ঢাকা ০৩:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাছে-ভাতে বাঙালি কেন ‘ভাত কম’ খাবে

  • আপডেট সময় : ০৯:৩৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১
  • ২৫ বার পড়া হয়েছে

জয়দীপ দে : গত রোববার (২৪ অক্টোবর) কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর: কৃষির রূপান্তর ও অর্জন’ শীর্ষক কৃষি সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাত খাওয়া নিয়ে একটি মন্তব্য করেন। এ মন্তব্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই সরব হয়েছেন। অনেকে চালের মূল্য হ্রাস করতে না-পেরে সরকার ভাত কম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
মাননীয় মন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, আমরা দ্বিগুণ ভাত খাই, এটা কমাতে পারলেই সমাধান। যদি ভাতের এই কনজাম্পশন (খাওয়া) কমাতে পারি, তাহলে চালের চাহিদা অনেকটাই কমে যাবে। তাঁর মন্তব্য ভালো করে না-পড়েই অনেকে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছেন। এটা অবশ্য আমাদের শিক্ষিত সমাজের সাধারণ সমস্যা। কোনো বিষয়ের গভীরে প্রবেশ না-করেই অনেকে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
পুষ্টিবিদরা লবণ, চিনি আর চালকে এ দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির অন্যতম প্রধান কারণ মনে করেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা কম পরিশ্রম করে। সে তুলনায় অধিকহারে এই তিনটি খাদ্য গ্রহণ করে। এসব খাদ্যই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো রোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। দিনদিন এসব রোগ বেড়েই চলেছে। চিকিৎসা খাতে ব্যয় হচ্ছে বিপুল অর্থ। অবশ্য খাদ্যাভ্যাসকেন্দ্রিক জটিলতা শুধু এ দেশে নয়। সারা পৃথিবীতেই এ সমস্যা জারি আছে। কোনো দেশের লোক পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য না-পেয়ে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। কোনো দেশে আবার অধিক পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের কারণে সে দেশের জনগণ স্থূলতায় ভুগছে। অথচ সারা পৃথিবীতে খাদ্যের সুষম বণ্টন করা গেলে কেউ-ই খাদ্য সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগত না। এ জন্য পৃথিবীতে এখন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। উন্নত দেশগুলো অনেক বছর আগে থেকেই এ বিষয়ে সচেতন। এবং সে অনুযায়ী তারা চেষ্টা করছে। অবশ্য এই খাদ্য সমস্যা শুধু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপাদনেরও একটা সম্পর্ক পাওয়া যায়। গবাদি পশু পালন ও কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রচুর মিথেন গ্যাস উৎপাদিত হয়। এক রিপোর্টে দেখা যায় ১৪-১৮ শতাংশ গ্রিনহাউস গবাদি পশু পালন থেকে তৈরি হয়। তাই খাদ্যের জন্য অধিক পশু পালন বা কৃষিকাজ না-করলে পরিবেশ দূষণ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
অন্যদিকে কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে সুপেয় পানি ব্যবহারের একটি সম্পর্ক আছে। সুপেয় পানির একটা বড়ো অংশ খরচ হয়ে যায় কৃষিকাজের পেছনে। এ কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর যেমন নামছে, তেমনি দূষিত পানি পুনরায় পানের উপযোগী করতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। উপরে কৃষিকাজে মিথেন গ্যাস উৎপাদন ও পানি ব্যবহারের যে কথা বলা হলো তা তুলনামূলকভাবে ধান চাষে বেশি হয়। বিশ্বে পানি এখন প্রধান সংকটের বিষয়। বলা হয় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে পানির জন্য। যে খাদ্যশস্য উৎপাদনে পানি যত বেশি ব্যবহৃত হয় সেই খাদ্যশস্য তত দামী মনে করা হয়। সে হিসেবে ধান সবচেয়ে দামী খাদ্যশস্য। এক কেজি ধান উৎপাদনে প্রায় আড়াই হাজার লিটার পানি প্রয়োজন হয়। সেখানে গম উৎপাদন সাড়ে তেরো শ লিটার পানি যথেষ্ট। ভুট্টায় আরো কম। আলু উৎপাদন করতে মাত্র ২৮৭ লিটার পানি যথেষ্ট। শশায় আরো কম। অথচ এই দামী খাদ্যশস্য আমরা গ্রহণ করি প্রয়োজনের অধিকমাত্রায়।
