ঢাকা ১১:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মানবিক সংকটের মুখে আফগানিস্তান সহায়তা স্থগিত করল বিশ্ব ব্যাংক

  • আপডেট সময় : ০২:৩৬:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অগাস্ট ২০২১
  • ৫৭ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : নতুন তালেবান শাসনের অধীনে আফগানিস্তান একটি মানবিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে, উন্নয়ন সহযোগীদের এমন সতর্কবার্তার মধ্যেই নেটোর একজন কূটনীতিক বলেছেন, আফগানিস্তানের প্রতিবেশি দেশগুলোর উচিত তাদের স্থলসীমা খুলে দেওয়া, যাতে আরও বেশি মানুষ দেশ ছাড়তে পারে।
গতকাল বুধবার কাবুলভিত্তিক ওই কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, “ইরান, পাকিস্তান ও তাজিকিস্তানের উচিত আকাশ বা স্থল পথে আরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া ৩১ আগস্টের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় সময়ও আর হাতে বেশি নেই। এমন প্রেক্ষাপটে লাখ লাখ মানুষের ক্ষুধা, রোগ ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গেছে বলে সতর্ক করেছে উন্নয়ন সহযোগীদের।
কাতারের দোহায় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেসলি রয়টার্সকে বলেন, “খরা, সংঘাত, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে কোভিড মহামারী যুক্ত হওয়ায় একটি ঝড় আসার অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।” আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে খাদ্য সহায়তার জন্য ২০ কোটি ডলার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ডেভিড বেসলি বলেন, “ক্ষুধার মুখে পড়তে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে এখন এক কোটি ৪০ লাখে পৌঁছেছে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানের সহায়তার পরিমান চারগুণ করার পরিকল্পনা করছে এবং মাঠ পর্যায়ে সহায়তার সরবরাহ ও নিরাপত্তার জন্য জাতিসংঘের সঙ্গে সমন্বয় করবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান জানান, তালেবান গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এমন বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন পেয়েছেন তিনি, যার মধ্যে আত্মসমর্পণ করা বেসামরিক নাগরিক ও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ‘বিনাবিচারে মৃত্যুদ-’ দেওয়ার মতো ঘটনাও আছে। তালেবান জানিয়েছে, তারা যেকোন নৃশংসতার অভিযোগ তদন্ত করে দেখবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নেটো কূটনীতিক জানান, বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠী তাদের আফগান কর্মীদের প্রতিবেশি দেশগুলোতে পাঠানোর জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। তালেবান জানিয়ে দিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে ৩১ আগস্টের মধ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে মেধাবী আফগানদেরকে দেশত্যাগে প্ররোচিত না করতে। দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য কাবুল বিমানবন্দরের আশপাশে ভীড় করে থাকা আফগানদেরকে আশ্বস্ত করার জন্য তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ভয় করার কিছু নেই এবং তাদের বাড়ি ফিরে আসা উচিত। আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার সময় বাড়ানোর নিয়ে জি-৭ জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা খোলা রেখেছেন বাইডেন। হোয়াইট হাউজে তিনি বলেছেন, ৩১ আগস্টের মধ্যেই কাজ শেষ করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যেহেতু জঙ্গি হামলার হুমকি বাড়ছে। বাইডেন বলেন, “আমরা যত দ্রুত শেষ করতে পারব, তত ভালো। প্রত্যেকটি দিনের অবস্থান আমাদের সেনাদের জন্য বাড়তি ঝুঁকি বয়ে আনছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তা জানান, বিমানবন্দরে ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলা করতে পারে- এমন ঝুঁকি বাড়ছে। ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র – শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-৭ আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার প্রক্রিয়া নিয়ে ভারচুয়াল বৈঠক করেছে। জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল বলেছেন, ৩১ আগস্টের পর কাবুলে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের পরিচালনাধীন কোনো বিমানবন্দর থেকে প্রত্যাহার কার্যক্রম চালু রাখার উদ্যোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, জি৭ এর বৈঠকে যে মূল শর্তটি নিয়ে মতৈক্য হয়েছে তা হল তালেবানকে অবশ্যই আফগানিস্তান ছাড়তে চাওয়াদের একটি নিরাপদ পথ করে দিতে হবে, এমনকি প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার সময়সীমা পার হওয়ার পরেও।
