প্রযুক্তি ডেস্ক: প্রায় দেড় হাজার বছর পুরোনো এক রহস্যময় রোগের কারণ উদ্ঘাটন করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, ‘জাস্টিনিয়ানের প্লেগ’ নামের রহস্যের প্রকৃত কারণ কী তা জানতে পেরেছেন তারা। এটিই এখন পর্যন্ত মানব ইতিহাসে প্রথম উল্লিখিত মহামারির ঘটনা।
এ রোগের প্রকৃত জেনেটিক প্রমাণ গবেষকেরা খুঁজে পেয়েছেন পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল জর্ডানের জেরাশ শহরের এক গণকবরে। এই প্রমাণ হচ্ছে ‘ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস’ নামের এক ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়া প্লেগ রোগের জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে লিখেছে আমেরিকান সাপ্তাহিক সাময়িকী নিউজউইক।
খ্রিস্টীয় ৫৪১ থেকে ৫৪৯ সাল পর্যন্ত ‘জাস্টিনিয়ান’ প্লেগ চলেছিল, যা ছিল ভয়াবহ এক মহামারি। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের ইতিহাসকে গভীরভাবে পাল্টে দিয়েছিল এ রোগ। মহামারিটি আরো গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পেছনে কারণ ছিল ‘প্রথম প্লেগ মহামারি’র প্রথম ঢেউ এটি, যা প্রায় ৫৪১ থেকে ৭৫০ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এ মহামারির ফলে এক কোটিরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়।
এ গবেষণাপত্রের লেখক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডা’র জিন বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানী রেইস জিয়াং বলেছেন, সদ্য আবিষ্কৃত এই প্রমাণ আমাদের হাতে প্রথমবারের মতো প্লেগ মহামারির একটি জিনগত জানালা খুলে দিয়েছে। এতদিন আমরা কেবল ইতিহাসের বিবরণে নির্ভর করতাম, এখন আমাদের হাতে রয়েছে জীবাণুর সরাসরি প্রমাণ।
আমাদের এ গবেষণা ধাঁধার সেই হারানো অংশটি এনে দিলো, যা থেকে প্রথমবারের মতো সরাসরি জেনেটিক প্রমাণের মাধ্যমে ইঙ্গিত মিলল কীভাবে এই মহামারি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের কেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল।
সাম্প্রতিক এ আবিষ্কার মহামারির উৎপত্তি, পুনরাবৃত্তি ও বিস্তার সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণাকে নতুনভাবে গড়ে তুলছে। এর থেকে আরো ইঙ্গিত মিলেছে, কেন মহামারি মানব সভ্যতার ইতিহাসে বারবার ফিরে আসে ও স্থায়ী এক বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গবেষণাপত্রে গবেষকরা বলছেন, এই প্লেগ কোনো একক উৎস থেকে নয়, বরং বিভিন্ন অঞ্চলের নিজস্ব পরিবেশগত উৎস থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। এর মানে, মহামারি কোনো একবারের ঘটনা নয়-এটি একটি চলমান, জটিল প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এই আবিষ্কার প্লেগকে কেবল অতীতের একটি ঘটনা হিসেবে নয়, বরং আজও চলমান একটি জুনোটিক রোগ (মানব ও প্রাণীর মধ্যে সংক্রমণশীল রোগ) হিসেবে বোঝার সুযোগ করে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ বা সিডিসি’র তথ্য অনুসারে, খুব কম দেখা গেলেও ‘ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস’ ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে হওয়া রোগটি এখনো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে। আজকের দিনে প্লেগ রোগ পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যন্ত এলাকায় এবং আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু অঞ্চলে ‘বিরল হলেও স্থায়ী’ এক রোগ হিসেবেই রয়ে গিয়েছে।
গত জুলাইয়ে নিউমোনিক প্লেগে মারা গিয়েছেন আরিজোনার কোকোনিনো কাউন্টির একজন বাসিন্দা, যা ২০০৭ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের রোগে প্রথম মৃত্যু।
নিউমোনিক প্লেগ ‘ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস’ ব্যাকটেরিয়ার কারণে তৈরি মারাত্মক এক ফুসফুসের সংক্রমণ, যা প্লেগের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ধরনের। সিডিসি সতর্ক করে বলেছে, প্লেগের চিকিৎসা এন্টিবায়োটিক দিয়ে সম্ভব ‘কিন্তু সেগুলো দ্রুত দিতে হয় যাতে গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যু থেকে রক্ষা মেলে’। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাপত্র প্রকাশের প্লাটফর্ম ‘এমডিপিআই’তে।
সানা/ওআ/আপ্র/০৮/০৯/২০২৫