ঢাকা ০১:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

মহারণে মেসিদের মহাকাব্য ৩৬ বছর অপেক্ষার পর বিশ^কাপ শিরোপা আর্জেন্টিনার

  • আপডেট সময় : ১১:৪২:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২
  • ৯৬ বার পড়া হয়েছে

ক্রীড়া ডেস্ক : যেন ইতিহাসের সেরা ফাইনাল ফুটবল ম্যাচই দেখল পুরো বিশ্ব। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে মেসি ও ডি মারিয়ার গোলে আর্জেন্টিনা দুইবার এগিয়ে থাকলেও ৩-৩ ব্যবধানে সমতায় গিয়ে ম্যাচ শেষ করে ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত ফরাসিদের টাইব্রেকারে ৪-২ গোল ব্যবধানে হারিয়ে ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচল আলবিসেলেস্তেদের। তাতেই মহারণের মহাকাব্য রচনা হয়ে যায় আর্জেন্টিনার। ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলারের ছোঁয়ায় যেন নিজেই ধন্য হলো বিশ্বকাপ ট্রফি।
ম্যাচের শুরু থেকেই মেসি-ডি মারিয়ার গোলে ফরাসি শিবিরে চলে আর্জেন্টিনা তা-ব। ফ্রান্সের জালে প্রথম গোল পাঠায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ২১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলটি করেন মেসি। পরে ম্যাচের ৩৫ মিনিটে ম্যাক অ্যালিস্তারের পাস থেকে গোল করেন ডি মারিয়া।
এদিন ম্যাচের শুরুতে আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। তবে ম্যাচের ৩ মিনিটে প্রতিপক্ষের ডি বক্সে একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল। আলভারেজের বাইসাইকেল শটটি ঠেকিয়ে দেন ফরাসি গোল রক্ষক। তবে তার আগেই অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। তবে এর দু মিনিট পরই আলভারেজের পাস থেকে মিডফিল্ডার অ্যালিস্তার ডান পায়ের দুর্দান্ত ফ্রি কিক আবারো প্রতিহত করেন হুগো লরিস। ম্যাচের ১০ মিনিটেই ফরাসি শিবিরে দুটি শট নেয় আর্জেন্টিনা। এর একটি ছিল অনটার্গেট। এরপরই কাউন্টার অ্যাটাকে যায় ফ্রান্স। তবে ফরাসি তারকা এমবাপ্পের চেষ্টা ব্যর্থ হয় আর্জেন্টাইন রক্ষণভাগে। ম্যাচের ২১ মিনিটে ডি মারিয়াকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। আর এতেই মেসির পায়ে প্রথম সফলতা আসে আর্জেন্টিনার। আর ৩৫তম মিনিটে অ্যালিস্তারের দুর্দান্ত একটি পাসকে গোলে পরিণত করেন ডি মারিয়া। এরপর আর গোল না হলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে মেসিরা। ৪৯ মিনিটে ফরাসি রক্ষণ ভেদ করে ডি বক্সের বাইরে থেকে ডি পলের ডান পায়ের দুর্দান্ত শট সেভ করেন ফরাসি গোল রক্ষক হুগো লরিস। তবে ম্যাচের ৬০ মিনিটে দুর্দান্ত একটি সুযোগ মিস হয়। ডি বক্সে মেসির ডান পায়ের শটটি একটুর জন্য ফরাসি জাল স্পর্শ করেনি।
ম্যাচের এই মুহূর্তে রক্ষণে শক্তি বাড়াতে নজর দেয় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে স্ট্রাইকার ডি মারিয়াকে উঠিয়ে নেন আর্জেন্টাইন কোচ। মাঠে নামান ডিফেন্ডার আকুইনাকে। এরপরই কাউন্টার অ্যাটাকে যায় ফ্রান্স। ম্যাচের ৬৮ ও ৭১ মিনিটে পরপর দুটি শট নেয় ফ্রান্স। তবে একটিও অন টার্গেট ছিল না। ডি বক্সের বাইরে বাম পাশ থেকে লম্বা শট গোল বারের উপর দিয়ে চলে যায়।
ম্যাচের ৮০তম ও ৮১তম মিনিটে লুসাইল স্টেডিয়াম যেন ফরাসি সমর্থকদের দখলে চলে যায়। এরপর পেনাল্টির ফাঁদে পড়ে মেসিরা। এমবাপ্পের পা থেকে প্রথম গোল পায় ফ্রান্স। এর ২ মিনিট পরই ফের গোলের দেখা পান এমবাপ্পে। জোড়া গোলে সমতায় ফেরে ফ্রান্স। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ২-২ ব্যবধানে শেষ হয় ম্যাচ।