বিশ্বখাদ্য সংস্থার ‘দ্য ফুড আউটলুক’ শীর্ষক ২০২০-২১ এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, পৃথিবীতে ভাত যেসব অঞ্চলের মানুষের প্রধান খাদ্য, সেসব অঞ্চলের মানুষ বছরে গড়ে সাড়ে ৫৩ কেজি চাল খায়। সেখানে বাংলাদেশের মানুষ খায় প্রায় ১৮০ কেজি। বাংলাদেশের চেয়ে কেবল মিয়ানমারের নাগরিকরা বেশি খায়। ১৮১ কেজির মতো। ফলে প্রতি বছর গড়ে ৩৫ মিলিয়ন টনের উপর খাদ্য উৎপাদন করেও বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। আবার এতো পরিমাণ ‘দামী খাদ্য শস্য’ খেয়েও আমাদের যথার্থ পুষ্টি সাধিত হচ্ছে না। কারণ চালে শর্করার পরিমাণ অধিক। অন্যান্য খাদ্য উৎপাদন খুবই নগণ্য। অতিরিক্ত শর্করায় বাড়চ্ছে খাদ্য ঝুঁকি। তাই চালের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ফল ও সবজি বেশি করে খেলে আমাদের সুষম খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে।
বিশ্বখাদ্য সংস্থা, ঢাকার চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নাওকি মিনামিগুচি ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর এক ওয়েবিনারে জানান, দেশে প্রতি বছর ৩০-৪০ শতাংশ শাকসবজি ও ফলমূল নষ্ট হয়। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। মাঠে ফসল বোনা থেকে শুরু করে ক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই এ নষ্ট বা অপচয় হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ অধিক মূল্যের কারণে ফল কিনতে পারেন না। সবজির দামও চড়া। ফল ও সবজি নষ্ট না করে সাধারণের কাছে সহজলভ্য করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো জরুরি। আমরা ভাত কম খেয়ে অন্য কোনো শস্যগ্রহণ করলে আরো বেশি খাদ্য উৎপাদন করতে পারতাম। আমাদের পানি ও শ্রম-ব্যয় কম হতো। অবশ্য এ সমস্যা কেবল বাংলাদেশের নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একটি নির্দিষ্ট খাদ্যের প্রতি জনগণের অধিক ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ উগান্ডার কথা বলা যায়। সেদেশের জনগণ অধিক হারে কাঁচা কলা ও কাসাভার কন্দ বা শিমূল আলু খেয়ে থাকে। এসবে প্রোটিন ও ভিটামিনের পরিমাণ খুবই নগণ্য। ফলে সে দেশের মানুষজন স্থূলকায় হচ্ছে বটে, কিন্তু কর্মক্ষমতা ও মস্তিষ্কের বিকাশ সেভাবে হচ্ছে না। সরকার এটা মেনে নিয়ে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এ রকম একটি কর্মসূচিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক কাজ করছে।
অবশ্য বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য-সচেতনা দেখা দিয়েছে। শর্করা জাতীয় খাদ্যের উপর নির্ভরশীলতা দিন দিন কমে আসছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি জরিপে দেখা যায়, ২০১০ সালে চাল ও আটা গ্রহণের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে দৈনিক ৪১৬ দশমিক ০১ গ্রাম ও ২৬ দশমিক ০৯ গ্রাম। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩৬৭ দশমিক ১৯ গ্রাম ও ১৯ দশমিক ৮৩ গ্রাম। এর ফলে খাদ্য ক্যালরি গ্রহণের হারও কিছুটা কমেছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মাছে-ভাতে বাঙালি কেন ‘ভাত কম’ খাবে

আপডেট সময় : ০৯:৩৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১

জয়দীপ দে : গত রোববার (২৪ অক্টোবর) কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর: কৃষির রূপান্তর ও অর্জন’ শীর্ষক কৃষি সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাত খাওয়া নিয়ে একটি মন্তব্য করেন। এ মন্তব্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই সরব হয়েছেন। অনেকে চালের মূল্য হ্রাস করতে না-পেরে সরকার ভাত কম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
মাননীয় মন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, আমরা দ্বিগুণ ভাত খাই, এটা কমাতে পারলেই সমাধান। যদি ভাতের এই কনজাম্পশন (খাওয়া) কমাতে পারি, তাহলে চালের চাহিদা অনেকটাই কমে যাবে। তাঁর মন্তব্য ভালো করে না-পড়েই অনেকে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছেন। এটা অবশ্য আমাদের শিক্ষিত সমাজের সাধারণ সমস্যা। কোনো বিষয়ের গভীরে প্রবেশ না-করেই অনেকে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
পুষ্টিবিদরা লবণ, চিনি আর চালকে এ দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির অন্যতম প্রধান কারণ মনে করেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা কম পরিশ্রম করে। সে তুলনায় অধিকহারে এই তিনটি খাদ্য গ্রহণ করে। এসব খাদ্যই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো রোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। দিনদিন এসব রোগ বেড়েই চলেছে। চিকিৎসা খাতে ব্যয় হচ্ছে বিপুল অর্থ। অবশ্য খাদ্যাভ্যাসকেন্দ্রিক জটিলতা শুধু এ দেশে নয়। সারা পৃথিবীতেই এ সমস্যা জারি আছে। কোনো দেশের লোক পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য না-পেয়ে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। কোনো দেশে আবার অধিক পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের কারণে সে দেশের জনগণ স্থূলতায় ভুগছে। অথচ সারা পৃথিবীতে খাদ্যের সুষম বণ্টন করা গেলে কেউ-ই খাদ্য সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগত না। এ জন্য পৃথিবীতে এখন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। উন্নত দেশগুলো অনেক বছর আগে থেকেই এ বিষয়ে সচেতন। এবং সে অনুযায়ী তারা চেষ্টা করছে। অবশ্য এই খাদ্য সমস্যা শুধু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপাদনেরও একটা সম্পর্ক পাওয়া যায়। গবাদি পশু পালন ও কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রচুর মিথেন গ্যাস উৎপাদিত হয়। এক রিপোর্টে দেখা যায় ১৪-১৮ শতাংশ গ্রিনহাউস গবাদি পশু পালন থেকে তৈরি হয়। তাই খাদ্যের জন্য অধিক পশু পালন বা কৃষিকাজ না-করলে পরিবেশ দূষণ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
অন্যদিকে কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে সুপেয় পানি ব্যবহারের একটি সম্পর্ক আছে। সুপেয় পানির একটা বড়ো অংশ খরচ হয়ে যায় কৃষিকাজের পেছনে। এ কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর যেমন নামছে, তেমনি দূষিত পানি পুনরায় পানের উপযোগী করতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। উপরে কৃষিকাজে মিথেন গ্যাস উৎপাদন ও পানি ব্যবহারের যে কথা বলা হলো তা তুলনামূলকভাবে ধান চাষে বেশি হয়। বিশ্বে পানি এখন প্রধান সংকটের বিষয়। বলা হয় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে পানির জন্য। যে খাদ্যশস্য উৎপাদনে পানি যত বেশি ব্যবহৃত হয় সেই খাদ্যশস্য তত দামী মনে করা হয়। সে হিসেবে ধান সবচেয়ে দামী খাদ্যশস্য। এক কেজি ধান উৎপাদনে প্রায় আড়াই হাজার লিটার পানি প্রয়োজন হয়। সেখানে গম উৎপাদন সাড়ে তেরো শ লিটার পানি যথেষ্ট। ভুট্টায় আরো কম। আলু উৎপাদন করতে মাত্র ২৮৭ লিটার পানি যথেষ্ট। শশায় আরো কম। অথচ এই দামী খাদ্যশস্য আমরা গ্রহণ করি প্রয়োজনের অধিকমাত্রায়।
