ঢাকা ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫

মাছকে সাধারণ যোগ-বিয়োগ শেখাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা

  • আপডেট সময় : ১১:৩০:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ এপ্রিল ২০২২
  • ৮৭ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : স্কুল শিক্ষকরা এত দিন শিশু মস্তিষ্ককে বিকশিত করতে বিভিন্ন ধরনের খেলার ছলে গণিত শেখাতেন। সেসব খেলা এবার মাছের ওপর পরীক্ষা করে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
‘সিখলেড’ ও ‘স্টিংরে’র মত কিছু সামুদ্রিক মাছের উপর একই ধরনের পরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। অবাক হলেও সত্য, পরীক্ষায় ভালোভাবেই পাস করছে মাছগুলো। গবেষকরা বলছেন, এসব প্রাণী মৌলিক গণিত শেখার যোগ্যতা দেখিয়েছে এবং সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ছোট ধাঁধার সমাধানও করেছে। –বিষয়টি উঠে এসেছে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জার্নাল ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’-এ।
“আমরা প্রাণীদের সহজ যোগ বিয়োগের প্রশিক্ষণ দিয়েছি”– বলেছেন বন ইউনিভার্সিটির ‘ইনস্টিটিউট অফ জুওলজি’র ভেরা শ্লুসেল। তিনি এই গবেষণার প্রধান লেখক।
“এটি করতে, তাদেরকে এক যোগ বা বিয়োগ করতে হয়েছিল।” একদিকে, অ্যাকিউরিয়ামে থাকা কাঁটাসর্বস্ব সিখলেড গবেষক দলের কাছে প্রিয়। নিজেদের সামুদ্রিক বাসা নিয়ে সর্বদা ভাবিত প্রাণীটি মাঝে মাঝে আক্রমণাত্মক ও নিজের এলাকা নিয়ে দখলপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, কোমল স্বভাবের স্টিংরে শান্তভাবে সমুদ্র তলে আরাম করে থাকে। দূর থেকে শিকারকে ভয় না দেখিয়ে, বরং একাকী জীবনযাপন পছন্দ করে এরা। বেমাক্কা এক প্রশ্ন অনেকেই করে বসতে পারেন– স্টিংরে এবং সিখলেডদের এসব হিসাব শিখিয়ে কী লাভ?
গবেষকদের কাছে এর কোন উত্তর নেই। তবে তারা জোর দিয়ে বলছেন, এ থেকে আবারও প্রমাণ হলো, মানুষ যতোটা ভাবেন মাছেরা তার চেয়েও বুদ্ধিমান এবং আরও সম্মান তাদের প্রাপ্য।– উঠে এসেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেটের প্রতিবেদনে।
গাণিতিক ধাঁধা : দেখা যাক, দলটির চালাক মাছগুলো সমুদ্রের পানির নিচের গণিত ক্লাস কীভাবে পার হয়েছে- প্রথম ধাপ ছিল প্রশিক্ষণ। বিজ্ঞানীরা প্রত্যেক প্রাণীকে একটি চৌবাচ্চায় রেখে তাদেরকে এক ও পাঁচের মধ্যে বর্গক্ষেত্র, বৃত্ত এবং ত্রিভুজের আকৃতির বস্তুর একটি চিত্র দেন। আকৃতিগুলো আকারে বিভিন্ন মাপের এবং মাঝে মাঝে মেশানো হয় এদের। এগুলো নীল বা হলুদের মধ্যে যে কোনো একটি রঙের হয়ে থাকে। নীল মানে ‘যোগ এক’। হলুদ মানে ‘বিয়োগ এক’।
