ঢাকা ০৭:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মাদকাসক্ত পথশিশুরা রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে

  • আপডেট সময় : ০৫:২৬:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক: দেশের একটি মারাত্মক সমস্যা মাদক; বিশেষ করে দেশের যুবক ও কিশোররা ঝুঁকে পড়েছে মাদকের দিকে। এছাড়া মাদকের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে পথশিশুরা; বিশেষ করে নগরীর পথশিশুরা মাদকের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। অল্প দামে পাওয়া মাদকের প্রতিই এ সব পথশিশুরা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। নগরীর অলি-গলিতে প্রায় সর্বত্রই পথ শিশুদের মাদক গ্রহণ করতে দেখা যায়।
নগরীর পান্থপথ এলাকা। প্রায় প্রতি রাতেই অফিস শেষ করে এই পথ দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরেন গোলাম রসুল। আর প্রতিদিনই দেখেন দশ থেকে পনের বছর বয়সী গাঁজা সেবন করে। কোন কোন দিন আবার ড্যান্ডিও (জুতার আঠা) সেবন করে। প্রায় দিনই বিষয়টি তার নজরে আসলেও কখনো তাদের সাথে কথা হয়নি রসুলে। রাতে বাসায় গিয়ে সে ভাবে- কাল কথা বলবে। কিন্তু আর কথা বলা হয়।

কয়েকদিন আগের ঘটনা। প্রতিদিনের পথ দিয়ে যাওয়ার সময় রসুল দেখল ১০-১২ বছর বয়সী এক পথশিশু তার চেয়ে বয়সে কিছুটা বড় এক বন্ধুর সাথে বসে গাঁজা সেবন করছে। বন্ধুটি গভীর মনযোগে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কিন্তু কোন দিকেই ওই দুই গাঁজা সেবনকারীর মনযোগ নেই। কিছুক্ষণ পর রসুল তাদের কাছ থেকে যখন জানতে চাইল, তোমরা কি করছ? তখন বাচ্চা ছেলেটির ঝটপট উত্তর- ‘দেখছোনা কি করছি?’ মজা পেয়ে গেল যুবকটি। তাদের পাশেই বসে গেল কথা বলতে।

ওই পথশিশু জানাল তার নাম আদনান। আর তার বন্ধুর নাম রফিক। দু’জনই অনাথ। রাতে ফুটপাতে ঘুমায়। দিনের বেলা সে আর রফিক মিলে ডাস্টবিন ময়লা হতে প্রয়োজনীয় জিনিস কুড়ায়। আর তা বিক্রী করে স্থানীয় কয়েকটি দোকানে। সারাক্ষণ দু’জন এক সাথেই কাটায়। দিন শেষে যা উপার্জন করে তা তাদের এক নেতার কাছে জমা রাখে। তার কাছ থেকেই তারা মাদক যেমন গাঁজা অথবা ড্যান্ডি সংগ্রহ করে। মাদক সেবন শেষে ওই নেতার ডেরায় রাতে ঘুমিয়ে পড়ে।

কেন মাদক সেবন করছে জানতে চাইলে আদনান বলে আমার কোন বাবা-মা নেই। আমার জন্মের দুই বছরের মাথায় বাবা মারা যায়। পরে মা বিয়ে করে এক রিকশাওয়ালাকে। সে আমাকে নিতে চায় না। পরে মা আমাকে ওই নেতার কাছে দিয়ে দেয়। আমার এখন কিছুই করার নেই। সারাদিন ময়লা ঘেটে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে যা পাই তা ওই মামার হাতে তুলে দিই। সেই আমাকে খাবার আর গাঁজা কিনে দেয়।
রফিক বলে, এই এলাকায় শুধু আমরা নই। আরও আছে আমাদের মতো। তারাও গাঁজা, চাক্কি (ঘুমানোর ওষুধ) এবং ড্যান্ডি (জুতার আঠা) সেবন করে। রফিকের কথা শেষ না হতেই সনি নামের আরেক কিশোর বলে এসব ছাড়াও আরও বেশ কিছু মাদক যেমন নকটিন (এক ধরনের পিল), গুল পাওয়া যায়। এখানকার প্রায় সব ছেলেরাই সেসব সেবন করে। কিন্তু আমরা শুধু গাঁজা আর ড্যান্ডি সেবন করি।

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুধু আদনান বা রফিক বা সনি নয়, প্রায় সব পথশিশুই প্রকাশ্যে মাদক সেবন করছে। অধিকাংশ পথশিশুদের কাছে ড্যান্ডি বর্তমানে খুব জনপ্রিয় একটি মাদক। কারণ অল্প খরচে এবং খুব সহজে এটি পাওয়া যায়। এক বোতল ড্যান্ডির মূল্য মাত্র ৮০-৯০ টাকা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে প্রায় দশ লাখ পথশিশু রয়েছে। তাদের অর্ধেকের বয়স ১০ বছরের নিচে। আর এসব পথশিশুর মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ মাদক সেবন করে।

মাদকবিরোধী সংগঠন ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, আমাদের সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে কারন তারা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। পথশিশুরা খুব সহজেই মাদক জোগাড় করতে পারে। তাই আমাদের উচিত এ সংক্রান্ত আইনকে কাজে লাগানো। তিনি বলেন এখনই উপযুক্ত সময় মাদক বিরোধী প্রচারণা চালানোর। এখনো সময় আছে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার। এসব পথশিশুদের পুনর্বাসনে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আহ্বান জানান তিনি।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মাদকাসক্ত পথশিশুরা রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে

আপডেট সময় : ০৫:২৬:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নারী ও শিশু ডেস্ক: দেশের একটি মারাত্মক সমস্যা মাদক; বিশেষ করে দেশের যুবক ও কিশোররা ঝুঁকে পড়েছে মাদকের দিকে। এছাড়া মাদকের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে পথশিশুরা; বিশেষ করে নগরীর পথশিশুরা মাদকের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। অল্প দামে পাওয়া মাদকের প্রতিই এ সব পথশিশুরা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। নগরীর অলি-গলিতে প্রায় সর্বত্রই পথ শিশুদের মাদক গ্রহণ করতে দেখা যায়।
নগরীর পান্থপথ এলাকা। প্রায় প্রতি রাতেই অফিস শেষ করে এই পথ দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরেন গোলাম রসুল। আর প্রতিদিনই দেখেন দশ থেকে পনের বছর বয়সী গাঁজা সেবন করে। কোন কোন দিন আবার ড্যান্ডিও (জুতার আঠা) সেবন করে। প্রায় দিনই বিষয়টি তার নজরে আসলেও কখনো তাদের সাথে কথা হয়নি রসুলে। রাতে বাসায় গিয়ে সে ভাবে- কাল কথা বলবে। কিন্তু আর কথা বলা হয়।

কয়েকদিন আগের ঘটনা। প্রতিদিনের পথ দিয়ে যাওয়ার সময় রসুল দেখল ১০-১২ বছর বয়সী এক পথশিশু তার চেয়ে বয়সে কিছুটা বড় এক বন্ধুর সাথে বসে গাঁজা সেবন করছে। বন্ধুটি গভীর মনযোগে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কিন্তু কোন দিকেই ওই দুই গাঁজা সেবনকারীর মনযোগ নেই। কিছুক্ষণ পর রসুল তাদের কাছ থেকে যখন জানতে চাইল, তোমরা কি করছ? তখন বাচ্চা ছেলেটির ঝটপট উত্তর- ‘দেখছোনা কি করছি?’ মজা পেয়ে গেল যুবকটি। তাদের পাশেই বসে গেল কথা বলতে।

ওই পথশিশু জানাল তার নাম আদনান। আর তার বন্ধুর নাম রফিক। দু’জনই অনাথ। রাতে ফুটপাতে ঘুমায়। দিনের বেলা সে আর রফিক মিলে ডাস্টবিন ময়লা হতে প্রয়োজনীয় জিনিস কুড়ায়। আর তা বিক্রী করে স্থানীয় কয়েকটি দোকানে। সারাক্ষণ দু’জন এক সাথেই কাটায়। দিন শেষে যা উপার্জন করে তা তাদের এক নেতার কাছে জমা রাখে। তার কাছ থেকেই তারা মাদক যেমন গাঁজা অথবা ড্যান্ডি সংগ্রহ করে। মাদক সেবন শেষে ওই নেতার ডেরায় রাতে ঘুমিয়ে পড়ে।

কেন মাদক সেবন করছে জানতে চাইলে আদনান বলে আমার কোন বাবা-মা নেই। আমার জন্মের দুই বছরের মাথায় বাবা মারা যায়। পরে মা বিয়ে করে এক রিকশাওয়ালাকে। সে আমাকে নিতে চায় না। পরে মা আমাকে ওই নেতার কাছে দিয়ে দেয়। আমার এখন কিছুই করার নেই। সারাদিন ময়লা ঘেটে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে যা পাই তা ওই মামার হাতে তুলে দিই। সেই আমাকে খাবার আর গাঁজা কিনে দেয়।
রফিক বলে, এই এলাকায় শুধু আমরা নই। আরও আছে আমাদের মতো। তারাও গাঁজা, চাক্কি (ঘুমানোর ওষুধ) এবং ড্যান্ডি (জুতার আঠা) সেবন করে। রফিকের কথা শেষ না হতেই সনি নামের আরেক কিশোর বলে এসব ছাড়াও আরও বেশ কিছু মাদক যেমন নকটিন (এক ধরনের পিল), গুল পাওয়া যায়। এখানকার প্রায় সব ছেলেরাই সেসব সেবন করে। কিন্তু আমরা শুধু গাঁজা আর ড্যান্ডি সেবন করি।

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুধু আদনান বা রফিক বা সনি নয়, প্রায় সব পথশিশুই প্রকাশ্যে মাদক সেবন করছে। অধিকাংশ পথশিশুদের কাছে ড্যান্ডি বর্তমানে খুব জনপ্রিয় একটি মাদক। কারণ অল্প খরচে এবং খুব সহজে এটি পাওয়া যায়। এক বোতল ড্যান্ডির মূল্য মাত্র ৮০-৯০ টাকা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে প্রায় দশ লাখ পথশিশু রয়েছে। তাদের অর্ধেকের বয়স ১০ বছরের নিচে। আর এসব পথশিশুর মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ মাদক সেবন করে।

মাদকবিরোধী সংগঠন ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, আমাদের সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে কারন তারা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। পথশিশুরা খুব সহজেই মাদক জোগাড় করতে পারে। তাই আমাদের উচিত এ সংক্রান্ত আইনকে কাজে লাগানো। তিনি বলেন এখনই উপযুক্ত সময় মাদক বিরোধী প্রচারণা চালানোর। এখনো সময় আছে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার। এসব পথশিশুদের পুনর্বাসনে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আহ্বান জানান তিনি।