সহায়তা স্থগিত করল বিশ্ব ব্যাংক : আফগানিস্তান তালেবানের দখলে চলে যাওয়ায় সেদেশে চলমান প্রকল্পগুলোতে তহবিল স্থগিত করল বিশ্ব ব্যাংক। আরেক ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আফগানিস্তানে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে এ পদক্ষেপ নিল বিশ্ব ব্যাংক। বুধবার বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান শাসনে ‘বিশেষ করে নারীদের ভবিষ্যৎ’ এবং দেশটির উন্নয়ন কর্মকা-ে কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক উদ্বেগ জানিয়েছে। এর আগে বাইডেন প্রশাসনও যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যাবতীয় সম্পদ অবরুদ্ধ করেছে। বিশ্ব ব্যাংকের একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা আফগানিস্তানে আমাদের কর্মকা-ে অর্থ ছাড় স্থগিত করেছি এবং অভ্যন্তরীণ নীতি ও কার্যপ্রণালী অনুযায়ী আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করছি।
“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আমরা একনিষ্ঠভাবে পরামর্শ চালিয়ে যাব। উন্নয়নের কষ্টার্জিত অর্জন ধরে রাখতে এবং আফগানিস্তানের জনগণের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে অংশীদারদের সঙ্গে বসে আমরা পথ খুঁজে দেখছি।” আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন প্রকল্পে ২০০২ সাল থেকে ৫৩০ কোটি ডলারের বেশি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওয়াশিংটন ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। গত শুক্রবার বিশ্ব ব্যাংক জানায়, কাবুলে থাকা নিজেদের কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে বিশ্ব ব্যাংকের তহবিল স্থগিত করার সিদ্ধান্ত দেশটির নতুন সরকারের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক ধাক্কা হয়ে দেখা দেবে। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফ ঘোষণা দেয়, আফগানিস্তান তাদের কাছ থেকে আর কোনো সহযোগিতা আপাতত পাবে না। সংস্থার একজন মুখপাত্র বলেন, আফগানিস্তানের কোনো সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘স্পষ্ট’ কোনো বক্তব্য এখনও আসেনি। সে কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ২৩ আগস্ট থেকে দেশটিতে আইএমএফ এর প্রায় ৪৪ কোটি ডলার ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি। তালেবান কাবুল দখল নেওয়ার পর হোয়াইট হাউজ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো সম্পদ স্থানান্তর করতে পারবে না তালেবান। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘দা আফগানিস্তান ব্যাংক’ এর মোটামুটি ৯০০ কোটি ডলারের রিজার্ভ রয়েছে, যার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে আটকা পড়ল।
খাবার লাগবে এক কোটি আফগান শিশুর : জরুরিভিত্তিতে এক কোটি আফগান শিশুর মুখে খাবার তুলে দিতে হবে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। একইসঙ্গে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামও বলছে, আফগানিস্তানে এই মুহূর্তে খাদ্য সহায়তায় ২০ কোটি ডলার লাগবে। ইউনিসেফ আরও জানিয়েছে, আফগানিস্তানের শিশুরা এমনিতেই খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করে আছে। এমনকি এ বছর দশ লাখ আফগান শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ডব্লিউএফপি’র নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি জানালেন, আফগানদের তিন ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ খাদ্যঝুঁকিতে আছে। এর প্রধান কারণ টানা কয়েকবছরের খরা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও কোভিডের কারণে অর্থনৈতিক বিপর্যয়। সম্প্রতি আবার আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর যাবতীয় সহায়তাও বন্ধ রেখেছে বিশ্বব্যাংক। আটকে আছে কয়েক কোটি ডলারের তহবিলও। দেশটিতে ২৭টি প্রকল্পে গত বিশ বছরে প্রায় ৫৩০ কোটি ডলার দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গতবছর আবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও দেশটির বেশকিছু পেমেন্ট আটকে দিয়েছে। সূত্র: আল জাজিরা