গবেষকরা এমন জ্যামিতিক আকারের সাহায্যে মাছকে গুনতে শিখিয়েছেন।গবেষকরা এমন জ্যামিতিক আকারের সাহায্যে মাছকে গুনতে শিখিয়েছেন।“প্রাণীরা চিত্রিত বস্তুর সংখ্যাটি চিনে, একই সময়ে তাদের রং দেখে গণনার নিয়মটি অনুসরণ করেছে,” –বলেছেন শ্লুসেল। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে, তিনটি নীল বর্গক্ষেত্র মানে হলো “৩+১”।
অন্যদিকে, যখন প্রত্যেক প্রাণী ছবি নিজ নিজ চিত্রের আকৃতিগুলো মুখস্থের পর তাদের দুটি নতুন চিত্র দেওয়া হয়। প্রথম চিত্রে একটি কম আকৃতি এবং দ্বিতীয়টিতে একটি বেশি আকৃতি থাকতে পারে। বস্তুর প্রাথমিক চিত্রের রং ও আকৃতির সংখ্যা যাচাই করে প্রাণিটিকে সাঁতরে অনুরূপ দ্বিতীয় চিত্রের দিকে যেতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি স্টিংরেকে প্রথম চিত্রে চারটি হলুদ আকৃতি দেখানো হলো। এর মানে “৪-১” সমান কত? স্টিংরেটি যখন নতুন চিত্র দুটি পাবে, তখন এটি সাঁতরে তিনটি আকৃতি থাকা চিত্রের দিকে যাবে। পড়তে সহজ মনে হলেও, আসলে এটি এতটা সহজ কাজ নয় –প্রতিবেদনে লিখেছে সিনেট।
“মূল চিত্রটি যখন বাকি দুটি ফলাফল চিত্রের সঙ্গে বিনিময় করে, তখন দুটো চিত্রই মাছের স্মৃতিতে থাকতে হয়। এর পর সঠিক উত্তরটি যাচাই করতে হয় তাদের।” –বলেছেন শ্লুসেল।
“সামগ্রিকভাবে, এ কীর্তি অর্জনে জটিল চিন্তা দক্ষতার প্রয়োজন।”
প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য একটি ছোট পুরস্কার পেয়েছে পরীক্ষিত প্রাণীটি। গবেষণা বলছে, ছয়টি সিখলেড এবং চারটি স্টিংরে ক্লাসে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। তারা নিয়মগুলো খুবই ভালোভাবে রপ্ত করতে পেরেছে, যদিও বিয়োগ তুলনামূলক কঠিন ছিল দুই প্রজাতির জন্যেই। তবে এটি বোধগম্য,কারণ বেশিরভাগ মানুষও বিষয়টি নিয়ে একই সমস্যায় পড়তেন।
পরীক্ষার সময় : প্রশিক্ষণ পর্ব শেষে এসেছে পরীক্ষার পালা। গবেষকরা নিশ্চিত হতে চেয়েছেন, প্রাণীরা কেবল কিছু নির্দিষ্ট চিত্র দেখে সুস্বাদু পুরস্কার পাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণটি নিচ্ছে না। বরং যোগ বিয়োগের বিষয়টি আসলেই রপ্ত করেছে। “আমরা ইচ্ছা করেই প্রশিক্ষণের কিছু গণনা বাদ দিয়েছি।”–বলেছেন শ্লুসেল। “যেমন, ৩+১ এবং ৩-১। প্রশিক্ষণ পর্যায় শেষে, প্রাণীরা পরীক্ষায় প্রথমবার নতুন দুটি অংক দেখেছে। তবে সেই পরীক্ষাতেও, তারা বেশিরভাগ সঠিক উত্তরটিই বাছাই করেছে।” উদাহরণস্বরূপ গবেষকরা দেখেন, একটির জায়গায় দুটি আকৃতি যোগ করে পরীক্ষা আরও জটিল করলেও প্রাণীরা এখনও বেশিরভাগ সঠিক উত্তরটি বাছাই করছে। এ গবেষণার বিষয়টি একদম নতুন কিছু নয়। অতীতেও মাছের গণণার এমন উদাহরণ রয়েছে। এর পরও মাছের পাটিগণিতের মতো জটিল গণনা সমাধানের বিষয়টি অবাকই করেছে গবেষকদের। গোটা পরীক্ষা থেকে বড় যে প্রাপ্তি এসেছে, তা হলো- বুদ্ধিমান হতে কোনো প্রাণীকে মানুষের মতো হতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মাছকে সাধারণ যোগ-বিয়োগ শেখাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা

আপডেট সময় : ১১:৩০:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ এপ্রিল ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : স্কুল শিক্ষকরা এত দিন শিশু মস্তিষ্ককে বিকশিত করতে বিভিন্ন ধরনের খেলার ছলে গণিত শেখাতেন। সেসব খেলা এবার মাছের ওপর পরীক্ষা করে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
‘সিখলেড’ ও ‘স্টিংরে’র মত কিছু সামুদ্রিক মাছের উপর একই ধরনের পরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। অবাক হলেও সত্য, পরীক্ষায় ভালোভাবেই পাস করছে মাছগুলো। গবেষকরা বলছেন, এসব প্রাণী মৌলিক গণিত শেখার যোগ্যতা দেখিয়েছে এবং সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ছোট ধাঁধার সমাধানও করেছে। –বিষয়টি উঠে এসেছে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জার্নাল ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’-এ।
“আমরা প্রাণীদের সহজ যোগ বিয়োগের প্রশিক্ষণ দিয়েছি”– বলেছেন বন ইউনিভার্সিটির ‘ইনস্টিটিউট অফ জুওলজি’র ভেরা শ্লুসেল। তিনি এই গবেষণার প্রধান লেখক।
“এটি করতে, তাদেরকে এক যোগ বা বিয়োগ করতে হয়েছিল।” একদিকে, অ্যাকিউরিয়ামে থাকা কাঁটাসর্বস্ব সিখলেড গবেষক দলের কাছে প্রিয়। নিজেদের সামুদ্রিক বাসা নিয়ে সর্বদা ভাবিত প্রাণীটি মাঝে মাঝে আক্রমণাত্মক ও নিজের এলাকা নিয়ে দখলপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, কোমল স্বভাবের স্টিংরে শান্তভাবে সমুদ্র তলে আরাম করে থাকে। দূর থেকে শিকারকে ভয় না দেখিয়ে, বরং একাকী জীবনযাপন পছন্দ করে এরা। বেমাক্কা এক প্রশ্ন অনেকেই করে বসতে পারেন– স্টিংরে এবং সিখলেডদের এসব হিসাব শিখিয়ে কী লাভ?
গবেষকদের কাছে এর কোন উত্তর নেই। তবে তারা জোর দিয়ে বলছেন, এ থেকে আবারও প্রমাণ হলো, মানুষ যতোটা ভাবেন মাছেরা তার চেয়েও বুদ্ধিমান এবং আরও সম্মান তাদের প্রাপ্য।– উঠে এসেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেটের প্রতিবেদনে।
গাণিতিক ধাঁধা : দেখা যাক, দলটির চালাক মাছগুলো সমুদ্রের পানির নিচের গণিত ক্লাস কীভাবে পার হয়েছে- প্রথম ধাপ ছিল প্রশিক্ষণ। বিজ্ঞানীরা প্রত্যেক প্রাণীকে একটি চৌবাচ্চায় রেখে তাদেরকে এক ও পাঁচের মধ্যে বর্গক্ষেত্র, বৃত্ত এবং ত্রিভুজের আকৃতির বস্তুর একটি চিত্র দেন। আকৃতিগুলো আকারে বিভিন্ন মাপের এবং মাঝে মাঝে মেশানো হয় এদের। এগুলো নীল বা হলুদের মধ্যে যে কোনো একটি রঙের হয়ে থাকে। নীল মানে ‘যোগ এক’। হলুদ মানে ‘বিয়োগ এক’।