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে গোল আদায় করতে পারেনি কেউই। তবে দ্বিতীয়ার্ধের খেলায় মেসির করা গোলে ফের একবার লিড নেয় আর্জেন্টিনা। খেলার নাটকীয়তা তখনও বাকি। একদম অন্তিম মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে গোল করলে নিজের হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি দলকে সমতায় ফেরান এমবাপ্পে। আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার মন্টিয়েলের হাতে অনিচ্ছাকৃতভাবে পেছন থেকে বল লাগলেও পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। আগের পেনাল্টি শট ডান দিকে ঝাঁপিয়েও রক্ষা করতে পারেননি এমি মার্টিনেজ। হয়ত ভেবেছিলেন এবার এমবাপ্পে বাঁয়ে শট নেবেন। কিন্তু সেই ডান দিকেই পেনাল্টি শট নেন ফরাসি স্ট্রাইকার। ফলে ম্যাচটি শেষ হয় ৩-৩ গোল ব্যবধানে। এরপরই শুরু হয় রোমাঞ্চকর টাইব্রেকার পর্ব। ফ্রান্সের পক্ষে প্রথম শট নেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এ শটটিও গোলকিপারের ডানে মারেন এমবাপ্পে। ঝাঁপ দিয়েছিলেন মার্টিনেজ। হাত ছুঁয়ে বল চলে যায় জালে। এরপর গোলকিপারকে হালকা ডজ দিয়ে ডানে বল পাঠিয়ে দেন লিওনেল মেসি। ফ্রান্সের পক্ষে পরের শট মিস করেন স্ট্রাইকার কিংসলি কোম্যান। এরপর আর্জেন্টিনার পক্ষে জালে বল পাঠান পাওলো দিবালা। এরপরের শট মিস করেন ফ্রান্সের টুয়ামেনি। অপর পক্ষে লিয়ান্দ্রো পেরাদেস গোল করলে ব্যবধান দাঁড়ায় ৩-১। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে এবার ফ্রান্সের শট মিস হলেই জিতে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু গোল দেন কোলো মোয়ানি। তবে এরপর গোল দিয়ে জয় নিশ্চিত করেন গঞ্জালো মন্টিয়েল। তৃতীয় শিরোপা নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার। স্নায়ুর চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য চিত্রনাট্যের সমাপ্তিটা হলো মেসিদের হাতে। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের আক্ষেপও ঘুচল এবার।
আর্জেন্টিনা একাদশ (ফরমেশন: ৪-৪-২) : এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (গোলরক্ষক), নিকোলাস ওতামেন্দি, ক্রিস্তিয়ান রোমেরো, নিকোলাস তালিয়াফিকো, নাহুয়েল মলিনা, এঞ্জো ফার্নান্দেজ, রদ্রিগো দি পল, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্তার, আনজেল দি মারিয়া, হুলিয়ান আলভারেজ, লিওনেল মেসি।
ফ্রান্স একাদশ (ফরমেশন: ৪-২-৩-১) হুগো লরিস (গোলরক্ষক), ডাওট উপমেকানো, রাফায়েল ভারানে, থিও হার্নান্দেজ, জুলস কুন্দে, আঁতোয়া গ্রিজম্যান, আদ্রিয়েন রাবিও, অহেলিয়া চুয়ামেনি, জিরুদ, কিলিয়ান এমবাপে, উসমানে দেম্বেলে।
ট্রফি নিয়ে ভক্তদের সঙ্গে ছাদখোলা বাসে মেসিদের উল্লাস : অবশেষে ফুটবলের রাজার মাথায় গেল মুকুট। অবসান হলো দীর্ঘ অপেক্ষার। ৩৬ বছর পর ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। শিরোপা জেতার পর কাতারেই ছাদখোলা বাসে ভক্তদের সঙ্গে ট্রফি নিয়ে উল্লাসে মেতেছেন মেসিরা। এদিন চরম নাটকীয় ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে নিজেদের তৃতীয় শিরোপা ঘরে তুলে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় উদযাপনে লুসাইলে লাখো সমর্থক ভিড় করেন। মেসিদের সামনে থেকে দেখার জন্য রাস্তার দুপাশে অপেক্ষা করেন তারা। এদিন আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ে পুরো কাতার জুড়েই ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ।
এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না মেসির : দেশের ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী লিওনেল মেসি। রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে হাতে পান বিশ্বকাপ। ফুটবল ক্যারিয়ারের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে এর চেয়ে বেশি আর কীই বা চাওয়া থাকতে পারে ফুটবল ছন্দের এ জাদুকরের। এদিকে ম্যাচ শেষে সতীর্থ ও পরিবারের সঙ্গে জীবনের সবচেয়ে খুশির মহুর্তটি ভাগাভাগি করে করে নিয়েছেন মেসি। একইসঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার সকল ভক্তদের। তবে বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রথমবার কী বলেছেন তিনি?
