ঢাকা ০৭:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মাদকাসক্ত পথশিশুদের দায় কার?

  • আপডেট সময় : ১০:৩১:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১০৫ বার পড়া হয়েছে

রায়হানা রহমান : অফিসে আসা-যাওয়ার পথে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচের ফুটপাত ধরে হাঁটতে প্রায় প্রতিদিনই বেশ কয়েকটি শিশুর জটলা দেখি। এদের সবার বয়স ৭-১৪ বছরের মধ্যে। একসাথে গোল হয়ে বসে থাকে। প্রত্যেকের মুখে পলিথিন। সেই পলিথিন মুখে লাগিয়ে ওরা জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিচ্ছে। আসলে ওরা ড্যান্ডি নামক একধরনের মাদক গ্রহণ করে। আমি সামনে এগিয়ে ওদের সামনে দাঁড়াতেই জটলা ভেঙে যায়। প্রশ্ন করি, কী করছো তোমরা? আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সবাই চলে যায়, সাত-আট বছরের একজন থেকে যায়। বলে ড্যান্ডি খাই। জিজ্ঞেস করি, এটা কী? বললো এটা খাইলে খিদা লাগে না। প্রশ্ন করি- মা-বাবা কই? উত্তর আসে- বাবা কই জানে না। মা সিগন্যালে ভিক্ষা করে।

রাজধানী ঢাকায় চলতে গেলে এটাই এখন প্রায় নিয়মিত দৃশ্য- কয়েকজন শিশুর মাদক গ্রহণ। ওরা যে মাদক গ্রহণ করে সেটার নাম ড্যান্ডি। এটা মূলত একধরনের আঠা। এই আঠা সাধারণত জুতা মেরামতের কাজে ব্যবহৃত হয়। অত্যন্ত সহজলভ্য হওয়ায় এবং মোটামুটি সব এলাকায় এর প্রাপ্যতা সহজ হওয়ায় এইসব পথশিশুরা খুব প্রকটভাবে এই আঠা বা ড্যান্ডি নেশার আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।পলিথিন ব্যাগে এই আঠা নিয়ে কিছুক্ষণ ঝাকিয়ে নাকমুখ দিয়ে বাতাস টেনে নিলেই নেশাগ্রস্ত হওয়া যায়। এই নেশার মূল কারণ হয়তো ক্ষুধা কমানো। এই নেশা গ্রহণ করলে বেশ অনেকটা সময় ক্ষুধার অনুভূতি থাকে না। আর তাই এই ছোট ছোট শিশুরা এই নেশার ফাঁদে পড়ে তলিয়ে যাচ্ছে। কে বা কারা প্রথম এই নেশার আমন্ত্রণ জানায় তাদের এটা অজানা। একজন পথশিশু আরেক পথশিশুর কাছ থেকে এই নেশার আমন্ত্রণ পায়। তারপর ধীরে ধীরে তলিয়ে যায় সব ভুলে থাকার রাজ্যে।

ওদের আরো কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল, প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকা জোগাড় করতে পারলেই ড্যান্ডির জোগাড় হয়ে যায়। ভিক্ষা করে, মাল টেনে বা প্লাস্টিক কুড়িয়ে এই টাকা জোগাড় করে ওরা। তারপরই ড্যান্ডি খায়। এতে আর খাবারের চিন্তা করতে হয় না। প্রতিদিন খাবারের টাকা জোগাড় করার থেকে নেশার টাকা জোগাড় করাই ওদের কাছে সহজ।

এই শিশুরাই কয়েকদিন পর একটু বড় হয়ে, গাজা, হেরোইন, ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়ে। নেশার টাকা জোগাড়ে ছিনতাই-রাহাজানিতে জড়ায়। প্রশ্ন হলো- এর শেষ কোথায়? কে এই শিশুদের পথ দেখাবে? আমরা সাধারণ মানুষ যারা আছি আসা-যাওয়ার পথে এই দৃশ্য দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে নিজেই অসুস্থ হয়ে যাই। ভাবি, ধীরে ধীরে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এক অন্ধকার সমাজের দিকে।

