ভোলা সংবাদদাতা: ‘বাবা বলেছে, সাগর থেকে এসে পূজার নতুন জামা কিনে দিবে। পূজার বাকি আর কয়দিন, বাবা এখনো আসেনি। বাবা যদি পূজায় না আসে, তাহলেতো নতুন জামা কিনতে পারবো না। আর পূজায় ঘুরতেও বের হতে পারবো না।’ এ কথাগুলো বলেই কেঁদে ফেলে প্রিয়াংকা দাস।
প্রিয়াংকা দাস ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে রাজিব চন্দ্র দাসের মেয়ে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।
প্রিয়াংকার বাবা রাজিব চন্দ্রসহ ১৯ জেলে গত ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে ভোলা সদরের দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের শান্তিরহাট খাল এলাকা থেকে সফিজল ব্যাপারী মাঝির নেতৃত্বে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যান। কথা ছিল ৭ দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু যাওয়ার কয়েকদিন পরই বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের শিফিংবোটের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এতে তারা দিক হারিয়ে ভারত সীমান্তে ঢুকে পড়েন। ওইসময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ফিশিংবোটসহ ১৯ জেলেকে আটক করে কোস্টাল থানা পুলিশের কাছে তুলে দেয়। বর্তমানে তারা সবাই ভারতের কারাগারে রয়েছেন। ভারতের কারাগারে বন্দি ১৯ জেলেই ভোলা সদর উপজেলার দিঘলদী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।
জেলে রাজীব চন্দ্র দাসের স্ত্রী কল্পনা রানী দাস জানান, তার স্বামীর নিজস্ব কোনো জমি-জমা নেই। বেড়ি বাঁধের পাশে অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকেন। তাদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে প্রিয়াংকা স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে ও ছোট মেয়ে ৫ বছরের পায়েল এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি।
তিনি জানান, তার স্বামীর কোনো অর্থ-সম্পদ নেই। জেলের কাজ করেন এবং মাছ ধরা বন্ধ থাকলে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। অনেক কষ্টে তাদের সংসার চলে। বেশ কয়েক মাস আগে ঋণ নিয়ে বসতঘর মেরামত করেছেন। ওই এনজিওর দেনাও রয়েছেন। স্বামী ভারতের কারাগারে বন্দি, এতে তাদের আয় রোজগার বন্ধ।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, কবে স্বামী ফিরবে জানি না। কীভাবে সংসার চলবে তাও জানি না। মেয়েরা প্রতিদিন জিজ্ঞাসা করে কবে তাদের বাবা ফিরবে? কবে তাদের জন্য পূজার নতুন জামা কিনবে? সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আমার স্বামীসহ সব জেলেকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসুক।
ফিশিংবোটের মালিক সফিজল ব্যাপারী মাঝির স্ত্রী মিনারা বেগম জানান, তার স্বামী অনেক ধার-দেনা করে এই বোটটি করেছেন। বর্তমানে তার কয়েক লাখ টাকা দেনা রয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে তার স্বামীর নেতৃত্বে মোট ১৯ জেলে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে যান। ৭ দিনের মধ্যেই ফিরে আসার কথা ছিলো। তাদের সঙ্গে অন্যান্য বোটের জেলেরা ফিরে এলেও তারা ফিরে না আসায় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্বামীকে ফোন দিতে থাকেন তিনি। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করেনি। ৩-৪ দিন আগে তারা ফেসবুকের একটি ভিডিও থেকে জানতে পারেন ঝড়ের কবলে পড়ে ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভারতে চলে যায়। এরপর বিএসএফ ১৯ জেলেকে আটক করে। বর্তমানে তারা সবাই ভারতের কারাগারে রয়েছেন।
তিনি আরো জানান, তার স্বামীসহ বন্দি সব জেলেই অত্যন্ত গরিব। তারা দ্রুত ফিরে না এলে পরিবারকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে। দেনা পরিশোধ নিয়েও চিন্তিত রয়েছেন তারা।
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ভারতের কাকদ্বীপ নামে একটি পোর্টাল থেকে জানতে পেরেছি ওই জেলেদের আটক করে কোস্টাল থানা পুলিশের কাছে তুলে দেয় বিএসএফ। আমরা জেলেদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। জেলেদের পরিবার ভোলা মডেল থানায় একটি জিডি করেছে। আমরা জেলেদের মুক্তির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠাবো। পরে মন্ত্রণালয় থেকে ভারতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করবে।
তিনি আরো জানান, বিষয়টি শোনার পর আপাতত ভারতে বন্দি ১৯ জেলের পরিবারের মাঝে ৩০ কেজি করে চাল দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তীতেও তাদের পাশে আমরা থাকবো।
এসি/আপ্র/২৫/০৯/২০২৫