প্রযুক্তি ডেস্ক : বৈশ্বিক মহামারী সংক্রমণের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যে অনলাইনে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বেড়েছে ২০ শতাংশ। ২৬ কোটি ৩ লাখ অনলাইন আলাপচারিতা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বলছেন, এর মধ্যে পাঁচ কোটি ১০ লাখ কথোপকথন ছিল বর্ণবাদের মতো বিভিন্ন বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কেন্দ্রিক।
গবেষণার তহবিল জুগিয়েছে ‘ডিচ দ্য লেবেল’ নামের একটি দাতব্য সংস্থা। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত অনলাইনের আলাপচারিতা বিবেচনায় নিয়েছিলেন গবেষকরা। আর গবেষণার ফলাফল বলছে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) কর্তৃক কোভিড ১৯-কে মহামারী হিসেবে ঘোষণা, জুন মাসের ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন এবং ২০২১-এর মার্চে সারাহ এভারার্ডের হত্যার মতো সংবাদের শিরোনাম হওয়া ঘটনাগুলোর সময়ে অনলাইনে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বেড়েছে লক্ষ্যণীয় হারে।
মহামারী চলাকালীন অনলাইনে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য আর নিপীড়নের “ক্রমবর্ধমান ভয়াবহতা” দেখে দাতব্য সংস্থাটি “ঘাবড়ে গিয়েছিল” বলে জানিয়েছেন ‘ডিচ দ্য লেবেল’-এর প্রধান নির্বাহী লিয়াম হ্যাকেট। অনলাইনে বিদ্বেষমূলক আচরণের চরম পর্যায়ে জীবননাশের হুমকিও পেয়েছেন অনেকে; এক পর্যায়ে সাইবার দুনিয়ার সীমানা পেরিয়ে বিদ্বেষমূলক আচরণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও প্রভাব ফেলেছে বলে উঠে এসেছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে। অনলাইনের বাকবিত-ার জেরে এক নারীর বাড়ির সামনে হাজির হয়ে তার সন্তানদের ছবি তুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে ওই সময়ের মধ্যে। হ্যাকেটের মতে, মহামারীর প্রভাবে লকডাউন চলাকালীন মানুষের ঘরে আটকে থাকার বিষয়টি বিদ্বেষমূলক আচরণ বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
“গবেষণা থেকে আমরা আগেই জেনেছি যে নিপীড়নকারীদের মানসিক সমস্যা থাকতে পারে; তারা হয়তো কোনো মাসনিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বা নিজ গৃহে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে তারা; হয়তো তারা নিজেই ঘরে-বাইরে নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।”–বলেন তিনি।
হ্যাকেটের মতে, ঘরে বন্দী থাকার বিরক্তি আর “নিজের জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকার অনুভূতি” অনলাইনে বিদ্বেষমূলক আচরণ বৃদ্ধির জন্য “যথোপযুক্ত” পারিপার্শিক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। হ্যাকেট বলেন, “তারওপর মানুষের হাতে খরচ করার অনেক সময়, তারা বিরক্ত। তাদের মনে হয়েছে তাদের নিজের জীবনের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সবকিছু মিলিয়ে একটা ‘পারফেক্ট স্টর্ম’ তৈরি হয়েছে এই পরিস্থিতিতে।”
২০২০ সালের পুরোটা সময় প্রতিদিনই অনলাইনে হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ১৯ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ কিশোরী। বিবিসি’কে ফিবি জেমসন বলেন, “২০২০-এর পুরোটা জুড়েই এসব ঘটেছে। শেষ কয়েক মাসে প্রতিদিনই কিছু না কিছু হয়েছে।”
মহামারী চলাকালীন অনলাইনে হয়রানি ও নিপীড়ন বৃদ্ধির খবর একেবারে নতুন কিছু নয়। তবে হ্যাকেট বলছেন, মূল সমস্যা হচ্ছে ঘটনাগুলো একদম ‘স্বাভাবিক বিষয়ে” পরিণত হচ্ছে। “কারণ, আমরা এটাকে স্বাভাবিক করে ফেলেছি এবং এটাই সমস্যার একটা বড় অংশ- এটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক জীবনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না।”
বিবিসি জানিয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে প্রস্তাবিত অনলাইন সেইফটি বিল নিয়ে কাজ করছে ডিচ দ্য লেবেল। প্রস্তাবিত আইনটি সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহারকারীদের নিরাপদ রাখতে বাধ্য করবে। হ্যাকেটের মতে “সঠিক দিকে পদক্ষেপ” হবে আইনটি। পাশাপাশি কম বয়সীদের জন্য আরও ভালো শিক্ষা ব্যবস্থার কথাও বলেছেন তিনি। টুইটার বা ইনস্টাগ্রামের বদলে ছোট ছোট ফোরামেই যে উগ্রপন্থী আচরণ বিস্তারের ঝুঁকি বেশি, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন হ্যাকেট।
“শিক্ষার একটা বড় ভূমিকা আছে এক্ষেত্রে” এবং বিদ্বেষমূলক আচরণকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া ঠেকাতে “সামাজিক চেষ্টাও” একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।