ঢাকা ০৯:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

মহাষষ্ঠীর কল্পারম্ভে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু

  • আপডেট সময় : ০২:৩৩:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে মহাষষ্ঠী তিথিতে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব চলবে আগামী পাঁচ দিন। ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের উৎসব।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তিথি শেষ হয় সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে। মন্দিরের পুরোহিত প্রণব চ্যাটার্জি পূজা পরিচালনা করেন।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তপন ভট্টাচার্য জানান, সন্ধ্যায় বেলতলায় ত্রিনয়নী দেবীর নিদ্রাভঙ্গের আবাহন- অর্থাৎ বোধনের মাধ্যমে এবারের দুর্গোৎসবের আচার পর্ব শুরু হবে। আবাহনের পর হবে অধিবাস। তিনি বলেন, “এ বছর দেবী দুর্গার আগমন গজে, যার অর্থ বসুন্ধরা শস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। অন্যদিকে দেবীর গমন নৌকায়, যার অর্থ জল এবং শস্যবৃদ্ধি।”
করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপে গত দুই বছর পুজোর আনন্দ কিছুটা ফিকে হলেও এবার উৎসবের চেনা রঙ ফিরেছে। ম-পে ম-পে বেজে উঠেছে ঢাকের বাজনা। শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে মাতোয়ারা হয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, “করোনাকালের দুই বছর খুবই সীমিত আকারে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছিল। দুই বছর পর এবার অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে উৎসব পালন করা হচ্ছে।”
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে সারা ঢাকা শহরে ২৪১টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানান তিনি। মনীন্দ্র বলেন, “আমরা মনে করি, আমাদের বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেই মূল্যবোধ নিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন, আমরা মায়ের কাছে সেই প্রার্থনাই করব যেন এদেশ থেকে সব অপশক্তির বিলোপ ঘটে, শুভ শক্তির উদয় হয়।” হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। আশ্বিন শুক্লপক্ষের এই ১৫টি দিন দেবীপক্ষ, মর্ত্যলোকে উৎসব।
দেবীপক্ষের সূচনা হয় আশ্বিন শুক্লপক্ষের অমাবস্যার দিন; সেদিন মহালয়া। আর দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিনে কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মীপূজার মধ্যে দিয়ে। এর মাঝে ষষ্ঠ দিন, অর্থাৎ ষষ্ঠীতে বোধন। আর দশম দিন, অর্থাৎ দশমীতে বিসর্জন। দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা এই পাঁচদিনই চলে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, তিন অবতারের আবির্ভাবকাল ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব। রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামেও পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা বলা হয় অকাল বোধন। পুরোহিতরা বলছেন, দুর্গা দেবীর প্রকৃত আগমনের সময় চৈত্র মাস। অর্থাৎ বসন্ত কাল। চৈত্র মাসে যে দুর্গাপূজা হয়, তাকে বলা হয় বাসন্তী পূজা। তবে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে শারদীয় পূজাই সবচেয়ে বড় উৎসব।
সারা দেশে এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি ম-পে পূজা উদযাপন হবে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে। তবে গত বছরের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পরিষদের নেতারা। দেশের প্রতিটি ম-পে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
রামকৃষ্ণ মিশনের নির্ঘণ্টে বলা হয়েছে, উৎসবের দ্বিতীয় দিন রোববার মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে। সোমবার মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে বিকাল ৪টা ৪৪ মিনিটে গতে এবং সমাপন বিকাল ৫টা ৩২ মিনিটের মধ্যে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পুষ্পাঞ্জলি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। পরদিন বুধবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দশমী পূজা আরম্ভ, পুষ্পাঞ্জলি সকাল ৮টায় এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে । সন্ধ্যা- আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার জানিয়েছেন, সারা দেশে এবছর ৩২ হাজার ১৬৮টি ম-পে দুর্গাপূজা উদযাপন হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে ম-পের সংখ্যা ছিলো ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টিতে। ঢাকা মহানগরে ম-পের সংখ্যা ২৪১, যা গত বছরের থেকে ৬টি বেশি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মহাষষ্ঠীর কল্পারম্ভে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু

আপডেট সময় : ০২:৩৩:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে মহাষষ্ঠী তিথিতে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব চলবে আগামী পাঁচ দিন। ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের উৎসব।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তিথি শেষ হয় সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে। মন্দিরের পুরোহিত প্রণব চ্যাটার্জি পূজা পরিচালনা করেন।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তপন ভট্টাচার্য জানান, সন্ধ্যায় বেলতলায় ত্রিনয়নী দেবীর নিদ্রাভঙ্গের আবাহন- অর্থাৎ বোধনের মাধ্যমে এবারের দুর্গোৎসবের আচার পর্ব শুরু হবে। আবাহনের পর হবে অধিবাস। তিনি বলেন, “এ বছর দেবী দুর্গার আগমন গজে, যার অর্থ বসুন্ধরা শস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। অন্যদিকে দেবীর গমন নৌকায়, যার অর্থ জল এবং শস্যবৃদ্ধি।”
করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপে গত দুই বছর পুজোর আনন্দ কিছুটা ফিকে হলেও এবার উৎসবের চেনা রঙ ফিরেছে। ম-পে ম-পে বেজে উঠেছে ঢাকের বাজনা। শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে মাতোয়ারা হয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, “করোনাকালের দুই বছর খুবই সীমিত আকারে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছিল। দুই বছর পর এবার অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে উৎসব পালন করা হচ্ছে।”
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে সারা ঢাকা শহরে ২৪১টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানান তিনি। মনীন্দ্র বলেন, “আমরা মনে করি, আমাদের বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেই মূল্যবোধ নিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন, আমরা মায়ের কাছে সেই প্রার্থনাই করব যেন এদেশ থেকে সব অপশক্তির বিলোপ ঘটে, শুভ শক্তির উদয় হয়।” হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। আশ্বিন শুক্লপক্ষের এই ১৫টি দিন দেবীপক্ষ, মর্ত্যলোকে উৎসব।
দেবীপক্ষের সূচনা হয় আশ্বিন শুক্লপক্ষের অমাবস্যার দিন; সেদিন মহালয়া। আর দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিনে কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মীপূজার মধ্যে দিয়ে। এর মাঝে ষষ্ঠ দিন, অর্থাৎ ষষ্ঠীতে বোধন। আর দশম দিন, অর্থাৎ দশমীতে বিসর্জন। দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা এই পাঁচদিনই চলে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, তিন অবতারের আবির্ভাবকাল ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব। রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামেও পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা বলা হয় অকাল বোধন। পুরোহিতরা বলছেন, দুর্গা দেবীর প্রকৃত আগমনের সময় চৈত্র মাস। অর্থাৎ বসন্ত কাল। চৈত্র মাসে যে দুর্গাপূজা হয়, তাকে বলা হয় বাসন্তী পূজা। তবে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে শারদীয় পূজাই সবচেয়ে বড় উৎসব।
সারা দেশে এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি ম-পে পূজা উদযাপন হবে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে। তবে গত বছরের সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পরিষদের নেতারা। দেশের প্রতিটি ম-পে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
রামকৃষ্ণ মিশনের নির্ঘণ্টে বলা হয়েছে, উৎসবের দ্বিতীয় দিন রোববার মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে। সোমবার মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে বিকাল ৪টা ৪৪ মিনিটে গতে এবং সমাপন বিকাল ৫টা ৩২ মিনিটের মধ্যে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পুষ্পাঞ্জলি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। পরদিন বুধবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দশমী পূজা আরম্ভ, পুষ্পাঞ্জলি সকাল ৮টায় এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে । সন্ধ্যা- আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার জানিয়েছেন, সারা দেশে এবছর ৩২ হাজার ১৬৮টি ম-পে দুর্গাপূজা উদযাপন হচ্ছে। গত বছর সারাদেশে ম-পের সংখ্যা ছিলো ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টিতে। ঢাকা মহানগরে ম-পের সংখ্যা ২৪১, যা গত বছরের থেকে ৬টি বেশি।