ঢাকা ০৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

মানবপাচারের জন্য বাংলাদেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ : মন্ত্রী

  • আপডেট সময় : ০২:০৩:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ অক্টোবর ২০২২
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিরাপদ অভিবাসন আর কর্মী হিসেবে বিদেশে গমণকারী প্রত্যেকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে যাবতীয় তথ্য রাখা হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। মন্ত্রী বলেছেন, ‘মানবপাচারের জন্য বাংলাদেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকি বিবেচনায় বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে। যারা বিদেশে কাজ করতে ইচ্ছুক অনেকক্ষেত্রে তারা নিজেরাই নিজেদের পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলছেন। আর দালালদের মাধ্যমে অভিবাসন প্রক্রিয়ায়ও মানবপাচার হচ্ছে।’
ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে গতকাল দুপুরে ‘মানবপাচার বিষয়ক বাংলাদেশের প্রথম গবেষণা প্রতিবেদন’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও অনুষ্ঠানে ছিলেন। ইমরান আহমদ বলেন, ‘যারা বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছে এবং যেসব দেশে যাচ্ছে সেই দেশ ও ব্যক্তির সঙ্গে আমরা চুক্তি করব। যাতে পাচার ও দেশগুলিতে গিয়ে অবৈধ হওয়া রোধ করা যায়।’
‘মানবপাচার রোধে এখনো জিরো টলারেন্স গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। আমরা এই বিষয়ে বিদেশ গমনকারী প্রত্যেকের তথ্য রাখব। তারা যেন ন্যয্য অধিকার পায় সেটি দেখা হবে। গবেষণা প্রতিবেদনে কোনো গ্যাপ উল্লেখ থাকলে সেগুলোও সংশোধন করা হবে।’
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম ও জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ সংক্রান্ত কার্যালয়-ইউএনওডিসি বাংলাদেশে ‘মানব পাচারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী অ্যাকশন এবং দ্য স্মাগলিং অফ মাইগ্রান্টস-বাংলাদেশ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর অর্থায়ন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে গবেষণার ভিত্তিতে মানবপাচারের প্রমাণভিত্তিক তথ্য দিতে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা দিতে কাজ করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘মানবপাচার রোধে ২০০৯ সাল থেকে জোরালোভাবে কাজ করা হচ্ছে। ২০১২ সালে বিশেষ আইন করা হয়। ২০১৭ সাল থেকে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শহরগুলোতে ৭টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘নারী ও শিশু পাচার, যৌনকর্মী হিসেবে কাজে নিযুক্ত করার মতো পাচার কার্যক্রম চলে। আমরা সেগুলি প্রতিরোধে ২০২২ সালের ৩০ জুলাই একটি বিশেষ কমিটি করেছি।’ গবেষণাপত্রটি মানবপাচার রোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে আশাবাদ রেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যদি এই প্রতিবেদনে কোনো গ্যাপ থাকে তাহলে সেগুলো পর্যালোচনা করে সংশোধন করা হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকতার হোসেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিষয়ের অতিরিক্ত সচিব একেএম মুখলেসুর রহমান, যুগ্মসচিব মো. আবু হেনা মোস্তাফা জামান, যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক-২ অধিশাখা) মো. মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ভিয়েনার ইউএনওডিসির জিএলওর অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ইউরিদিচ মার্কেজ, বাংলাদেশে এলওএমের উপপ্রধান ফাতিমা নুসরাত গাজ্জালি, আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুতিয়াইনিন প্রমূখ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আলোচকেরা বলেন, ‘মানবপাচার বেশি হচ্ছে পরিবারের মাধ্যমেই। কারণ অর্থ উপার্জনের জন্য ঠিকমত জানাশোনা না করেই দালাল ধরে বিদেশ চলে যায়। এতে তারা পাচারের শিকার হয়। পাচার রোধ শুধু একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। বিদেশ গমনকারীদের তখনই সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে যখন সরকার, বিভিন্ন সংস্থা, আইএলও, আইএমও এক সঙ্গে কাজ করবে।’
মানবপাচার জঘন্যতম অপরাধ উল্লেখ করে বলা হয়, ‘পাচারের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় বিশ হাজার পাচার হওয়া ব্যাক্তিতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’
লেবার অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে যেন কোনোভাবেই মানবপাচার না হয় সে বিষয়ে সরকারকে নজর দেয়ার তাগিদ দেন বক্তারা। তারা বলেন, ‘অভিবাসনের ক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলোতে নানা কাজের অফার দেওয়া হয়। দালালদের এই প্রলোভনের ফাঁদে পড়েই অনেকে পাচারের শিকার হন। তারপর অবৈধ হয়ে জেল খাটে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী নিরাপদ অভিবাসনের চেষ্টা করতে হবে।’
মানবপাচার রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়ার গবেষণা প্রতিবেদনটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে জানিয়ে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আট হাজারের বেশি ভুক্তভোগীকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পাচার রোধে একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়েছে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মানবপাচারের জন্য বাংলাদেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ : মন্ত্রী

