ঢাকা ০২:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

মাদক পার্টটাইম ব্যবসা

  • আপডেট সময় : ০১:১৬:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ নভেম্বর ২০২১
  • ১০৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার এলাকার স্থানীয় জনগণ মাদককে পার্টটাইম ব্যবসা হিসেবে মনে করে। স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাদকের খুচরা বিক্রেতারা মাদক বিক্রি করে তাদের সংসার চালায়।
গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে মাদক ব্যবসার এমন চিত্র উঠে এসেছে। গত ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। রোববারে বৈঠকে ওই কার্যবিরণী অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই বৈঠকে মাদক নির্মূলে এমপি-মন্ত্রীসহ সকল শ্রেণির মানুষকে ডোপ টেস্টের আওতায় নিয়ে আসারও প্রস্তাব ওঠে। পরে ওই প্রস্তাবের আংশিক সুপারিশ আকারে নিয়ে আসা হয়। সংসদীয় কমিটির আগের বৈঠকে মাদক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা দেশের মাদক পরিস্থিতি ও মাদক প্রতিরোধে তাদের কার্যক্রম তুলে ধরেন।
বৈঠকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় এসব ব্যক্তি মাদক কেনাবেচাকে পার্টটাইম ব্যবসা হিসেবেও মনে করে।’
সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে ইয়াবা রোধ করা একটু কঠিন হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা সতর্ক রয়েছে।’ মাদক সেবীরা প্রথমে শখের বসে মাদক সেবন করে এবং পরবর্তীতে মাদকাসক্ত হয়ে গেলে মাদক চোরাকারবারীরা তাদেরকে খুচরা বিক্রেতা হিসেবে ব্যবহার করে বলে র‌্যাবের ডিজি বলেন, ‘সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই নয়, সকল শ্রেণির জনগণ একসঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কারণে সুন্দরবনের বনদস্যু ও জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছে। মাদকপাচারকারীদের জন্য এ ব্যবস্থা করা গেলে সফলতা আসবে।’
পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার/আটক করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু প্রলম্বিত বিচার, বিচারক স্বল্পতা এবং সহজে জামিনে বের হয়ে যাওয়া যেন চিরাচরিত নিয়ম। জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও সেই মাদক ব্যবসায় ফিরে আসা, একটি মাদক মামলা চূড়ান্ত রায় হতে প্রায় ১২ বছর লেগে যায়। তখন আর কিছুই করার থাকে না। দেশে কোনও মাদক তৈরি বা উৎপাদন হয় না।’ সবই আসে দেশের বাইরে থেকে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন বলেন, ‘যৌন হয়রানি ও মাদক মামলায় কেউ সাক্ষী দিতে আসে না বিধায় আসামিরা সহজেই জামিন পেয়ে যায়। জামিনে মুক্ত হয়ে আবার একই পেশায় জড়িয়ে যায়। তাছাড়া দীর্ঘদিন মামলা চলার পর এক সময় দেখা যায়, মামলার নথিপত্র আর খুঁজে পাওয়া যায় না।’
সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘গাঁজা, মদ, বিয়ার এগুলোতে মাদকের পরিমাণ কম। আবার ইয়াবা, এলএসডি, আইস, সীসাবার ইত্যাদি খুবই ভয়াবহ।’
তিনি বলেন, ‘মাদকের খুচরা বিক্রেতারা মাদক বিক্রি করে তাদের সংসার চালায়।’ মাদক সরবরাহকারীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘সিরিয়াস মাদকাসক্তদের মাদক না দিলে মৃত্যুবরণ করছে। কারগার বা থানা হাজতে সিরিয়াস মাদকাসক্তদের মাদক সেবন করাতে গিয়ে আরেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। মামলার বিচার কার্য্ক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত আদালত ও বিচারকের স্বল্পতা রয়েছে। এসব দীর্ঘসূত্রতার জন্য চাইলেই শতভাগ মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর হয় না। পুলিশ বিভাগ মাদকপাচার ও সরবরাহাকারীদের আটক করে আদালতে পাঠালে, সেখান থেকে খুব সহজেই জামিনে মুক্ত হয়ে যায়।’
কমিটির সভাপতি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, ‘ডোপ টেস্ট প্রথা চালুর কারণে মাদকাসক্তরা ইদানিং সতর্ক হচ্ছে। এমপি-মন্ত্রী,রাজনীতিবিদ, বিচারপতি, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক সর্বক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট চালু রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। ডোপ টেস্টের কারণে সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে সমাজের সবাই সচেতন হবেন।’
অবশ্য সভাপতি সকল শ্রেণিকে ডোপ টেস্টের আওতায় আনার প্রস্তাব করলেও তার আংশিক সুপারিশ আকারে নিয়ে আসা হয়। বৈঠকে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল সরকারি সংস্থা/দফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র-শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়মিত ডোপ টেস্টের আওতায় আনতে হবে’ বলে সুপারিশ করা হয়। সভাপতি মো. শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পীর ফজলুর রহমান, নূর মোহাম্মদ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এবং রুমানা আলী অংশগ্রহণ করেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মাদক পার্টটাইম ব্যবসা