গবেষকরা এমন জ্যামিতিক আকারের সাহায্যে মাছকে গুনতে শিখিয়েছেন।গবেষকরা এমন জ্যামিতিক আকারের সাহায্যে মাছকে গুনতে শিখিয়েছেন।“প্রাণীরা চিত্রিত বস্তুর সংখ্যাটি চিনে, একই সময়ে তাদের রং দেখে গণনার নিয়মটি অনুসরণ করেছে,” –বলেছেন শ্লুসেল। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে, তিনটি নীল বর্গক্ষেত্র মানে হলো “৩+১”।
অন্যদিকে, যখন প্রত্যেক প্রাণী ছবি নিজ নিজ চিত্রের আকৃতিগুলো মুখস্থের পর তাদের দুটি নতুন চিত্র দেওয়া হয়। প্রথম চিত্রে একটি কম আকৃতি এবং দ্বিতীয়টিতে একটি বেশি আকৃতি থাকতে পারে। বস্তুর প্রাথমিক চিত্রের রং ও আকৃতির সংখ্যা যাচাই করে প্রাণিটিকে সাঁতরে অনুরূপ দ্বিতীয় চিত্রের দিকে যেতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি স্টিংরেকে প্রথম চিত্রে চারটি হলুদ আকৃতি দেখানো হলো। এর মানে “৪-১” সমান কত? স্টিংরেটি যখন নতুন চিত্র দুটি পাবে, তখন এটি সাঁতরে তিনটি আকৃতি থাকা চিত্রের দিকে যাবে। পড়তে সহজ মনে হলেও, আসলে এটি এতটা সহজ কাজ নয় –প্রতিবেদনে লিখেছে সিনেট।
“মূল চিত্রটি যখন বাকি দুটি ফলাফল চিত্রের সঙ্গে বিনিময় করে, তখন দুটো চিত্রই মাছের স্মৃতিতে থাকতে হয়। এর পর সঠিক উত্তরটি যাচাই করতে হয় তাদের।” –বলেছেন শ্লুসেল।
“সামগ্রিকভাবে, এ কীর্তি অর্জনে জটিল চিন্তা দক্ষতার প্রয়োজন।”
প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য একটি ছোট পুরস্কার পেয়েছে পরীক্ষিত প্রাণীটি। গবেষণা বলছে, ছয়টি সিখলেড এবং চারটি স্টিংরে ক্লাসে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। তারা নিয়মগুলো খুবই ভালোভাবে রপ্ত করতে পেরেছে, যদিও বিয়োগ তুলনামূলক কঠিন ছিল দুই প্রজাতির জন্যেই। তবে এটি বোধগম্য,কারণ বেশিরভাগ মানুষও বিষয়টি নিয়ে একই সমস্যায় পড়তেন।
পরীক্ষার সময় : প্রশিক্ষণ পর্ব শেষে এসেছে পরীক্ষার পালা। গবেষকরা নিশ্চিত হতে চেয়েছেন, প্রাণীরা কেবল কিছু নির্দিষ্ট চিত্র দেখে সুস্বাদু পুরস্কার পাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণটি নিচ্ছে না। বরং যোগ বিয়োগের বিষয়টি আসলেই রপ্ত করেছে। “আমরা ইচ্ছা করেই প্রশিক্ষণের কিছু গণনা বাদ দিয়েছি।”–বলেছেন শ্লুসেল। “যেমন, ৩+১ এবং ৩-১। প্রশিক্ষণ পর্যায় শেষে, প্রাণীরা পরীক্ষায় প্রথমবার নতুন দুটি অংক দেখেছে। তবে সেই পরীক্ষাতেও, তারা বেশিরভাগ সঠিক উত্তরটিই বাছাই করেছে।” উদাহরণস্বরূপ গবেষকরা দেখেন, একটির জায়গায় দুটি আকৃতি যোগ করে পরীক্ষা আরও জটিল করলেও প্রাণীরা এখনও বেশিরভাগ সঠিক উত্তরটি বাছাই করছে। এ গবেষণার বিষয়টি একদম নতুন কিছু নয়। অতীতেও মাছের গণণার এমন উদাহরণ রয়েছে। এর পরও মাছের পাটিগণিতের মতো জটিল গণনা সমাধানের বিষয়টি অবাকই করেছে গবেষকদের। গোটা পরীক্ষা থেকে বড় যে প্রাপ্তি এসেছে, তা হলো- বুদ্ধিমান হতে কোনো প্রাণীকে মানুষের মতো হতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই।