ঢাকা ০৬:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

মাইক্রোবাসের আমদানি শুল্ক কমানোর নামে কী হচ্ছে?

  • আপডেট সময় : ০১:০৯:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১
  • ১২৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নছিমন-লেগুনার মতো দুর্ঘটনাপ্রবণ যানবাহনের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করে বিকল্প গণপরিবহন হিসেবে মাইক্রোবাস জনপ্রিয় করতে ব্যবসায়ীরা কয়েক বছর ধরে আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি করে আসছিলেন। অবশেষে সেই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে চলতি অর্থবছরের বাজেটে মাইক্রোবাস আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বাজেটে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মাইক্রোবাস আমদানির শুল্ক কমানোসংক্রান্ত দুই দফা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই দফা প্রজ্ঞাপন দিলে তা কাজে আসবে না। কারণ, বাংলাদেশে গণপরিবহন হিসেবে জনপ্রিয় ১০-১৫ আসনের পেট্রলচালিত মাইক্রোবাসের শুল্ক কমানো হয়নি।
প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ১৮০০ সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি (সিসি) পর্যন্ত হাইব্রিড মাইক্রোবাস আমদানির ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া ১৮০১ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত হাইব্রিড মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক ৪৫ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। ২০০১ বা এর বেশি সিসির হাইব্রিড মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক ৬০ থেকে কমিয়ে ৪৫ শতাংশে করা হয়। অন্যদিকে হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক ব্যাটারিচালিত নয়, এমন ১৮০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক ৪৫ থেকে ২০ শতাংশ এবং ১৮০১ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসে সম্পূরক শুল্ক ৬০ থেকে ৪৫ শতাংশ করা হয় বাজেটে।
বাজেটে কেবল ৭-৯ আসনের মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে। কিন্তু দেশে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে ১২-১৫ আসনের মাইক্রোবাস। সেখানে সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করা হয়নি। অর্থমন্ত্রী বাজেট ঘোষণার পর গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) আবার বেশি আসনের মাইক্রোবাসের শুল্ক হ্রাস করার দাবি করে। গত ৩০ জুন বাজেট পাসের সময় সেটিও আমলে নেওয়া হয়। তবে ১৫ আসনের ডিজেলচালিত যাত্রীবাহী যানকে মাইক্রোবাস হিসেবে উল্লেখ করে সেগুলো আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। ফলে বিষয়টি নিয়ে আবার সরব হয়েছে বারভিডা।
সংগঠনটির নেতারা বলছেন, দেশে ১০-১৫ আসনের মাইক্রোবাসের মধ্যে গণপরিবহন হিসেবে পেট্রলচালিত মাইক্রোবাসই বেশি আমদানি ও ব্যবহৃত হয়। আমদানির পর অধিকাংশ মাইক্রোবাস সিএনজিতে রূপান্তর করে ব্যবহার করা হয়। অথচ ডিজেলচালিত ১৫ আসনের মাইক্রোবাসে সম্পূরক শুল্ক কমানোর হলেও পেট্রলচালিত একই আসনের সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশই রয়ে গেছে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও বহুল ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক না কমানোর বিষয়টি তাঁদের বোধগম্য হচ্ছে না। তা ছাড়া দেশে মোট মাইক্রোবাস আমদানির মাত্র ৫ শতাংশ ডিজেলচালিত।
ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, যানবাহনের ক্ষেত্রে জ্বালানি ব্যবহার বিবেচনায় শুল্কহার তারতম্য করা হয় না। সাধারণ ইঞ্জিনক্ষমতা বা সিসি বিবেচনায় শুল্ক–কর আরোপ করা হয়। কিন্তু মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে জ্বালানি ব্যবহার নয়, যাত্রীর আসন ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে যে মাইক্রোবাস ২০ লাখ টাকায় পাওয়া যায়, জাপানে সেটির দাম ৫ লাখ ১০ হাজার থেকে ৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা (৬ হাজার থেকে ৭ হাজার ডলার)। কিন্তু আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর ও অত্যধিক নিবন্ধন ব্যয়ের কারণে দেশে এই যানের দাম বেশি পড়ে, যদিও একই কথা অন্যান্য গাড়ির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

বারভিডার সভাপতি আবদুল হক বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যখন নীতি করা হয়, তখন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করার কারণেই এমন সমস্যা হয়। এনবিআরের কর্মকর্তারা যদি প্রজ্ঞাপন করার আগে অন্তত কাস্টম হাউসের সঙ্গেও কথা বলে নিতেন, তাহলে এই জটিলতা এড়ানো যেত। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে আবেদন করেছি। সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট সদস্য আমাদের আশ্বাসও দিয়েছেন। আশা করছি, বিধিনিষেধের পর এই সমস্যার সমাধান হবে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নির্বাচন ভণ্ডুল করার অপচেষ্টাকে রুখে দিতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

মাইক্রোবাসের আমদানি শুল্ক কমানোর নামে কী হচ্ছে?

