ঢাকা ০৭:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

মাছ চাষে বছরে ৮ লাখ টাকা আয়

  • আপডেট সময় : ১০:৪০:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০২২
  • ৯৯ বার পড়া হয়েছে

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজারের সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের যুবক সোহেল আহমদ ভাগ্য বদলের জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় একদশক একটি কোম্পানিতে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু ভাগ্য গড়তে পারেননি সোহেল। ২০১৬ সালে বিদেশের কাজ ছেড়ে দেশে এসে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখতে থাকেন। এরপর গ্রামে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেও ভাগ্যের বদল হয়নি তার। অবশেষে মাছ চাষেই বদলে গেছে ভাগ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাওরের পাড়ে যুগ যুগ ধরে বোরো ফসলি জমির ওপর নির্ভর করেই কোনোরকমে চলে প্রত্যন্ত হাওরপাড়ের মানুষের জীবন। বছরে একবার বোরো ধান চাষ করেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির ভয়ে থাকতে হয় তাদের। শুধু তাই নয় ঘরে সংসারের অভাব ও বেকারত্ব দূর করতে কর্মসংস্থানের অভাবে দলে দলে গ্রামের বেকার যুবকরা ঢাকামুখী হয় কিংবা বিদেশে পাড়ি জমায়। তাতেও কারো কারো ভাগ্য বদল হয় না। তবে হাল ছাড়তে নেই- এমনটা প্রমাণ করলেন ১০ বছর মালয়েশিয়া কাটিয়ে আসা যুবক সোহেল।
স্থানীয়রা জানান, সোহেল আহমদ ১০ বছর বিদেশে কাজ করেও ভাগ্য বদল করতে পারেননি। কিন্তু তিনি মাছ চাষে সফলতা পেয়ে জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন। এমন দৃষ্টান্ত দেখে নতুন করে অনেকে মাছ চাষে ঝুঁকছেন। এছাড়া অনেক বেকার যুবক ও আশপাশের লোকজন তার পুকুরে শ্রমিক হিসেবে কাজ পেয়ে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন।
দোয়ারা বাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের যুবক সোহেল আহমদের পুকুরগুলো ঘুরে দেখা যায়, তার ৫টি পুকুরে রয়েছে তেলাপিয়া, গ্রাস কার্প, রুই,পাঙ্গাস, কাতলা ও মির্কাসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। মাছগুলো তার পুকুরে লাফালাফি করছে। তবে তার পুকুরের মাছ আকারে বড় দেখে বেশি মূল্যে বাজারে নিয়ে বিক্রি করা যায়। এ কারণে সেখান থেকে মাছ কিনতে ভিড় করছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ীরা। সোহেলের খামার দেখতে যাওয়া দোয়ারা বাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা সিহাব উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিজের জমিতে কৃষিকাজ করেই কোনো রকমে আমার সংসার চলত। তবে চোখের সামনে সোহেলের মাছ চাষের সাফল্য দেখে অবাক হয়েছি। মনে মনে ভেবেছিলাম, তিনি সফল হলে আমি কেনো পারব না? তাই আমিও মাছ চাষ শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