ইউনিসেফের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৮ জন পথশিশু রয়েছে। কেবল ঢাকা শহরে রয়েছে ৭ লাখ পথশিশু। চলতি বছর শেষে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৪ জনে। আর ২০২৪ সাল নাগাদ সংখ্যাটা হবে ১৬ লাখ ১৫ হাজার ৩৩০। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ঢাকায় মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে। এই শিশুদের বেশির ভাগ পথশিশু। আর মাদকাসক্ত ৮০ শতাংশ পথশিশু মাত্র সাত বছরের মধ্যে অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের গবেষণা বলছে, পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই কোনো-না-কোনোভাবে মাদকাসক্ত। ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি মাদকের স্পট আছে। এসব স্পটে ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা মাদক সেবন করে। এবার আসি,সরকারের পরিকল্পনায়। প্রতিবছরের বাজেটে সরকারের একটি নির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকে পথশিশুদের নিয়ে। আছে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রও। কিন্তু পথশিশুদের ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। তারা রয়ে যায় পথের ধারেই। নেশার ধূম্রজালে হারিয়ে ফেলে শৈশব, কৈশোর।

শিশুদের পুনর্বাসনে বিভিন্ন খরচে হচ্ছে অনিয়ম-দুর্নীতি। এই অনিয়ম আর দুর্নীতি যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সরকারের বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন ও দেখভালের অভাবে এসব শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধ ও শিশুশ্রমে; যা সমাজের জন্য অশনিসংকেত।

উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অচিরেই পৌঁছবে বাংলাদেশ। কিন্তু পথশিশুদের এই দুর্ভোগ বা দুর্ভাগ্য যাই বলি না কেন সেটার সমাধান না হলে সেই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছানো কতটা যুক্তিযুক্ত। যেখানে শিশুরাই ভবিষ্যৎ, সেখানে এই শিশুরা দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে মাদকের অতল গহ্বরে।

প্রতি বছরই এসব শিশুদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে এনে সুস্থ সুন্দর জীবনের লক্ষ্যে সরকারের বাজেটে থাকে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প। তবে এসব প্রকল্পে কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে তা বোঝা যায় পথে এসব শিশুদের চিত্র দেখেই। মাদকাসক্ত এসব শিশুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এদের বেশিরভাগেরই মা-বাবা কোথায় কেউ জানে না। হয়তো অবাঞ্ছিত হয়েই তাদের জন্ম। রেলস্টেশন বা ফুটপাতে আনাচে কানাচে এটো-ময়লা খেয়েই তাদের বেড়ে ওঠা। তারপর এক সময় মাদকের এই ভয়ঙ্কর নেশা। এই শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য এখনই সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সাথে সাথে এগিয়ে আসতে হবে সমাজের উচ্চবিত্তদের।

এছাড়াও এদেশে বহু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও কাজ করছে শিশুদের নিয়ে। তাদের এই কাজ কেন এই ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসন করছে না? শুধু পুনর্বাসনই নয়, প্রয়োজন এই মাদকের বিস্তার রোধ। যারা এই মাদককে খুব সূক্ষ্ম কৌশলে সমাজের এই ছিন্নমূল শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত প্রয়োজন।

মাদকাসক্ত ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলে এবং মেয়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচ- ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দারিদ্র্য ও সামাজিক অবক্ষয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবহেলা, এমনকি নগরীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা মাদকের আস্তানা দিন দিন পথশিশুদের নিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে।
মাদকের ভয়াল পাঁকে হারিয়ে যাওয়া এই পথশিশুদের দায় স্বীকার করে সরকারের প্রয়োজনীয় প্রকল্পের মাধ্যমে খুব দ্রুতই যদি এদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে না আনা যায়, তবে তা পুরো দেশের জন্যই অশনিসংকেত।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

লক্ষ্মীপুরে যাত্রীবাহী বাস খালে পড়ে নিহত ৫

মাদকাসক্ত পথশিশুদের দায় কার?