বিশ্বখাদ্য সংস্থার ‘দ্য ফুড আউটলুক’ শীর্ষক ২০২০-২১ এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, পৃথিবীতে ভাত যেসব অঞ্চলের মানুষের প্রধান খাদ্য, সেসব অঞ্চলের মানুষ বছরে গড়ে সাড়ে ৫৩ কেজি চাল খায়। সেখানে বাংলাদেশের মানুষ খায় প্রায় ১৮০ কেজি। বাংলাদেশের চেয়ে কেবল মিয়ানমারের নাগরিকরা বেশি খায়। ১৮১ কেজির মতো। ফলে প্রতি বছর গড়ে ৩৫ মিলিয়ন টনের উপর খাদ্য উৎপাদন করেও বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। আবার এতো পরিমাণ ‘দামী খাদ্য শস্য’ খেয়েও আমাদের যথার্থ পুষ্টি সাধিত হচ্ছে না। কারণ চালে শর্করার পরিমাণ অধিক। অন্যান্য খাদ্য উৎপাদন খুবই নগণ্য। অতিরিক্ত শর্করায় বাড়চ্ছে খাদ্য ঝুঁকি। তাই চালের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ফল ও সবজি বেশি করে খেলে আমাদের সুষম খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে।
বিশ্বখাদ্য সংস্থা, ঢাকার চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নাওকি মিনামিগুচি ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর এক ওয়েবিনারে জানান, দেশে প্রতি বছর ৩০-৪০ শতাংশ শাকসবজি ও ফলমূল নষ্ট হয়। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। মাঠে ফসল বোনা থেকে শুরু করে ক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই এ নষ্ট বা অপচয় হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ অধিক মূল্যের কারণে ফল কিনতে পারেন না। সবজির দামও চড়া। ফল ও সবজি নষ্ট না করে সাধারণের কাছে সহজলভ্য করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো জরুরি। আমরা ভাত কম খেয়ে অন্য কোনো শস্যগ্রহণ করলে আরো বেশি খাদ্য উৎপাদন করতে পারতাম। আমাদের পানি ও শ্রম-ব্যয় কম হতো। অবশ্য এ সমস্যা কেবল বাংলাদেশের নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একটি নির্দিষ্ট খাদ্যের প্রতি জনগণের অধিক ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ উগান্ডার কথা বলা যায়। সেদেশের জনগণ অধিক হারে কাঁচা কলা ও কাসাভার কন্দ বা শিমূল আলু খেয়ে থাকে। এসবে প্রোটিন ও ভিটামিনের পরিমাণ খুবই নগণ্য। ফলে সে দেশের মানুষজন স্থূলকায় হচ্ছে বটে, কিন্তু কর্মক্ষমতা ও মস্তিষ্কের বিকাশ সেভাবে হচ্ছে না। সরকার এটা মেনে নিয়ে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এ রকম একটি কর্মসূচিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক কাজ করছে।
অবশ্য বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য-সচেতনা দেখা দিয়েছে। শর্করা জাতীয় খাদ্যের উপর নির্ভরশীলতা দিন দিন কমে আসছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি জরিপে দেখা যায়, ২০১০ সালে চাল ও আটা গ্রহণের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে দৈনিক ৪১৬ দশমিক ০১ গ্রাম ও ২৬ দশমিক ০৯ গ্রাম। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩৬৭ দশমিক ১৯ গ্রাম ও ১৯ দশমিক ৮৩ গ্রাম। এর ফলে খাদ্য ক্যালরি গ্রহণের হারও কিছুটা কমেছে।