ঢাকা ০২:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

  • আপডেট সময় : ০১:৩৬:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৯৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া পলাতক আসামি আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলীকে (৭০) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩। শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেফতার আবু মুসলিমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭১ সালে গঠিত ইসলামী ছাত্র সংঘের একজন অন্যতম সংগঠক এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানা জামায়াত ইসলামীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন আবু মুসলিম। এছাড়াও তিনি শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে ওই এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাতেন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাস থেকে শান্তি কমিটির গাইবান্ধা জেলা প্রধান মওলানা মমতাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে আবু মুসলিম আরও অনেকে মিলে ওই এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী কর্মকা- চালাত।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শান্তি কমিটির সদস্য ও ডাকাত মো. আব্দুর রহিম মিয়া এবং গ্রেফতার আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে আবু সালেহ, আব্দুল লতিফ, রুহুল আমিন, নাজমুলসহ আরও কয়েকজন রাজাকার এবং পাকিস্তানি আর্মিদের একটি দল নিয়ে মালিবাড়ি গ্রামের গণেষ চন্দ্র বর্মনের বাড়িতে হামলা করে। তারা লুটপাট এবং বাড়ির সদস্যদের ওপর নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এরপর গণেষ চন্দ্র বর্মনকে উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তার স্ত্রী, ছেলে, বন্ধু আকবর আলী এবং প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলী ও মনসুর আলী এগিয়ে আসেন। তাদের সবাইকে আবু মুসলিম এবং তার সহযোগীরা বেধড়ক মারপিট করে। একপর্যায়ে তাদের আটক করে পাশের দরিয়াপুর ব্রিজে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গণেষ চন্দ্র বর্মনকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে মুখম-ল ও সারা শরীরে নৃশংসভাবে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তার মুখম-ল বিকৃত করে দেয়। মৃতদেহের সঙ্গে ইট ও পাথর বেঁধে এমনভাবে নদীতে ডুবিয়ে দেয় যাতে করে লাশটি ভেসে ওঠতে না পারে।
আটক আকবর আলী, মোহাম্মদ আলী এবং মনসুর আলীকে তারা কামারজানি আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং নির্যাতন করে। আকবর আলীকে তারা উপস্থিত অপর দুই ব্যক্তির সামনে বৈদ্যুতিক শক এবং নির্যাতনের মাধ্যমে ক্যাম্পেই হত্যা করে। পরের দিন বিকালে অপর দুই ব্যক্তি মনসুর আলী এবং মোহাম্মদ আলীকে তারা ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর তারা কোনও রকমে পালিয়ে জীবন বাঁচান।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কামারজানি আর্মি ক্যাম্পে হত্যাকা-ের শিকার আকবর আলীর ছেলে আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ২০১৩ সালে গাইবান্ধা অধস্তন আদালতে আসামি আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী, আব্দুর রহিম, আবু সালেহ, আব্দুল লতিফ, রুহুল আমিন, নাজমুল হুদাকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন আবু মুসলিম কখনোই আদালতে হাজির হয়নি। মামলার পর ২০১৩ সাল নিজ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অভিযোগ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-াদেশ দেন।
র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, এই মামলার অভিযুক্ত অপর পাঁচ জন আসামির মধ্যে বর্তমানে একজন জর্ডানে অবস্থানরত, একজন কারাগারে, দুই জন পলাতক রয়েছে এবং একজন আসামি পলাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। মামলা দায়েরের পর ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গ্রেফতার আবু মুসলিম সুন্দরগঞ্জ থানায় তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলায় জামিনের আবেদন করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে আত্মগোপনে থাকেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাজধানীর ডেমরা এলাকায় একটি বস্তিতে থাকতে শুরু করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এক নারীকে দুই ভাই বিয়ে করে বললেন- আমরা গর্বিত

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

আপডেট সময় : ০১:৩৬:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া পলাতক আসামি আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলীকে (৭০) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩। শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেফতার আবু মুসলিমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭১ সালে গঠিত ইসলামী ছাত্র সংঘের একজন অন্যতম সংগঠক এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানা জামায়াত ইসলামীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন আবু মুসলিম। এছাড়াও তিনি শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে ওই এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাতেন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাস থেকে শান্তি কমিটির গাইবান্ধা জেলা প্রধান মওলানা মমতাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে আবু মুসলিম আরও অনেকে মিলে ওই এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী কর্মকা- চালাত।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শান্তি কমিটির সদস্য ও ডাকাত মো. আব্দুর রহিম মিয়া এবং গ্রেফতার আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে আবু সালেহ, আব্দুল লতিফ, রুহুল আমিন, নাজমুলসহ আরও কয়েকজন রাজাকার এবং পাকিস্তানি আর্মিদের একটি দল নিয়ে মালিবাড়ি গ্রামের গণেষ চন্দ্র বর্মনের বাড়িতে হামলা করে। তারা লুটপাট এবং বাড়ির সদস্যদের ওপর নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এরপর গণেষ চন্দ্র বর্মনকে উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তার স্ত্রী, ছেলে, বন্ধু আকবর আলী এবং প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলী ও মনসুর আলী এগিয়ে আসেন। তাদের সবাইকে আবু মুসলিম এবং তার সহযোগীরা বেধড়ক মারপিট করে। একপর্যায়ে তাদের আটক করে পাশের দরিয়াপুর ব্রিজে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গণেষ চন্দ্র বর্মনকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে মুখম-ল ও সারা শরীরে নৃশংসভাবে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তার মুখম-ল বিকৃত করে দেয়। মৃতদেহের সঙ্গে ইট ও পাথর বেঁধে এমনভাবে নদীতে ডুবিয়ে দেয় যাতে করে লাশটি ভেসে ওঠতে না পারে।
আটক আকবর আলী, মোহাম্মদ আলী এবং মনসুর আলীকে তারা কামারজানি আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং নির্যাতন করে। আকবর আলীকে তারা উপস্থিত অপর দুই ব্যক্তির সামনে বৈদ্যুতিক শক এবং নির্যাতনের মাধ্যমে ক্যাম্পেই হত্যা করে। পরের দিন বিকালে অপর দুই ব্যক্তি মনসুর আলী এবং মোহাম্মদ আলীকে তারা ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর তারা কোনও রকমে পালিয়ে জীবন বাঁচান।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কামারজানি আর্মি ক্যাম্পে হত্যাকা-ের শিকার আকবর আলীর ছেলে আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ২০১৩ সালে গাইবান্ধা অধস্তন আদালতে আসামি আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী, আব্দুর রহিম, আবু সালেহ, আব্দুল লতিফ, রুহুল আমিন, নাজমুল হুদাকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন আবু মুসলিম কখনোই আদালতে হাজির হয়নি। মামলার পর ২০১৩ সাল নিজ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অভিযোগ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-াদেশ দেন।
র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, এই মামলার অভিযুক্ত অপর পাঁচ জন আসামির মধ্যে বর্তমানে একজন জর্ডানে অবস্থানরত, একজন কারাগারে, দুই জন পলাতক রয়েছে এবং একজন আসামি পলাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। মামলা দায়েরের পর ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গ্রেফতার আবু মুসলিম সুন্দরগঞ্জ থানায় তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলায় জামিনের আবেদন করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এরপর ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে আত্মগোপনে থাকেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাজধানীর ডেমরা এলাকায় একটি বস্তিতে থাকতে শুরু করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।