আপডেট সময় : ০২:০৩:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ অক্টোবর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিরাপদ অভিবাসন আর কর্মী হিসেবে বিদেশে গমণকারী প্রত্যেকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে যাবতীয় তথ্য রাখা হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। মন্ত্রী বলেছেন, ‘মানবপাচারের জন্য বাংলাদেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকি বিবেচনায় বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে। যারা বিদেশে কাজ করতে ইচ্ছুক অনেকক্ষেত্রে তারা নিজেরাই নিজেদের পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলছেন। আর দালালদের মাধ্যমে অভিবাসন প্রক্রিয়ায়ও মানবপাচার হচ্ছে।’
ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে গতকাল দুপুরে ‘মানবপাচার বিষয়ক বাংলাদেশের প্রথম গবেষণা প্রতিবেদন’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও অনুষ্ঠানে ছিলেন। ইমরান আহমদ বলেন, ‘যারা বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছে এবং যেসব দেশে যাচ্ছে সেই দেশ ও ব্যক্তির সঙ্গে আমরা চুক্তি করব। যাতে পাচার ও দেশগুলিতে গিয়ে অবৈধ হওয়া রোধ করা যায়।’
‘মানবপাচার রোধে এখনো জিরো টলারেন্স গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। আমরা এই বিষয়ে বিদেশ গমনকারী প্রত্যেকের তথ্য রাখব। তারা যেন ন্যয্য অধিকার পায় সেটি দেখা হবে। গবেষণা প্রতিবেদনে কোনো গ্যাপ উল্লেখ থাকলে সেগুলোও সংশোধন করা হবে।’
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম ও জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ সংক্রান্ত কার্যালয়-ইউএনওডিসি বাংলাদেশে ‘মানব পাচারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী অ্যাকশন এবং দ্য স্মাগলিং অফ মাইগ্রান্টস-বাংলাদেশ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর অর্থায়ন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে গবেষণার ভিত্তিতে মানবপাচারের প্রমাণভিত্তিক তথ্য দিতে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা দিতে কাজ করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘মানবপাচার রোধে ২০০৯ সাল থেকে জোরালোভাবে কাজ করা হচ্ছে। ২০১২ সালে বিশেষ আইন করা হয়। ২০১৭ সাল থেকে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শহরগুলোতে ৭টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘নারী ও শিশু পাচার, যৌনকর্মী হিসেবে কাজে নিযুক্ত করার মতো পাচার কার্যক্রম চলে। আমরা সেগুলি প্রতিরোধে ২০২২ সালের ৩০ জুলাই একটি বিশেষ কমিটি করেছি।’ গবেষণাপত্রটি মানবপাচার রোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে আশাবাদ রেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যদি এই প্রতিবেদনে কোনো গ্যাপ থাকে তাহলে সেগুলো পর্যালোচনা করে সংশোধন করা হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকতার হোসেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিষয়ের অতিরিক্ত সচিব একেএম মুখলেসুর রহমান, যুগ্মসচিব মো. আবু হেনা মোস্তাফা জামান, যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক-২ অধিশাখা) মো. মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ভিয়েনার ইউএনওডিসির জিএলওর অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ইউরিদিচ মার্কেজ, বাংলাদেশে এলওএমের উপপ্রধান ফাতিমা নুসরাত গাজ্জালি, আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুতিয়াইনিন প্রমূখ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আলোচকেরা বলেন, ‘মানবপাচার বেশি হচ্ছে পরিবারের মাধ্যমেই। কারণ অর্থ উপার্জনের জন্য ঠিকমত জানাশোনা না করেই দালাল ধরে বিদেশ চলে যায়। এতে তারা পাচারের শিকার হয়। পাচার রোধ শুধু একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। বিদেশ গমনকারীদের তখনই সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে যখন সরকার, বিভিন্ন সংস্থা, আইএলও, আইএমও এক সঙ্গে কাজ করবে।’
মানবপাচার জঘন্যতম অপরাধ উল্লেখ করে বলা হয়, ‘পাচারের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় বিশ হাজার পাচার হওয়া ব্যাক্তিতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’
লেবার অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে যেন কোনোভাবেই মানবপাচার না হয় সে বিষয়ে সরকারকে নজর দেয়ার তাগিদ দেন বক্তারা। তারা বলেন, ‘অভিবাসনের ক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলোতে নানা কাজের অফার দেওয়া হয়। দালালদের এই প্রলোভনের ফাঁদে পড়েই অনেকে পাচারের শিকার হন। তারপর অবৈধ হয়ে জেল খাটে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী নিরাপদ অভিবাসনের চেষ্টা করতে হবে।’
মানবপাচার রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়ার গবেষণা প্রতিবেদনটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে জানিয়ে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আট হাজারের বেশি ভুক্তভোগীকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পাচার রোধে একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়েছে।’