একই গ্রামের তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সোহেল আহমদ মাছ চাষে অবিশ্বাস্য সফলতা পেয়েছেন। এমন দৃশ্য দেখে আমিও মাছ চাষ করছি।’
দোয়ারা বাজার উপজেলার হাসন বাহার গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী ফজলুল হক বলেন, সোহেল আহমদের পুকুরের মাছ অনেক বড় সাইজের। মাছগুলো এখান থেকে কিনে নিয়ে গিয়ে আমি হেঁটে-হেঁটে বিক্রি করি। মাছ সাইজে বড় দেখে দামও ভালো পাই।
দোয়ারা বাজার উপজেলার লক্ষী বাউর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, একটা সময় ছিল মাছ আনতে আমাদের অনেক দূরে যেত হতো। যাতায়াত ভাড়াসহ দ্বিগুণ টাকা আমাদের খরচ হতো। তবে এখন বিদেশ ফেরত সোহেল আহমদের পুকুর থেকে মাছ কিনে নিয়ে দোয়ারা বাজার মাছ বাজারে গিয়ে বিক্রি করি। সোহেল আহমদ যেমন মাছ চাষে লাভবান হচ্ছেন ঠিক তেমনি আমরাও তার কাছ থেকে মাছ কিনে নিয়ে লাভে বিক্রি করতে পারছি।
মাছ চাষি সোহেল আহমদ বলেন, ‘প্রবাসে যে সময় ব্যয় করেছি দেশে তার চেয়ে কম সময় ব্যয় করেও এখন অধিক উপার্জন করছি। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করে আমি লাভবান। দেশে এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে আছি। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাছ চাষের খামারকে আরও সম্প্রসারণ করা। শুধু সরকারি চাকরি আর বিদেশগামী না হয়ে দেশের প্রতিটি এলাকার যুবকদের প্রত্যেকের নিজ এলাকায় আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করা উচিত। অনেকেই মাছ চাষের পরামর্শ নেওয়ার জন্য আমার কাছে এলে আমি তাদের সঠিক মাছ চাষের পরামর্শ দিয়ে দেই।
তিনি আরও বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা যদি ভালো হতো এবং মৎস্য অফিস থেকে যদি আমাদের ঠিকমতো পরামর্শ দেওয়া হতো তাহলে হয়তো আমরা আরও বেশি লাভবান হতাম। আমি মাছ চাষ করে বছর শেষে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা লাভ করতে পারি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মন বলেন, ‘পুরো উপজেলায় ৪ হাজার ৬৬৬টি মাছ চাষের পুকুর রয়েছে। হাওরপাড়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের পুকুরের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেখানকার আবহাওয়া ও মাটি মাছ চাষ উপযোগী, যেকারণে সেখানে মাছের উৎপাদন ভালো হয়। আমরা চাষিদের মাছ চাষে উৎসাহিত করতে সব ধরনের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি।’
তিনি আরও বলেন, সোহেল আহমেদ বিদেশ থেকে ফিরে দেশে যে মাছ চাষে ভাগ্যবদল করেছেন সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি নিজে গিয়ে তার পুকুরগুলে দেখে আসব। পাশাপাশি তাকে সুপরামর্শ দেব।-