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মানবিক সংকটের মুখে আফগানিস্তান সহায়তা স্থগিত করল বিশ্ব ব্যাংক

আপডেট সময় : ০২:৩৬:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অগাস্ট ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : নতুন তালেবান শাসনের অধীনে আফগানিস্তান একটি মানবিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে, উন্নয়ন সহযোগীদের এমন সতর্কবার্তার মধ্যেই নেটোর একজন কূটনীতিক বলেছেন, আফগানিস্তানের প্রতিবেশি দেশগুলোর উচিত তাদের স্থলসীমা খুলে দেওয়া, যাতে আরও বেশি মানুষ দেশ ছাড়তে পারে।
গতকাল বুধবার কাবুলভিত্তিক ওই কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, “ইরান, পাকিস্তান ও তাজিকিস্তানের উচিত আকাশ বা স্থল পথে আরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া ৩১ আগস্টের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় সময়ও আর হাতে বেশি নেই। এমন প্রেক্ষাপটে লাখ লাখ মানুষের ক্ষুধা, রোগ ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গেছে বলে সতর্ক করেছে উন্নয়ন সহযোগীদের।
কাতারের দোহায় জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেসলি রয়টার্সকে বলেন, “খরা, সংঘাত, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে কোভিড মহামারী যুক্ত হওয়ায় একটি ঝড় আসার অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।” আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে খাদ্য সহায়তার জন্য ২০ কোটি ডলার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ডেভিড বেসলি বলেন, “ক্ষুধার মুখে পড়তে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে এখন এক কোটি ৪০ লাখে পৌঁছেছে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানের সহায়তার পরিমান চারগুণ করার পরিকল্পনা করছে এবং মাঠ পর্যায়ে সহায়তার সরবরাহ ও নিরাপত্তার জন্য জাতিসংঘের সঙ্গে সমন্বয় করবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান জানান, তালেবান গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এমন বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন পেয়েছেন তিনি, যার মধ্যে আত্মসমর্পণ করা বেসামরিক নাগরিক ও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ‘বিনাবিচারে মৃত্যুদ-’ দেওয়ার মতো ঘটনাও আছে। তালেবান জানিয়েছে, তারা যেকোন নৃশংসতার অভিযোগ তদন্ত করে দেখবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নেটো কূটনীতিক জানান, বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠী তাদের আফগান কর্মীদের প্রতিবেশি দেশগুলোতে পাঠানোর জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। তালেবান জানিয়ে দিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে ৩১ আগস্টের মধ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে মেধাবী আফগানদেরকে দেশত্যাগে প্ররোচিত না করতে। দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য কাবুল বিমানবন্দরের আশপাশে ভীড় করে থাকা আফগানদেরকে আশ্বস্ত করার জন্য তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ভয় করার কিছু নেই এবং তাদের বাড়ি ফিরে আসা উচিত। আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার সময় বাড়ানোর নিয়ে জি-৭ জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা খোলা রেখেছেন বাইডেন। হোয়াইট হাউজে তিনি বলেছেন, ৩১ আগস্টের মধ্যেই কাজ শেষ করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যেহেতু জঙ্গি হামলার হুমকি বাড়ছে। বাইডেন বলেন, “আমরা যত দ্রুত শেষ করতে পারব, তত ভালো। প্রত্যেকটি দিনের অবস্থান আমাদের সেনাদের জন্য বাড়তি ঝুঁকি বয়ে আনছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তা জানান, বিমানবন্দরে ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলা করতে পারে- এমন ঝুঁকি বাড়ছে। ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র – শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-৭ আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার প্রক্রিয়া নিয়ে ভারচুয়াল বৈঠক করেছে। জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল বলেছেন, ৩১ আগস্টের পর কাবুলে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের পরিচালনাধীন কোনো বিমানবন্দর থেকে প্রত্যাহার কার্যক্রম চালু রাখার উদ্যোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, জি৭ এর বৈঠকে যে মূল শর্তটি নিয়ে মতৈক্য হয়েছে তা হল তালেবানকে অবশ্যই আফগানিস্তান ছাড়তে চাওয়াদের একটি নিরাপদ পথ করে দিতে হবে, এমনকি প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার সময়সীমা পার হওয়ার পরেও।