আপডেট সময় : ০১:০৯:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : নছিমন-লেগুনার মতো দুর্ঘটনাপ্রবণ যানবাহনের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করে বিকল্প গণপরিবহন হিসেবে মাইক্রোবাস জনপ্রিয় করতে ব্যবসায়ীরা কয়েক বছর ধরে আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি করে আসছিলেন। অবশেষে সেই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে চলতি অর্থবছরের বাজেটে মাইক্রোবাস আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বাজেটে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মাইক্রোবাস আমদানির শুল্ক কমানোসংক্রান্ত দুই দফা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই দফা প্রজ্ঞাপন দিলে তা কাজে আসবে না। কারণ, বাংলাদেশে গণপরিবহন হিসেবে জনপ্রিয় ১০-১৫ আসনের পেট্রলচালিত মাইক্রোবাসের শুল্ক কমানো হয়নি।
প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ১৮০০ সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি (সিসি) পর্যন্ত হাইব্রিড মাইক্রোবাস আমদানির ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া ১৮০১ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত হাইব্রিড মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক ৪৫ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। ২০০১ বা এর বেশি সিসির হাইব্রিড মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক ৬০ থেকে কমিয়ে ৪৫ শতাংশে করা হয়। অন্যদিকে হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক ব্যাটারিচালিত নয়, এমন ১৮০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক ৪৫ থেকে ২০ শতাংশ এবং ১৮০১ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাসে সম্পূরক শুল্ক ৬০ থেকে ৪৫ শতাংশ করা হয় বাজেটে।
বাজেটে কেবল ৭-৯ আসনের মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে। কিন্তু দেশে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে ১২-১৫ আসনের মাইক্রোবাস। সেখানে সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করা হয়নি। অর্থমন্ত্রী বাজেট ঘোষণার পর গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) আবার বেশি আসনের মাইক্রোবাসের শুল্ক হ্রাস করার দাবি করে। গত ৩০ জুন বাজেট পাসের সময় সেটিও আমলে নেওয়া হয়। তবে ১৫ আসনের ডিজেলচালিত যাত্রীবাহী যানকে মাইক্রোবাস হিসেবে উল্লেখ করে সেগুলো আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। ফলে বিষয়টি নিয়ে আবার সরব হয়েছে বারভিডা।
সংগঠনটির নেতারা বলছেন, দেশে ১০-১৫ আসনের মাইক্রোবাসের মধ্যে গণপরিবহন হিসেবে পেট্রলচালিত মাইক্রোবাসই বেশি আমদানি ও ব্যবহৃত হয়। আমদানির পর অধিকাংশ মাইক্রোবাস সিএনজিতে রূপান্তর করে ব্যবহার করা হয়। অথচ ডিজেলচালিত ১৫ আসনের মাইক্রোবাসে সম্পূরক শুল্ক কমানোর হলেও পেট্রলচালিত একই আসনের সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশই রয়ে গেছে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও বহুল ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক না কমানোর বিষয়টি তাঁদের বোধগম্য হচ্ছে না। তা ছাড়া দেশে মোট মাইক্রোবাস আমদানির মাত্র ৫ শতাংশ ডিজেলচালিত।
ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, যানবাহনের ক্ষেত্রে জ্বালানি ব্যবহার বিবেচনায় শুল্কহার তারতম্য করা হয় না। সাধারণ ইঞ্জিনক্ষমতা বা সিসি বিবেচনায় শুল্ক–কর আরোপ করা হয়। কিন্তু মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে জ্বালানি ব্যবহার নয়, যাত্রীর আসন ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে যে মাইক্রোবাস ২০ লাখ টাকায় পাওয়া যায়, জাপানে সেটির দাম ৫ লাখ ১০ হাজার থেকে ৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা (৬ হাজার থেকে ৭ হাজার ডলার)। কিন্তু আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর ও অত্যধিক নিবন্ধন ব্যয়ের কারণে দেশে এই যানের দাম বেশি পড়ে, যদিও একই কথা অন্যান্য গাড়ির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

বারভিডার সভাপতি আবদুল হক বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যখন নীতি করা হয়, তখন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করার কারণেই এমন সমস্যা হয়। এনবিআরের কর্মকর্তারা যদি প্রজ্ঞাপন করার আগে অন্তত কাস্টম হাউসের সঙ্গেও কথা বলে নিতেন, তাহলে এই জটিলতা এড়ানো যেত। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে আবেদন করেছি। সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট সদস্য আমাদের আশ্বাসও দিয়েছেন। আশা করছি, বিধিনিষেধের পর এই সমস্যার সমাধান হবে।’