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মাছ চাষে বছরে ৮ লাখ টাকা আয়

আপডেট সময় : ১০:৪০:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০২২

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজারের সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের যুবক সোহেল আহমদ ভাগ্য বদলের জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় একদশক একটি কোম্পানিতে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু ভাগ্য গড়তে পারেননি সোহেল। ২০১৬ সালে বিদেশের কাজ ছেড়ে দেশে এসে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখতে থাকেন। এরপর গ্রামে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেও ভাগ্যের বদল হয়নি তার। অবশেষে মাছ চাষেই বদলে গেছে ভাগ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাওরের পাড়ে যুগ যুগ ধরে বোরো ফসলি জমির ওপর নির্ভর করেই কোনোরকমে চলে প্রত্যন্ত হাওরপাড়ের মানুষের জীবন। বছরে একবার বোরো ধান চাষ করেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির ভয়ে থাকতে হয় তাদের। শুধু তাই নয় ঘরে সংসারের অভাব ও বেকারত্ব দূর করতে কর্মসংস্থানের অভাবে দলে দলে গ্রামের বেকার যুবকরা ঢাকামুখী হয় কিংবা বিদেশে পাড়ি জমায়। তাতেও কারো কারো ভাগ্য বদল হয় না। তবে হাল ছাড়তে নেই- এমনটা প্রমাণ করলেন ১০ বছর মালয়েশিয়া কাটিয়ে আসা যুবক সোহেল।
স্থানীয়রা জানান, সোহেল আহমদ ১০ বছর বিদেশে কাজ করেও ভাগ্য বদল করতে পারেননি। কিন্তু তিনি মাছ চাষে সফলতা পেয়ে জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন। এমন দৃষ্টান্ত দেখে নতুন করে অনেকে মাছ চাষে ঝুঁকছেন। এছাড়া অনেক বেকার যুবক ও আশপাশের লোকজন তার পুকুরে শ্রমিক হিসেবে কাজ পেয়ে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন।
দোয়ারা বাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের যুবক সোহেল আহমদের পুকুরগুলো ঘুরে দেখা যায়, তার ৫টি পুকুরে রয়েছে তেলাপিয়া, গ্রাস কার্প, রুই,পাঙ্গাস, কাতলা ও মির্কাসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। মাছগুলো তার পুকুরে লাফালাফি করছে। তবে তার পুকুরের মাছ আকারে বড় দেখে বেশি মূল্যে বাজারে নিয়ে বিক্রি করা যায়। এ কারণে সেখান থেকে মাছ কিনতে ভিড় করছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ীরা। সোহেলের খামার দেখতে যাওয়া দোয়ারা বাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা সিহাব উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিজের জমিতে কৃষিকাজ করেই কোনো রকমে আমার সংসার চলত। তবে চোখের সামনে সোহেলের মাছ চাষের সাফল্য দেখে অবাক হয়েছি। মনে মনে ভেবেছিলাম, তিনি সফল হলে আমি কেনো পারব না? তাই আমিও মাছ চাষ শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
একই গ্রামের তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সোহেল আহমদ মাছ চাষে অবিশ্বাস্য সফলতা পেয়েছেন। এমন দৃশ্য দেখে আমিও মাছ চাষ করছি।’
দোয়ারা বাজার উপজেলার হাসন বাহার গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী ফজলুল হক বলেন, সোহেল আহমদের পুকুরের মাছ অনেক বড় সাইজের। মাছগুলো এখান থেকে কিনে নিয়ে গিয়ে আমি হেঁটে-হেঁটে বিক্রি করি। মাছ সাইজে বড় দেখে দামও ভালো পাই।
দোয়ারা বাজার উপজেলার লক্ষী বাউর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, একটা সময় ছিল মাছ আনতে আমাদের অনেক দূরে যেত হতো। যাতায়াত ভাড়াসহ দ্বিগুণ টাকা আমাদের খরচ হতো। তবে এখন বিদেশ ফেরত সোহেল আহমদের পুকুর থেকে মাছ কিনে নিয়ে দোয়ারা বাজার মাছ বাজারে গিয়ে বিক্রি করি। সোহেল আহমদ যেমন মাছ চাষে লাভবান হচ্ছেন ঠিক তেমনি আমরাও তার কাছ থেকে মাছ কিনে নিয়ে লাভে বিক্রি করতে পারছি।
মাছ চাষি সোহেল আহমদ বলেন, ‘প্রবাসে যে সময় ব্যয় করেছি দেশে তার চেয়ে কম সময় ব্যয় করেও এখন অধিক উপার্জন করছি। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করে আমি লাভবান। দেশে এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে আছি। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাছ চাষের খামারকে আরও সম্প্রসারণ করা। শুধু সরকারি চাকরি আর বিদেশগামী না হয়ে দেশের প্রতিটি এলাকার যুবকদের প্রত্যেকের নিজ এলাকায় আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করা উচিত। অনেকেই মাছ চাষের পরামর্শ নেওয়ার জন্য আমার কাছে এলে আমি তাদের সঠিক মাছ চাষের পরামর্শ দিয়ে দেই।
তিনি আরও বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা যদি ভালো হতো এবং মৎস্য অফিস থেকে যদি আমাদের ঠিকমতো পরামর্শ দেওয়া হতো তাহলে হয়তো আমরা আরও বেশি লাভবান হতাম। আমি মাছ চাষ করে বছর শেষে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা লাভ করতে পারি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মন বলেন, ‘পুরো উপজেলায় ৪ হাজার ৬৬৬টি মাছ চাষের পুকুর রয়েছে। হাওরপাড়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের পুকুরের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেখানকার আবহাওয়া ও মাটি মাছ চাষ উপযোগী, যেকারণে সেখানে মাছের উৎপাদন ভালো হয়। আমরা চাষিদের মাছ চাষে উৎসাহিত করতে সব ধরনের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি।’
তিনি আরও বলেন, সোহেল আহমেদ বিদেশ থেকে ফিরে দেশে যে মাছ চাষে ভাগ্যবদল করেছেন সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি নিজে গিয়ে তার পুকুরগুলে দেখে আসব। পাশাপাশি তাকে সুপরামর্শ দেব।-