সহায়তা স্থগিত করল বিশ্ব ব্যাংক : আফগানিস্তান তালেবানের দখলে চলে যাওয়ায় সেদেশে চলমান প্রকল্পগুলোতে তহবিল স্থগিত করল বিশ্ব ব্যাংক। আরেক ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আফগানিস্তানে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে এ পদক্ষেপ নিল বিশ্ব ব্যাংক। বুধবার বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান শাসনে ‘বিশেষ করে নারীদের ভবিষ্যৎ’ এবং দেশটির উন্নয়ন কর্মকা-ে কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক উদ্বেগ জানিয়েছে। এর আগে বাইডেন প্রশাসনও যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যাবতীয় সম্পদ অবরুদ্ধ করেছে। বিশ্ব ব্যাংকের একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা আফগানিস্তানে আমাদের কর্মকা-ে অর্থ ছাড় স্থগিত করেছি এবং অভ্যন্তরীণ নীতি ও কার্যপ্রণালী অনুযায়ী আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করছি।
“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আমরা একনিষ্ঠভাবে পরামর্শ চালিয়ে যাব। উন্নয়নের কষ্টার্জিত অর্জন ধরে রাখতে এবং আফগানিস্তানের জনগণের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে অংশীদারদের সঙ্গে বসে আমরা পথ খুঁজে দেখছি।” আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন প্রকল্পে ২০০২ সাল থেকে ৫৩০ কোটি ডলারের বেশি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওয়াশিংটন ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। গত শুক্রবার বিশ্ব ব্যাংক জানায়, কাবুলে থাকা নিজেদের কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে বিশ্ব ব্যাংকের তহবিল স্থগিত করার সিদ্ধান্ত দেশটির নতুন সরকারের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক ধাক্কা হয়ে দেখা দেবে। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফ ঘোষণা দেয়, আফগানিস্তান তাদের কাছ থেকে আর কোনো সহযোগিতা আপাতত পাবে না। সংস্থার একজন মুখপাত্র বলেন, আফগানিস্তানের কোনো সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘স্পষ্ট’ কোনো বক্তব্য এখনও আসেনি। সে কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ২৩ আগস্ট থেকে দেশটিতে আইএমএফ এর প্রায় ৪৪ কোটি ডলার ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি। তালেবান কাবুল দখল নেওয়ার পর হোয়াইট হাউজ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো সম্পদ স্থানান্তর করতে পারবে না তালেবান। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘দা আফগানিস্তান ব্যাংক’ এর মোটামুটি ৯০০ কোটি ডলারের রিজার্ভ রয়েছে, যার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে আটকা পড়ল।
খাবার লাগবে এক কোটি আফগান শিশুর : জরুরিভিত্তিতে এক কোটি আফগান শিশুর মুখে খাবার তুলে দিতে হবে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। একইসঙ্গে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামও বলছে, আফগানিস্তানে এই মুহূর্তে খাদ্য সহায়তায় ২০ কোটি ডলার লাগবে। ইউনিসেফ আরও জানিয়েছে, আফগানিস্তানের শিশুরা এমনিতেই খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করে আছে। এমনকি এ বছর দশ লাখ আফগান শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ডব্লিউএফপি’র নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি জানালেন, আফগানদের তিন ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ খাদ্যঝুঁকিতে আছে। এর প্রধান কারণ টানা কয়েকবছরের খরা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও কোভিডের কারণে অর্থনৈতিক বিপর্যয়। সম্প্রতি আবার আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর যাবতীয় সহায়তাও বন্ধ রেখেছে বিশ্বব্যাংক। আটকে আছে কয়েক কোটি ডলারের তহবিলও। দেশটিতে ২৭টি প্রকল্পে গত বিশ বছরে প্রায় ৫৩০ কোটি ডলার দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গতবছর আবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও দেশটির বেশকিছু পেমেন্ট আটকে দিয়েছে। সূত্র: আল জাজিরা