ্গ শিশুর জন্ম নেওয়ার কোনো তাত্ত্বিক সম্ভাবনা নেই।

মাইক্রোস্কোপের নিচে তিন-মাত্রিক ভ্রূণসদৃশ এসব গঠনকে পর্যবেক্ষণ করেছে গবেষণা দলটি। দ্বিতীয় দিনে, সেগুলো স্বয়ংসংগঠিত হয়ে দেহ গঠনের তিনটি স্তর তৈরি করে, যেগুলোর নাম ‘এক্টোডার্ম’, ‘মেসোডার্ম’ ও ‘এন্ডোডার্ম’। এগুলো মানবদেহের মৌলিক গঠনের ভিত্তি। অষ্টম দিনে এসব স্তর হার্টের স্পন্দনকারী কোষ গঠন করে। গবেষণার ১৩তম দিনে লাল রক্তের ছোপ ছোপ জায়গা দেখতে পায় গবেষণা দলটি। এ মডেল থেকে নেওয়া রক্তের স্টেম সেলগুলো বিভিন্ন ধরনের রক্তকণিকায় পরিণত হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে অক্সিজেন বহনকারী লাল রক্তকণিকা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাদা রক্তকণিকা। গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সেল রিপোর্টস’-এ।

সানা/ওআ/আপ্র/১৫/১০/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

মানুষের ‘কৃত্রিম ভ্রূণে’ রক্তকণিকা তৈরির দাবি গবেষকদের

আপডেট সময় : ০৭:৪৭:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: পরীক্ষাগারে ভ্রূণসদৃশ বা মানুষের ভ্রূণের প্রাথমিক অবস্থার মতো গঠন তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা নিজেরাই মানব রক্তকণিকা তৈরি করেছে বলে দাবি তাদের। এ আবিষ্কারের ফলে ভবিষ্যতে রক্ত তৈরি, অঙ্গ প্রতিস্থাপন বা কোষ পুনর্গঠনের মতো চিকিৎসায় নতুন পথ খুলে যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ান।

গবেষকরা বলছেন, পরীক্ষাগারে রক্তের স্টেম সেল বা মূল কোষ তৈরির সক্ষমতার ফলে ভবিষ্যতে এমন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতে পারে যাদের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন দরকার এবং এমনটি করা যাবে তাদের নিজস্ব কোষ ব্যবহার করেই। এ অগ্রগতির ফলে বিজ্ঞান এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে ডিম্বাণু বা শুক্রাণু ছাড়াই স্টেম সেল থেকে ভ্রূণসদৃশ মডেল তৈরি করা সম্ভব। মানুষের ভ্রূণ কীভাবে গঠিত হয় ও বিকাশের একেবারে প্রাথমিক বিভিন্ন ধাপ বোঝার নতুন সুযোগ তৈরি করেছে এ গবেষণা।

‘ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ গার্ডন ইনস্টিটিউট’-এর গবেষক ও এ গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক ড. জিতেশ ন্যুপানে বলেছেন, পাত্রে রক্তের মতো লাল রং দেখার বিষয়টি ছিল দারুণ এক রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। এমনকি খালি চোখেই তা দেখা যাচ্ছিল। হার্ট ও রক্তের বিকাশের একেবারে প্রাথমিক বিভিন্ন ধাপ বোঝার জন্য এ মডেল ব্যবস্থাটি তৈরি করছেন ড. ন্যুপানে ও তার সহকর্মীরা।

ন্যুপানে বলেছেন, এই গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, মানুষের ভ্রূণ বিকাশের সময় রক্তকণিকা কীভাবে স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয়। ফলে ওষুধ পরীক্ষা, প্রাথমিক রক্ত ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার বিকাশ বোঝা এবং লিউকেমিয়ার মতো রক্তজনিত রোগের মডেল তৈরি– এসব ক্ষেত্রেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন অগ্রগতি সম্ভব হতে পারে।

ভ্রূণসদৃশ গঠন তৈরি করতে যে মানব স্টেম সেল ব্যবহার হয়েছে তা শরীরের যে কোনো কোষ থেকেই তৈরি করা যায়। যার মানে হচ্ছে, এ পদ্ধতিতে ভবিষ্যতে এমন রক্ত তৈরি করা সম্ভব হতে পারে, যা রোগী নিজের শরীরের সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই। ফলে তা প্রতিস্থাপনের সময় জটিলতা বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া কমে যাবে।

পরীক্ষাগারে মানুষের রক্তের স্টেম সেল তৈরির অন্যান্য পদ্ধতি থাকলেও সেগুলোতে সাধারণত বিভিন্ন অতিরিক্ত প্রোটিনের মিশ্রণ ব্যবহৃত হয়। তবে নতুন এ পদ্ধতিতে তার প্রয়োজন পড়েনি।

নতুন গবেষণায় মানব শরীরে যেমন স্বাভাবিকভাবে কোষ তৈরি হয় ঠিক সেই প্রক্রিয়াটিকেই অনুকরণ করেছেন গবেষকরা। এতে তৈরি বিভিন্ন গঠন নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের কোষ তৈরি করেছে।

‘গার্ডন ইনস্টিটিউট’-এর অধ্যাপক ও এ গবেষণাপত্রটির সিনিয়র গবেষক অধ্যাপক আজিম সুরানি বলেছেন, এ গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও পরীক্ষাগারে মানব রক্তকণিকা তৈরির সক্ষমতা ভবিষ্যতে রোগীর নিজস্ব কোষ ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামত ও পুনর্গঠন করা সম্ভব হবে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় মানুষের স্টেম সেল ব্যবহার করে এমন কিছু কোষ ও গঠন তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেগুলো সাধারণত গর্ভধারণের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে দেখা যায়। তবে এ মডেলটিতে প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল ও ডিমের থলি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় টিস্যু ছিল না এবং এটি শিশুর মস্তিষ্ক গঠনের টিস্যুও তৈরি করেনি। ফলে এ কৃত্রিম ভ্রূণটির থেকে পূর্ণাঙ্গ শিশুর জন্ম নেওয়ার কোনো তাত্ত্বিক সম্ভাবনা নেই।

মাইক্রোস্কোপের নিচে তিন-মাত্রিক ভ্রূণসদৃশ এসব গঠনকে পর্যবেক্ষণ করেছে গবেষণা দলটি। দ্বিতীয় দিনে, সেগুলো স্বয়ংসংগঠিত হয়ে দেহ গঠনের তিনটি স্তর তৈরি করে, যেগুলোর নাম ‘এক্টোডার্ম’, ‘মেসোডার্ম’ ও ‘এন্ডোডার্ম’। এগুলো মানবদেহের মৌলিক গঠনের ভিত্তি। অষ্টম দিনে এসব স্তর হার্টের স্পন্দনকারী কোষ গঠন করে। গবেষণার ১৩তম দিনে লাল রক্তের ছোপ ছোপ জায়গা দেখতে পায় গবেষণা দলটি। এ মডেল থেকে নেওয়া রক্তের স্টেম সেলগুলো বিভিন্ন ধরনের রক্তকণিকায় পরিণত হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে অক্সিজেন বহনকারী লাল রক্তকণিকা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাদা রক্তকণিকা। গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সেল রিপোর্টস’-এ।

সানা/ওআ/আপ্র/১৫/১০/২০২৫