আপডেট সময় : ০১:১৬:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ নভেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার এলাকার স্থানীয় জনগণ মাদককে পার্টটাইম ব্যবসা হিসেবে মনে করে। স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাদকের খুচরা বিক্রেতারা মাদক বিক্রি করে তাদের সংসার চালায়।
গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে মাদক ব্যবসার এমন চিত্র উঠে এসেছে। গত ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। রোববারে বৈঠকে ওই কার্যবিরণী অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই বৈঠকে মাদক নির্মূলে এমপি-মন্ত্রীসহ সকল শ্রেণির মানুষকে ডোপ টেস্টের আওতায় নিয়ে আসারও প্রস্তাব ওঠে। পরে ওই প্রস্তাবের আংশিক সুপারিশ আকারে নিয়ে আসা হয়। সংসদীয় কমিটির আগের বৈঠকে মাদক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা দেশের মাদক পরিস্থিতি ও মাদক প্রতিরোধে তাদের কার্যক্রম তুলে ধরেন।
বৈঠকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় এসব ব্যক্তি মাদক কেনাবেচাকে পার্টটাইম ব্যবসা হিসেবেও মনে করে।’
সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে ইয়াবা রোধ করা একটু কঠিন হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা সতর্ক রয়েছে।’ মাদক সেবীরা প্রথমে শখের বসে মাদক সেবন করে এবং পরবর্তীতে মাদকাসক্ত হয়ে গেলে মাদক চোরাকারবারীরা তাদেরকে খুচরা বিক্রেতা হিসেবে ব্যবহার করে বলে র‌্যাবের ডিজি বলেন, ‘সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই নয়, সকল শ্রেণির জনগণ একসঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কারণে সুন্দরবনের বনদস্যু ও জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছে। মাদকপাচারকারীদের জন্য এ ব্যবস্থা করা গেলে সফলতা আসবে।’
পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার/আটক করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু প্রলম্বিত বিচার, বিচারক স্বল্পতা এবং সহজে জামিনে বের হয়ে যাওয়া যেন চিরাচরিত নিয়ম। জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও সেই মাদক ব্যবসায় ফিরে আসা, একটি মাদক মামলা চূড়ান্ত রায় হতে প্রায় ১২ বছর লেগে যায়। তখন আর কিছুই করার থাকে না। দেশে কোনও মাদক তৈরি বা উৎপাদন হয় না।’ সবই আসে দেশের বাইরে থেকে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন বলেন, ‘যৌন হয়রানি ও মাদক মামলায় কেউ সাক্ষী দিতে আসে না বিধায় আসামিরা সহজেই জামিন পেয়ে যায়। জামিনে মুক্ত হয়ে আবার একই পেশায় জড়িয়ে যায়। তাছাড়া দীর্ঘদিন মামলা চলার পর এক সময় দেখা যায়, মামলার নথিপত্র আর খুঁজে পাওয়া যায় না।’
সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘গাঁজা, মদ, বিয়ার এগুলোতে মাদকের পরিমাণ কম। আবার ইয়াবা, এলএসডি, আইস, সীসাবার ইত্যাদি খুবই ভয়াবহ।’
তিনি বলেন, ‘মাদকের খুচরা বিক্রেতারা মাদক বিক্রি করে তাদের সংসার চালায়।’ মাদক সরবরাহকারীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘সিরিয়াস মাদকাসক্তদের মাদক না দিলে মৃত্যুবরণ করছে। কারগার বা থানা হাজতে সিরিয়াস মাদকাসক্তদের মাদক সেবন করাতে গিয়ে আরেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। মামলার বিচার কার্য্ক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত আদালত ও বিচারকের স্বল্পতা রয়েছে। এসব দীর্ঘসূত্রতার জন্য চাইলেই শতভাগ মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর হয় না। পুলিশ বিভাগ মাদকপাচার ও সরবরাহাকারীদের আটক করে আদালতে পাঠালে, সেখান থেকে খুব সহজেই জামিনে মুক্ত হয়ে যায়।’
কমিটির সভাপতি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, ‘ডোপ টেস্ট প্রথা চালুর কারণে মাদকাসক্তরা ইদানিং সতর্ক হচ্ছে। এমপি-মন্ত্রী,রাজনীতিবিদ, বিচারপতি, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক সর্বক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট চালু রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। ডোপ টেস্টের কারণে সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে সমাজের সবাই সচেতন হবেন।’
অবশ্য সভাপতি সকল শ্রেণিকে ডোপ টেস্টের আওতায় আনার প্রস্তাব করলেও তার আংশিক সুপারিশ আকারে নিয়ে আসা হয়। বৈঠকে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল সরকারি সংস্থা/দফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র-শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়মিত ডোপ টেস্টের আওতায় আনতে হবে’ বলে সুপারিশ করা হয়। সভাপতি মো. শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পীর ফজলুর রহমান, নূর মোহাম্মদ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এবং রুমানা আলী অংশগ্রহণ করেন।