ঢাকা ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মাটির নিচে লিলিপুটের রহস্যময় গ্রাম

  • আপডেট সময় : ০১:৪৫:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২১
  • ১০৫ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : মাটির নিচে বামনদের বাস। নিজেদের এক স্বর্গরাজ্য তৈরি করে বামনরা নিজেদের অস্তিত্ব গড়েছে সেখানে। বছরের পর বছর ধরে মাটির নিচে বসবাস, থাকা, খাওয়া সবই করছেন তারা। জানলে অবাক হবেন, বামনদের এই রহস্যময় গ্রামটি প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরোনো।
ইরানের পূর্ব খোরাসান প্রদেশের প্রাচীন এই গ্রামের নাম মাখুনিক। এই গ্রামটি লিলিপুটদের গ্রাম হিসেবেই পরিচিত। এই গ্রামের সব ঘরগুলোই মাটির তৈরি। এসব ঘরের আকৃতি ও স্থাপত্য আপনার নজর কাড়বে। বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যতম গ্রামের মধ্যে এটি অন্যতম।
এ কারণেই পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় এক স্থান হলো এই মাখুনিক গ্রাম। লিলিপুটদের শহর ও তাদের জীবন ব্যবস্থা দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ সেখানে ভিড় জমান। জানা যায়, সেখানকার বাসিন্দারা আফগানিস্তানের নাগরিক। কয়েকশ’ বছর আগে তারা মাখুনিক গ্রামে বসবাস শুরু করেন।
এ গ্রামের বাসিন্দাদের উচ্চতা সর্বোচ্চ ৫০ সেন্টিমিটার বা ১ ফুট ৭ ইঞ্চি। বিশেষজ্ঞরা জানান, বামন বাসিন্দাদের মুষ্টিমেয় এখনও সেখানে বসবাস করে। তারা নিজেদের মধ্যে বিবাহ, অপুষ্টিসহ পারদ মেশানো পানি পান করার ফলে পুরো গ্রামের বাসিন্দারাই বামন আকৃতির হয়েছেন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মাখুনিক গ্রামটি তার স্থাপত্যের জন্যও বেশ পরিচিত। সেখানকার বাসিন্দারা নব্যপ্রস্তরযুগের স্থাপত্যশৈলীর ভিত্তিতে ঘরগুলো নির্মাণ করে। এসব ঘরগুলো এমনভাবে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় যা, দূর থেকে দেখলে পাহাড় বা টিলার মতো দেখায়।
এসব ঘরগুলোর প্রাচীর ও দরজাগুলো খুবই ক্ষুদ্র আকৃতির। এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘরগুলো পাহাড়ের ঢালে একটার পর একটা নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরগুলো দেখতে অনেকটা গুহার মতো। এগুলো পাথর ও মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয়। ঘরের ছাদ ঢাকা হয় ঝোপঝাড় দিয়ে। ঘরের দরজাগুলোও বেশ ছোট ছোট।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগেও ওই গ্রামের বাসিন্দাদের ঘরে একটি টিভিও নেই। তাদের বিশ্বাস টিভি রাখা শয়তানের কাজ। গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশই গবাদিপশু পালন ও কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাদের কেউ কেউ গ্রামের কাছে একটি খনিতে কাজ করে।
এমনকি এ গ্রামের কেউই ধূমপান করেন না। এখানে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের অধিকাংশই গম, রসুন, শালগম, বিটরুট, গাজর, টমেটো, পেঁয়াজ ও জাফরান। গ্রামের বাসিন্দারা ফারসিতে স্থানীয় বিশেষ বাচনভঙ্গিতে কথা বলেন।
প্রায় একশ বছর আগে মানুষ এই গ্রামটির অস্তিত্ব খুঁজে পায়। গ্রামটিতে বর্তমানে পানি, বিদ্যুৎ, একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি প্রাথমিক স্কুল, একটি বাথরুম রয়েছে। সেই সঙ্গে মুদি দোকান, কসাইখানা ও বেকারিসহ কয়েকটি দোকান আছে।
২০০৫ সালে এই গ্রামে গবেষকরা ২৫ সেন্টিমিটার বা সাড়ে ৯ ইঞ্চি উচ্চতার একটি মমি খুঁজে পান। তারপর থেকে তারা বিশ্বাস করেন, মাখুনিকসহ আশেপাশের গ্রামে একসময় বেটে মানুষদের বসবাস ছিল। প্রতœতত্ত্ববিদরা এই গ্রাম নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। বাড়িগুলোর আকার-আকৃতিই বলে দেয় যে, সেখানকার মানুষ ছোট আকৃতির ছিল।
এই গ্রামে বর্তমানে ৭০০ বামন বাসিন্দা বাস করেন। তারা অবশ্য তাদের পূর্বপুরুষদের মতো অতটা খাটো নয়। তবে তাদের বাড়িগুলো পূর্বপুরুষদের মতোই। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে প্রাচীন নকশার ছোট উচ্চতার বাড়িতে তারা অবস্থান করেন।
১৯৪৬ সালে গ্রামটির অস্তিত্ব আবিষ্কার হয়। ধীরে ধীরে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে রাস্তাও তৈরি হয়। বাইরে থেকে যানবাহনের যাতায়াত শুরু করে। মানুষের জীবনযাত্রাও কিছুটা পাল্টাতে থাকে। তারপরও এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা সহজ নয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পরিবারভিত্তিক ব্যবসা

