মহানগর প্রতিবেদন : রাজধানীর বিভিন্ন বাজার, স্টেশন, পয়েন্ট, পাড়া-মহল্লায় প্লাস্টিকের বস্তার ওপর রং, কালিসহ জুতা সেলাই করার যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে বসে থাকেন চর্মকার বা জুতা-সেন্ডেল সেলাই ও পলিশের কাজ করা কিছু লোকজন। তারা মুচি সম্প্রদায়ের। ছেঁড়া জুতাকে মেরামতসহ কালি দিয়ে চলার উপযোগী করে দিলেও তাদের নেই ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন। পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনোরকম চলছে তাদের জীবন।
এদেরই একজন গুলিস্তানে ফুটপাতের ভাসমান দোকানি কমল দাস। অনেক ইচ্ছা থাকলেও অর্থাভাবে বাবা-মায়ের স্বপ্ন ভঙ্গ আর লেখাপড়া করতে না পারার বিষয়টা বেশ দুঃখের সঙ্গেই বলছিলেন তিনি। কমল দাস বলেন, জন্মের পর থেকে যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই দেখে আসছি বাবাসহ আমাদের পরিবারের অনেকেই জুতা সেলাই করে সংসার চালান। বাবা-মা চেয়েছিলেন পড়াশোনা করে আমি বড় কিছু হবে। কিন্তু টাকার অভাবে পড়াশোনাটা আর হয়নি। এ ব্যাপারে কারও সহযোগিতাও পাইনি। ফলে বংশের অন্যদের মতো আমিও জুতা সেলাইয়ের কাজেই জড়িয়ে পড়েছি। দিন এনে দিন খেয়ে কোনোমতে চলছে জীবন।
শুধু কমল দাসই নয়, আরও অনেক মুচির জীবনও তার মতোই। তাদের কাররই এখন জুতা সেলাই করে সংসার চলে না। কারণ আগের মতো মানুষ জুতায় কালি দেয় না। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এখন অফিস আদালত করেন যারা, তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেই কালি আর ফোমের ব্রাশ কিনে নেন। তারা নিজে নিজেই কালি করে বের হোন প্রতিদিন। ফলে মুচির কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না তাদের।
কাকরাইলে প্রতিদিন বসেন মুচি সম্প্রদায়ের রামু রবিদাস। তিনি জানান, প্রতিদিন কোনোরকম দুমুঠো ডাল-ভাত খাওয়ার জন্য রাস্তায় বসে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বন্ধের দিন প্রায় সময় নিজে উপোস থেকে পরিবারের সবার ক্ষুধা নিবারণে ব্যস্ত থাকেন তিনি। আরেক মুচি শংকর রবিদাস বলেন, আমি রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বসি। আমি খুব কষ্টে আছি, আমার বউ, ছেলে-মেয়েসহ সংসারে ৮ জন লোক রয়েছে। এদের চলার খরচ, খাবারের খরচ দিয়ে দিনশেষে আমার হাত থাকে শূন্য। মুচি বিমল রবি দাস বলেন, আয় কম ব্যয় বেশি। জুতা সেলাই করে সংসার চলে না। আগের মতো মানুষ জুতায় কালি দেয় না। এখন যেটুকু কাজ পাই তাতে প্রতিদিন ১৫০/২০০ টাকা আয় হয়। এতে সংসার চলে না। আগের মতো জুতা সেলাই করে আর চলে না। সব মানুষ ছেঁড়া জুতা সেলাইও করে না। আয় কমে যাওয়ায় সম্প্রদায়ের অনেকেই এখন জুতা সেলাই ছেড়ে অন্য কাজকর্ম শুরু করছেন বলে জানান মুচিরা। জীবন-সংসারে বেঁচে থাকতে বংশ পরম্পরার এ কাজ ছেড়ে দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় বলে জানান নিখিল দাসরা।
মাঝে মাঝেই উপোস থাকতে হয়, পেশা ছাড়ছেন তারা
ট্যাগস :
মাঝে মাঝেই উপোস থাকতে হয়
জনপ্রিয় সংবাদ