প্রযুক্তি ডেস্ক: প্রথমবারের মতো মানুষের সহায়তা ছাড়াই বাস্তবসম্মত উপায়ে অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করেছে একটি রোবট।
বুধবার (৯ জুলাই) ‘জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা বলেছেন, নিখুঁত ও ধৈর্যের সঙ্গে রোগীর পিত্তথলি অপসারণের মতো দীর্ঘ ও জটিল পরীক্ষামূলক ধাপ সম্পন্ন করেছে রোবটটি। গবেষকদের কণ্ঠের নির্দেশনা মেনে কাজ করেছে এটি এবং বাস্তব চিকিৎসা পরিস্থিতির মতো হঠাৎ ঘটে যাওয়া জটিল অবস্থার মধ্যেও একজন দক্ষ সার্জনের মতো সক্ষমতা দেখিয়েছে এই রোবট।
এক বিবৃতিতে মেডিকেল রোবোটিস্ট বিশেষজ্ঞ অ্যাক্সেল ক্রিগার বলেছেন, এ অগ্রগতি আমাদেরকে নির্দিষ্ট অস্ত্রোপচারের কাজ করতে পারে এমন রোবট থেকে অস্ত্রোপচারের পুরো প্রক্রিয়াটি সত্যিকার অর্থে বুঝতেও পারে এমন রোবটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এর ফলে আমাদের চিকিৎসাসেবায় জটিল ও অনিশ্চিত পরিস্থিতিতেও কার্যকরভাবে কাজ করার মতো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রোপচার ব্যবস্থাকে আরো হাতের নাগালে নিয়ে এসেছে।
‘সার্জিক্যাল রোবট ট্রান্সফরমার-হায়ারার্কি’ বা এসআরটি-এইচ নামের এ রোবটটি অস্ত্রোপচারের ভিডিও দেখে প্রশিক্ষণ নিয়েছে, যেখানে শুকরের মৃতদেহে সেইসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন জনস হপকিন্সের সার্জনরা। এসব ভিডিওতে প্রতিটি ধাপের ব্যাখ্যা’সহ ক্যাপশন রয়েছে, যা রোবটকে এসব কাজ বুঝতে ও শিখতে সাহায্য করেছে।
‘জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি’ বলেছে, এসব ভিডিও দেখার পর অস্ত্রোপচার একশ শতাংশ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করেছে রোবটটি। এর সময় কিছুটা বেশি লাগলেও এ সার্জারির ফলাফল একজন দক্ষ সার্জনের কাজের মতোই।
রোবটটি তৈরি হয়েছে একই মেশিন-লার্নিং আর্কিটেকচারের ওপর ভিত্তি করে, যেটি ওপেনএআইয়ের জনপ্রিয় চ্যাটজিপিটিকে চালায় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
গবেষকরা বলছেন, এ রোবটকে মোট ১৭ মিনিট ধরে বিভিন্ন জটিল কাজ সম্পন্ন করতে হয়েছে, যার মধ্যে ছিল শিরা ও ধমনি শনাক্ত করা এবং সেগুলোকে সঠিকভাবে ধরতে পারা, সঠিক জায়গায় ক্লিপ বসানো ও কাঁচি দিয়ে নির্দিষ্ট অংশ কেটে ফেলা।
এর আগে, ‘ক্রিগার’-এর তৈরি ‘স্মার্ট টিস্যু অটোনোমাস রোবট’ নামের রোবটটি তিন বছর আগে প্রথমবারের মতো জ্যান্ত এক শুকরের ওপর স্বয়ংক্রিয় রোবটিক অস্ত্রোপচার বা ‘ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি’ সম্পন্ন করেছিল। তবে সেই রোবটটি তখন কেবল বিশেষভাবে চিহ্নিত টিস্যুতে কাজ করতে পারত। এখনকার রোবটটি এর চেয়েও উন্নত বলে দাবি নির্মাতাদের।
গবেষকরা বলছেন, অসামঞ্জস্যপূর্ণ শারীরিক অবস্থার মধ্যেও নিখুঁতভাবে কাজ করেছে এসআরটি-এইচ রোবট। গবেষকরা রোবটের প্রাথমিক অবস্থান বদলে এবং রক্তের মতো তরল রং ব্যবহার করে পিত্তথলি ও আশপাশের টিস্যুর চেহারা বদলে দিলেও কার্যসক্ষমতা ও নিখুঁতার সঙ্গে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছে এটি।
গবেষণা দলটি বলেছে, পরবর্তী ধাপে আরো বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচারের ওপর এই রোবট সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দিতে ও এর কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করতে চায় তারা। পাশাপাশি তারা রোবটের সক্ষমতার পরিসরও বাড়াতে চায়, যাতে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে রোবটটি অস্ত্রোপচার নিজে নিজেই সম্পন্ন করতে পারে।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স রোবোটিক্স’-এ।
এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি’ গবেষক ড. জি উং ‘ব্রায়ান’ কিম বলেছেন, আগের বিভিন্ন প্রচেষ্টার চেয়ে বড় অগ্রগতি আমাদের এই গবেষণা। কারণ, বাস্তব জীবনে স্বয়ংক্রিয় বা অটোনোমাস সার্জিক্যাল রোবট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বাধা দূর করার চেষ্টা করছে এটি। আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, বিভিন্ন এআই মডেলকে এতটাই নির্ভরযোগ্য করে তোলা সম্ভব যে, এগুলো দিয়ে সার্জারিতে স্বয়ংক্রিয়তা আনা যাবে, যা একসময় কল্পনাতীত মনে হলেও এখন তা বাস্তব হয়ে উঠেছে।