আপডেট সময় : ১০:৩১:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২১

রায়হানা রহমান : অফিসে আসা-যাওয়ার পথে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচের ফুটপাত ধরে হাঁটতে প্রায় প্রতিদিনই বেশ কয়েকটি শিশুর জটলা দেখি। এদের সবার বয়স ৭-১৪ বছরের মধ্যে। একসাথে গোল হয়ে বসে থাকে। প্রত্যেকের মুখে পলিথিন। সেই পলিথিন মুখে লাগিয়ে ওরা জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিচ্ছে। আসলে ওরা ড্যান্ডি নামক একধরনের মাদক গ্রহণ করে। আমি সামনে এগিয়ে ওদের সামনে দাঁড়াতেই জটলা ভেঙে যায়। প্রশ্ন করি, কী করছো তোমরা? আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সবাই চলে যায়, সাত-আট বছরের একজন থেকে যায়। বলে ড্যান্ডি খাই। জিজ্ঞেস করি, এটা কী? বললো এটা খাইলে খিদা লাগে না। প্রশ্ন করি- মা-বাবা কই? উত্তর আসে- বাবা কই জানে না। মা সিগন্যালে ভিক্ষা করে।

রাজধানী ঢাকায় চলতে গেলে এটাই এখন প্রায় নিয়মিত দৃশ্য- কয়েকজন শিশুর মাদক গ্রহণ। ওরা যে মাদক গ্রহণ করে সেটার নাম ড্যান্ডি। এটা মূলত একধরনের আঠা। এই আঠা সাধারণত জুতা মেরামতের কাজে ব্যবহৃত হয়। অত্যন্ত সহজলভ্য হওয়ায় এবং মোটামুটি সব এলাকায় এর প্রাপ্যতা সহজ হওয়ায় এইসব পথশিশুরা খুব প্রকটভাবে এই আঠা বা ড্যান্ডি নেশার আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।পলিথিন ব্যাগে এই আঠা নিয়ে কিছুক্ষণ ঝাকিয়ে নাকমুখ দিয়ে বাতাস টেনে নিলেই নেশাগ্রস্ত হওয়া যায়। এই নেশার মূল কারণ হয়তো ক্ষুধা কমানো। এই নেশা গ্রহণ করলে বেশ অনেকটা সময় ক্ষুধার অনুভূতি থাকে না। আর তাই এই ছোট ছোট শিশুরা এই নেশার ফাঁদে পড়ে তলিয়ে যাচ্ছে। কে বা কারা প্রথম এই নেশার আমন্ত্রণ জানায় তাদের এটা অজানা। একজন পথশিশু আরেক পথশিশুর কাছ থেকে এই নেশার আমন্ত্রণ পায়। তারপর ধীরে ধীরে তলিয়ে যায় সব ভুলে থাকার রাজ্যে।

ওদের আরো কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল, প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকা জোগাড় করতে পারলেই ড্যান্ডির জোগাড় হয়ে যায়। ভিক্ষা করে, মাল টেনে বা প্লাস্টিক কুড়িয়ে এই টাকা জোগাড় করে ওরা। তারপরই ড্যান্ডি খায়। এতে আর খাবারের চিন্তা করতে হয় না। প্রতিদিন খাবারের টাকা জোগাড় করার থেকে নেশার টাকা জোগাড় করাই ওদের কাছে সহজ।

এই শিশুরাই কয়েকদিন পর একটু বড় হয়ে, গাজা, হেরোইন, ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়ে। নেশার টাকা জোগাড়ে ছিনতাই-রাহাজানিতে জড়ায়। প্রশ্ন হলো- এর শেষ কোথায়? কে এই শিশুদের পথ দেখাবে? আমরা সাধারণ মানুষ যারা আছি আসা-যাওয়ার পথে এই দৃশ্য দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে নিজেই অসুস্থ হয়ে যাই। ভাবি, ধীরে ধীরে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এক অন্ধকার সমাজের দিকে।

