নিজস্ব প্রতিবেদক: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে আজ বুধবার (৯ অক্টোবর) থেকে। যদিও দেবী আসার ঘণ্টা বেজে যায় মহালয়ার দিন থেকেই। সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন–বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন-দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায়, তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্য ক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। এ বছর ভক্তদের কষ্ট দূর করতে দেবী দুর্গা আসবেন দোলায় চেপে আর দশমীর দিন বিদায় নেবেন ঘটকে (ঘোড়ায়) চড়ে।
পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, গতবারের তুলনায় ঢাকা মহানগরে মণ্ডপের সংখ্যা বাড়লেও, সারা দেশে এই সংখ্যা কমেছে। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে পরিষদ জানায়, দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে এবার পূজা হবে। গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি।
হিন্দু পুরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় বসন্তকাল; কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধি সে পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগিয়ে পূজা করেন। সেই থেকে অকালবোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালেই দুর্গাপূজার প্রচলন হয়ে যায়। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার উদযাপিত হবে ষষ্ঠী। বুধবার দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। সন্ধ্যায় দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। সকালে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। এদিন ষষ্ঠী, সায়ংকালে দুর্গাদেবীর বোধন, আমন্ত্রণ এবং অধিবাস হবে।
বোধন মানে জাগ্রত করা বা জাগানো। বোধন হয় বেল গাছের তলায়। দেবতারাও বেল গাছের তলায় বোধন করেছিলেন, এ গাছের অন্য নাম শ্রীবৃক্ষ। শ্রী অর্থ সম্পদ বা সৌন্দর্য। তাই পুরোহিতরা সম্পদ বা সৌন্দর্য বা সংসারের উন্নতির জন্য, জ্ঞান ভক্তি লাভের জন্য বেল গাছের মূলে দুর্গাপূজার বোধন করেন। বোধনে ঘট স্থাপন করা হয়। ঘট হলো হৃদয়ের প্রতীক। ঘটের জলে যেমন প্রতিবিম্ব পড়ে, সেরকম ভক্তের হৃদয়েও মায়ের ভাব বা স্বরূপের ধারণা হয়। সেই ধারণা অনুযায়ী প্রতিমা তৈরি হয়।
ষষ্ঠী পূজার আনুষ্ঠানিকতা প্রসঙ্গে রমনা কালীমন্দিরের প্রধান পুরোহিত হরি চাঁদ চক্রবর্তী জানান, ষষ্ঠী পূজায় বিল্ব বৃক্ষের নিচে মাকে ষষ্ঠাধী কল্পারম্ভ, ষষ্ঠীবিহিত পূজা করা হয়। এর মাধ্যমে মাকে মন্দিরের আঙ্গিনায় স্থাপন করা হয়। পরদিন বিল্ব বৃক্ষের নিচে মাকে স্নান করে মন্দিরে স্থাপন করা হবে। ষষ্ঠী পূজা সম্পন্নের মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মায়ের কাছে আমাদের প্রার্থনা, মা তুমি বিশ্বের সব জীবকে শান্তি দাও। সবাইকে তুমি ভালো রাখো, সুস্থ রাখো।’
মহালয়াতেই দেবী আগমনের ঘণ্টা বাজে আর বিজয়া দশমী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটি শেষ হয় মহা-আরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এছাড়া আগামী ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ১২ অক্টোবর মহানবমী। তবে পঞ্জিকা মতে, ১২ অক্টোবর মহানবমী পূজার পরই দশমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমী উদযাপন করা হবে। সেদিন বিকালে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হবে। বোধনের পর খুলে দেওয়া হয় মণ্ডপ। এর মাধ্যমে দেবী জেগে উঠেন আর তাতে দর্শন করা যায় দেবীর। শাস্ত্রমতে মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে (ষোল উপাদানে) দেবীর পূজা হবে। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। একইসঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। এ সময় পূজারীরা মায়ের সামনে বসে তার মুখ দর্শন করবেন। অষ্টমীতে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা হবে। এদিন (১১ অক্টোবর) সকাল ৯টায় ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। কুমারী বালিকার মধ্যে বিশুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা। অষ্টমীর দিন বিশেষ আকর্ষণ থাকে কুমারী পূজা এবং সন্ধিপূজায়।
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ বা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কুমারী নারীকে দেবী জ্ঞানে পূজা করা হয়। শ্রীরাম কৃষ্ণের কথামতে, কুমারী পূজার বিষয়ে বলা হয়েছে, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর রূপ বেশি প্রকাশ পায় এবং মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার উদ্দেশ্য।
শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সী কন্যাকে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভাগা, ছয়ে উমা, সাতে মালনী, আটে কুজ্বিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দতে পীঠ নায়িকা, পনেরোতে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে তাকে অন্নদা নামে অভিহিত করা হয়।
নির্বাচিত কুমারীকে মহাষ্টমীর দিন ভোরে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। তাকে সাজিয়ে কপালে সিঁদুর, পায়ে আলতা ও হাতে ফুল দেওয়া হয়। কুমারীকে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপাচারে (ষোলো উপাদান) দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। এ সময় চারদিক শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বোল, উলুধ্বনি আর দেবী স্তুতিতে মুখর হয়ে ওঠে।
নবমীতে মণ্ডপে ভেসে আসে বিষাদের সুর। কারণ দেবী দুর্গার বিদায়ের ঘণ্টা বাজে নবমীতে। এই দিনে আনন্দের মাঝে বিষাদের ছায়াও পড়ে দেবী ভক্তদের মনে। কারণ দেবী দুর্গা দশমীর দিন কৈলাসে ফিরে যাবেন। দশমীর দিন করা হবে প্রতিমা বিসর্জন, অশ্রুসিক্ত চোখে ভক্তরা বিদায় দেবেন দেবী দুর্গাকে।
সনাতন ধর্মমতে, নবমীর পুণ্য তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে বিশ্বে শুভ শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট সর্বমোট ৪৮ মিনিটে সন্ধিপূজা হয়। মূলত দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয় এ সময়। এ সময়েই দেবী দুর্গার হাতে বধ হয়েছিল মহিষাসুর, আর রাম বধ করেছিলেন রাবণকে। এই দিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ পরের দিন কেবল বিসর্জনের পর্ব। নবমীর রাতে উৎসবের রাত শেষ হয়। নবমী রাতে তাই মণ্ডপে মণ্ডপে বিদায়ের ঘণ্টা বাজে।
বিজয়া দশমীর দিন মঙ্গলবার বিকাল ৩টার পর থেকে প্রতিমা বিসর্জনের কথা বলা হয়েছে। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃত্বে পলাশীর মোড় থেকে বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়ে সদরঘাটের ওয়াইজ ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন হবে।
এদিকে, দুর্গাপূজাকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে মণ্ডপে মণ্ডপে। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির, জগন্নাথ হল, কলাবাগান মাঠ, খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ, বনানী মাঠ, বাড্ডাসহ রাজধানীর সব পূজামণ্ডপের কাজ পুরোদমে চলছে। ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় আলোকসজ্জার কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু মণ্ডপের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্যমতে, ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর ২৪৮টি পূজার আয়োজন হয়েছিল। সে হিসাবে এবার ঢাকায় ৪টি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, ‘পূজার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে পূজা করার জন্য ইতোমধ্যে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এছাড়া প্রতিটি পূজামণ্ডপে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকও থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাজের অপেক্ষায় আছি, যে সমাজে সব ধর্মের ধর্মীয়, সর্বজনীন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো নির্বিঘ্নে, অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে, কোনও ধরনের ভয়ভীতি ও পুলিশি পাহারা ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে।’
পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোর জন্য ২২ দফা নির্দেশনাও দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে-১৩ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। উচ্চশব্দে মাইক, পিএসেট ও আতশবাজি–পটকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ভক্তিমূলক বা ধর্মীয়সংগীত ব্যতীত অন্য কোনও গান বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে-এরূপ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। ইভটিজিং, ছিনতাই ইত্যাদিতে কেউ জড়িত হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে যেকোনও দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলে জানাতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। যেকোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তাৎক্ষণিক প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করতে হবে প্রভৃতি।
পূজা উদযাপন পরিষদের সংবাদ সম্মেলন: পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, গতবারের তুলনায় ঢাকা মহানগরে মণ্ডপের সংখ্যা বাড়লেও, সারা দেশে এই সংখ্যা কমেছে। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে পরিষদ জানায়, দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে এবার পূজা হবে। গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, “প্রস্তুতি নিতে অপারগ হওয়ায় ও বন্যার কারণেও দুর্গত এলাকায় কোথাও কোথাও পূজার্থীরা এবার পূজার আয়োজন করতে পারেননি।” তবে ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, গত বছর হয়েছিল ২৪৮টিতে। সে হিসেবে মহানগরে পূজামণ্ডপ চারটি বেড়েছে। রীতি অনুযায়ী শারদীয় দুর্গাপূজার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে এই মতবিনিময় করা হয় বলে সভায় জানানো হয়। গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) হবে বোধন। বুধবার ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী। ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাঅষ্টমী ও ১২ অক্টোবর মহানবমী। পঞ্জিকা মতে এবার মহানবমী পূজার পরই দশমী বিহিত পূজা হবে। ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমী উদযাপন হবে এবং ওইদিন বিকালে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বিজয়ার শোভাযাত্রা বের করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।
নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা: এবার সারাদেশে ১৮টি পূজামণ্ডপে প্রতিমা ভাঙা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সন্তোষ শর্মা। তিনি বলেন, “সারা দেশের পূজামণ্ডপ এবং আইনশৃংখলাবাহিনীর কাছ থেকে আমরা যে তথ্য পেয়েছি, তাতে এবারও ১৮টি জায়গায় প্রতিমা ভাঙা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি মামলা হয়েছে এবং ১২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।” অতীতেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর ‘হামলা হয়েছে, কিন্তু ন্যায়বিচায় হয়নি’ মন্তব্য করে সন্তোষ শর্মা বলেন, “এবার নতুন সরকারের কাছে আমরা ন্যায়বিচার চেয়েছি, তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এই প্রথমবার সেনাবাহিনী প্রধান আমাদের মন্দিরে এসে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশে সবার সহযোগিতা নিয়ে ভালোমত পূজা উদযাপন করতে পারব বলেই আশা রাখি।”
ঢাকার ধামরাই, কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলা, নড়াইল সদর উপজেলা, রংপুর সদরে লাহিড়ীহাট, নরসিংদীর পলাশ, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, কুমিল্লার চকবাজার, টাঙ্গাইলে দাইনা ইউনিয়ন, ময়মনসিংহের গৌরিপুর, লক্ষীপুরের রামগঞ্জ, বরগুনার গলাচিপা চন্ডিপুর, ফরিদপুরের ভাঙা, শেরপুরের শ্রীপুর, লালমনিরহাটের আদিতমারি, পাবনার সুজানগর, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড় ভিটা, বরিশালের বাখেরগঞ্জ ও চাপাইনবাবগঞ্জের বটতলা থেকে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে সভায় জানান হয়। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, “জানতে পেরেছি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পূজার মধ্যে আমরা এসব হামলা দেখতে চাই না।
“শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ নয়, রাষ্ট্রের আলোকিত চেতনা ও সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে এই সহিংসতার অবসান ঘটাতে হবে।” তিনি বলেন, কেবল পূজার পাঁচদিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবলে হবে না, বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়তে চাইলে ৩৬৫ দিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে। শারদীয় দুর্গাপূজা সামনে রেখে এবার ‘সুদূরপ্রসারী এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে’ মন্তব্য করে জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, “এবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজজামান ছুটে এসেছেন শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে, ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে। তার আগে নবম ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল মঈন এসেছেন। সুন্দরভাবে পূজার আয়োজন নিয়ে তাদের আগ্রহ আমাদের সাহস জুগিয়েছে।” তাছাড়া পুলিশ বাহিনী, সরকার, রাজনৈতিক দলগুলোও আয়োজনে ‘সাহস জোগাচ্ছে’ বলে তিনি মন্তব্য করেন। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় আট দফা দাবি তুলে ধরা হয় সভায়।
১. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন: ২. জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন ৩. অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখল ভুক্তভোগীদের বরাবরে আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রত্যর্পণ। ৪. জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সরকার, সংসদ, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সকল সংস্থায় অংশীদারিত্ব ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। ৫. দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন (ইতোমধ্যে খসড়া বিল চূড়ান্তকৃত)। ৬. বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন (ইতোমধ্যে খসড়া বিল চূড়ান্তকৃত)। ৭. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন যথাযথভাবে কার্যকর করা এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন। ৮. হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দূর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী– ৩ দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় ১ দিন ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডে’তে ১ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা। অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর সভায় বক্তব্য দেন। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পালও উপস্থিত ছিলেন।