স্বপ্নের নায়কের হাত কাপ দেখার আনন্দে আত্মহারা গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের ধন্যবাদ জানিয় সামাজিক মাধ্যমে দীর্ঘ একটি পোস্ট করেন লিওনেল মেসি। তিনি লেখেন, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন!! কতবার আমি স্বপ্নে তাকে দেখেছি। ঠিক এই স্বপ্নটাই আমি দেখেছি। আমি মনেপ্রাণে এই দিনটা দেখতে চেয়েছিলাম। অনেকবার হেরেছি। কিন্তু, হার মানিনি। এখনও বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমরা জিতে গিয়েছি। একইসঙ্গে মেসি লিখেন, আমার পরিবার, আমার অনুরাগী এবং বাকি সকলে যারা আমার উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন, তাদের ধন্যবাদ। আমরা যে লক্ষ্য নিয়েছিলাম, সেটা পূরণ করতে পেরেছি। এই সাফল্য গোটা দলের। কারও একার নয়। সকলে মিলে এই স্বপ্নটা দেখেছিলাম। আর্জেন্তিনার জন্য এই স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছি আমরা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মহারণে মেসিদের মহাকাব্য ৩৬ বছর অপেক্ষার পর বিশ^কাপ শিরোপা আর্জেন্টিনার

আপডেট সময় : ১১:৪২:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

ক্রীড়া ডেস্ক : যেন ইতিহাসের সেরা ফাইনাল ফুটবল ম্যাচই দেখল পুরো বিশ্ব। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে মেসি ও ডি মারিয়ার গোলে আর্জেন্টিনা দুইবার এগিয়ে থাকলেও ৩-৩ ব্যবধানে সমতায় গিয়ে ম্যাচ শেষ করে ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত ফরাসিদের টাইব্রেকারে ৪-২ গোল ব্যবধানে হারিয়ে ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচল আলবিসেলেস্তেদের। তাতেই মহারণের মহাকাব্য রচনা হয়ে যায় আর্জেন্টিনার। ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলারের ছোঁয়ায় যেন নিজেই ধন্য হলো বিশ্বকাপ ট্রফি।
ম্যাচের শুরু থেকেই মেসি-ডি মারিয়ার গোলে ফরাসি শিবিরে চলে আর্জেন্টিনা তা-ব। ফ্রান্সের জালে প্রথম গোল পাঠায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ২১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলটি করেন মেসি। পরে ম্যাচের ৩৫ মিনিটে ম্যাক অ্যালিস্তারের পাস থেকে গোল করেন ডি মারিয়া।
এদিন ম্যাচের শুরুতে আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। তবে ম্যাচের ৩ মিনিটে প্রতিপক্ষের ডি বক্সে একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল। আলভারেজের বাইসাইকেল শটটি ঠেকিয়ে দেন ফরাসি গোল রক্ষক। তবে তার আগেই অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। তবে এর দু মিনিট পরই আলভারেজের পাস থেকে মিডফিল্ডার অ্যালিস্তার ডান পায়ের দুর্দান্ত ফ্রি কিক আবারো প্রতিহত করেন হুগো লরিস। ম্যাচের ১০ মিনিটেই ফরাসি শিবিরে দুটি শট নেয় আর্জেন্টিনা। এর একটি ছিল অনটার্গেট। এরপরই কাউন্টার অ্যাটাকে যায় ফ্রান্স। তবে ফরাসি তারকা এমবাপ্পের চেষ্টা ব্যর্থ হয় আর্জেন্টাইন রক্ষণভাগে। ম্যাচের ২১ মিনিটে ডি মারিয়াকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। আর এতেই মেসির পায়ে প্রথম সফলতা আসে আর্জেন্টিনার। আর ৩৫তম মিনিটে অ্যালিস্তারের দুর্দান্ত একটি পাসকে গোলে পরিণত করেন ডি মারিয়া। এরপর আর গোল না হলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে মেসিরা। ৪৯ মিনিটে ফরাসি রক্ষণ ভেদ করে ডি বক্সের বাইরে থেকে ডি পলের ডান পায়ের দুর্দান্ত শট সেভ করেন ফরাসি গোল রক্ষক হুগো লরিস। তবে ম্যাচের ৬০ মিনিটে দুর্দান্ত একটি সুযোগ মিস হয়। ডি বক্সে মেসির ডান পায়ের শটটি একটুর জন্য ফরাসি জাল স্পর্শ করেনি।
ম্যাচের এই মুহূর্তে রক্ষণে শক্তি বাড়াতে নজর দেয় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে স্ট্রাইকার ডি মারিয়াকে উঠিয়ে নেন আর্জেন্টাইন কোচ। মাঠে নামান ডিফেন্ডার আকুইনাকে। এরপরই কাউন্টার অ্যাটাকে যায় ফ্রান্স। ম্যাচের ৬৮ ও ৭১ মিনিটে পরপর দুটি শট নেয় ফ্রান্স। তবে একটিও অন টার্গেট ছিল না। ডি বক্সের বাইরে বাম পাশ থেকে লম্বা শট গোল বারের উপর দিয়ে চলে যায়।
ম্যাচের ৮০তম ও ৮১তম মিনিটে লুসাইল স্টেডিয়াম যেন ফরাসি সমর্থকদের দখলে চলে যায়। এরপর পেনাল্টির ফাঁদে পড়ে মেসিরা। এমবাপ্পের পা থেকে প্রথম গোল পায় ফ্রান্স। এর ২ মিনিট পরই ফের গোলের দেখা পান এমবাপ্পে। জোড়া গোলে সমতায় ফেরে ফ্রান্স। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ২-২ ব্যবধানে শেষ হয় ম্যাচ।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে গোল আদায় করতে পারেনি কেউই। তবে দ্বিতীয়ার্ধের খেলায় মেসির করা গোলে ফের একবার লিড নেয় আর্জেন্টিনা। খেলার নাটকীয়তা তখনও বাকি। একদম অন্তিম মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে গোল করলে নিজের হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি দলকে সমতায় ফেরান এমবাপ্পে। আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার মন্টিয়েলের হাতে অনিচ্ছাকৃতভাবে পেছন থেকে বল লাগলেও পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। আগের পেনাল্টি শট ডান দিকে ঝাঁপিয়েও রক্ষা করতে পারেননি এমি মার্টিনেজ। হয়ত ভেবেছিলেন এবার এমবাপ্পে বাঁয়ে শট নেবেন। কিন্তু সেই ডান দিকেই পেনাল্টি শট নেন ফরাসি স্ট্রাইকার। ফলে ম্যাচটি শেষ হয় ৩-৩ গোল ব্যবধানে। এরপরই শুরু হয় রোমাঞ্চকর টাইব্রেকার পর্ব। ফ্রান্সের পক্ষে প্রথম শট নেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এ শটটিও গোলকিপারের ডানে মারেন এমবাপ্পে। ঝাঁপ দিয়েছিলেন মার্টিনেজ। হাত ছুঁয়ে বল চলে যায় জালে। এরপর গোলকিপারকে হালকা ডজ দিয়ে ডানে বল পাঠিয়ে দেন লিওনেল মেসি। ফ্রান্সের পক্ষে পরের শট মিস করেন স্ট্রাইকার কিংসলি কোম্যান। এরপর আর্জেন্টিনার পক্ষে জালে বল পাঠান পাওলো দিবালা। এরপরের শট মিস করেন ফ্রান্সের টুয়ামেনি। অপর পক্ষে লিয়ান্দ্রো পেরাদেস গোল করলে ব্যবধান দাঁড়ায় ৩-১। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে এবার ফ্রান্সের শট মিস হলেই জিতে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু গোল দেন কোলো মোয়ানি। তবে এরপর গোল দিয়ে জয় নিশ্চিত করেন গঞ্জালো মন্টিয়েল। তৃতীয় শিরোপা নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার। স্নায়ুর চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য চিত্রনাট্যের সমাপ্তিটা হলো মেসিদের হাতে। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের আক্ষেপও ঘুচল এবার।
