নারী ও শিশু ডেস্ক: মানুষ মাত্রই স্বপ্ন দেখে। কত রকম বিচিত্র সব স্বপ্ন। সেসব স্বপ্নের কিছু যেমন খুবই বাস্তব, তেমনি একেবারেই অর্থহীন। যেমনÑ আকাশে ওড়া, নিজেকে অদৃশ্য হওয়ার অভিজ্ঞাতার স্বপ্ন প্রায়ই দেখে মানুষ। তবে স্বপ্নে অবশ্যই বাস্তব চেতনার প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু পাঁচ-ছয় মাস বয়সীদের তো সচেতনতা বোধই থাকে না। হাসি আর কান্না ছাড়া আর কোনো আবেগও তারা প্রকাশ করতে পারে না। চারপাশে কী ঘটছে সেসব বোঝার ক্ষমতাও তাদের নেই। তবু তারা স্বপ্ন দেখে।
দুধের শিশুদের স্বপ্ন দেখা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহলী করেছে। তবে তারা মনে করেন, শিশুদের স্বপ্নের বিষয়বস্তু ও প্রক্রিয়া বড়দের মতো নয়।
মানুষের ঘুমের দুটি পর্যায়। একটা রেম (র্যাপিড আই মুভমেন্ট)। আরেকটা নন-রেম। রেম পর্যায়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে। এটা সবচেয়ে গভীর ঘুমের পর্যায় নয়। ঘুমের এই পর্যায়েই সাধারণত মানুষ স্বপ্ন দেখে। শিশুরা বড়দের তুলনায় বেশি ঘুমায়। এদের ঘুমের বেশির ভাগই হলো রেম পর্যায়ের ঘুম। হিসাব অনুযায়ী শিশুরাই বেশি স্বপ্ন দেখে।
শিশুদের মস্তিষ্ক বড়দের মতো জটিল নয়, খুব সরল। তাই তাদের স্বপ্নও হয় সরল। বড় মানুষের মতো, বোদ্ধিক সামাজিক বা পারিপার্শিক চেতনা না থাকলেও তাদের কিছু ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা থাকে। যেমনÑ ভয় পাওয়া, হাসা, কাঁদা।
শিশুরা কাঁদে কেন? মাকে দীর্ঘক্ষণ না দেখলে, ক্ষুধা পেলে, কিংবা কেউ জোরে বকুনি দিলে, ভয়ংকর কোনো শব্দ শুনলে, কিংবা আঘাত পেলে শিশুরা ভয় পায় এবং কাঁদে। তেমনি কেউ আদর করলে, শুড়শুড়ি দিলে শিশুরা হাসে। এসব বিষয়ের প্রতিফলনই তাদের স্বপ্নের মধ্যে প্রতিফলন ঘটে। যেমনÑ আলো, মানুষের মুখ কিংবা পশুপাখির প্রতি তাদের সংবেদশীলতা দেখা যায়। এসব বিষয়ে তারা স্বপ্নে দেখে। অর্থাৎ মায়ের মুখ, আলো, শব্দ, কোলাহাল, কিছু দেখে ভয় পাওয়া বা কিছু দেখে হাসা—এসব স্বপ্নই শিশুরা দেখে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের শিশু বিশেষজ্ঞ ড. চার্লস ফ্রান্সিস মনে করেন, ‘ঘুমের রেম পর্যায়ে শিশুদের মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে। এ ব্যাপারটা তাদের মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, শিশুদের স্বপ্নে জীবনের প্রথম দিককার অভিজ্ঞতাগুলোই প্রতিফলন ঘটে। যেমনÑ খাওয়া বা মায়ের সঙ্গে সংস্পর্শে থাকা ইত্যাদি।
এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. রিচার্ড জেনকিনস বলেন, ‘শিশুরা এমন কিছু দেখে না যেমনটা আমরা অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্করা দেখি। তাদের মস্তিষ্ক তখনো জটিল গল্প বা আবেগ প্রকাশ করার জন্য পর্যাপ্ত উন্নত হয়ে ওঠে না। তবে স্বপ্ন তাদের শিখন প্রক্রিয়ার অন্যতম অংশ।’
গবেষকরা বিশ্বাস করেন, শিশুর স্বপ্ন তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। কারণ গবেষণায় দেখা যায়, ঘুমের রেম পর্যায়ে শিশুর মস্তিষ্ক দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সংবেদনশীল অভিজ্ঞতাগুলো প্রসেস করে। ফলে স্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিষ্ক সেই অভিজ্ঞতাগুলোকে স্মৃতিতে পরিণত করে এবং শেখার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। ঘুমের রেম পর্যায় দুধের শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূত্র : ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, যুক্তরাষ্ট্র।