মাটির নিচে লিলিপুটের রহস্যময় গ্রাম

আপডেট সময় : ০১:৪৫:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : মাটির নিচে বামনদের বাস। নিজেদের এক স্বর্গরাজ্য তৈরি করে বামনরা নিজেদের অস্তিত্ব গড়েছে সেখানে। বছরের পর বছর ধরে মাটির নিচে বসবাস, থাকা, খাওয়া সবই করছেন তারা। জানলে অবাক হবেন, বামনদের এই রহস্যময় গ্রামটি প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরোনো।
ইরানের পূর্ব খোরাসান প্রদেশের প্রাচীন এই গ্রামের নাম মাখুনিক। এই গ্রামটি লিলিপুটদের গ্রাম হিসেবেই পরিচিত। এই গ্রামের সব ঘরগুলোই মাটির তৈরি। এসব ঘরের আকৃতি ও স্থাপত্য আপনার নজর কাড়বে। বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যতম গ্রামের মধ্যে এটি অন্যতম।
এ কারণেই পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় এক স্থান হলো এই মাখুনিক গ্রাম। লিলিপুটদের শহর ও তাদের জীবন ব্যবস্থা দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ সেখানে ভিড় জমান। জানা যায়, সেখানকার বাসিন্দারা আফগানিস্তানের নাগরিক। কয়েকশ’ বছর আগে তারা মাখুনিক গ্রামে বসবাস শুরু করেন।
এ গ্রামের বাসিন্দাদের উচ্চতা সর্বোচ্চ ৫০ সেন্টিমিটার বা ১ ফুট ৭ ইঞ্চি। বিশেষজ্ঞরা জানান, বামন বাসিন্দাদের মুষ্টিমেয় এখনও সেখানে বসবাস করে। তারা নিজেদের মধ্যে বিবাহ, অপুষ্টিসহ পারদ মেশানো পানি পান করার ফলে পুরো গ্রামের বাসিন্দারাই বামন আকৃতির হয়েছেন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মাখুনিক গ্রামটি তার স্থাপত্যের জন্যও বেশ পরিচিত। সেখানকার বাসিন্দারা নব্যপ্রস্তরযুগের স্থাপত্যশৈলীর ভিত্তিতে ঘরগুলো নির্মাণ করে। এসব ঘরগুলো এমনভাবে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয় যা, দূর থেকে দেখলে পাহাড় বা টিলার মতো দেখায়।
এসব ঘরগুলোর প্রাচীর ও দরজাগুলো খুবই ক্ষুদ্র আকৃতির। এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘরগুলো পাহাড়ের ঢালে একটার পর একটা নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরগুলো দেখতে অনেকটা গুহার মতো। এগুলো পাথর ও মাটি দিয়ে নির্মাণ করা হয়। ঘরের ছাদ ঢাকা হয় ঝোপঝাড় দিয়ে। ঘরের দরজাগুলোও বেশ ছোট ছোট।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগেও ওই গ্রামের বাসিন্দাদের ঘরে একটি টিভিও নেই। তাদের বিশ্বাস টিভি রাখা শয়তানের কাজ। গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশই গবাদিপশু পালন ও কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাদের কেউ কেউ গ্রামের কাছে একটি খনিতে কাজ করে।
এমনকি এ গ্রামের কেউই ধূমপান করেন না। এখানে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের অধিকাংশই গম, রসুন, শালগম, বিটরুট, গাজর, টমেটো, পেঁয়াজ ও জাফরান। গ্রামের বাসিন্দারা ফারসিতে স্থানীয় বিশেষ বাচনভঙ্গিতে কথা বলেন।
প্রায় একশ বছর আগে মানুষ এই গ্রামটির অস্তিত্ব খুঁজে পায়। গ্রামটিতে বর্তমানে পানি, বিদ্যুৎ, একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি প্রাথমিক স্কুল, একটি বাথরুম রয়েছে। সেই সঙ্গে মুদি দোকান, কসাইখানা ও বেকারিসহ কয়েকটি দোকান আছে।
২০০৫ সালে এই গ্রামে গবেষকরা ২৫ সেন্টিমিটার বা সাড়ে ৯ ইঞ্চি উচ্চতার একটি মমি খুঁজে পান। তারপর থেকে তারা বিশ্বাস করেন, মাখুনিকসহ আশেপাশের গ্রামে একসময় বেটে মানুষদের বসবাস ছিল। প্রতœতত্ত্ববিদরা এই গ্রাম নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। বাড়িগুলোর আকার-আকৃতিই বলে দেয় যে, সেখানকার মানুষ ছোট আকৃতির ছিল।
এই গ্রামে বর্তমানে ৭০০ বামন বাসিন্দা বাস করেন। তারা অবশ্য তাদের পূর্বপুরুষদের মতো অতটা খাটো নয়। তবে তাদের বাড়িগুলো পূর্বপুরুষদের মতোই। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে প্রাচীন নকশার ছোট উচ্চতার বাড়িতে তারা অবস্থান করেন।
১৯৪৬ সালে গ্রামটির অস্তিত্ব আবিষ্কার হয়। ধীরে ধীরে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে রাস্তাও তৈরি হয়। বাইরে থেকে যানবাহনের যাতায়াত শুরু করে। মানুষের জীবনযাত্রাও কিছুটা পাল্টাতে থাকে। তারপরও এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা সহজ নয়।