আর্জেন্টিনা একাদশ (ফরমেশন: ৪-৪-২) : এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (গোলরক্ষক), নিকোলাস ওতামেন্দি, ক্রিস্তিয়ান রোমেরো, নিকোলাস তালিয়াফিকো, নাহুয়েল মলিনা, এঞ্জো ফার্নান্দেজ, রদ্রিগো দি পল, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্তার, আনজেল দি মারিয়া, হুলিয়ান আলভারেজ, লিওনেল মেসি।
ফ্রান্স একাদশ (ফরমেশন: ৪-২-৩-১) হুগো লরিস (গোলরক্ষক), ডাওট উপমেকানো, রাফায়েল ভারানে, থিও হার্নান্দেজ, জুলস কুন্দে, আঁতোয়া গ্রিজম্যান, আদ্রিয়েন রাবিও, অহেলিয়া চুয়ামেনি, জিরুদ, কিলিয়ান এমবাপে, উসমানে দেম্বেলে।
ট্রফি নিয়ে ভক্তদের সঙ্গে ছাদখোলা বাসে মেসিদের উল্লাস : অবশেষে ফুটবলের রাজার মাথায় গেল মুকুট। অবসান হলো দীর্ঘ অপেক্ষার। ৩৬ বছর পর ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। শিরোপা জেতার পর কাতারেই ছাদখোলা বাসে ভক্তদের সঙ্গে ট্রফি নিয়ে উল্লাসে মেতেছেন মেসিরা। এদিন চরম নাটকীয় ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে নিজেদের তৃতীয় শিরোপা ঘরে তুলে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় উদযাপনে লুসাইলে লাখো সমর্থক ভিড় করেন। মেসিদের সামনে থেকে দেখার জন্য রাস্তার দুপাশে অপেক্ষা করেন তারা। এদিন আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ে পুরো কাতার জুড়েই ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ।
এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না মেসির : দেশের ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী লিওনেল মেসি। রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে হাতে পান বিশ্বকাপ। ফুটবল ক্যারিয়ারের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে এর চেয়ে বেশি আর কীই বা চাওয়া থাকতে পারে ফুটবল ছন্দের এ জাদুকরের। এদিকে ম্যাচ শেষে সতীর্থ ও পরিবারের সঙ্গে জীবনের সবচেয়ে খুশির মহুর্তটি ভাগাভাগি করে করে নিয়েছেন মেসি। একইসঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার সকল ভক্তদের। তবে বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রথমবার কী বলেছেন তিনি?
স্বপ্নের নায়কের হাত কাপ দেখার আনন্দে আত্মহারা গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের ধন্যবাদ জানিয় সামাজিক মাধ্যমে দীর্ঘ একটি পোস্ট করেন লিওনেল মেসি। তিনি লেখেন, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন!! কতবার আমি স্বপ্নে তাকে দেখেছি। ঠিক এই স্বপ্নটাই আমি দেখেছি। আমি মনেপ্রাণে এই দিনটা দেখতে চেয়েছিলাম। অনেকবার হেরেছি। কিন্তু, হার মানিনি। এখনও বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমরা জিতে গিয়েছি। একইসঙ্গে মেসি লিখেন, আমার পরিবার, আমার অনুরাগী এবং বাকি সকলে যারা আমার উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন, তাদের ধন্যবাদ। আমরা যে লক্ষ্য নিয়েছিলাম, সেটা পূরণ করতে পেরেছি। এই সাফল্য গোটা দলের। কারও একার নয়। সকলে মিলে এই স্বপ্নটা দেখেছিলাম। আর্জেন্তিনার জন্য এই স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছি আমরা।