ইউনিসেফের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৮ জন পথশিশু রয়েছে। কেবল ঢাকা শহরে রয়েছে ৭ লাখ পথশিশু। চলতি বছর শেষে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৪ জনে। আর ২০২৪ সাল নাগাদ সংখ্যাটা হবে ১৬ লাখ ১৫ হাজার ৩৩০। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ঢাকায় মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে। এই শিশুদের বেশির ভাগ পথশিশু। আর মাদকাসক্ত ৮০ শতাংশ পথশিশু মাত্র সাত বছরের মধ্যে অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের গবেষণা বলছে, পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই কোনো-না-কোনোভাবে মাদকাসক্ত। ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি মাদকের স্পট আছে। এসব স্পটে ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা মাদক সেবন করে। এবার আসি,সরকারের পরিকল্পনায়। প্রতিবছরের বাজেটে সরকারের একটি নির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকে পথশিশুদের নিয়ে। আছে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রও। কিন্তু পথশিশুদের ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। তারা রয়ে যায় পথের ধারেই। নেশার ধূম্রজালে হারিয়ে ফেলে শৈশব, কৈশোর।

শিশুদের পুনর্বাসনে বিভিন্ন খরচে হচ্ছে অনিয়ম-দুর্নীতি। এই অনিয়ম আর দুর্নীতি যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সরকারের বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন ও দেখভালের অভাবে এসব শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধ ও শিশুশ্রমে; যা সমাজের জন্য অশনিসংকেত।

উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অচিরেই পৌঁছবে বাংলাদেশ। কিন্তু পথশিশুদের এই দুর্ভোগ বা দুর্ভাগ্য যাই বলি না কেন সেটার সমাধান না হলে সেই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছানো কতটা যুক্তিযুক্ত। যেখানে শিশুরাই ভবিষ্যৎ, সেখানে এই শিশুরা দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে মাদকের অতল গহ্বরে।

প্রতি বছরই এসব শিশুদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে এনে সুস্থ সুন্দর জীবনের লক্ষ্যে সরকারের বাজেটে থাকে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প। তবে এসব প্রকল্পে কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে তা বোঝা যায় পথে এসব শিশুদের চিত্র দেখেই। মাদকাসক্ত এসব শিশুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এদের বেশিরভাগেরই মা-বাবা কোথায় কেউ জানে না। হয়তো অবাঞ্ছিত হয়েই তাদের জন্ম। রেলস্টেশন বা ফুটপাতে আনাচে কানাচে এটো-ময়লা খেয়েই তাদের বেড়ে ওঠা। তারপর এক সময় মাদকের এই ভয়ঙ্কর নেশা। এই শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য এখনই সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সাথে সাথে এগিয়ে আসতে হবে সমাজের উচ্চবিত্তদের।

এছাড়াও এদেশে বহু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও কাজ করছে শিশুদের নিয়ে। তাদের এই কাজ কেন এই ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসন করছে না? শুধু পুনর্বাসনই নয়, প্রয়োজন এই মাদকের বিস্তার রোধ। যারা এই মাদককে খুব সূক্ষ্ম কৌশলে সমাজের এই ছিন্নমূল শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত প্রয়োজন।

মাদকাসক্ত ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলে এবং মেয়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচ- ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দারিদ্র্য ও সামাজিক অবক্ষয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবহেলা, এমনকি নগরীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা মাদকের আস্তানা দিন দিন পথশিশুদের নিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে।
মাদকের ভয়াল পাঁকে হারিয়ে যাওয়া এই পথশিশুদের দায় স্বীকার করে সরকারের প্রয়োজনীয় প্রকল্পের মাধ্যমে খুব দ্রুতই যদি এদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে না আনা যায়, তবে তা পুরো দেশের জন্যই অশনিসংকেত।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।